দারসুল কুরআনঃ সূরা আল হাশর- আয়াত ২২-২৪ - আল্লাহর পরিচয় - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

August 29, 2021

দারসুল কুরআনঃ সূরা আল হাশর- আয়াত ২২-২৪ - আল্লাহর পরিচয়

 

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ • هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ ۚ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ • هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ ۖ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ ۚ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ •

অনুবাদ :

২২. আল্লাহই সেই মহান সত্তা যিনি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সবকিছুই তিনি জানেন। তিনিই রহমান ও রহীম।

২৩. আল্লাহই সেই মহান সত্তা যিনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। যিনি বাদশাহ, অতীব পবিত্র, পূর্ণাঙ্গ শান্তি, নিরাপত্তাদানকারী, হিফাযতকারী, সবার উপর বিজয়ী শক্তি বলে নির্দেশ কার্যকরী করতে সক্ষম এবং সবার চেয়ে বড় হয়েই বিরাজমান থাকাতে সক্ষম। আল্লাহ সেই সব শিরক থেকে পবিত্র যা লোকেরা করে থাকে।

২৪. সেই পরম সত্তা তো আল্লাহ-ই, যিনি সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্দেশ দানকারী এবং সেই অনুপাতে রূপদানকারী। উত্তম নামসমূহ তারই। আসমান ও যমীনের সবকিছু তার তাসবিহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করে চলেছে। তিনি পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী।

ব্যাখ্যা:

সূরা আল হাশর পবিত্র কুরআনুল মাজীদের ৫৯ নাম্বার সূরা। সূরায় মোট রুকু ৩ এবং মোট আয়াত ২৪। সূরার ২নং আয়াত থেকে এই সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

বনী নাযীর যুদ্ধ সংঘটিত হবার পর সূরা হাশর নাযিল হয়। আর বনী নাযির যুদ্ধটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাদানী যুদ্ধের হিজরী চতুর্থ সালের রবিউল আউয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছিল।

রাসূল (সাঃ) মদীনায় হিজরত করার পর মদীনার ইহুদী গোত্রগুলোর সাথে শান্তিচুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিল, ইহুদীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না এবং কোন আক্রমণকারীকে সাহায্য করবে না। তারা আক্রান্ত হলে মুসলমানরা তাদের সাহায্য করবে। ইহুদীদের বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে বনী নাযির গোত্রও এ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল। হিজরী তৃতীয় সনে বদর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কুরাইশরা মদীনা আক্রমনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এ সময় বনী নাযীর গোত্র চুক্তি অনুযায়ী মদীনা প্রতিরক্ষায় সহযোগিতা না করে চুক্তি লংঘন করে। এমনকি তারা রাসূল (সাঃ)-কে হত্যা করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরী করলো। মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসূলকে এই ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে দেন। এই প্রেক্ষিতে রাসূল (সাঃ) বনী নাযির গোত্রকে দশ দিনের মধ্যে মদীনা ছেড়ে যাবার জন্য চরমপত্র দেন। তারা যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে রাসূল (সাঃ) তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। কিছুদিন পর তারা সামান্য কিছু সম্পদ উটের পিঠে বোঝাই করে মদীনা ত্যাগ করে চলে যায়। আল্লাহর ইচ্ছায় বিনা রক্তপাতে দীর্ঘদিনের বসবাসকারী বনী নাযীর গোত্র এভাবেই তাদের ভ‚মি, সম্পদ, অস্ত্রশস্ত্র, দখলকৃত কেল্লা সব ফেলে মদীনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো।

সূরা হাশরের আলোচ্য বিষয়:

  • যুদ্ধের মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। যুদ্ধের সময় শত্র‘দের এলাকায় যে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করতে হয়, তা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টির সমার্থক নয়। প্রত্যেক মুসলমানের এ বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
  • সন্ধি বা যুদ্ধ জয়ের ফলে যেসব ভ‚মি বা সম্পদ মুসলমানদের হস্তগত হয় তা বণ্টনের ব্যাপারে নীতিমালা।
  • মুনাফিকদের আচরণ, নীতির পর্যালোচনা এবং এর পিছনের কারণও আল্লাহ চিহ্নিত করে বলে দিয়েছেন।

শেষ রুকু ঈমানদারদের জন্য উপদেশবাণী সম্বলিত দুর্বল ঈমানদার, যাদের মধ্যে ঈমানের প্রাণসত্তা নেই তাদের লক্ষ্য করেই এই উপদেশবাণী। আলোচ্য ২২-২৪ নং আয়াতে ঈমানদারগণ যে আল্লাহর উপর ঈমান আনার স্বীকৃতি দিচ্ছে সে আল্লাহর বিশেষ কিছু গুণাবলীর প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। সেই গুণাবলীর প্রেক্ষিতে আল্লাহর হক এবং আমাদের করণীয় আলোচনা করাই আলোচ্য দারসের মূল বিষয়।

