اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ
عَلَيْهِمُ الْمَلئِكَةُ
اَلاَّ تَخَافُوْا وَلاَتَحْزَنُوْا
وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ
الَّتِىْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ ০ نَحْنُ اَوْلِيؤُكُمْ فِى الْحَيوةِ الدُّنْيَا
وَفِى الاخِرَةِ ج وَلَكُمْ
فِيْهَا مَا تَشْتَهِىْ اَنْفُسُكُمْ
وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْن ০ نُزُلاً مِّنْ غَفُوْرِ رَّحِيْمِ ০ وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلاً مِّمَّنْ دَعَا اِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَّقَالَ اِنَّنِىْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ০
ভাবানুবাদ :
৩০. ‘যেইসব লোক বলে : ‘আল্লাহ
আমাদের রব’ এবং এই কথার ওপর অটল থাকে, নিশ্চয়ই
তাদের প্রতি ফেরেশতা নাযিল হয় যারা বলতে থাকে,
‘ভয়
পেয়োনা, চিন্তাক্লিষ্ট হয়ো না,
আর
সেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়ে সন্তুষ্ট হও তোমাদের জন্য যার ওয়াদা করা হয়েছে।’
৩১. আমরা এই দুনিয়ার জীবনে তোমাদের সংগী-সাথী, আখিরাতেও।
সেখানে তোমরা যা আকাংখা করবে তা তোমাদের হবে,
সেখানে
তোমরা যা চাইবে তা-ই পাবে।
৩২. এ হচ্ছে ক্ষমাশীল মেহেরবান সত্তার পক্ষ থেকে
মেহমানদারীর আয়োজন।
৩৩. ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে যে লোকদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকে, আল-‘আমালুছ ছালিহ করে এবং বলে : “অবশ্যই আমি মুসলিমদের একজন।’
পরিপ্রেক্ষিত :
*
ঈসায়ী
৬১০ সনে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবুওয়াত লাভ
করেন।
*
প্রথম
তিনটি বছর তিনি নিরবে আদ্ দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহ-র কাজ করেন।
*
অতপর
তিনি সরবে আদ্ দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহ-র কাজ শুরু করেন।
*
কিছুসংখ্যক
সত্যসন্ধানী এবং সাহসী যুবক-যুবতী তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন।
*
আবু
জাহল আমর ইবনু হিশাম, উতবা ইবনু রাবীয়া, শাইবা
ইবনু রাবীয়া, আল ওয়ালিদ ইবনুল মুগীরা, উমাইয়া
ইবনু খালাফ, আস ইবনু ওয়াইল প্রমুখ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তাঁর
আহ্বান কবুল করেনি।
ফলে আম-জনতা ইসলাম গ্রহণ করার সাহস পায় নি।
*
ইসলাম-বিদ্বেষীরা
বিরোধিতা শুরু করে।
প্রথমে ঠাট্টা-বিদ্রুপ,
অতপর গালমন্দ,
অতপর হুমকি-ধমকি,
অতপর অপপ্রচার এবং
শেষাবধি দৈহিক নির্যাতন করে ইসলামের আলো নিভিয়ে
দিতে চায় দুশমনেরা।
মুমিনগণ কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন।
