আলোচনা - বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাওয়াতের হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

September 18, 2021

আলোচনা - বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাওয়াতের হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি

 


বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাওয়াতের হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতি

. মুবারক হোসাঈন

তার কথার চাইতে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে ও সৎকর্ম করে এবং বলে আমি মুসলমান”(হামীম আস সাজদা: ৩৩)

প্রকৃত দাওয়াত দানকারী তিনিই-যিনি মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার আগে নিজেকে আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দেন, অর্থাৎ First you sell yourself”.

বাইবেল গ্রন্থে বলা হয়েছে to do good and communicate, forget not”.

আধুনিক যুগে দাওয়াতী কাজে সফলতা লাভ করতে হলে দাওয়াতের পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।

সাধারণত প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা ও চেতনা দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে।

আজকের যুগে দাওয়াতী কাজ করা মানে হাতের তালুতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ রাখা যেমন কঠিন তার চেয়েও বেশি কঠিন বর্তমান মানুষের কাছে, কারণ যুগের পরিবর্তনে মানুষের অনেক পরিবর্তন হয়েছে, মানুষ তার বয়সের তুলনায় অনেক বেশি অগ্রসর হচ্ছে।

দাওয়াতের অর্থ কি ?

দাওয়াত শব্দটি আরবি দাওয়াতুন’ (دعوة) থেকে। অর্থআহবান, ডাকা, নিমন্ত্রণ ইত্যাদি। The Hanswehr Dictionary of Modern Written Arabic- এ দাওয়াহ শব্দটির অর্থে বলা হয়েছে : Missionary activity, Missionary work, Propaganda. অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের দিকে আহবান করা, অনুপ্রাণিত করা বা ডাকাকে বলা হয় দাওয়াত।

দাওয়াত দুই ধরণের হতে পারেঃ

১. নেতিবাচকঃ

হাদিসঃ রাসূল (সা:) বলেন, যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে মানুষদেরকে ডাকে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের একটি অংশ। প্রশ্ন করা হলো সে যদি নামাজ পড়ে এবং রোজা রাখে। জবাবে রাসূল বলেন যদি সে নামাজ পড়ে রোজা রাখে এবং বলে আমি একজন মুসলমান তবুও তার জন্য জাহান্নামের অংশ রয়েছে। মুসলিম

২. ইতিবাচকঃ

ইতিবাচক দাওয়াতের দুটি দিক রয়েছে।

১. প্রকাশ্য দাওয়াত বা মৌখিক দাওয়াত

২. অপ্রকাশ্য দাওয়াত বা চারিত্রিক দাওয়াত

মানব সৃষ্টির পর তার সামনের দুটো দিক খুলে দেয়া হয়েছেঃ

﴿إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا﴾

আমরা পথ দেখিয়ে দিলাম মানুষকে এজন্য যে তাদের কারা কৃতজ্ঞ ও কারা অস্বীকারকারী । (আল ইনসান: ৩)

আমি মানুষকে দেখিয়েছি-

১) কৃতজ্ঞতা বা আনুগত্যের পথ

২) কুফরীর পথ

আমরা আশরাফুল মাখলুকাত। অর্থাৎ সব সৃষ্টির সেরা জীব। আবার মুসলমান হচ্ছে শ্রেষ্ঠ উম্মত বা শ্রেষ্ঠ জাতি। কুরআনে সুরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ বলেন-

﴿كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ ﴾

তোমরাই হলে সর্বোত্তম জাতি, মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মুসলমান অর্থ আত্মসমর্পণকারী ।

দাওয়াত দানের গুরুত্বঃ

সাহাবীদের সংখ্যা ছিল সোয়া লক্ষের মত। কিন্তু মক্কা ও মদীনায় সাহাবীদের কবরের সংখ্যা প্রায় বিশ হাজার। বাকী লক্ষাধিক সাহাবী কোথায়? তারা মসজিদুল হারাম কিংবা মসজিদে নববীতে কেবল নামায আদায় করে নেকি বা সোয়াব হাসিলের পরিবর্তে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছেন মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার জন্য। ঘর-বাড়ী, ধন-সম্পদ ও আত্মীয়-স্বজনের মমতার বন্ধন ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন কুফুরী থেকে আনুগত্যের দিকে এবং অন্ধকার থেকে আলোর দিকে দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে। তারা মক্কা-মদীনায় পড়ে থাকা অপেক্ষা মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়াকে শ্রেষ্ঠ মনে করেছেন- যে কাজের দায়িত্ব ছিল আল্লাহর প্রেরিত সব নবী রাসূলদের।

ইউনুস (আঃ) সারাদিন অপেক্ষা করে দাওয়াতী কাজ করে কোনো ফলাফল না পেয়ে চলে যাচ্ছিলেন। নদীতে মাঝামাঝি পর্যায়ে নৌকা আটকে গেল। স্থায়ী লটারি করা হল, লটারিতে ইউনুস (আঃ) এর নাম উঠল, আবারও লটারি করা হল আবারও নাম উঠল, তারপর আবারও লটারি করা হল, আবারও ইউনুস (আঃ) এর নাম উঠল। তিনি বললেন আমাকেই ফেলে দাও। তাকে নদীতে ফেলে দেয়া হলো। তিমি ইউনুস (আঃ) কে খেয়ে ফেলল-তিমির পেটে ইউনুস (আঃ) দোয়া করলেন

﴿ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ﴾

তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি৷

দ্বীন অর্থ কি ?

