প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যর খোদাদ্রোহী বাতিল শক্তিবর্গ ইসলামী আন্দোলনকেই নয়, বরং সত্যের পতাকাবাহী নেতৃবৃন্দ এবং ইসলামের বিপ্লবী মুজাহিদদের সমূলে উৎখাত করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছিল, কারণ ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী কর্মীরা আল্লাহ্র কুরআন এবং রাসূলে করীম (ﷺ)-এর সুন্নাহকে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। তারা বলেছিল-আল্লাহ্র কুরআন এবং রাসূলের সুন্নাহ মূলতবী হয়ে থাকার জন্যে আসেনি, অক্ষরে অক্ষরে প্রতিষ্ঠার জন্যেই এসেছে। বস্তুতঃ তওহীদী আদর্শ শিক্ষা-দীক্ষা এবং আল্লাহ্র সাথে যথার্থ সম্পর্ক কায়েমের মাধ্যমে মুসলিম মিল্লাতকে তার পূর্ণ যোগ্যতার সাথে সৃষ্টিকারী সব রকমের মূর্খতাপূর্ণ কুসংস্কার এবং রীতিনীতিকে উচ্ছেদ করতে হবে। এভাবেই দুনিয়ার বুক থেকে খোদাদ্রোহী এবং অত্যাচারী লোকদের প্রভুত্ব মূলোৎপাটিত হবে। মানুষের উপর মানুষের গোলামী অবসান ঘটবে। কেবল তখনই সোনালি যুগের সাহাবাদের সমাজের মত জীবনের প্রকৃত রূপ তার বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের এই পৃথিবী এবং এতে বসবাসকারী কোটি কোটি মানুষের সত্যিকার সাফল্য ও স্বার্থকতা ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যের উপরই নির্ভরশীল।
কারাগারের তমসাচ্ছন্ন কাল কুঠরীতে পৈশাচিক ও অমানবিক নির্যাতন; নিষ্ঠুরপ্রান জল্লাদ এবং চাবুক বাজদের নৃশংসতা; ইসলামী আন্দোলনের দুঃসাহসী ও একনিষ্ঠ কর্মীদের ধৈর্য্য,সাহস ও শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমাদের আগেও যাঁরা যুগে যুগে সত্যের পথ ও পক্ষ অবলম্বন করেছেন তাঁদেরকেও এসব মুসিবত এবং পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু তাঁদের যুগের নমরুদ ফেরাউনের মতো পরাক্রমশালী শক্তিবর্গও তাঁদেরকেও সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। সেই তুলনায় বর্তমান যুগের শাস্তি বা কারা-নির্যাতনের গুরুত্ব নেহায়েত তুচ্ছ বৈ-কি!
যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে, মতামতকে মতামত দিয়ে, আলোচনাকে আলোচনার মাধ্যমে মোকাবেলা করা সম্ভব। কিন্তু ক্ষমতান্ধ বাতিল শক্তিবর্গ এসব ইতিবাচক ব্যবস্থার চেয়ে পাগলের হাতে চাবুক দিয়ে হকপন্থীদের উপর লেলিয়ে দেয়াকেই বাহাদুরী মনে করে। এসব বাতিল পন্থী জালিম অত্যাচারী এবং স্ব-ঘোষিত প্রভূদেরকে বিভ্রান্ত ও মূর্খতার জঞ্জাল থেকে হেদায়াতের পথে টেনে আনা সত্যিই মুশকিল।
সত্যের পথ কেবল একটিই এবং তা হচ্ছে আল্লাহ্,তাঁর নবী-রাসূল এবং তাঁদের অনুসারীদের পথ। এর বিপরীত পথই হচ্ছে মিথ্যা-বাতিলের পথ। এর পদে পদে ওঁৎ পেতে বসে আছে সত্যের শত্রু-শয়তান। শয়তান অত্যন্ত সন্তর্পণে মানুষকে ধ্বংস ও ভ্রান্তির পথে টেনে নিয়ে যায়।
“এবং এই হচ্ছে আমার সহজ-সরল পথ। তোমারা এরই অনুসরণ করো; আর এমন সব বিভিন্ন পথ অবলম্বন করোনা যাতে তোমরা সরল-সহজ পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে”।(আল-কুরআন) ইসলামের আদর্শ অবলম্বন অর্থাৎ আল্লাহ্র পথে চলা এবং কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের মাধ্যমেই কেবল আজকের বিশ্ব-মানবতাকে বিভ্রান্তির অক্টোপাস থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব।
বর্তমান যুগে মুসলিম মিল্লাতের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে খোদাদ্রোহী শক্তির মোকাবেলা করে সাফল্য অর্জনের ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছি। বাতিল মতবাদের পিরামিডের উপর সত্যের বিজয় –পতাকা উড়ানোর দৃশ্যও অবিলম্বে প্রত্যক্ষ করবো বলে আমি আশাবাদী। জাতি, তার আদর্শগত দায়িত্ব যথার্থভাবে পালন করবে বলেও আমার স্থির বিশ্বাস। কারণ তওহীদ ও রিসালাতের ঝাণ্ডাকে বুলন্দ রাখার জন্যেই মুসলিম জাতির অভ্যুদয় হয়েছিল।