[উসমান ইবনু আফফান (রা), তালহা
ইবনু উবাইদুল্লাহ (রা), বিলাল ইবনু রাবাহ (রা), আবু
ফাকীহা (রা), ইয়াসির (রা),
সুমাইয়া
বিনতু খুব্বাত (রা), উম্মু শুরাইক (রা), লুবাইনা
(রা), খাব্বাব ইবনুল আরাত (রা) প্রমুখ দৈহিকভাবে নির্যাতিত হন।]
*
ঈমান
নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য ঘরদোর, বাগ-বাগিচা, পশু-পাল, ব্যবসা-বাণিজ্য-ইত্যাদি
পেছনে ফেলে একদল মুমিন হাবশায় হিজরাত করেন।
*
উমার
ইবনুল খাত্তাব (রা) তখনো ইসলাম গ্রহণ করেন নি। হামজা ইবনু আবদিল মুত্তালিব (রা)
তখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
*
উতবা
ইবনু রাবীয়ার অবান্তর প্রস্তাব-
একদিন কা‘বার চত্বরে একদিকে বসা ছিলেন
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), অপর
দিকে বসা ছিলো মুশরিক নেতাগণ।
অন্যতম মুশরিক নেতা উতবা ইবনু রাবীয়া বললো, ‘তোমরা
একমত হলে আমি মুহাম্মাদের কাছে কতগুলো প্রস্তাব রাখতে চাই। তারা তার সাথে একমত হলে
উতবা ইবনু রাবীয়া মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
সামনে এসে বসলো এবং ইসলাম প্রচার ত্যাগের শর্তে নিম্নের প্রস্তাবগুলো পেশ করলো :
“ভাতিজা, তুমি
যেই কাজ শুরু করেছো তার উদ্দেশ্য যদি হয় অর্থ-সম্পদ লাভ, তাহলে
আমরা তোমাকে এতো অর্থ-সম্পদ দেবো যে তুমি হবে সবার চেয়ে বেশি ধনী। তুমি যদি
শ্রেষ্ঠত্ব চাও, আমরা তোমাকে আমাদের নেতা বানিয়ে নেবো। তুমি যদি
রাজা হতে চাও, আমরা তোমাকে আমাদের রাজা বানাবো। কিন্তু....।” উতবা
ইবনু রাবীয়ার অবান্তর বক্তব্যের জওয়াবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা হামীমুস সাজদাহ পড়া শুরু করেন এবং ৩৮ নাম্বার আয়াত
পর্যন্ত পড়ে সাজদা করেন।
এই ঘটনাটি ঘটেছিল নবুওয়াতের পঞ্চম সনে।
এ থেকে প্রমাণিত হয় যে নবুওয়াতের পঞ্চম সনের কোন এক সময় এই সূরাটি নাযিল হয়।
এই সূরাতে-
(১) ইসলাম-বিরোধীদের বিভিন্ন
অযৌক্তিক প্রচারণার জওয়াব দেওয়া হয়েছে।
(২) মুমিনদের ওপর যুলম
নির্যাতন চালানোর কারণে ইসলামবিরোধীদেরকে আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে।
[হূদ (আ) এর কাউম বানু আদ এবং
ছালিহ (আ)-এর কাউম বানু সামূদের ওপর নাযিলকৃত আযাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া
হয়েছে।]
(৩) নির্যাতিত মুমিনদেরকে
সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে।
(৪) আর মুমিনদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ তো তারা যারা সর্বাবস্থায় আল ‘আমালুছ ছালিহ করে, লোকদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করে : অবশ্যই আমি মুসলিমদের একজন।
ব্যাখ্যাঃ
قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ.