দ্বীন অর্থ জীবন ব্যবস্থা, আনুগত্য, কর্তৃত্ব, প্রতিদান।

দাওয়াতী দ্বীনের কাজ আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরজ:

যেমন- আল্লাহর বাণী:

১. সূরা হা-মীম আস-সাজদাদাওয়াতের কাজ হচ্ছে সর্বোত্তম কাজ।

﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ﴾

সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হবে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান ৷ (হা-মীম আস-সাজদা-৩৩)

২. জিহাদের ১ম কাজ দাওয়াত

৩. সূরা আন নাহল-সরাসরি দাওয়াতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

﴿ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ﴾

হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে৷ তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং সে আছে সঠিক পথে৷ (আন নাহল-১২৫)

﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ ۚ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾

প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো৷” এরপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহ সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন এবং কারোর ওপর পথভ্রষ্টতা চেপে বসেছে৷ তারপর পৃথিবীর বুকে একটু ঘোরাফেরা করে দেখে নাও যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিণাম কি হয়েছে৷ (আন-নাহল-৩৬)

﴿كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ﴾

এখন তোমরাই দুনিয়ায় সর্বোত্তম দল৷ তোমাদের কর্মক্ষেত্রে আনা হয়েছে মানুষের হিদায়াত ও সংস্কার সাধনের জন্য৷ তোমরা নেকীর হুকুম দিয়ে থাকো, দুষ্কৃতি থেকে বিরত রাখো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনো৷ এই আহলি কিতাবরা ঈমান আনলে তাদের জন্যই ভালো হতো৷ যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক ঈমানদার পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের অধিকাংশই নাফরমান৷ (আলে-ইমরান-১১০)

﴿وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾

তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে, যারা নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে, ভালো কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে৷ যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই সফলকাম হবে ৷ (আলে-ইমরান-১০৪)

﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا﴾﴿وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا﴾

এবং তাদের জন্য আল্লাহ বড়ই সম্মানজনক প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷ হে নবী! আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী বানিয়েসুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী করে আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ হিসেবে৷ (আহযাব-৪৫-৪৬

﴿فَلِذَٰلِكَ فَادْعُ ۖ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ ۖ وَقُلْ آمَنتُ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِن كِتَابٍ ۖ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ ۖ اللَّهُ رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ ۖ لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ ۖ لَا حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ ۖ اللَّهُ يَجْمَعُ بَيْنَنَا ۖ وَإِلَيْهِ الْمَصِيرُ﴾

যেহেতু এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাই হে মুহাম্মাদ এখন তুমি সেই দীনের দিকেই আহবান জানাও এবং যেভাবে তুমি আদিষ্ট হয়েছো সেভাবে দৃঢ়তার সাথে তা আঁকড়ে ধরো এবং এসব লোকের ইচ্ছা আকাংখার অনুসরণ করো না৷ এদের বলে দাও, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তার ওপর ঈমান এনেছি৷  আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যেন তোমাদের মধ্যে ইনসাফ করি৷ আল্লাহই আমাদেরও রব এবং তোমাদেরও রব তিনিই৷ আমাদের কাজকর্ম আমাদের জন্য আর তোমাদের কাজকর্ম তোমাদের জন্য৷ আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোন বিবাদ নেই৷ একদিন আল্লাহ আমাদের সবাইকে একত্রিত করবেন৷ তাঁর কাছেই সবাইকে যেতে হবে৷” (আশ-শুরা-১৫)

﴿لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾

নুহকে আমি তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই৷ সে বলেঃ হে আমার স্বগোত্রীয় ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই৷  আমি তোমাদের জন্য একটি ভয়াবহ দিনের আযাবের আশংকা করছি৷ (আরাফ-৫৯)

﴿وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ هَٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾

আর সামূদের কাছে পাঠাই তাদের ভাই সালেহকে৷ সে বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা! তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো৷ তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই৷ তোমাদের কাছে তোমাদের রবের সুষ্পষ্ট প্রমাণ এসে গেছে৷ আল্লাহর এ উটনীটি তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন৷ কাজেই তাকে আল্লাহর জমিতে চরে খাবার জন্যে ছেড়ে দাও৷ কোন অসদুদ্দেশ্যে এর গায়ে হাত দিয়ো না৷ অন্যথায় একটি যন্ত্রনাদায়ক আযাব তোমাদের ওপর আপতিত হবে৷ (আরাফ-৭৩)

