শাশুড়ি কখনো মা হয় না। কথাটা অনেকে হয়ত অন্য দৃষ্টিতে দেখবে। আমাদের দেশের culture আছে, বিয়ের সময় মেয়েদের কে শেখানো হয়, শাশুড়িকে মায়ের মত মনে করবে। ওটাই এখন তোমার নিজের বাড়ি। আমাদের সমাজে বিয়ের পর স্বামীর বাড়ীটিই হয় স্থায়ী ঠিকানা। এমনকি নিজের অস্তিত্ব ভুলে বাবার পরিচয় বদলে নিজের নামের সংঙ্গে স্বামীর নাম জুড়ে দেওয়ার রেওয়াজ বহুল প্রচলিত।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন দুনিয়াতে সবকিছু যুক্তির
ভিত্তিতে সঠিকভাবে সুসামঞ্জস্য করে সৃষ্টি করেছেন। সম্পর্কের ব্যাপারটা ও এমনই। একটি
মেয়ে শ্বশুর বাড়ী যখন যায় তখন সে সাবালিকা। ২০/২২ বছর সে বাবার বাড়ীতে কাটিয়েছে।
Genetically
বাবা মার চরিত্র বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে
বিদ্যমান। বাবার রাজকন্যা,
মায়ের আদরের দুলালী, ভাই বোনের আদর সোহাগ ভালবাসায় সে বড় হয়েছে। মায়ের
কাছে যা খুশি আবদার করেছে। মান অভিমান করেছে। বাবা সব দাবি পুরণ করেছে। প্রয়োজনে শাসন করেছে, ধমক দিয়েছে, শাস্তি দিয়েছে।
কোন কিছুই গায়ে লাগেনি। সম্পর্কের চিড় ধরেনি একটুও। বরং এগুলোর মাধ্যমে সম্পর্ক আর
ও গভীর হয়েছে।
সেই রাজকন্যা বড় হয়ে বিয়ে
হয় চলে যায় স্বামীর ঘরে। সেখানে সে কারও স্ত্রী কারো বৌমা, কারো ভাবী। দায়-দায়িত্ব, কাজের বোঝা, সংসার সামলানো
সব এখন তাকে করতে হবে। সামান্য কিছু দিন (অবস্থাভেদে) নতুন বৌ থাকলেও তাকে পর্যায়ক্রমে
সংসারের দায়-দায়িত্ব সবই বুঝে নিতে হবে। বয়স
যাই হোক না কেন সে এখন দায়িত্বশীল। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর, ননদ সবার প্রতিই রয়েছে তার দায়িত্ব কর্তব্য। সবারই আশা সে শ্বশুর বাড়ীর আদর্শ গৃহিনী হবে। বৌটিকে বুঝতে হবে বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি এক নয়। সবার মেজাজ মর্জি বুঝে, বাড়ির পরিবেশ
পরিস্থিতি বুঝে তাকে আচরণ করতে হবে।
মাকে যা বলা যায় বা যে আচরণ করা যায় শাশুড়িকে মা
ভেবে সে আচরণ করলে সর্বনাশ। অচিরেই দজ্জাল, মেজাজি, বেয়াদব খেতাব
তার কপালে জুটবে। শুনতে হবে মা, বাবা তাকে কিছুই শেখাইনি। এতবড় মেয়ে কিছুই পারে না ইত্যাদি আর
ও কত কি। ঠিক শাশুড়ি যদি নিজের মেয়ে মনে করে মেয়েকে যেমন বকা দেয় বা যে কথা বলে তা
বলতে শুরু করে তাহলে তো দজ্জাল বা খন্ডারনী শাশুড়ির কমন খেতাব তার কপালে অবশ্যম্ভাবী।
কিছুদিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব কোলাহল এমন পর্যায়ে পৌছাবে যে সুখ -শান্তি বেচারা পালিয়ে
হাফ ছেড়ে বাচবে। স্বামী , শ্বশুর মহোদয়গণ এখানে অসহায়। কুল রাখি না শ্যাম রাখি অবস্থা।
শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, গরীব সব পরিবারের
এ একই অবস্থা। শুধু বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন ভিন্ন।
বৌ ও কখনো মায়ের মত হয় না। অনেকেই বলে ছেলেকে মায়ের
মত যত্ন করে খেয়াল রেখ। কথাটা ঠিক না মা মা-ই। মা শাসন করতে পারে, বকা দিতে