অর্থ : ‘তারা বলে : আল্লাহ আমাদের রব।’
‘রব’ মানে
প্রভু, মুনীব, প্রতিপালক, তত্ত্বাবধায়ক, ক্ষমতাশালী-প্রতাপশালী-কর্তৃত্বশীল
সত্তা ইত্যাদি।
“আল্লাহ আমাদের রব”- এই
ঘোষণা দেওয়ার মানে হচ্ছে আল্লাহকে “প্রভু” বলে
মেনে নেওয়া এবং নিজেরা তাঁর “আবেদ” রূপে
তাঁর প্রতি আনুগত্যশীল জীবন যাপনের সংকল্প ব্যক্ত করা।
“আল্লাহ আমাদের রব”এই
ঘোষণা দেওয়ার মানে হচ্ছে আল্লাহকে “মুনীব” বলে
মেনে নেওয়া এবং নিজেদের চিন্তা-চেতনাকে আল্লাহমুখী করা ও কর্মধারাকে আল্লাহমুখী
করা।
“আল্লাহ আমাদের রব” এই
ঘোষণা দেওয়ার মানে হচ্ছে আল্লাহকে “প্রতিপালক” বলে
বিশ্বাস করা এবং তাঁর প্রতিপালন ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল হওয়া।
“আল্লাহ আমাদের রব”এই
ঘোষণা দেওয়ার মানে হচ্ছে আল্লাহকে “তত্ত্বাবধায়ক” বলে
মানা এবং তাঁর তত্ত্বাবধান ব্যবস্থার অধীনে আছি বলে বিশ্বাস রাখা।
“আল্লাহ আমাদের রব”এই
ঘোষণা দেওয়ার মানে হচ্ছে একমাত্র আল্লাহকে “ক্ষমতাশালী-প্রতাপশালী-
কর্তৃত্বশীল” সত্তা রূপে গ্রহণ করে তাঁর প্রতি আত্মসমর্পী
হওয়া।
“আল্লাহ আমাদের রব” এই ঘোষণা দেওয়ার মানে হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর বড়ত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব (সার্বভৌমত্ব) প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করা। কারণ, তাঁর নির্দেশ হচ্ছে “ওয়া রাব্বাকা ফাকাব্বির।”
ثُمَّ اسْتَقَامُوْا.
অর্থ : ‘অতপর ইসতিকামাত করে।’
[অর্থাৎ দৃঢ়তা-অটলতা-অবিচলতা
অবলম্বন করে।]
(১) আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“বহু
মানুষ আল্লাহকে তাদের রব বলে ঘোষণা করে,
কিন্তু
অধিকাংশ আবার কাফির হয়ে যায়। দৃঢ়পদ সেই ব্যক্তি যে মৃত্যু পর্যন্ত এই আকীদা আঁকড়ে
ধরে থাকে।”
[আনাস ইবনু মালিক (রা), সুনানু
আন-নাসায়ী, ইবনু আবী হাতিম, ইবনু
জারীর।]
(২) আবু বাকর আছ্ ছিদ্দিক (রা)
বলেছেন, “[দৃঢ়পদ ওই ব্যক্তিরা যারা ঈমান আনার পর] আল্লাহর সাথে আর
কাউকে শরীক করে নি, তাঁকে ছাড়া আর কোন উপাস্যের প্রতি আকৃষ্ট হয় নি।” [ইবনু
জারীর]
(৩) উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)
বলেছেন, “আল্লাহর শপথ,
নিজ
আকীদায় দৃঢ় ও স্থির তারাই যারা দৃঢ়ভাবে আল্লাহর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত, শিয়ালের
মতো এই দিক থেকে ঐ দিক, ঐ দিক থেকে এই দিকে ছুটে বেড়ায় না।” [ইবনু
জারীর]
(৪) উসমান ইবনু আফফান (রা)
বলেছেন, “(দৃঢ়পদ তারা) যারা নিজের আমলকে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে
নিয়েছে।” [কাশ্ শাফ]
(৫) আলী ইবনু আবী তালিব (রা)
বলেছেন, “(দৃঢ়পদ তারা যারা) আল্লাহর নির্ধারিত ফারয গুলো একনিষ্ঠভাবে
আদায় করছে। [কাশ্ শাফ]
(৬) দৃঢ়পদ ব্যক্তিদের সম্পর্কে
এই যুগের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ) বলেছেন, “অর্থাৎ
হঠাৎ কখনো রব বলে ঘোষণা করে থেমে যায় নি এবং এমন ভ্রান্তিতেও লিপ্ত হয় নি যে
আল্লাহকে তো রব বলে ঘোষণা করেছে, আবার তার সাথে অন্যদেরকেও রব
বলে মেনে নিয়েছে। বরং একবার এই আকীদা গ্রহণ করার পর সারা জীবন এর ওপর প্রতিষ্ঠিত
থেকেছে। এর পরিপন্থী কোন আকীদা গ্রহণ করে নি কিংবা এর সাথে কোন বাতিল আকীদার
সংমিশ্রণও ঘটায় নি এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদী আকীদার দাবিগুলো পূরণ করেছে।”
দ্রষ্টব্য : তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী, সূরা হামীমুস সাজদাহর তাফসীরের ৩৩ নাম্বার টীকা।
تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلئِكَةُ.