﴿وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾

আর মাদইয়ানবাসীদের  কাছে আমি তাদের ভাই শোআইবকে পাঠাই৷ সে বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই৷ তোমাদের কাছে তোমাদের রবের সুষ্পষ্ট পথনির্দশনা এসে গেছে৷ কাজেই ওজন ও পরিমাপ পুরোপুরি দাও, লোকদের পাওনা জিনিস কম করে দিয়ো না৷  এবং পৃথিবী পরিশুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার মধ্যে আর বিপর্যয় সৃষ্টি করো না৷ এরই মধ্যে রয়েছে তোমাদের কল্যাণ ,যদি তোমরা যথার্থ মুমিন হয়ে থাকো৷”(আরাফ-৮৫)

﴿وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾

আর আদ (জাতি)র কাছে আমি পাঠাই তাদের ভাই হূদকে৷ সে বলেঃ হে আমার সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা !তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো৷ তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই৷ এরপরও কি তোমরা ভুল পথে চলার ব্যাপারে সাবধান হবে না?”(আরাফ-৬৫)

﴿إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ۚ وَإِن مِّنْ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِيهَا نَذِيرٌ﴾

আমি তোমাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছি সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী বানিয়ে৷ আর এমন কোন সম্প্রদায় অতিক্রান্ত হয়নি যার মাধ্যে কোন সতর্ককারী আসেনি৷ (ফাতির-২৪)

﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ﴾

আমি এর আগে মূসাকেও নিজের নিদর্শনাবলী সহকারে পাঠিয়েছিলাম৷ তাকেও আমি হুকুম দিয়েছিলাম, নিজের সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে এসো এবং তাদেরকে ইতিহাসের শিক্ষণীয় ঘটনাবলী শুনিয়ে উপদেশ দাও৷ এ ঘটনাবলীর মধ্যে বিরাট নির্দশণ রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সবর করে ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে৷ (ইব্রাহীম-৫)

﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ﴾﴿قُمْ فَأَنذِرْ﴾﴿وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ﴾

হে বস্ত্র মুড়ি দিয়ে শয়নকারীওঠো এবং সাবধান করে দাওতোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো (মুদ্দাচ্ছির-১-৩)

﴿وَقُل لِّعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوًّا مُّبِينًا﴾

আর হে মুহাম্মাদ! আমার বান্দাদেরকে বলে দাও, তারা যেন মুখে এমন কথা বলে যা সর্বোত্তম৷ আসলে শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে৷ প্রকৃতপক্ষে শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু৷ (বনি-ইসরাঈল-৫৩)

রাসুলের (স.) মিশন ছিল দাওয়াত:

- রাসুলের দায়িত্বের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা

- নিজেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ রাখা যায়

- সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে দাওয়াত দিতে হবে

- আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য

- আখেরাতের নাজাতের জন্য

- আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ

- আল্লাহ রসুল (সঃ) এর সর্বশেষ নির্দেশ ছিল দাওয়াত দান।

- দাওয়াত দান করা ফরজে আইন।

- সাহাবায়ে আজমাঈন আনুগত্য করে দিখিয়ে গেছেন

আমরা দাওয়াত কেন দেব?

১.দাওয়াত দেয়া মৌলিক দায়িত্ব:

﴿يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ ۚ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ﴾

হে রাসূল (স.)! আপনার উপর আপনার প্রতিপালক যা অবর্তীণ করেছেন তা পৌঁছে দিন । যদি এ কাজ না করেন তবে রিসালতের দায়িত্বই পালন করা হয়নি। (আল-মায়েদা :৬৭)

﴿ يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ﴾ ﴿قُمْ فَأَنذِرْ﴾ ﴿وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ﴾

হে চাদর আবৃত ব্যাক্তি! উঠুন ও ভয় প্রদর্শন করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আল-মুদ্দাসসির:১-৩

﴿هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ﴾

নিশ্চয়ই আমি হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে রাসূলকে (সা:) পাঠিয়েছি অন্য সকল দ্বীনের উপর ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। (আস-সফ:৯)

২.প্রকাশ্য ও গোপনে দাওয়াত:

﴿ثُمَّ إِنِّي دَعَوْتُهُمْ جِهَارًا﴾ ﴿ثُمَّ إِنِّي أَعْلَنتُ لَهُمْ وَأَسْرَرْتُ لَهُمْ إِسْرَارًا﴾

আমি তাদেরকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিয়েছি। অতঃপর আমি ঘোষণা সহকারে প্রচার করেছি এবং তাদেরকে গোপনে চুপিসারে ও দাওয়াত দিয়েছি। (নুহ :৮-৯)

৩.দাওয়াত হবে সর্বাবস্থায় :

﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي دَعَوْتُ قَوْمِي لَيْلًا وَنَهَارًا﴾

