মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব (জন্মঃ ১৫ জানুয়ারী, ১৯৪৮) হলেন বাংলাদেশের একজন ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক। জাতীয় ভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা করেন ও সেই সাথে আমীর হিসাবে আছেন। তিনি মাসিক আত-তাহরীক নামক একটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক এবং তিনি কয়েকটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থার পরিচালক। ২০১৬ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ থেকে প্রফেসর হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।
পারিবারিক পরিচিতিঃ
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব সাতক্ষীরা সদর থানার বুলারাটি গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা আহমাদ আলী (১৮৮৩-১৯৭৬) বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একজন খ্যাতনামা আহলেহাদীছ আলেম ছিলেন। তার বড় ভাই আব্দুল্লাহিল বাকী ছিলেন মুসলিম লীগের বিশিষ্ট নেতা। যিনি ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তান আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । তার বংশ পরিক্রমা- আসাদুল্লাহ আল-গালিব বিন আহমাদ আলী বিন মুনশী যীনাতুল্লাহ বিন আলহাজ্জ যমীরুদ্দীন বিন রফী মাহমূহ বিন আব্দুল হালীম বিন উযির আলী মণ্ডল বিন সৈয়দ নযীর আলী আল-মাগরেবী। তার উর্ধ্বতন ৭ম পুরুষ সৈয়দ নাযীর আলী আল-মাগরেবী (রহ.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে মরক্কো থেকে এদেশে আগমণ করেন এবং পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা জেলাধীন বারাসাত মহকুমায় বিবাহ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৪ সন্তানের জনক।১৯৭৯ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার শ্বশুর ছিলেন প্রাক্তন সরকারী কর্মকর্তা (তৎকালীন সার্কেল অফিসার/ উপজেলা নির্বাহী অফিসার) জনাব আকবার আলী (মৃ. ১৯৮৬ইং)। সহধর্মীনী তাহেরুন্নেছা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর। তিনি বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহতাবুদ্দীন (মৃ. ১৯৮০ইং)-এর নাতনী এবং খান বাহাদুর মোবারক আলী (খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর ভ্রাতা)-এর প্রোপৌত্রী।
শিক্ষাঃ
তিনি সাতক্ষীরার কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসা থেকে দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং জামালপুরের আরামনগর কামিল মাদরাসা থেকে ১৯৬৯ সালে কামিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষার সম্মিলিত মেধা তালিকায় তার অবস্থান ছিল যথাক্রমে ১৬তম এবং ৫ম। পরবর্তীতে তিনি কলারোয়া সরকারী কলেজ, সাতক্ষীরা থেকে আইএ এবং সরকারী মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ, খুলনা থেকে বিএ পরীক্ষাতেও কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। অত:পর ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৮৪ সালে তিনি ইংল্যাণ্ডে পিএইচডি গবেষণার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত গমন করেননি। ১৯৯২ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। মাতৃভাষা বাংলাসহ আরবী, ইংরেজি, উর্দূ এবং ফার্সী ভাষায় তার দক্ষতা রয়েছে।
পেশাজীবনঃ
১৯৮০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনিস্টিটিউট অব মডার্ন ল্যাংগুয়েজে খণ্ডকালীন লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন। অত:পর একই বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'আরবী ও ইসলামী শিক্ষা' বিভাগের লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন। অতঃপর ২০১৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। পেশাগত কাজে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য তিনি ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভ্রমণ করেছেন। ২০০০ সনে তিনি সঊদী সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসাবে হজ্জব্রত পালন করেন।
প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ও সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহঃ
- বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ (১৯৭৮)
- আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থা (১৯৮১)
- তাওহীদ ট্রাস্ট (১৯৮৯)
- হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ (১৯৯২)
- আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ (১৯৯৪)
- সোনামণি (১৯৯৪)
- মাসিক আত-তাহরীক (১৯৯৭)
- সালাফিয়া ট্রাস্ট (২০০২)
- ইসলামিক কমপ্লেক্স (২০১০)
- আল-আওন (স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান সংস্থা) (২০১৭ইং)
প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহঃ
তিনি ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় নিয়মিত সম্পাদকীয় লেখা ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তার প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি এমফিল, পিএইচডিসহ একাডেমিক গবেষণাকর্মসমূহ তত্ত্বাবধান ও নিরীক্ষণ এবং গবেষণা জার্নাল সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতোমধ্যে তার রচিত ও অনুদিত প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রন্থ ও পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে।
- বঙ্গানুবাদ কুরআন ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর (২০১৮)
- তাফসীরুল কুরআন- ৩০তম পারা (২০১৩)
- তাফসীরুল কুরআন - ২৬-২৮তম পারা (২০১৮)
- তাফসীরুল কুরআন - ২৯তম পারা (২০১৮)
- ছালাতুর রাসূল (ছা) [বাংলা] (১৯৯৮)
- ছালাতুর রাসূল [ইংরেজি] (২০১০)
- জিহাদ ও ক্বিতাল (২০১৩)
- মীলাদ প্রসঙ্গ (১৯৮৬)শবেবরাত (১৯৯০)
- হজ্জ ও ওমরা (২০০১)
- আক্বীদা ইসলামিয়াহ (২০০০)
- হাদীছের প্রামাণিকতা (২০০৪)
- মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা (১৯৮৭)
- তালাক ও তাহলীল (২০০১)
- আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয় (২০০৪)
- কুরআন অনুধাবন (২০১৮)
- ছিয়াম ও ক্বিয়াম (২০১৯)
- তাওহীদের শিক্ষা ও আজকের সমাজ (২০২০)
- আহলেহাদীছ আন্দোলন: উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ [ডক্টরেট থিসিস] (১৯৯৬)
- আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন? (বাংলা) (১৯৭৯)।
- আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন? (ইংরেজি) (২০১২)।
- ফিরক্বা নাজিয়াহ (২০১৩)
- জীবন দর্শন (২০১৩)
- দিক দর্শন-১ (২০১৬)
- দিক দর্শন-২ (২০১৬)
- ইনসানে কামেল (২০০৯)
- উদাত্ত আহ্বান (১৯৯৩)
- নৈতিক ভিত্তি ও প্রস্তাবনা (১৯৯৩)
- ইক্বামতে দ্বীন : পথ ও পদ্ধতি (২০০৪)
- সমাজ বিপ্লবের ধারা (১৯৮৬)
- তিনটি মতবাদ (১৯৮৭)
- দাওয়াত ও জিহাদ (১৯৯৩)
- ছবি ও মূর্তি (২০১০)
- হিংসা ও অহংকার (২০১৫)
- মানবিক মূল্যবোধ (২০১৮)
- মৃত্যুকে স্মরণ (২০১৮)
- সমাজ পরিবর্তনের স্থায়ী কর্মসূচী (২০১৮)
- ইসলামী খেলাফত ও নেতৃত্ব নির্বাচন (২০০৩)
- ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (২০০৩)
- বায়'এ মুআজ্জাল (২০১৮)
- নবীদের কাহিনী-১ (২০১০)
- নবীদের কাহিনী-২ (২০১০)
- সীরাতুর রাসূল (ছা.) (নবীদের কাহিনী-৩) (২০১৫)
- সালাফী দাওয়াতের মূলনীতি [ আরবী হতে অনুদিত] (১৯৮৫)
- আরব বিশ্বে ইসরাঈলী আগ্রাসনের নীল নকশা (ইংরেজি হতে অনুদিত) (১৯৮৭)
- ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব্ব [ আরবী হতে অনুদিত] (১৯৯১)
- নয়টি প্রশ্নের উত্তর [আরবী হতে অনুদিত] (২০১০)
- বিদ‘আত হতে সাবধান [আরবী হতে অণুদিত] (২০১২)
- আরবী ক্বায়েদা (১৯৯৮)
- আরবী ক্বায়েদা-১ (২০১৮)
- আরবী ক্বায়েদা-২ (২০১৮)
- তাজবীদ শিক্ষা (২০১৮)
- প্রাথমিক বাংলা শিক্ষা
সামজ সংস্কারঃ
৫০ ও ৬০-এর দশকে এ দেশে আহলেহাদীছ আন্দোলনের নেতা আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী সামাজিক ও সাংগঠনিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সে আন্দোলনকে আরো সুপ্রতিজ্ঞ ও সুসংহত করে তুলেছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। গোষ্ঠীগত গণ্ডির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি আহলেহাদীছকে একটি ব্যাপকভিত্তিক ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলনে রূপদানের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বলা হয়।[৬] তার মতে, মানবরচিত যাবতীয় মতবাদ পরিত্যাগ করে একমাত্র অহির বিধানের প্রতি নি:শর্ত আত্মসমর্পণের মধ্যেই মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তি নিহিত। যা তিনি শ্লোগান আকারে তার বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "সকল বিধান বাতিল কর, অহির বিধান কায়েম কর"। তিনি বিজাতীয় মতবাদ ও মাযহাব অপছন্দ করেন এবং সমাজ থেকে এগুলো বাদ দিতে চান। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্র ও সমাজে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচলিত গণতন্ত্র এবং জঙ্গীবাদ পরিত্যাজ্য; বরং মানুষের আক্বীদা-আমলের সংস্কারের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধনকে তার লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে "ইমারত ও বায়আত" ভিত্তিক সংঘবদ্ধ আন্দোলনকে তিনি বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে আবশ্যক মনে করেন।
কারাবরণঃ
২০০৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি
জঙ্গীবাদের সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হন। একই দিনে ১০টি মামলায় তাকে গ্রেফতার
দেখানো হয়। তিনি তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
প্রণোদিত বলে দাবী করেন। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর অবশেষে ২০০৮ সালের ২৮
আগস্ট তিনি মুক্তিলাভ করেন। পরবর্তীতে সকল মামলায় তিনি বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হন।
📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘
আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।