বনী নাযির গোত্রের শোচনীয় পরাজয়ের কথা আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। মাত্র কয়েকদিনের অবরোধে শত শত বছরের তাদের আপন জনপদ ছেড়ে দেশান্তরিত হতে রাজি হয়ে গেল। আল্লাহ বলছেন, এটা মুসলমানদের শক্তির দাপটে হয়নি বরং তারা যে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রত্যক্ষ ফল। যারা আল্লাহর শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার দুঃসাহস দেখায় তাদের সর্বদা এ পরিণতির সম্মুখীন হতেই হবে।

আল্লাহর ক্ষমতা ও গুণাবলী:

এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বিশেষ কিছু গুণাবলীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মানব মনের স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা এই যে, যে আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, দায়িত্ব পালনে সহায়ক হিসেবে রাসূল এবং কুরআন দিয়েছেন এবং যার কাছে অবশেষে আমাকে জবাবদিহী করতে হবে সেই আল্লাহ কেমন এবং তার গুণাবলী কি? এর উত্তরও জানা যাবে পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর গুণাবলী এমন অনুপম ভঙ্গিতে বর্ণনা করা হয়েছে, যার আলোকে আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে অত্যন্ত স্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। কিন্তু দুটি স্থানে বিশেষভাবে এমন, যেখানে আল্লাহ তা’আলার গুণাবলীর ব্যাপক অর্থব্যঞ্জক বর্ণনা পাওয়া যায়। একটি হলো সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত যা আয়াতুল কুরসী হিসেবে পরিচিত এবং অপরটি হলো সূরা হাশরের এই আয়াতগুলো।

এই নামগুলো পবিত্রতম গুণাবলী সম্বলিত এক বিস্তারিত প্রশংসা এবং তা তাওহীদের বক্তব্য দ্বারা সজ্জিত। এই নামগুলো জানা, তা কিভাবে আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে এবং সুন্দরতম এই নামসমূহের কার্যকারিতা কতটা ব্যাপক তা জানা একান্ত প্রয়োজন।

সূরা হাশরের (২২-২৪) এই আয়াতগুলোতে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতা সম্পর্কিত মোট ১৮টি গুণবাচক নাম বর্ণনা করা হয়েছে।

০১.আল্লাহ মহান সত্তা যিনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই

০২.আল্লাহ অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সবকিছু জানেন।

০৩.اَلرَّحْمَٰنُ – আল্লাহ রহমান

০৪.اَلرَّحِيمُ – আল্লাহ রহীম

০৫.اَلْمَلِكُ – তিনি বাদশাহ

০৬.اَلْقُدُّوسُ  – অতীব পবিত্র

০৭.اَلسَّلَامُ  – পূর্ণাঙ্গ শান্তি

০৮.اَلْمُؤْمِنُ  – নিরাপত্তাদানকারী

০৯.اَلْمُهَيْمِنُ  – হিফাযতকারী

১০.اَلْعَزِيزُ  – শক্তিবলে নিজের নির্দেশ কার্যকর করতে সক্ষম

১১.اَلْجَبَّارُ  – সবার চেয়ে বড় হয়ে বিরাজমান থাকতে সক্ষম

১২.اَلْمُتَكَبِّرُ  – মহিমান্বিত

১৩.سُبْحَانَ اللَّهِ  – আল্লাহ পবিত্র

১৪.اَلْخَالِقُ  – আল্লাহ সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী

১৫.اَلْبَارِئُ  – পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্দেশ দানকারী

১৬.اَلْمُصَوِّرُ  – পরিকল্পনা অনুপাতে রুকুদানকারী

১৭.اَلْعَزِيزُ  – পরাক্রমশালী

১৮.اَلْحَكِيمُ – মহাজ্ঞানী

নামসমূহের প্রভাবে, কার্যকারিতা:

আল্লাহর এই সুন্দরতম নামগুলোর মধ্য থেকে প্রতিটি নামের প্রভাবই এ বিশ্বজগতে দৃশ্যমান এবং মানব জীবনে অনুভ‚ত। এই নাম ও গুণাবলী মানুষের হৃদয়কে তার কার্যকারিতা সম্পর্কে অবহিত করে। মানবজীবনে এর ইতিবাচক কার্যকারিতা বিস্তৃত হয়।

২২ ও ২৩ নং উভয় আয়াতের শুরুতেই বলা হয়েছে  هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّاهُوَ

অর্থাৎ তিনিই সেই আল্লাহ যিনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই।

প্রথমেই আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ নিজেই তার সাথে সমগ্র বিশ্বজগতকে পরিচিত করাচ্ছেন। বলছেন, ‘তিনিই সেই আল্লাহ তারপর তার ক্ষমতা বলছেন- ‘যিনি ছাড়া কোন মা’বুদ নেই।

– যিনি ছাড়া আর কারোই ক্ষমতা, পদমর্যাদা ও অবস্থান এমন নয় যে, তার বন্দেগী ও আরাধনা করা যেতে পারে।