তিনি বলেন, হে প্রভু আমি আমার জাতিকে রাতে দিনে সর্বাবস্থায় দ্বীনের দিকে আহবান করছি। (নুহ-৫)

দাওয়াতের কেন্দ্রবিন্দু হবে-

(ক) তাওহীদ

(খ) রিসালাত

(গ) আখেরাত

দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও রাসূল (সা:) এর ভূমিকাঃ

আম্বিয়া আলাইহিস সালামদের দাওয়াতি কর্মকান্ডের বর্ণনা করেই শেষ করা হয়নি বরং রাসূল (সা) এর প্রতি দাওয়াতি কাজের গুরুত্ব এভাবে নাযিল করা হয়েছে যে,

﴿يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ ۚ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ﴾

হে রাসূল আপনার প্রতি যা কিছু অবর্তীণ করা হয়েছে তা যথাযথভাবে পৌছে দিন। (অর্থাৎ পরিপূর্ণ দাওয়াত পৌঁছে দিন) যদি আপনি না করতে পারেন তা হলে আপনি রেসালাতের সঠিক দায়িত্ব পালন করলেন না। (আল-মায়েদা: ৬৭।

হাদীস :হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল (সা:) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার একটি হাদিস শুনেছে এবং যে ভাবে শুনেছে ঠিক সে ভাবেই তা অপরের নিকট পৌঁছিয়েছেন। কেননা অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয়েছে সে ব্যক্তি শ্রোতা অপেক্ষা অধিক রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে থাকে। তিরমিযি ও ইবনে মাজাহ।

নবী ও রাসুলগণের দাওয়াতঃ

১. হযরত নূহ (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾

আমরা নূহ্কে তার জাতির লোকদের প্রতি প্রেরণ করেছি; তিনি বলেন, হে জাতির লোকেরা তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর। কেননা তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নাই। আমি তোমাদের জন্য একটি বড় আজাবের ভয় পোষণ করি।” (রাফ- ৫৯)

২. হযরত হুদ (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾

এবং আদজাতির প্রতি আমরা তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছি। তিনি বললেন, হে জাতির লোকেরা, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নাই। এর পরেও কি তোমরা ভয় করে চলবে না।” (রাফ- ৬৫)

৩. হযরত সালেহ (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ ﴾

এবং সামুদজাতির প্রতি আমরা তাদের ভাই সালেহকে পাঠিয়েছি। তিনি বললেন, হে জাতির লোকেরা, তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নাই। (আরাফ- ৭৩)

৪. হযরত লুত (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِينَ﴾

এবং লুত যখন নিজ জাতির লোকদের বললেন, তোমরা এমন সব নির্লজ্জ কাজ করছো যে, তোমাদের পূর্বে দুনিয়ায় কেউ এ কাজ করেনি। তোমরা নারীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে কাম বাসনা চরিতার্থ করছো; বরং তোমরা সীমালংঘনকারী একটি জাতি।” (রাফ- ৮০)

৫. হযরত শোয়াইব (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾

আর মাদিয়ানবাসিদের প্রতি আমরা তাদের ভাই শোয়াইবকে পাঠিয়েছি। তিনি বল্লেন; হে জাতির লোকেরা, আল্লাহর দাসত্ব কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ নেইতোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দলিল এসে গেছে। অতএব ওজন ও পরিমাপ পূর্ণমাত্রায় কর, লোকদের তাদের দ্রব্যে ক্ষতিগ্রস্থ করে দিওনা এবং পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না, যখন তা সংশোধন ও সংস্কার হয়েছে। এর মধ্যে তোমাদের কল্যাণ নিহিত, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।” (রাফ- ৮৫)

৬. হযরত ইউসুফ (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ﴾ ﴿مَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنتُمْ وَآبَاؤُكُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ﴾

হে কারা বন্ধুগণ! বিভিন্ন বর কি উত্তম না মহাপ্রাক্রমশালী এক আল্লাহ? তোমরা তো আল্লাহকে ছেড়ে অবাস্তব নামের পুজা করছো- যাদেরকে তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা সাব্যস্ত করে নিয়েছে, আল্লাহ তো সেগুলি সমন্ধে কোন প্রমাণ পাঠান নাই। নিশ্চয়ই হুকুম দেয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহর, তোমাদেরকে এই মর্মে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে যে, একনিষ্টভাবে কেবলমাত্র তারই ইবাদত করবে। এটিই হচ্ছে তোমাদের জন্য স্থায়ী বিধান(ইউসুফ- ৩৯,৪০)

৭. হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ آزَرَ أَتَتَّخِذُ أَصْنَامًا آلِهَةً ۖ إِنِّي أَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾

স্মরণ কর ইব্রাহিমের ঘটনা, যখন তিনি তার পিতা আজরকে বলেছিলেন, তুমিতো মূর্তি গুলোকেই ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছ। আমিতো তোমাকে এবং তোমার জাতিকে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত দেখতে পাচ্ছি। (আনআম- ৭৪)

