বাংলাভাষী একাডেমিশিয়ানদের নিয়ে অনেক হতাশা আছে। সত্যিকারার্থেই মৌলিক কথামালা খুব কম আসছে। প্রায় সর্বত্র এখন চিন্তার দাসত্ব; মৌলিক চিন্তার ফলন তাই খুবই কম। যে যেভাবে পারছে, দাসত্ব করে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করছে। এই উপমহাদেশের মধ্যেই ভারত-পাকিস্তানও উম্মাহকে অনেক স্কলার উপহার দিচ্ছে। কিন্তু একরাশ হতাশা নিয়ে দেখবেন-বাংলাদেশে সেই অর্থে স্কলার নেই; থাকলেও সংখ্যায় উল্লেখ করার মতো নয়।
চিন্তাবন্ধ্যাত্বের মাঝেও দু-একজন নাবিক বুদ্ধিবৃত্তিক
জাহাজের মাস্তুল টেনে তোলার চেষ্টা করছেন। স্রোতের বিপরীতে হাঁটার ঝুঁকি ও সাহস
কজনই-বা নিতে পারে? মুদ্রার দুপিঠই নয়; অদৃশ্যমান
পিঠটাও দেখার মতো চোখ তো বেশি নেই। বাংলাদেশে এই সময়ের
আলোচিত গবেষক, কবি ও সাহিত্যিক মুসা আল
হাফিজ শত হতাশার ভিড়ে কিছুটা হলেও আশার আলো। হয়তো এই চিন্তককে নিয়ে আমার মাঝে
ব্যক্তিগত ফ্যাসিনেশন আছে, তবে দৃঢ়তার সাথে বলতে
পারি-মুসা আল হাফিজকে পাঠ করে আপনিও অভিভূত হবেন। নতুন ও মৌলিক কিছু চিন্তার সাথে
পরিচিত হবেন।
‘মনের উপনিবেশ মনের মুক্তি’ গ্রন্থে লেখক আমাদের মানসিক বন্ধ্যাত্ব ও দাসত্বকে তুলে
এনেছেন এবং সেসব থেকে মুক্তির ট্যানেল নির্মাণের কিছু সূচনাবিন্দুকে সামনে আনার
সুপারিশ করেছেন। আগ্রাসন, মিথ, বৈকল্য, সংকট
নিয়ে খোলামেলা আলাপ আছে এখানে। কী করে আমরা সাদাকে কালো হিসেবে মেনে নেওয়ার
বুদ্ধিবৃত্তিক উপায় বের করছি, সে সমীকরণ এখানে মেলানো
হয়েছে। পশ্চিমা বোধ ও বিশ্বাসকে ঔপনিবেশিক চাদরে মুসলিম উম্মাহকে আবৃত করে নেওয়া
হয়েছে দক্ষতার সাথে। স্বাধীন চিন্তার সীমা-পরিসীমাও নির্ধারণ করে দিচ্ছে পশ্চিমা
বয়ান। জীবন, স্বাধীনতা, অধিকার, মুক্তি
শব্দগুলোর একটা একুশ শতকীয় একান্ত ব্যাখ্যা দাঁড় করা হয়েছে। কথা ছিল, এসবের
মুখোশ উন্মোচন করবে স্বাধীন বুদ্ধিজীবিতা,
কিন্তু
কী আফসোস! বুদ্ধিজীবীরা কীভাবে বুদ্ধিবৃত্তিকে দেখবে, কতটুকু
দেখবে-সেটাও নির্ধারণ করছে তারা, যারা মনের উপনিবেশ তৈরি
করতে চায়।
এই গ্রন্থে উল্লেখিত প্রবন্ধগুলো সময়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন
সময়ে লেখা। বলা যায়, সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে
লেখাগুলো নিজেই লেখকের মস্তিষ্ক থেকে অক্ষরে পরিণত হয়েছে; কোনো
বন্দোবস্তির চাপিয়ে দেওয়া আদেশ মেনে আসেনি। পাঠক লেখাগুলোকে সময় ধরে ধরে পড়বেন বলে
প্রত্যাশা করছি।
আমাদের তরুণরা সঠিক বোধে ফিরে আসুক, তারা
সত্যকে জানুক। চিন্তাদাসত্ব থেকে মুক্ত হোক তাদের মন ও হৃদয়। মনের উপনিবেশ ভেঙে
ফেলবই আমরা, ইনশাআল্লাহ। মুক্ত হোক
বন্দি মন।
বইটির শর্ট পিডিএফ পড়ার জন্য এখানে ক্লিককরুন
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।