তিনি ছাড়া আর কেউ আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার মালিকই নয়। যে, সে উপাস্য হবার অধিকার লাভ করতে পারে।

– তিনি ছাড়া আর কেউ আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার মালিকই নয় যে, সে উপাস্য হবার অধিকার লাভ করতে পারে।

– আর এই একত্বের ভিত্তিতেই মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক, চিন্তা, চেতনা, কর্ম, আচরণ বিকাশ লাভ করে এবং সংযোগ সাধিত হয়।

এরপর

অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সবকিছুই তিনি জানেন‘

এ কথাটি বলার সাথে সাথেই বিশ্বজাহানের অধিপতির সামনে আপনাতেই মাথানত হয়। প্রবল পরাক্রান্ত ক্ষমতাধর এই সত্তার সামনে নিজের উপলব্ধি করা যায়। সেই সত্তার কাছে কোন কিছুই গোপন নয়, অজ্ঞাত নয়। সৃষ্টির কাছে যা গোপন ও অজানা তাও তিনি জানেন আর যা তাদের কাছে প্রকাশ্য তাও তিনি জানেন। যা অতীত হয়ে গেছে যা বর্তমানে আছে এবং যা ভবিষ্যতে হবে তার সবকিছুই তিনি সরাসরি জানেন। এসব জানার জন্য তিনি কোন মাধ্যমের মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ বলেছেন-

এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান এবং বিশ্বাস যত মযবুত হবে, কার্যকারিতার দিক থেকে তা তত সুফল বয়ে আনবে। এর ফলে মন-মগয গোপন ও প্রকাশ্য সর্বাবস্থায় আল্লাহ সম্পর্কে সাবধান হয়ে যাবে। আমি একাকী অবস্থান করলেও একা নই- এ চেতনা মনে বদ্ধমূল থাকবে। এই চেতনার আলোকেই যাবতীয় আচরণ গঠিত হবে। মন কিছুতেই অসচেতন ও উদাসিন হতে পারবে না।

এই বিশ্বাসের ফলাফল এই যে, আমার দ্বারা তথা মানুষের দ্বারা গোপন বা প্রকাশ্য কোন অবস্থাতেই অন্যায় করা সম্ভব হবে না। অন্যায়ের ব্যাপারে অসাধারণ বা অসচেতন হতে দিবে না।

এরা কি জানে না, তারা যা কিছু গোপন করে এবং যা কিছু প্রকাশ করে, তা সবই আল্লাহর জানা আছে? (সূরা বাকারা- ৭৭)

জমিন ও আসমানের কোন জিনিস আল্লাহর নিকট গোপন নেই।‘ (সূরা আলে ইমরান- ৫)

তোমরা চুপে চুপে কথা বল বা জোরে কথা বল (তা আল্লাহর কাছে সমান)। তিনি তো মনের অবস্থাও জানেন। (সূরা মূলক- ১৩)

কাজেই আল্লাহ আমাদের সবচেয়ে নিকটে অবস্থান করছেন। উপরিউক্ত আয়াত সহ কুরআনের আরো অনেক জায়গায় আল্লাহ তাঁর এই ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন- তিনি মানুষের কণ্ঠনালী থেকেও নিকটে অবস্থান করেন।

আল্লাহ রহমান ও রহীম:

একমাত্র আল্লাহ এমন সত্তা যার রহমত অসীম ও অফুরন্ত। বিশ্ব জাহানের প্রতিটি জিনিস তাঁর রহমত ও অনুগ্রহ নিয়ে বেঁচে থাকে। গোটা বিশ্ব জাহানে আর একজনও এই সর্বাত্মক ও অফুরন্ত রহমতের অধিকারী নেই। আর সৃষ্টিক‚লের মাঝে আমরা যে মায়া-মহব্বত, প্রেম ভালোবাসা দেখি তা আংশিক ও সীমিত।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ একশত ভাগ রহমত সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে একভাগ রহমত সমস্ত মাখলুকাতের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন এবং নিজের কাছে বাকী নিরানব্বই ভাগ গুপ্ত রেখেছেন। (সহীহ মুসলিম)

সহীহ মুসলিমের হাদীসে এসেছে-

একবার রাসূলে করীম (সাঃ)-এর নিকট কিছু বন্দী আসল। বন্দীদের মধ্যে একজন মেয়েলোক কি যেন খোঁজাখুঁজি করছে। কতক্ষণ পর সে বন্দীদের মধ্যে একটি শিশু পেল, তৎক্ষণাৎ তাকে নিয়ে তার বুকের সাথে মিলিয়ে নিল এবং তাকে দুধ পান করাল। তখন আমাদেরকে লক্ষ্য করে রাসূল (সা:) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি ধারণা করছ? এ মেয়েলোকটি কি তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে? আমরা উত্তরে বললাম, না খোদার কসম, সে ফেলবেও না এবং ফেলতে সক্ষমও নয়।