৮. হযরত মুসা (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنكُمْ وَأَنتُم مُّعْرِضُونَ﴾

স্মরণ কর যখন আমরা বনি ইসরাইলদের নিকট থেকে এই প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করবে না। মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও মিসকীনের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। মানুষের সাথে সুন্দর সুন্দর কথাবার্তা বলবে, নামাজ কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। মুষ্টিমেয় লোক ছাড়া তোমরা সকলেই এই প্রতিশ্রুতি ভংগ করেছ এবং শেষ পর্যন্ত ঐ অবস্থায় রয়ে গেছ।” (বাকারাহ- ৮৩)

৯. হযরত ঈসা (আঃ) এর দাওয়াতঃ

﴿ وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ ۖ إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ﴾

এবং মসীহ তো বলেছিল; হে বনী ইসরাইলের লোকেরা, আল্লাহর দাসত্ব কর, যিনি আমারও রব তোমাদেরও রব। বস্তুতঃ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে যে শরীক করেছে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। আর তাদের পরিণতি হবে জাহান্নাম। এই যালেমদের কোন সাহায্যকারী নাই।” (মায়েদা- ৭২)

আমাদের দাওয়াতের ক্ষেত্রঃ

১)সকল ছাত্র

২)প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী

৩) আত্মীয় স্বজন

৪) নিজ পরিবার

৫) প্রতিবেশীর মাঝে

৬) সাধারণ জনগণের মাঝে

৭) কর্মক্ষেত্রে

৮) পেশাজীবিদের মাঝে

৯) সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মাঝে

দাওয়াত দানের উপকারিতাঃ

১)নিজের পরিশুদ্ধি ঘটে

২) জ্ঞান বৃদ্ধি পায়

৩) দুনিয়া ও আখেরাতে মর্যাদাবান হবেন

৪) সদকায়ে জারিয়া

রাসূল (সঃ)-এর ৬টি বৈশিষ্ট্য ইমাম মুসলিমঃ

১)বাগ্মীতা (কথার যাদু)

২) Personality (ব্যক্তিত্ব)

৩) গণীমাত হারাম

৪) সকল স্থানকে মসজিদ বানানো হয়েছে

৫) সমগ্র সৃষ্টির জন্য নবী

৬) খাতামুন নাবিয়্যিন।

দাওয়াত দানকারীর বৈশিষ্ট্য:

১. দায়ীকে হেকমাত অবলম্বন করা:

স্বাভাবিক সময়ে

অস্বাভাবিক সময়ে

২. উত্তম উপদেশ বর্ণনার অধিকারী হওয়া

৩. দায়ীকে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে দাওয়াত উপস্থাপনের যোগ্য হওয়া।

(এ ক্ষেত্রে কোরআন ও হাদিসের বক্তব্য গুলি উপস্থাপন করতে পারলে ফলাফল বেশী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।)

৪. দায়ীকে চরম ধৈর্যশীল হওয়া।

আর ধৈর্য ধারণ দায়ীকে বিরাগ ও ক্ষমার মানসিকতার অধিকারী হওয়া।

আর তারা রাগকে সংবরণকারি এবং মানুষদের প্রতি ক্ষমাশীল।

৫. দায়ীকে কথা ও কাজের মিল রাখা

হে ঈমানদার লোকেরা তোমরা এমন কথা কেন বল যে কাজ তোমরা কর না। সূরা সফ, আয়াত ২)

৬. দায়ীকে জ্ঞানগত দিকে শ্রেষ্ঠ হওয়া।

৭. দায়ীকে টার্গেটকৃত ব্যক্তির মন মানসিকতা ও অবস্থার প্রতি নজর রাখা।

৮. দাওয়াতকে সহজ রূপে দাওয়াত পেশকারী হওয়া।

৯. আদর্শের পুর্নাঙ্গ জ্ঞান এবং সে অনুযায়ী চরিত্র ও কর্ম থাকা ।

১০. দাওয়াতী কাজের টার্গেট থাকবে একটাই-আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

১১. কঠোর পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল হবেন।

১২. উদার মনের তথা বিশাল হৃদয়ের অধিকারী হবেন।

১৩. সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা।

১৪. চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলা, কম কথা বলা ও কৃত্রিমতা পরিহার করা।

১৫. ভাষা সহজ সরল, যুক্তি ভিত্তিক ও সুন্দর হওয়া। যেমন- মূসা (আঃ) এর দোয়া।

১৬. দায়ীর কথা ইতিবাচক হবে; নেতিবাচক নয়।

১৭. কারো বিরুদ্ধে কথা না বলা।

১৮. মন-মানসিকতা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলা।

১৯. তাড়া-হুড়ো পরিহার করা।

দাওয়াত উপস্থাপনের ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আমাদের করণীয়ঃ

* চ্যালেঞ্জ তিন ধরনেরঃ

1. Fighting challenge

2. Technical challenge

3. Intellectual challenge

* নিজেদের প্রচার করার ক্ষেত্রে প্রান্তিক শব্দ পরিহার করা।

* দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে Extreme word ব্যবহার না করা।