অর্থ : ‘তাদের প্রতি ফেরেশতা নাযিল
হয়।’
ফেরেশতাগণ আল্লাহর সাম্রাজ্যের বিশ্বস্ত
কর্মচারী। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁদেরকে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত রেখেছেন।
(১) একদল ফেরেশতা আল্লাহর আরশ
বহন করেন।
(২) একদল ফেরেশতা পাহাড়-পর্বত
তত্ত্বাবধান করেন।
(৩) একদল ফেরেশতা
নদী-সাগর-মহাসাগর তত্ত্বাবধান করেন।
(৪) একদল ফেরেশতা বাতাস
প্রবাহিত করেন।
(৫) একদল ফেরেশতা মেঘ পরিচালনা
করেন।
(৬) একদল ফেরেশতা মানুষের
তাকদীর লিপিবদ্ধ করেন।
(৭) একদল ফেরেশতা মানুষের
রিযকের ব্যবস্থা করেন।
(৮) একদল ফেরেশতা মানুষের
আমলনামা লিপিবদ্ধ করেন।
(৯) একদল ফেরেশতা অবাধ্য
জাতিকে শাস্তি দেন।
(১০) আজরাঈলের (আ) নেতৃত্বে
একদল ফেরেশতা মানুষের রূহ কবজ করেন।
(১১) একদল ফেরেশতা মানুষকে
কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
(১২) একদল ফেরেশতা জাহান্নামের
তত্ত্বাবধান করেন।
(১৩) একদল ফেরেশতা জান্নাতের
তত্ত্বাবধান করেন।
(১৪) অন্যতম ফেরেশতা ইসরাফিল
(আ) বিউগল হাতে নিয়ে ফুঁ দেওয়ার জন্য আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন।
(১৫) জিবরাঈল (আ) নবী রাসূলদের
নিকট আল্লাহর ওহী নিয়ে আসতেন। এখন তিনি লাইলাতুল কাদরে বহু সংখ্যক ফেরেশতা নিয়ে
পৃথিবীতে নেমে আসেন।
এখানে বিশেষ এক শ্রেণীর ফেরেশতার কথা উল্লেখ করা
হয়েছে।
এই ফেরেশতাগণ আল্লাহর নির্দেশে মাযলুম মুমিনদের মনে হিম্মাত, নিশ্চিন্ততা এবং প্রশান্তি সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করেন। আর মুমিনদেরকে অনাগত সফলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
نُزُلاً مِّنْ غَفُوْرِ رَّحِيْمٍ.