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মনে রেখ নিশ্চয় মহান আল্লাহ তার বান্দার প্রতি এরচেয়েও বেশী দয়াবান যেরূপ এ মেয়েলোকটি তার সন্তানের প্রতি স্নেহশীল।

আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হতে হবে।

আল্লাহর রহমত অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হতে হবে।

আল্লাহর রহমত অর্জনের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না।

নবী করীম (সা:) বলেছেন, মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ বলেছেন আমার রহমত, আমার গযবের উপর প্রাধান্য লাভ করেছে।

اَلرَّحْمَٰنُ ও  اَلرَّحِيمُসমার্থক গুণবাচক নাম। তবে উভয়ের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে-

اَلرَّحْمَٰنُ শব্দের মধ্যে রহমতের আধিক্য রয়েছে। আর اَلرَّحِيمُ এর মধ্যে কিছুটা কম রয়েছে।

সূরা ইমরানের ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-

বলো, হে আল্লাহ, বিশ্ব জাহানের মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান কর এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও। তুমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদা দান করো এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত কর। সমস্ত কল্যাণ তোমার আয়ত্তে¡। নিঃসন্দেহে তুমি সব বিষয়ে শক্তিমান।

এই ক্ষমতা ও মর্যাদা দুনিয়ার জীবনে স্বল্প পরিসরে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। আল্লাহ যখন চাইবেন তা কেড়ে নিবেন। কাজেই যে ক্ষমতা অন্য কারো দান, যা একসময় পাওয়া যায় আবার একসময় হাতছাড়া হয়ে যায়। যার প্রতিষ্ঠা ও টিকে থাকা সাময়িক, এমন সরকার যা রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে আদৌ সার্বভৌম ক্ষমতা বলা হয় না।

অর্থাৎ- আল্লাহ একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী

আল্লাহর বাদশাহীতে কারো কোন অধিকার নেই।

আল্লাহ ক্ষমতা দেন আবার আল্লাহই তা কেড়ে নেন।

– বিশ্বাবাসীর প্রতি যিনি দয়া করবেন, তাঁকে রহমান বলা হয়, আর রহীম বলা হয় তাকে, যিনি পরকালে দয়া করবেন।

– যিনি মানুষকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করেন তিনি রহমান আর যিনি মানুষের পাপসমূহ ক্ষমা করেন তিনি রহীম।

আল্লাহ বাদশাহ:

এখানে الهلل শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ তিনিই প্রকৃত বাদশাহ।

– তিনি কোন বিশেষ এলাকা বা রাজ্যের বাদশাহ নন বরং সমগ্র বিশ্ব জাহানের বাদশাহ।

– তার ক্ষমতা ও শাসন কর্তৃত্ব সমস্ত সৃষ্টি জগত জুড়ে ব্যপ্ত।

আল্লাহ তার বাদশাহী সম্পর্কে বলেছেন-

আসমান ও জমিনের বাদশাহী তারই। সব বিষয় আল্লাহর দিকেই রুজু করা হবে।(সূরা আল হাদীদ- ৫)

বাদশাহী ও সার্বভৌমত্তে¡ কেউ তার অংশীদার নয়।(সূরা আল ফুরকান- ৩)

আল্লাহ নিরাপত্তাদানকারী:

এই শব্দটির মূল ধাতু امن অর্থ ভয়ভীতি হতে নিরাপদ হওয়া। তিনিই মুমীন যিনি অন্যকে নিরাপত্তা দান করেন। আল্লাহ তা’আলা তার সৃষ্টিকে নিরাপত্তা দান করেন, তাই তাকে মুমীন বলা হয়েছে।

এই নাম দ্বারা এটাও বুঝায় যে, আল্লাহ কখনো তার সৃষ্টির প্রতি জুলুম করেন না, তাঁর অধিকার নস্যাৎ করেন না। তার পুরস্কার নষ্ট করবেন বা কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করবেন, এ ভয় থেকে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ।

আমরা দেখি দুনিয়ার বাদশাহ অনেক সময় রাগ, জিদ, আবেগ, হঠকারিতা, স্বজনপ্রীতি বা অন্য যে কোন কারণে তার অধিনস্তদের হক নষ্ট করেন। কিন্তু আল্লাহ এসব সত্তা যিনি তার সৃষ্টির জন্য নিরাপত্তাদানকারী। কাজেই সে নিরাপত্তার ছায়ায় আশ্রয় নেবার জন্য আমাদের মনকে ব্যাকুল করে তুলতে হবে।

আল্লাহ হিফাযতকারী:

আল্লাহর এ গুণটি বিশ্বপ্রকৃতির সাথে ও মানবজাতির সাথে সম্পৃক্ত। এর তিনটি অর্থ হতে পারে। যেমন-

