মুয়াত্তা ইমাম মালিক হাদীস গ্রন্থটির
পিডিএফ কপির জন্য এখানে ক্লিক করুন আর অনলাইনে পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
মদীনার ইমাম নামে খ্যাত ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহঃ) কর্তৃক
সংকলিত “মুয়াত্তা” একটি বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ। হাদীস সংকলনের ইতিহাসে ইমাম বুখারী, মুসলিম প্রমুখ সংকলকের পূর্বেই মুয়াত্তা প্রকাশিত হয়েছিল। ইমাম বুখারীসহ উচ্চ
পর্যায়ের হাদীসের হাফেজ ও ইমামগণ এ সংকলনটির ভূয়সী প্রসংসা করেছেন। এটির
মর্যাদা মুসলিম বিশ্বের কাছে অনেক। ছোট হলেও অত্যন্ত তথ্যবহুল এই গ্রন্থ।
মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র)-এর গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদ
করেছেন মুহাম্মদ রিজাউল করীম ইসলামাবাদী। এটি প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মালিকী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মালিক বিন আনাস
আসবাহী(রঃ) ৯৩ হিজরী সনে মদীনা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন একজন তাবি-তাবিঈ। তিনি
হিময়ার রাজ বংশোদ্ভূত ছিলেন। তার প্রপিতামহ আবূ আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) এর একজন সাহাবী ছিলেন। তার পিতামহ মালিক ইবন আমীর ছিলেন একজন প্রভাবশালী তাবিঈ
এবং সিহাহ সিত্তার একজন অন্যতম রাবী। মালিক বিন আমিরের তিনজন পুত্র ছিল যারা হল
আনাস,রবী ও আবূ সুহাইল নাফি। ইমাম মালিকের পিতা আনাস বংশানুক্রমে প্রাপ্ত ইলমের
অধিকারী ছিলেন বটে কিন্তু ইলমে হাদীসের ব্যাপারে বিশেষ কোন জ্ঞান অর্জন করতে পারে
নাই। তার মাতার নাম ছিল আলিয়া বিনতে শরীফ ইবন আব্দুর রহমান আল-আবদিয়াহ(রঃ)।
তার চাচা আবূ সুহাইল নাফি ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিস। তিনি
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম যুহরীর ছাত্র ছিলেন। ইমাম মালিক(রঃ) শৈশবে তার প্রাথমিক
শিক্ষা চাচা সুহাইলের কাছে থেকে গ্রহণ করেন। তিনি নাফি ইবন দাইলামী(রঃ) এর কাছে থেকে
শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। পারতপক্ষে বাল্যকাল থেকে ইমাম মালিক(রঃ) জ্ঞানচর্চার
পরিবেশ গড়ে উঠে। কারণ তার পুরো জীবন অতিবাহিত হয় মদীনায় এবং মদীনায় সকল কুরআন-সুন্নাহের
উপর বিজ্ঞ বিজ্ঞ সাহাবী ও তাবিঈগণ বসবাস করতেন। তাই তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ
সংযোগের ফলে তিনি অত্যাধিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। ইমাম মালিকের সময় যেই সকল
মুহাদ্দিসগণ সেখানে বসবাস করতেন তারা হলেন, ইবন মাসউদ, হিশাম ইবন উরওয়া, আব্দুল্লাহ ইবন দীনার, কাসিম বিন মুহাম্মদ বিন আবী বকর প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ। নাফি যতদিন জীবিত
ছিলেন ততদিন তিনি তার কাছে থেকে হাদীস শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। এরপর তিনি মদীনায়
অবস্থিত সকল মুহাদ্দিসগণের কাছে থেকে হাদীস শিক্ষা অর্জন করেছিলেন। তিনি
হিযাযের ফকীহ রবীয়াতুর রায়(রঃ) এর কাছে থেকে ফিকাহশাস্ত্র অর্জন করেছিলেন। রবীয়াতুর
রায় ছাড়াও সুফিয়ান সাওরী, মূসা বিন উকবা,ইয়াহয়িয়া বিন সাঈদের কাছে থেকে তিনি ফিকাহ শাস্ত্র অর্জন করেছিলেন। এভাবে করে তার উস্তাদের সংখ্যা অনেকে ছিলেন। শাহ
ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী(রঃ) বলেন, ইমাম মালিকের উস্তাদ সংখ্যা ছিল ৭৫ আবার কেউ কেউ বলেন ৯৪। তবে
জালালুদ্দীন সুয়ূতীর মতে তার উস্তাদের সংখ্যা ছিলেন ৯০০ যাদের ভিতর ৩০০ ছিলেম তাবিঈ এবং বাকি ৬০০ ছিলেন তাবী-তাবিঈ।
ইমাম মালিক(রঃ) এর শিক্ষার আসর ছিল অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। খুব
সুন্দর পরিবেশে তিনি সকলকে শিক্ষা দীক্ষা দান করতেন।
তিনি সুন্দর ও পরিপাটি জামাকাপড় পরিধান করে এবং আতর গায়ে দিয়ে সকলকে শিক্ষা দান করতেন। তিনি সারা জীবন মদীনায় অবস্থান করেছেন। তিনি কেবলমাত্র একবার মক্কায় হাজ্জের উদ্দেশ্যে গমন করেছিলেন। তার কাছে থেকে