অর্থ : ‘ক্ষমাশীল মেহেরবান সত্তার
পক্ষ থেকে মেহমানদারীর আয়োজন।’
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন
দৃঢ়পদ মুমিনদের মেহমানদারীর জন্য জান্নাত প্রস্তুত করে রেখেছেন।
(১) জান্নাত মহাবিস্তৃত
আরামদায়ক স্থান।
وَسَارِعُوْا اِلى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ
عَرْضُهَا السَّموتُ
وَالاَرْضُ ০
‘এবং দ্রুত এগিয়ে চল তোমাদের
রবের মাগফিরাত এবং জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা আসমান ও পৃথিবীর প্রশস্ততার সমান।’ (সূরা
আলে ইমরান ॥ ১৩৩)
سَابِقُوْا اِلى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ
عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ والاَرْضِ ০
‘তোমরা প্রতিযোগিতা করে দ্রুত
এগিয়ে চল তোমাদের রবের মাগফিরাত এবং জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা আসমান ও পৃথিবীর
প্রশস্ততার সমান।’ (সূরা আল হাদীদ ॥ ২১)
একজন কম মর্যাদাবান জান্নাতীও পাবেন বর্তমান
পৃথিবীর দশ গুণ বড়ো স্থান।
(২) জান্নাত অগণিত অফুরন্ত
নিয়ামতে পরিপূর্ণ স্থান।
لَهُمْ مَا يَشَائُوْنَ فِيْهَا وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ ০
‘সেখানে তারা যা চাইবে তা-ই
পাবে। আর আমার কাছে আরো বহু কিছু রয়েছে তাদের জন্যে।’ (সূরা
কা-ফ ॥ ৩৫)
اَعَدَدْتُ لِعِبَادِىَ
الصَّالِحِيْنَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ وَلاَ اُذُنٌ سَمِعَتْ وَلاَ خَطَرَ عَلى قَلْبِ بَشَرٍ ০
ছহীহ আলবুখারী।
আল্লাহ বলেন,
‘আমি
আমার ছালিহ বান্দাদের জন্য এমন সব নিয়ামত মওজুদ করে রেখেছি যা কোন চোখ কখনো দেখে
নি, যার কথা কোন কান কখনো শুনে নি এবং যার ধারণা কোন হৃদয়ে কখনো
উদিত হয় নি।’
(৩) জান্নাতের জীবন অনন্ত
জীবন।
পৃথিবীর জীবন রোগ-শোকযুক্ত জীবন।
পৃথিবীর জীবন অভাব-অনটনযুক্ত জীবন।
পৃথিবীর জীবন ক্ষয়যুক্ত জীবন।
পৃথিবীর জীবন মৃত্যুযুক্ত জীবন।
পক্ষান্তরে,
জান্নাতের জীবন রোগ-শোক মুক্ত জীবন।
জান্নাতের জীবন অভাব-অনটন মুক্ত জীবন।
জান্নাতের জীবন ক্ষয় মুক্ত জীবন।
জান্নাতের জীবন মৃত্যু মুক্ত জীবন।
উল্লেখ্য যে,
অনন্ত জীবন এবং অক্ষয় সাম্রাজ্য লাভের আকাংখা
মানুষের মনের গভীরে প্রোথিত দুইটি প্রধান আকাংখা।
এই দুইটি আকাংখাকে উসকে দিয়ে ইবলীস আদম (আ)কে
ধোঁকা দিয়েছিলো। সে বলেছিলো
“ইয়া আদামু হাল আদুল্লুকা ‘আলা
শাজারাতিল খুলদি ওয়া মুলকিন লা ইয়াবলা।”
[সূরা
তা-হা ॥ ১২০]
‘হে আদম, আমি
কি তোমাকে এমন গাছের সন্ধান দেবো যার ফল খেলে তুমি অনন্ত জীবন ও অক্ষয় সাম্রাজ্য
লাভ করবে।’
কিন্তু পৃথিবীর জীবনে মানুষের এই দুইটি আকাংখা পূর্ণ হবার নয়। এই দুইটি আকাংখা পূর্ণ হবার স্থান জান্নাত।
وَمَنْ اَحْسَنَ قَوْلاً
مِّمَّنْ دَعَا اِلَى اللهِ.