১. তত্তাবধান ও হিফাযতকারী

২. পর্যবেক্ষণকারী- কে কি করছে তা দেখছেন।

৩. সৃষ্টির যাবতীয় বিষয়ের ব্যবস্থাপক।

পরবর্তী গুণাবলীসমূহ আল্লাহ বাদশাহ হিসেবে তাঁর গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে।

আল্লাহ অতীব পবিত্র:

মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র সত্তা

আল্লাহ সবরকম মন্দ বৈশিষ্ট্য মুক্ত ও পবিত্র। আল্লাহ এমন পবিত্র যে, তার মন্দ হবার ধারণাও করা যায় না।

এমন পবিত্র সত্তাই একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন, এই নামটি দ্বারা মানুষের মনে সর্বত্রই পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ধারণা জন্ম হয়।

আল্লাহ শান্তিদাতা:

– আল্লাহর গোটা সত্তাই পুরোপুরি শান্তি।

– এই নাম দ্বারা বিশ্বজগতে শান্তি, নিরাপত্তা ও নিশ্চিন্ততার ধারণা হয়।

মুমিনের অন্তরে তার প্রভ‚ সম্পর্কে শান্তি এনে দেয়। তাই সে তার চারপাশের সকল বস্তু, প্রাণী ও মানুষের প্রতি শান্তিময় ও কল্যাণময় হয়ে যায়। এই নাম থেকে মানুষের মন লাভ করে পরম শান্তি, পরিতৃপ্তি ও নিরাপত্তা। তার প্রবৃত্তি এতে শান্ত হয়, তার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা দূরীভ‚ত হয় এবং তার সকল অতৃপ্তির নিরসন ঘটে।

বড় মনে করা এবং অন্যদের কাছে বড়ত্ব ও মহত্ব জাহির করা মিথ্যা দাবী ও জঘন্য দোষ। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন-

তোমরা অহংকার করো না। অহংকার আল্লাহর চাদর। তা নিয়ে টানাটানি করো না।

কাজেই মানুষ বা জিন বা শয়তান কেউই অহংকারের অধিকারী নয়।

আল্লাহ শিরক থেকে পবিত্র:

তাওহীদের বিপরীত শিরক। আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস ও কর্মের সাথে অন্য বিশ্বাস ও কর্মের যখন মিশ্রণ ঘটবে, সেটাই হবে শিরক।

আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন, আল্লাহ সে সব শিরক থেকে পবিত্র যা লোকেরা করে থাকে।

উপরে বর্ণিত গুণগুলো মূলত আল্লাহর প্রতাপ, পরাক্রম, শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব, আধিপত্য ও একনায়কত্বের ধারণা দেয়। তিনি ছাড়া আর কেউ প্রতাপশালী নেই, কেউ একনায়ক নেই, আর কেউ অহংকারী নেই। তার এই গুণাবলীতে কেউ তার সাথে অংশীদার নেই।

এরপরে আল্লাহ বলেছেন, যা লোকেরা করে থাকে তাহলে প্রশ্ন আসে লোকেরা কি করে থাকে? কুরআন এবং হাদীস থেকে দেখা যায় লোকেরা আল্লাহর সাথে চার (৪) প্রকার শিরক করে থাকে।

আল্লাহ তার সৃষ্টির হেফাজতের দায়িত্ব নিচ্ছেন, তার প্রয়োজন এমন সবকিছুর ব্যবস্থাপক এবং তিনি তার বান্দার সার্বক্ষণিক কার্যাবলীর পর্যবেক্ষণ করবেন। কাজেই প্রয়োজনীয় পূরণকারী হিসেবে আল্লাহ এবং জবাবদিহিতার জন্য এই আল্লাহর কাছেই আমাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে।

আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী:

এমন এক সত্তা যিনি মহাপরাক্রমশালী

যার সামনে মাথা তুলে দাঁড়াবার কারো শক্তি নেই

যার সম্মুখে সকলেই নিঃশক্তি, অসহায় ও অক্ষম।

আল্লাহ শক্তি প্রয়োগকারী আল্লাহ একনায়ক

আল্লাহ সংশোধনের উদ্দেশ্যে শক্তি প্রয়োগ করেন। এ নাম দ্বারা এটাও বুঝায় যে, তিনি এক বিশ্বকে সুস্থ, সঠিক ও সবল করে রাখেন।

আল্লাহ বড়ত্ব প্রকাশকারীঅহংকারী:

আল্লাহই একমাত্র বড়, বড়ত্ব তার জন্যই নির্দিষ্ট এবং বিশ্ব জাহানের সব বস্তু তার সামনে ক্ষুদ্র ও নগন্য। অন্যদিকে মানুষ বা অন্য যেকোন মাখলুকের প্রকৃতপক্ষে কোন বড়ত্ব নেই। তাই নিজেকে দ্বারা সংঘটিত না হয়। আল্লাহ স্বমহিমায় ভাস্বর। আল্লাহ সমস্ত পংকিলতা থেকে মুক্ত। আমরা যদি চিন্তা এবং কর্মে শিরক থেকে বেঁচে থাকতে না পারি, তবে সে অনিষ্ট, ক্ষতি একান্তই আমাদের।