* কোন মানুষকেই স্থায়ী শত্রু মনে না করা।

* কোন মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন না করা।

* দাওয়াতী কাজে কৃত্রিমতা পরিহার করা।

* মানুষের ইতিবাচক দিকের প্রসংশা করা।

* কাজের এখনই সময়, এইতো করছি/করবো এধরনের মানসিকতা পরিহার করা।

লক্ষ্য ঠিক করার জন্য SMART টেকনিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে তার ব্যাখ্যা দেয়া হল:

S = Specific বা সুনির্দিষ্ট

M = Measurable বা পরিমাপযোগ্য

A = Achievable বা অর্জনযোগ্য

R = Realistic বা বাস্তবধর্মী

T = Timeframe বা সময়কাঠামো

সাফল্যের জন্য আরো যা জানতে হবে:

SEE Factors

S = Smile বা হাস্যময়

E = Eye Contact বা মনযোগ

E = Enthusiasm বা উদ্যোগ

আরও ৮টি নির্দেশনা হল :

১)ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

২) ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা

৩)সময়ানুবর্তী হওয়া

৪) প্রস্তুত থাকা

) নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা

) নিয়ন্ত্রণে রাখা

) সঠিকভাবে কাজ করা

) পরিপূর্ণভাবে কাজ সম্পন্ন করা

আমরা দাওয়াত কিভাবে দিব-দাওয়াত দানের কৌশল

১.বিনয়ের মাধ্যমে দাওয়াত

﴿اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ﴾ ﴿فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ﴾

আপনারা দুইজন ফিরআউনের কাছে যান। নিশ্চয় সে বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছে। তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবেন। হয়তো সে উপদেশ কবুল করবে অথবা ভয় পাবে। (ত্বাহা:৪৩-৪৪)

২.বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে দাওয়াত

﴿ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ﴾

আপনি পালনকর্তার পথের দিকে আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও শুনিয়ে উত্তম রুপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালন কর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তার পথ থেকে বিচ্যুতি হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে যারা সঠিক পথে আছে। (নাহল-১২৫)

৩.মন্দের মোকাবেলায় ভাল দিয়ে দাওয়াত

﴿وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ۚ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ﴾

ভাল ও মন্দ সমান নয়। জওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্ট। তখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। (হা মিম সিজদাহ-৩৪)

দাওয়াত দানকারীর যা লক্ষণীয়ঃ

১. মর্যাদাবান ব্যক্তির মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রেখে দাওয়াত দান

﴿اذْهَبَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَىٰ﴾ ﴿فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَىٰ﴾

তোমরা ফেরাউনের কাছে যাও, কেননা সে সীমা লংঘন কারী হয়ে গেছে। তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে; সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে কিংবা ভয় পেয়ে যাবে।” (ত্বাহা- ৪৩,৪৪)

২. মন-মেজাজ লক্ষ্য করে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ গ্রহণ

৩. প্রতিবাদী পরিবেশে নয়, অনুকুল পরিবেশে দাওয়াত দান

﴿وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ ﴾

তুমি যখন দেখবে যে, লোকেরা আমার আয়াত সমুহের দোষ সন্ধান করতেছে তখন তাদের নিকট হতে সরে যাও যতক্ষণ না তারা এ প্রসংগের কথা-বার্তা বন্ধ করে অপর কোন কাজে মগ্ন হয়।” (আনআম- ৬৮)

৪. অন্যমনস্ক ব্যক্তির কাছে দাওয়াত না দেয়া

৫. যুক্তি প্রমাণ পেশ করার সময় ব্যক্তির যোগ্যতার দিকে খেয়াল রাখা

দাওয়াতে দ্বীনের পদ্ধতিঃ

১. জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে দাওয়াতের পদ্ধতির উন্নতি করা:

﴿اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ﴾ ﴿الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ﴾ ﴿عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ﴾

পড়, তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানতো না।” (আলাক- ৩,,৫)

২. নিম্নলিখিত পন্থাগুলি অবলম্বন করার মাধ্যমে দাওয়াতঃ

১. সাধারণ দাওয়াত

২. চিঠি-পত্রের মাধ্যমে দাওয়াত

৩. বই পড়ানোর মাধ্যমে দাওয়াত

৪. সমস্যার সমাধান দেখিয়ে দাওয়াত

৫. মিডিয়ার মাধ্যমে দাওয়াত (প্রিন্টিং ও ইলেক্ট্রনিক্স)