দূরান্তের অনেক লোকেরা এসে দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ করতেন,
বিশেষ করে আফ্রিকার লোকদের কাছে তিনি খুব
জনপ্রিয় ছিলেন।
ইমাম মালিক একজন অনেক বড় মুহাদ্দিস ছিলেন যাতে বিন্দুমাত্র
সন্দেহ নেই।এই ব্যাপারে ইমাম শাফিঈ(রঃ) বলেন, ইমাম মালিক(রঃ) তাবিঈগণের পরবর্তী যুগের লোকদের
জন্য আল্লাহর জন্য এক অকাট্য দলীলস্বরুপ।
মুহাদ্দিস নাসাই বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে তাবিঈগনের পরে ইমাম মালিক(রঃ) থেকে অধিক জ্ঞানী আর কেউ ছিলেন না।
তার ব্যাপারে বলা হয় যে, মালিক
(রঃ) জীবিত থাকাকালীন সময় সেখানে তিনি ছাড়া আর কেউ ফাতওয়া
দিতে পারতেন না।
তার এই পদমর্যাদা ফলে তিনি খলীফাদের নিকট থেকে প্রায় দশ হাজার দিরহাম পান।
আব্বাসীয় খলীফা মানসূরের নির্দেশে তিনি মুয়াত্তা গ্রন্থ প্রণয়ন
করেছিলেন। তার এই
মুয়াত্তা এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, খলীফা
মানসূর মদীনায় হাজ্জ করতে এসে বলেছিলেন, আমি নিয়্যত করেছি যে, আপনার সংকলিত হাদীস গ্রন্থখানির অসংখ্য অনুলিপি তৈরী করে তা প্রত্যেক মুসলিম শহর ও নগরে পাঠাবো এবং সেই অনুযায়ী আমল করবে এবং তাকে
বাদ দিয়ে কোন হাদীসের মনোযোগ দিতে বলব না।
এই কথা শুনে ইমাম মালিকের খুশি হওয়ার কথা ছিল। বরং তিনি তা হন নাই। তিনি তখন
খলীফাকে বলে দিলেন, না আপনি এই রুপ কখনও করবেন না। কারণ তাদের কাছে অনেক হাদীস পৌছে গিয়েছে।
তারা অনেক হাদীস শুনেছে এবং তার উপর আমলও করছে। তাই
যেভাবে আমল করছে তাই ছেড়ে দিন।
কথিত আছে যে, একবার খলীফা মানসূরের
বিরুদ্বে বিদ্রোহ শুরু হলে মালিম(রাঃ) তার পক্ষে ফাতওয়া
প্রদান করেছিলেন। তখন খলীফার চাচাত ভাই জাফর আব্বাসী তাকে বেত্রাঘাত করেন। কিন্ত খলীফা এই ঘটনা শুনে মর্মাহত হন এবং তার নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা
করেন।
অতঃপর খলীফা হারুনুর রশিদও মুয়াত্তার প্রচার এর কাজ করতে চান
এবং তা পবিত্র বায়তুল্লাহ শরীফে ঝুলিয়ে তা থেকে সকলকে
শিক্ষা গ্রহণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু ইমাম মালিক(রঃ) তাকে
তা বারণ করে বলেনঃ না আপনি তা করবেন না। কেননা রাসূলের
সাহাবীদের মধ্যে খুটিনাটি ব্যাপারে মত পার্থক্য রয়েছ,
তারা বিভিন্ন শহরে ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। আর তারা সকলে সঠিক পথে
রয়েছে।
তার এই বক্তব্যের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনী
বিষয়ে খুটি-নাটি মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। এরজন্য
গোড়ামির মাধ্যমে নিজের মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। ইমাম ইবনে আব্দুর বার বলেছেন, সমাঝদার লোকদের ভিতর এটা একটি ইনসাফপূর্ণ নীতি তাতে কোন সন্দেহ নেই।
খলীফা হারুনুর রশিদ একবার মদীনায় রাসূলুল্লাহ(সাঃ) রওযা
যিয়ারত করতে আসলে তিনি ইমামকে তাদের নিকট এসে তার দুই
পুত্র আমীন ও মামুনকে দ্বীনী শিক্ষা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু তার উত্তর ইমাম সাহেব বললেন, ইলম
হল সম্মানের বিষয়বস্তু আর আপনি একে অপমানিত করতে পারেন
না। তখন তার দুই পুত্র ইমামের দরবারে এসে শিক্ষা লাভ করেন।
ইমাম মালিকের বাকি জীবন মদীনা বসেই শিক্ষা ও ফাতওয়া দানের
মাধ্যমে কেটে যায়। তার চারিত্রিক গুণাবলীর ভিতর
দানশীলতা, মহানুভবতা, হাসোজ্জ্বলতা,
মহত্তা, জ্ঞানের গভীরতা ও বিনম্রতা ছিল উল্লেখযোগ্য। রাসূলের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্বা ছিল
বর্ণনাতীত। এমন কি মুহাম্মদ(সাঃ) এর দেহ মোবারক এখানকার
মাটিতে শায়িত আছে বলে তিনি কখনো সাওয়ারীর উপর চড়তেন
না।
১৭৯ হিজরীতে
৮৩ বছর বয়সে তিনি মদীনায় ইন্তিকাল করেন। তাকে পবিত্র জান্নাতুল বাকী সমাহিত করা হয়।
মুয়াত্তা ইমাম মালিক হাদীস গ্রন্থটির
পিডিএফ কপির জন্য এখানে ক্লিক করুন আর অনলাইনে পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।