২৪ নং আয়াতও শুরু হয়েছে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার ঘোষণা দিয়ে। এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টিকর্ম তথা তার ক্ষমতার সুন্দর একটি রূপ ফুটে উঠেছে। আল্লাহ বলছেন-

– তিনিই সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী خَلق

– পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্দেশদানকারী برء

– সেই অনুপাতে রূপদানকারী تصوير

এখানে আল্লাহ তার সৃষ্টিকর্মকে তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায় ও স্তরে বর্ণনা করেছেন, যা ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে। সারা দুনিয়ায় এবং দুনিয়ার প্রতিটি বস্তু সৃষ্টির প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে তার নির্দিষ্ট আকার আকৃতিতে অস্তিত্ব লাভ করা পর্যন্ত পুরোপুরি তারই তৈরী ও লালিত পালিত। কোন কিছুই নিজ থেকে বা আকস্মিকভাবে তৈরি হয়ে যায়নি অথবা তার নির্মাণ ও পরিপাটি করণে অন্য কারো অবদানও নেই। মানুষ প্রকৃতপক্ষে কোন আবিষ্কারক নয়। মানুষ যা তৈরি করে তা আল্লাহর সৃষ্টি উপাদানসমূহে একটি আরেকটির সাথে জুড়ে দেয়। অস্তিত্বদানই এমন কোন জিনিসকে অস্তিত্ব দান করতে পারেন না।

১. আল্লাহর জাতের সাথে শিরক করা : যেমন- আল্লাহর পুত্র, কন্যা, স্ত্রী (নাউজুবিল্লা) আছে এই ধারণা করা।

২. আল্লাহর গুণাবলীর সাথে শিরক করা : যেমন- আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান এবং এরূপ আরো যে গুণাবলী রয়েছে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রে বা যেকোন কিছুকে আল্লাহর এসব গুণের সমতুল্য মনে করা।

৩. আল্লাহর ক্ষমতার সাথে শিরক করা : যেমন- আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, আল্লাহ গাফুরুর রহীম, আল্লাহ বিপদদানকারী ও বিপদ দূরীভ‚তকারী। পৃথিবীর সকল ক্ষমতাই আল্লাহর কাছে। কিন্তু রিযিকের জন্য, বিপদ দূর করার জন্য আল্লাহর তুলনায় ক্ষমতাবান মনে করা, এবং সে অনুযায়ী কাজ করাই শিরক।

৪. আল্লাহর অধিকারের সাথে শিরক : সমস্ত ইবাদত পাবার একমাত্র অধিকারী মহান আল্লাহ তা’আলা। কিন্তু মৃত ব্যক্তির কাছে চাওয়া, কারো সামনে মাথা নত করা, সম্পূর্ণই শিরক।

এইসমস্ত শিরক অনেক সময় মনের অজান্তেই অনিচ্ছাকৃতভাবে হতে পারে। তাই আমাদের চিন্তা, চেতনা, মনন এতটা স্বচ্ছ, নিঃসংকোচ, বিশ্বাসী হতে হবে, যাতে কোনভাবেই কোন প্রকার শিরক আমাদের না হয়।

কুরআনের নির্দেশ হচ্ছে :

আল্লাহ তা’আলার জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, তোমরা তার মাধ্যমেই তাকে ডাকো।

অন্যত্র বলা হয়েছে-

বল, তোমরা আল্লাহ’ নামে আহ্বান কর বা রহমান নামে আহ্বান কর, তোমরা যে নামেই আহ্বান কর, সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। (সূরা বনী ইসরাইল)

নামগুলো প্রকৃতপক্ষে সুন্দরতম। সুন্দরতম তাকেই বলা হয়, যা অন্তরকে সর্বোত্তম সৌন্দর্যের ধারণা দেয় ও সৌন্দর্য দিয়ে মনকে ভরে দেয়। এই নামগুলো নিয়ে মুমিনের চিন্তাভাবনা করা উচিত। যাতে এর প্রেরণা ও চেতনার আলোকে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। কেননা সে এ দ্বারা জানতে পারবে, আল্লাহ তা’আলা এ সব গুণ দ্বারা বান্দার গুণানি¦ত হওয়া পছন্দ করেন এ থেকে তার নিজেকে উন্নতি ও উৎকর্ষের দিকে ধাবিত করা উচিত।

সুন্দরতম নামসমূহের তাসবীহ বা প্রশংসা এরই মাধ্যমে শেষ হলো। সূরার প্রান্তে এসে সমগ্র বিশ্বজগতকে আল্লাহর প্রশংসায় মুখরিত দেখা যাচ্ছে।

আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সকলেই তার গুণগান ও প্রশংসা করে এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত বস্তুকে অস্তিত্বহীনভাবে দান করেছেন এবং যে উপাদান দিয়ে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সে উপাদানও তার নিজের তৈরী।

আরেকটি দিকও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। মানুষ যে কোন ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে পারে, পরিকল্পনার রূপ দিতে পারে কিন্তু বাস্তবায়ন আল্লাহর হাতে। যেমন কেউ রান্নার পরিকল্পনা করলো, আইটেম ঠিক করলো, সবকিছু কেটে, ধুয়ে প্রস্তুত করলো। কিন্তু আগুনে দেবার আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন, রান্না হলো না। অর্থাৎ তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। এভাবে সর্বক্ষেত্রে আমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী।

উত্তম নামসমূহ আল্লাহর:

নাম অর্থাৎ গুণবাচক নাম। এসমস্ত নাম তার পূর্ণাঙ্গ গুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহর নামসমূহের উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে-

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্থ করবে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।

বস্তুত এই গুণাবলীর উল্লেখের পর স্বভাবতই প্রত্যেকের মনে আল্লাহর গুণগান, প্রশংসা এবং সর্বলোকে তার ক্ষমতার চিত্রই ফুটে ওঠে।

কাজেই আমাদের

– সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য ও সার্বভৌমত্ব মানতে হবে

– আল্লাহর নজরবন্দী বান্দা তাই তাকওয়া বৃদ্ধি করতে হবে।

– আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ জানতে  হবে এবং উত্তম নামের অনুসরণে নিজেকে গঠনে চেষ্টা করতে হবে।

– আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ চিন্তা ও গবেষণা করতে হবে, তাতে আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে এবং গভীর বিশ্বাসের ফলশ্র‘তিতে আমার সার্বিক কাজ সুশৃঙ্খল, সুষমামণ্ডিত এবং আনুগত্যপরায়ণ হবে।

– সর্বদা আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা তার উত্তম নামসমূহের আদলে আমাদের ঈমান এবং আমল বৃদ্ধি করার তৌফিক দিন আমীন।

আল্লাহই একমাত্র বড়, বড়ত্ব তার জন্যই নির্দিষ্ট এবং বিশ্ব জাহানের সব বস্তু তার সামনে ক্ষুদ্র ও নগন্য। অন্যদিকে মানুষ বা অন্য যেকোন মাখলুকের প্রকৃতপক্ষে কোন বড়ত্ব নেই। তাই নিজেকে দ্বারা সংঘটিত না হয়। আল্লাহ স্বমহিমায় ভাস্বর। আল্লাহ সমস্ত পংকিলতা থেকে মুক্ত। আমরা যদি চিন্তা এবং কর্মে শিরক থেকে বেঁচে থাকতে না পারি, তবে সে অনিষ্ট, ক্ষতি একান্তই আমাদের।

২৪ নং আয়াতও শুরু হয়েছে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার ঘোষণা দিয়ে। এখানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সৃষ্টিকর্ম তথা তার ক্ষমতার সুন্দর একটি রূপ ফুটে উঠেছে। আল্লাহ বলছেন-

– তিনিই সৃষ্টির পরিকল্পনাকারী خَلق

– পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্দেশদানকারী برء

– সেই অনুপাতে রূপদানকারী تصوير

এখানে আল্লাহ তার সৃষ্টিকর্মকে তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায় ও স্তরে বর্ণনা করেছেন, যা ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত হয়ে থাকে। সারা দুনিয়ায় এবং দুনিয়ার প্রতিটি বস্তু সৃষ্টির প্রাথমিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে তার নির্দিষ্ট আকার আকৃতিতে অস্তিত্ব লাভ করা পর্যন্ত পুরোপুরি তারই তৈরী ও লালিত পালিত। কোন কিছুই নিজ থেকে বা আকস্মিকভাবে তৈরি হয়ে যায়নি অথবা তার নির্মাণ ও পরিপাটি করণে অন্য কারো অবদানও নেই। মানুষ প্রকৃতপক্ষে কোন আবিষ্কারক নয়। মানুষ যা তৈরি করে তা আল্লাহর সৃষ্টি উপাদানসমূহে একটি আরেকটির সাথে জুড়ে দেয়। অস্তিত্বদানই এমন কোন জিনিসকে অস্তিত্ব দান করতে পারেন না।

১. আল্লাহর জাতের সাথে শিরক করা : যেমন- আল্লাহর পুত্র, কন্যা, স্ত্রী (নাউজুবিল্লা) আছে এই ধারণা করা।

২. আল্লাহর গুণাবলীর সাথে শিরক করা : যেমন- আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান এবং এরূপ আরো যে গুণাবলী রয়েছে, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রে বা যেকোন কিছুকে আল্লাহর এসব গুণের সমতুল্য মনে করা।