৬. ইন্টারনেট’, ‘ফেসবুকইত্যাদির মাধ্যমে দাওয়াত

৭. আল্লাহর ক্ষমতা মাহাত্ম্য প্রমাণের মাধ্যমে দাওয়াত

৩. সামাজিক কাজে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে দাওয়াতঃ

৪. মর্যাদার পরিপন্থি পদ্ধতি পরিত্যাগের মাধ্যমে দাওয়াতঃ

১. আত্ম-মর্যাদা রক্ষা করা

২. ইসলামকে হেয় না করা

৩. শরিয়তের পরিপন্থি কাজ না করা

৪. ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ না করা

৫. পরিবেশ পরিস্থিতি বোঝা

৫. জনগণের ভাষায় দাওয়াত দান করাঃ

﴿وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ﴾

এবং আমরা যখন যেখানেই কোন রাসুল প্রেরণ করেছি, তিনি তার জাতির জনগণের ভাষায়ই সে পয়গাম পৌঁছিয়েছেন, যেন তিনি তাদেরকে খুব ভালো ভাবেই কথা প্রকাশ করে বলতে পারেন, অতঃপর আল্লাহ যাকে চান গোমরাহ করেন আর যাকে চান হেদায়াত দান করেন, তিনি মহা পরাক্রমশালী ও কৌশলী।” (ইবরাহীম- ৪)

৬. সহজভাবে দাওয়াত প্রদানঃ

عَنْ اَنَسٍ (رض) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّه ِ (ص) يَسِّرُوْا وَ لَا تُعَسِّرُوْا وَ بَشِّرُوْا وَ لَا تُنَفَّرُوْا

হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, তোমরা (দ্বীনের দাওয়াত) সহজ করো, কঠিন করো না। সুসংবাদ দাও, বীতশ্রদ্ধ করো না।” (বুখারী ও মুসলিম)

৭. উদ্দেশ্যের পরিপন্থি পদ্ধতি পরিত্যাগ করাঃ

১. বাড়াবাড়ি

২. অহেতুক তর্ক -বিতর্ক

৩. ফতোয়াবাজী

ইতিহাসের পাতায় দাওয়াত গ্রহণের ভিন্ন ভিন্ন উপায়/কৌশলের দৃষ্টান্ত:

১. খাদিজাতুল কুবরার (রা.) প্রথম দাওয়াত গ্রহণকারীনী :

তাকে তো আনুষ্ঠানিক দাওয়াত দিতে হয়ই নাই, বরং তিনি ভীত সন্ত্রস্ত নবীকে সান্তনা প্রদান করেন এবং ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে নিয়ে যান।

২. হযরত আবু বকর (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ: নবীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

৩. হযরত উমর ফারুক (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ : যখন তিনি ছিলেন বোন ও ভগ্নিপতিকে আঘাতকারী।

৪. হযরত আমীর হামযা (রা:) এর ইসলাম গ্রহণ: যখন তিনি বংশীয় অহমিকায় খোঁচা খান।

৫. হযরত আলী (রা:) বনাম ইয়াহুদী: যখন ইয়াহুদীটি ছিল যুদ্ধে পরাভূত হয়ে মৃত্যুর মুখোমুখী ।

৬. বাদশাহ নাজ্জাশী :

একজন আশ্রয় প্রার্থী জাফর ইবনে আবু তালিবের (রা:) সত্য বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে বাদশাহ থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

৭. হযরত বেলাল ও হযরত খাব্বাব (রা:) : গোলাম থাকা অবস্থায় ইসলাম গ্রহণ করেন।

৮. হযরত আবু সুফিয়ান : বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেন।

৯. Armstrong মুসলিম হন- চাঁদের ফাটল দেখে

১০. ড. ইসলামূল হক- তুলনামূলক ধর্মচর্চা করতে গিয়ে

১১. ড. মরিস বুকাইলী কুরআনের ত্রুটি খুঁজতে গিয়ে

১২. মোহা: আলী ক্লে- ইসলামে সাম্যতা দেখে

১৩. মরিয়ম জামিলা- পত্রের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তরে

১৪. গায়ক Ket Stiven ও ক্রিকেটার ইউসুফ ইউহানা- বন্ধুদের সান্নিধ্যে

দাওয়াত গ্রহণকারীর মন জয় করার ৬টি বিশেষ পদ্ধতি:

১. দাওয়াত গ্রহণকারীর সামনে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলুন বা ভালভাবে উপস্থাপন করুন।

২. মানুষের নাম তার নিজের কাছে সবচেয়ে প্রিয়। তাই যথাসম্ভব মানুষের নাম মনে রাখার চেষ্টা করুন।

৩. আপনি যাকে দাওয়াত দিবেন তাকে গুরুত্ব দিন ও এটা মন থেকেই করুন।

৪. দাওয়াত গ্রহণকারী যে বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী, সে বিষয়ে আলোচনা করুন।

৫. ভাল শ্রোতা হন, দাওয়াত গ্রহণ কারীকে কথা বলতে দিন।

৬. বিজয়ী তিনিই যিনি কখনও হাল ছাড়েন না।

সফল দাওয়াত দান কারীর ব্যক্তিত্ব গঠনের কৌশল:

১. সুন্দরভাবে কথা বলা।

২. নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা।

৩. বিশ্বাসী হতে হবে।

৪. দাওয়াত দানকারীর মুলধন কঠোর পরিশ্রম।

৫. সহিষ্ণু হতে হবে সহিষ্ণু ব্যক্তিরাই শেষ পযর্ন্ত টিকে থাকে, tough time does not last but only tough people do. .