অবশ্য ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যের জন্য সময় বা বছরের সীমানা নির্ধারণের তাড়াহুড়া আছে বলে আমি মনে করিনা। একটি আদর্শবাদী জাতির জীবনে এর তেমন কোন গুরুত্বও নেই। তবে, আসল কথা হচ্ছে, ভুল-ভ্রান্তি থেকে নিরাপদ থেকে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে অব্যাহত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি কিনা এটাই খেয়াল রাখতে হবে।
কারাগারের রাতদিন বইটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন।
আমাদের বিশ্বাস, আমরা সত্যের পথে রয়েছি এবং যাঁরা আমাদের কাফেলায় সামিল হবেন-তাঁরা প্রত্যেকই ইসলামী ইমারতের জন্যে এক একটি ইটের পরিবর্ধন করবেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, আন্দোলনের কাজে কোনক্রমেই শিথিলতা আসতে দেয়া যাবেনা, কোন অর্থেই গতি মন্থর হবে এবং পিছু হটা চলবে না। আমরা মনে করি আমাদের কারা নির্যাতন ভোগ একটি ঐতিহাসিক সত্য, বাতিলের বিরুদ্ধে যারা আপোষহীন সংগ্রামী, এটাই তাদের প্রাপ্যই বটে!
বলাবাহুল্য, এসব গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতেই আমি আমার ভাই-বোনদের অনুরোধের মর্যাদা রাখতে গিয়ে আত্মকথা লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস পাই, একাজে আমি আল্লাহ্ পাকের সাহায্য প্রার্থনা করি।
আত্মকথা লিখতে গিয়ে এমন সব ঘটনাবলীর বারবার উল্লেখ করতে হয়েছে- যার কল্পনাতেও আত্মায় কাঁপন ধরে। বস্তুতঃ শাস্তির জঘন্যতা, নির্মমতা এবং জল্লাদ ও শাস্তি বিশেষজ্ঞদের অনুশীলন ক্ষেত্রের নামই হচ্ছে জাহান্নাম। এই জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড থেকে যাঁরা বেরিয়া এসেছেন তাঁরা উদাত্ত কণ্ঠে আবার ঘোষণা করেছেন- হে দুনিয়ার মানুষ! ইসলাম কোন বংশ বা সম্পর্কে নাম নয়, বরং তা হচ্ছে ব্যবস্থা ও বাস্তবায়নের শাশ্বত জীবনাদর্শ।
কারাজীবনের বিচিত্র ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করার কাজে আল্লাহ্ আমাকে সাহায্য করবেন এবং তা মুমিনদের জন্য আলোকবর্তিকা স্বরূপ হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের পথের নাম সিরাতুল মোস্তাকীম এবং একথা বারবার উল্লেখনীয় যে, যুগে যুগে নবী-রাসূলরা যে সত্যের পয়গাম এনেছেন- সেসব পয়গামের চূড়ান্ত পূর্ণতার নামই হচ্ছে শরীয়াতে মোহাম্মাদী (সাঃ)
“যাদের ইচ্ছে, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যাদের ইচ্ছে অস্বীকার করুক”। যারা আল্লাহ্র পথে চলতে গিয়ে বিপদ-মুশিবত সহ্য করার জন্যে প্রস্তুত তারা আল্লাহ্র ইচ্ছায় কুরআন ও সুন্নাহর ঝাণ্ডাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়।
এই উপলব্ধি নিয়েই আমরা ইসলামী আন্দোলনের সামিল হয়েছি যে, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে যে কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হই না কেন হাসিমুখেই তার মোকাবেলা করবো। কেননা আমরা জানি, আল্লাহ্ মোমেনদের কাছ থেকে জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জানমাল কিনে নিয়েছেন। তা এজন্যেই যে, তারা আল্লাহ্র পথে জ্বিহাদ করে, এমনকি তারা এ পথে শহীদ হয়ে যাবে। ‘তওরাত’ ‘ইঞ্জিল’ এবং কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভালোবাসা ও ভক্তিপূর্ণ সালাম সেসব শহীদানের প্রতি যাঁরা আমাদের আগে জান্নাতবাসী হয়েছেন। নিঃসন্দেহে আমরা সত্যপথের অভিযাত্রী। তাদের প্রতিও সালাম, যাদের মনে অনুবরাবর হলেও ঈমানের আলো প্রদীপ্ত রয়েছে। হতে পারে, আল্লাহ্পাক তাদেরকেও হেদায়াতের সৌভাগ্যে ভূষিত করবেন।
কারাগারের রাতদিন বইটির পিডিএফ ডাউনলোড করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।