৩. আল্লাহর ক্ষমতার সাথে শিরক করা : যেমন- আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, আল্লাহ গাফুরুর রহীম, আল্লাহ বিপদদানকারী ও বিপদ দূরীভ‚তকারী। পৃথিবীর সকল ক্ষমতাই আল্লাহর কাছে। কিন্তু রিযিকের জন্য, বিপদ দূর করার জন্য আল্লাহর তুলনায় ক্ষমতাবান মনে করা, এবং সে অনুযায়ী কাজ করাই শিরক।

৪. আল্লাহর অধিকারের সাথে শিরক : সমস্ত ইবাদত পাবার একমাত্র অধিকারী মহান আল্লাহ তা’আলা। কিন্তু মৃত ব্যক্তির কাছে চাওয়া, কারো সামনে মাথা নত করা, সম্পূর্ণই শিরক।

এইসমস্ত শিরক অনেক সময় মনের অজান্তেই অনিচ্ছাকৃতভাবে হতে পারে। তাই আমাদের চিন্তা, চেতনা, মনন এতটা স্বচ্ছ, নিঃসংকোচ, বিশ্বাসী হতে হবে, যাতে কোনভাবেই কোন প্রকার শিরক আমাদের না হয়।

কুরআনের নির্দেশ হচ্ছে :

আল্লাহ তা’আলার জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, তোমরা তার মাধ্যমেই তাকে ডাকো।

অন্যত্র বলা হয়েছে-

বল, তোমরা আল্লাহ’ নামে আহ্বান কর বা রহমান নামে আহ্বান কর, তোমরা যে নামেই আহ্বান কর, সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। (সূরা বনী ইসরাইল)

নামগুলো প্রকৃতপক্ষে সুন্দরতম। সুন্দরতম তাকেই বলা হয়, যা অন্তরকে সর্বোত্তম সৌন্দর্যের ধারণা দেয় ও সৌন্দর্য দিয়ে মনকে ভরে দেয়। এই নামগুলো নিয়ে মুমিনের চিন্তাভাবনা করা উচিত। যাতে এর প্রেরণা ও চেতনার আলোকে নিজেকে গড়ে তোলা যায়। কেননা সে এ দ্বারা জানতে পারবে, আল্লাহ তা’আলা এ সব গুণ দ্বারা বান্দার গুণানি¦ত হওয়া পছন্দ করেন এ থেকে তার নিজেকে উন্নতি ও উৎকর্ষের দিকে ধাবিত করা উচিত।

সুন্দরতম নামসমূহের তাসবীহ বা প্রশংসা এরই মাধ্যমে শেষ হলো। সূরার প্রান্তে এসে সমগ্র বিশ্বজগতকে আল্লাহর প্রশংসায় মুখরিত দেখা যাচ্ছে।

আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সকলেই তার গুণগান ও প্রশংসা করে এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা’আলা সমস্ত বস্তুকে অস্তিত্বহীনভাবে দান করেছেন এবং যে উপাদান দিয়ে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সে উপাদানও তার নিজের তৈরী।

আরেকটি দিকও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। মানুষ যে কোন ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে পারে, পরিকল্পনার রূপ দিতে পারে কিন্তু বাস্তবায়ন আল্লাহর হাতে। যেমন কেউ রান্নার পরিকল্পনা করলো, আইটেম ঠিক করলো, সবকিছু কেটে, ধুয়ে প্রস্তুত করলো। কিন্তু আগুনে দেবার আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন, রান্না হলো না। অর্থাৎ তিনি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলেন না। এভাবে সর্বক্ষেত্রে আমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী।

উত্তম নামসমূহ আল্লাহর:

নাম অর্থাৎ গুণবাচক নাম। এসমস্ত নাম তার পূর্ণাঙ্গ গুণ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহর নামসমূহের উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে-

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, মহান আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি এগুলো মুখস্থ করবে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।

বস্তুত এই গুণাবলীর উল্লেখের পর স্বভাবতই প্রত্যেকের মনে আল্লাহর গুণগান, প্রশংসা এবং সর্বলোকে তার ক্ষমতার চিত্রই ফুটে ওঠে।

কাজেই আমাদের

– সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্য ও সার্বভৌমত্ব মানতে হবে

– আল্লাহর নজরবন্দী বান্দা তাই তাকওয়া বৃদ্ধি করতে হবে।

– আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ জানতে  হবে এবং উত্তম নামের অনুসরণে নিজেকে গঠনে চেষ্টা করতে হবে।

– আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ চিন্তা ও গবেষণা করতে হবে, তাতে আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে বিশ্বাস আরো দৃঢ় হবে এবং গভীর বিশ্বাসের ফলশ্র‘তিতে আমার সার্বিক কাজ সুশৃঙ্খল, সুষমামণ্ডিত এবং আনুগত্যপরায়ণ হবে।

– সর্বদা আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা তার উত্তম নামসমূহের আদলে আমাদের ঈমান এবং আমল বৃদ্ধি করার তৌফিক দিন আমীন।

No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।