৬. সময়ানুবর্তিতা

দাওয়াতী কাজে সফল হওয়ার নয়টি বিশেষ কৌশল:

১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। যে জানে তার জীবনের লক্ষ্য-পৃথিবী তাকে সেখানে পৌঁছানোর পথ তৈরী করে দেয়।

২. লক্ষ্য অর্জনে সদা সচেষ্ট থাকুন।

৩. কৌশলী হন; কারণ যোগ্যতম ব্যক্তিরাই শেষ পযর্ন্ত টিকে থাকে।

৪. কোন কিছুই অসম্ভব নয়, যদি আপনি মনে করেন পারবেন, নিশ্চয়ই পারবেন।

৫. চিন্তা করুন, অবশ্যই ভালো উপায় খুঁজে পাবেন।

৬. আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী, আচার ও আচরণ যেন ইতিবাচক হয়।

৭. সবসময় হাসুন, তাহলে সমগ্র পৃথিবী আপনাকে দেখে হাসবে।

৮. সৃজনশীল ও উদ্যমী হোন।

৯. অন্যকে ভালবাসুন, আপনিও ভালবাসা পাবেন।

দাওয়াতী কাজে কার্যকরী যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা:

১. কখনোই আশা করবেন না যে, দাওয়াত গ্রহণকারী আপনার কাছে এসে ধরণা দিবে।

২. ভাববেন না প্রথম সাক্ষাতেই দাওয়াত গ্রহণ করে ফেলবে।

৩. সুসংগঠিতভাবে নিয়মিত ফলোআপ করুন।

৪. প্রতি সপ্তাহে নতুন কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করুন।

৫. যাদের সাথে পরিচিত হচ্ছেন, তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব আপনারই।

৬. মনে রাখবেন, কিছু পেতে হলে, কিছু দিতে হবে। কেননা দিন আপনার আমার সবার জন্যই ২৪ ঘন্টা। শুধু লক্ষ্য রাখবেন, ত্যাগের চাইতে প্রাপ্তি যেন সবসময় ভারি থাকে।

জীবনে চলার পথে ধ্রুব সত্যঃ

স্বার্থবাদী এক অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ I এড়িয়ে চলুন

সন্তোষজনক দুই শব্দ We সর্বদা ব্যবহার করুন

তিন অক্ষর বিশিষ্ট দূষিত শব্দ Ego ধ্বংস করুন

বহুল ব্যবহৃত চার অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Love মুল্যায়ন করুন

আনন্দদায়ক পাঁচ অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Smile সর্বদা ধারণ করুন

দ্রুতবেগে ছড়ানো ছয় অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Rumour অবজ্ঞা করুন

শ্রমসাধ্য সাত অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Succes অর্জন করুন

ঈর্ষা উদ্রেককারী আট অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Jealousy দূরে থাকুন

সবচেয়ে শক্তিশালী নয় অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Knowledge অধিকার করুন

সবচেয়ে দরকারী দশ অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ Confidence বিশ্বাস করুন

দাওয়াতী কাজ সহজ কাজ নয় বা দাওয়াত হল যুদ্ধ ক্ষেত্র, এখানে যে যত বেশি কৌশলী হবেন, তিনি তত সফলকাম হবেন। এক বালতি পানি পাহাড়ের উপর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া সহজ কিন্তু এক বালতি পানি পাহাড়ের উপর উঠান সহজ কাজ নয়।

দাওয়াতী কাজে বাধা আসবেঃ

(ক) রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার এবং নিজের নফস এর পক্ষ থেকে বাধা আসবে।

(খ) জীবন, স্বাস্থ্য ও সম্পদ ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

(গ) কখনো কখনো অপ্রাপ্তি কাংখিত ফলাফল না পাওয়া অধৈর্যের কারণ হতে পারে।

অসৎ কাজের পরিবেশ তৈরী করে তা করতে বাধ্য করে (সংস্কৃতি)।

সৎ জীবন যাপনের প্রতি অনিহা ও নিুমান বোধ সৃষ্টির চেষ্টা করে।

সুতরাং আগামী দিনে ইসলামী বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করতে হলে মানুষের মেজাজ বুঝে দাওয়াতী কাজ করতে হবে এবং বুদ্ধিবৃত্তিক অনেক ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে।

Dunia is a class room

Quran is a syllabus

Muhammad (sm) is a teacher

Life is an exam

Allah is an examiner

So try to pass the exam……..

# ড. মুবারক হোসাঈন-প্রাক্তণ কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

# তথ্য সূত্র-ড. মুবারক হোসাঈনের নিজস্ব ওয়েবসাইট

# উপরোক্ত নোটটি A4 সাইজে পিডিএফ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।


No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।