ইসলাম ও জাতীয়তাবাদঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

September 07, 2021

ইসলাম ও জাতীয়তাবাদঃ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী

 


জাতীয়তা স্বভাবতই মানুষের মধ্যে বর্বরতামূলক বিদ্বেষভাব জাগ্রত করে। এটা এক জাতিকে অন্য জাতির বিরোধীতা করার ও তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করার জন্যে প্রলুব্ধ করে। কারণ তা সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতি। সত্য, সততা, নিরপেক্ষতা, সুবিচার ও ন্যায়পরায়নতার সাথে এ ধরণের জাতীয়তার কোনোই সম্পর্ক নেই। এক ব্যক্তি শুধু কৃষ্ণাঙ্গ হওয়াই শ্বেতাংগ ব্যক্তির দৃষ্টিতে ঘৃণিত হওয়ার জন্যে যথেষ্ট। এক ব্যক্তি এশিয়ার অধিবাসী বলে ইউরোপ বা আমেরিকাবাসীদের নিকট ঘৃণিত, অত্যাচারিত, নিষ্পেষিত ও অধিকার বঞ্চিত হতে একান্তভাবে বাধ্য। আইনস্টাইনের ন্যায় সুপণ্ডিত ব্যক্তি কেবল ইসরাঈল বংশজাত হওয়ার অপরাধেই জার্মান জাতির নিকট ঘৃণিত। তাশকীদী কৃষ্ণবর্ণ নিগ্রো ছিলো বলেই একজন ইউরোপীয় অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার অপরাধে তার রাজ্য কেড়ে নেয়া হলো।১ নিগ্রোদেরকে জীবন্ত দগ্ধীভূত করা আমেরিকার সভ্য নাগরিকদের পক্ষে কিছুমাত্র অপরাধের কাজ নয়, কারণ তারা নিগ্রো। জার্মান জাতি এবং ফরাসী জাতি পরস্পর পরস্পরকে ঘৃণা করতে পারে কারণ তারা দুটি স্বতন্ত্র জাতিতে বিভক্ত। এদের একজনের গুণাবলী অন্যের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ দোষ ও ত্রু“টি বলে নিরূপিত হয়। সীমান্তের স্বাধীন আফগানীদের আফগানী হওয়া এবং দামেশকের অধিবাসীদের আরব জাতির অন্তর্ভূক্ত হওয়া এমন একটা অপরাধ যে, কেবল এ কারণেই তাদের মাথার উপর বোমারু বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করা এবং সে দেশের জনগণকে পাইকারীহারে হত্যা করা ইংরেজ ও ফরাসীদের পক্ষে একেবারে ন্যায়সংগত। কিন্তু ইউরোপের সুসভ্য (?) অধিবাসীদের উপর এরূপ বোমা নিক্ষেপ করাকে বর্বরতামূলক কাজ বলে তারা মনে করে। মোটকথা, এ ধরণের জাতীয় পার্থক্যই মানুষকে সত্য ও ইনসাফের দিক দিয়ে সম্পূর্ণরূপে অন্ধ করে দেয়। এবং ভবিষ্যতে এ কারণেই নৈতিকতা ও ভদ্রতার চিরন্তন মূলনীতিসমূহও জাতীয়তার ছাঁচে ঢেলে গঠিত হয়। কোথাও জুলুম, কোথাও মিথ্যা এবং কোথাও হীনতা সৌজন্য ও নৈতিক চরিত্রের মূলনীতি বলে নির্ধারিত হয়।

এ ব্যক্তির বংশ এক, অন্য ব্যক্তির বংশ আর এক; এক ব্যক্তি শ্বেতাঙ্গ, অন্য ব্যক্তি কৃষ্ণাঙ্গ; একজন নির্দিষ্ট কোনো পর্বতের পশ্চিম পাড়ে জন্মলাভ করেছে, অন্য ব্যক্তি তার পূর্বদিকে জন্ম গ্রহণ করেছে; এক ব্যক্তি এক ভাষায় কথা বলে, অন্য ব্যক্তি অপর কোনো ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে; এক ব্যক্তি রাষ্ট্রের অধিবাসী, অপর ব্যক্তি অন্য কোনো এক রাষ্ট্রের নাগরিক; কেবল এ কারণেই কি মানুষের মধ্যে পার্থক্য করা হবে? এবং একজন অযোগ্য, পাপী ও অসৎ ব্যক্তিকে কেবল এজন্যই একজন যোগ্য, সৎ ও সত্যানুসন্ধানীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিতে হবে? বাহ্যিক চামড়ার বর্ণ, আত্মার পরিচ্ছন্নতা ও মালিন্যের জন্যে দায়ী হতে পারে কি? নৈতিক চরিত্রের ভাল কিংবা মন্দ হওয়ার সাথে পর্বত বা নদী-সমুদ্রের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে বলে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি কি স্বীকার করতে পারেন? প্রাচ্যের সত্য পাশ্চাত্য গিয়ে বাতিল ও মিথ্যা হয়ে যেতে পারে-একথা কি কোনো সুস্থ মস্তিষ্ক বিশিষ্ট ব্যক্তি সমর্থন করতে পারে? পূণ্য, সৌজন্য ও মনুষ্যত্বের সার বস্তু ধমণীর শোণিত ধারা, মুখের ভাষা, জন্মস্থান ও বাসস্থানের মাটির মানদণ্ডে পরিমাপ করা যায় বলে কোনো সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি কি মেনে নিতে পারে? সকল মানুষই যে এ প্রশ্নগুলোর উত্তরে স্বতঃস্ফূর্ত সমবেতভাবে ‘না’ বলবে, তাতে আর বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। কিন্তু বংশ বা গোত্রবাদ, আঞ্চলিকতা এবং তার অন্য সহযোগী উল্লিখিত প্রশ্নাবলীর উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলারই দুঃসাহস করছে।

অনুবাদঃ মুহাম্মদ আবদুর রহীম

বইটির পিডিএফ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন

No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।