পারে। কিন্তু স্ত্রী যদি মায়ের মত শাসন করতে চায় তাহলে স্বামী বিগড়াতে সময় লাগবে না।
স্বামী বিয়ে করে স্ত্রী পেতে চায়। যে হবে অনুগত, প্রেয়সী, প্রেরণাদায়িনী, সান্তনাদানকারী।
কোনো স্বামীই পছন্দ করে না যে তার স্ত্রী তার বস হবে। তাকে ডিকটেট করবে। একটা উদাহরণ
দেয় যাক। স্বামী গাড়ী ড্রাইভ করে কোনো অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। স্ত্রীটি পাশের সিটে বসা।
স্বামী হয়তো লেন ভুল করেছে। স্ত্রী যদি কর্কশ কন্ঠে স্বামীকে বলে যে তুমি লেন ভুল করেছো, তাহলে হয়তো
স্বামী বলবে যে, আমি জানি কোন পথে যেতে হবে। স্ত্রী হয়তো উত্তর করবে। এভাবে বিতর্ক হবে। এইভাবে
আস্তে আস্তে সম্পর্কের অবনতি হবে। তার চেয়ে, বুদ্ধিমতি স্ত্রীর কাজ হবে স্বামীকে
তার মর্জিমত চলতে দিয়ে নিরবে আনুগত্য করা। স্বামী যখন নিজে বুঝে ভুল পথ থেকে সঠিক পথে
ফিরে আসবে তখন সে আর ভুল পথে যাবে না। এজন্য সবার প্রয়োজন, যতক্ষণ এমন
কোনো ভুল না করে যার ফলে মারাত্মক কোনো ক্ষতি হয়ে যায়।
জীবনে চলার ক্ষেত্রে একজন বুদ্ধিমতি স্ত্রী কিভাবে
আনুগত্য করে, সবরের সাথে বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সঠিক পথে চলতে হয়, চালাতে হয়
তার জন্য তাকে যত্নবান হতে হবে। একজন স্ত্রী পুরুষের পোষাক। পোষাক যেমন মানুষের শরীরের
দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখে,
স্বামীর দোষ-ত্রুটি তেমনি স্ত্রী ঢেকে রাখে। স্বামীর ব্যাপারটিও
অনুরূপ। একজন অনুগত,
সুন্দর চরিত্রের স্ত্রী একজন স্বামীর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ।
স্বামী অসৎ থাকলে স্ত্রীর নফল নামাযও কবুল হয় না। এর অর্থ এটা নয় যে, স্ত্রী তার
দ্বীন, ব্যক্তিত্ত্ব সব কিছুর বিসর্জন দিয়ে স্বামীর আনুগত্য করবে। বরং একজন ঈমানদার, দ্বীনদার
ও ব্যক্তিত্ত্ববান নারীই সর্বোৎকৃষ্ট স্ত্রী হতে পারে।
সারা বিশ্বের মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে
তৈরি করে তাকে কল্যানের পথ দেখিয়েছেন। মানুষের nature যেমন আল্লাহ
জানেন তেমনি কিসে মানুষের কল্যাণ তাও জানেন। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুরুষ-নারীর
সম্মিলিত দুনিয়াতে আল্লাহ পুরুষকে নারীর অভিভাবকের স্থান দিয়েছেনঃ
"পুরুষেরা নারীর উপর কতৃত্বশীল এজন্য যে আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন
এবং এজন্য যে তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে কারণে স্ত্রী লোকগন হয় অনুগত এবং আল্লাহ
যা হেফাযত করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে।" সূরা নিসাঃ ৩৪
এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাধারণ নিয়মনীতি
বলে দিয়েছেন। বিয়ের সময় স্ত্রীকে মোহরানা দেয়ার মাধ্যমে এ যাত্রা শুরু হয়। প্রয়োজনে
স্ত্রী অর্থ উপার্জন করবে কিন্তু অবাধ্য, উশৃংখলতা কখনো দাম্পত্য জীবনে শান্তি
আনে না।
কোরআনের বাস্তব রূপ রাসূল সা. এর জীবনে আমরা দেখতে
পাই, বিবি খাদিজার সঙ্গে যখন রাসূল সা. এর বিয়ে হয় তখন বিবি খাদিজা ছিলেন অঢেল সম্পত্তির