অর্থ : ‘ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে কার কথা
উত্তম হতে পারে যে লোকদেরকে আল্লাহর দিকে ডাকে।’
প্রতিদিন আমরা অসংখ্য কথা বলে থাকি। যেই কথাগুলো
বলে আমরা লোকদেরকে আল্লাহর পথে ডাকি সেই কথাগুলোকেই সর্বোত্তম কথা বলে আল্লাহ
সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। অর্থাৎ এই কথা বলাতেই যেন আমরা ব্যস্ত থাকি সেই ব্যাপারে
আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছেন।
আবার আদ্-দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহ-র (ক)
কর্ম-কৌশল, (খ) দা‘ওয়াত প্রদানের কাংখিত মান এবং
(গ) পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন আল কুরআনে নিম্নরূপ
ধারণা ব্যক্ত করেছেন :
اُدْعُ اِلى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ
الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ
بِالَّتِىْ هِىَ اَحْسَنُ ط اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِه وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ ০
‘তোমার রবের পথে লোকদেরকে ডাক
বিজ্ঞতা সহকারে, সুন্দর বক্তব্যের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে
যুক্তি-তর্ক কর অতীব উন্নত মানে। অবশ্যই তোমার রব ভালো করেই জানেন কে তাঁর পথ থেকে
সরে গেছে এবং তিনি জানেন কে সঠিক পথ প্রাপ্ত।’
(আন-নাহল
॥ ১২৫)
وَمَا عَلَى الرَّ سُوْلِ اِلاَّ الْبَلغُ الْمُبِيْنُ ০
‘আর সুস্পষ্টভাবে আমার পয়গাম
(লোকদের কাছে) পৌঁছিয়ে দেওয়াই রাসূলের কর্তব্য।’ সূরা
(আন্ নূর ॥ ৫৪, আল ‘আনকাবূত ॥ ১৮)
اِنَّكَ لاَ تَهْدِىْ مَنْ اَحْبَبْتَ وَلكِنَّ اللهَ يَهْدِىْ مَنْ يَّشَاءُ ج وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ ০
‘তুমি যাকে চাও তাকেই হিদায়াত
করতে পার না। আল্লাহ যাকে চান তাকেই হিদায়াত করেন। আর তিনি হিদায়াত প্রাপ্তদেরকে
ভালো করেই জানেন।’ (সূরা আল কাসাস ॥ ৫৬)
اِنْ تَحْرِصْ عَلى هُدهُمْ فَاِنَّ اللهَ لاَ يَهْدِىْ مَنْ يُّضِلُّ وَمَا لَهُمْ مِّنْ نّصِرِيْنَ ০
‘তুমি তাদের হিদায়াতের জন্য যতোই লালায়িত হওনা কেন আল্লাহ যাদেরকে গুমরাহ করে দিয়েছেন তাদেরকে হিদায়াত দেন না। আর এই ধরনের লোকদেরকে কেউ সাহায্য করতে পারে না।’ (সূরা আন্ নাহল ॥ ৩৭)
وَعَمِلَ صَالِحًا.
অর্থ : ‘এবং আল ‘আমালুছ
ছালিহ করে।’
এই কথাটির মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন
সূক্ষ্মভাবে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে,
দা‘য়ী
ইলাল্লাহর মুখের কথা ও কাজে বৈপরীত্য থাকতে পারে না।
প্রশ্নবিদ্ধ চরিত্র, প্রশ্নবিদ্ধ লেনদেন এবং প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ মুখে উচ্চারিত সুন্দর কথাগুলোর প্রভাব বিনষ্ট করে দেয়।
وَقَالَ اِنَّنِىْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ.
অর্থ : ‘এবং বলে : অবশ্যই আমি
মুসলিমদের একজন।’
এই কথাটির মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন
বুঝাতে চাচ্ছেন যে পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল হোক, কিংবা
প্রতিকূল, প্রকৃত মুমিনকে সর্বাবস্থায় তার মুসলিম
আইডেনটিটি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।
শিক্ষা:
আল্লাহকে নিজেদের রব বলে ঘোষণা দিয়ে যারা
নিজেদের চিন্তা ও কর্মে তার প্রতিফলন ঘটায়,
বিশেষ
করে ‘আদ্ দা‘ওয়াতু ইলাল্লাহর-র’ কাজে
আত্মনিয়োগ করে এবং প্রতিকূলতাসত্বেও মুসলিম আইডেনটিটি নিয়ে মাথা উচুঁ করে দাঁড়ায়, সম্মানিত
ফেরেশতাগণ হন তাদের বন্ধু এবং আখিরাতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন
তাদেরকে বিপুলভাবে পুরস্কৃত করবেন।
এই দারসুল কুরআনের পিডিএফ-এর জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।