মালিক। সুন্দরী, ব্যক্তিত্ত্বসম্পন্ন এক মহিলা। কিন্তু নবুয়ত পূর্ব সময়ে তিনি ছিলেন আদর্শ স্বামী। একজন স্ত্রী কত বিনয়ী, সৎ ও অনুগত
হলে এবং একজন স্বামী কত ব্যক্তিত্ত্বসম্পন্ন, সহানুভূতিশীল ও আদর্শ হলে এত সুন্দর
সংসার হয়। যে সংসারে যায়েদের মত কৃতদাস, আলীর মত অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক লালিত-পালিত
হয়েছে। রাসূল সা. কতটা আস্থাভাজন হলে তার নবুয়াতকে সবাই শোনা মাত্র মেনে নেয়। শুধু তাই নয়, আরবে তখন
একাধিক বিয়ে খুব স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু খাদিজা রা. বেঁচে থাকতে রাসূল সা. দ্বিতীয় বিয়ে
করেন নি।
খাদিজা রা. প্রখর ব্যক্তিত্ত্বের অধিকারী ছিলেন।
প্রখর বুদ্ধিবলে ব্যবসায়ের মাধ্যমে প্রচুর বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছিলেন। কিন্তু কোন
কিছুই তার আদর্শ স্ত্রী হওয়ার পথে বাধা হয় নি।
সংসার জীবনে স্বামী স্ত্রী উভয়েরই ভূমিকা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল সা. স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত কোমল, সহানুভূতিশীল
ছিলেন। ঠিক তেমনি আদর্শের ব্যাপারে ছিলেন অটল অবিচল। কোরআনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত এসেছে।
সীরাতের ঘটনাবলীতেও এগুলোর প্রমাণ পাওয়া যায়।
একটা পরিবার সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। পরিবার
যেমন সমাজের একটা অংশ সমাজও তেমনি পরিবার গুলোকে নিয়েই গঠিত হয়। পরিবারের মানুষের মন-মানসিকতাও
নির্ভর করে সমাজের উপর। খারাপ সমাজে ভালো মানুষ তৈরি হয় না। রাসূল সা. তাই মৌলিক যে
কাজের জন্য দুনিয়াতে এসেছিলেন তা কোরআনের ভাষায়ঃ
"তিনি তার রাসূলকে সা. পাঠিয়েছেন স্পষ্ট দ্বীন ও হেদায়াত সহকারে যাতে তিনি এ আদর্শকে
সমস্ত দ্বীনের উপর বিজয়ী করতে পারেন।"
সূরা তাওবাঃ ৩৩
দ্বীনকে বিজয়ী করার মাধ্যমে রাসূল সা. এমন এক সমাজ
গড়ে তুললেন যেখানে পরিবারগুলো হলো শান্তির নীড়। পরিবারের সদস্যগণ হলো সোনার মানুষ।
নারী নির্যাতন, পুরুষ নির্যাতন কোনোটাই থাকলো না। পিতা-মাতা, শাশুড়ী-বউ দ্বন্দ্ব সংগ্রাম বাদ দিয়ে
এক আল্লাহর দেখানো পথে জান্নাতের দিকে ছুটে চললোঃ
"তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা
আসমান ও জমিনে বিস্তৃত এবং তা তৈরি করা হয়েছে, মুত্তাকীদের জন্য।" সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৩
জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উন্নতির এ যুগে পারিবারিক
ভাঙন আজ নিত্য নৈমিত্তিক ব্যপার। দ্বন্দ্ব, কলহ, অবিশ্বাস
সমাজকে বিষিয়ে তুলেছে। দাম্পত্য কলহ, তালাকের হিড়িকে শিশুরা নিরাপত্তাহীন
হয়ে পড়েছে। মানুষ মানুষের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে অপারগ হয়ে কুকুরকে সঙ্গী করে জীবন
যাপন করছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজন আল্লাহর দেখানো পথে ফিরে আসা।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।