আমি শহীদ হতে চাইঃ অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। শরীরের
অঙ্গের গঠনপ্রণালীর দিকে তাকালে ঐ আল্লাহরই প্রশংসা করতে হয়। শরীরের কোন একটি অঙ্গ
নষ্ট হয়ে গেলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে মানুষ কিছুই তৈরি করতে পারে না, কিছু কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করে লাগালে তার অস্বস্তিতে ঘুম আসতে চায় না।
আল্লাহর দেয়া চোখ, কান, হার্ট, লিভার ইত্যাদি কোন একটি অঙ্গের জন্য কোটি কোটি বছর সিজদা দিলেও এর মূল্য
পরিশোধ হবে না (সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহি)। বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মুহূর্তে
অক্সিজেন নেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা গাছপালা ও তার পাতাসমূহকে যেমন অক্সিজেন
সাপ্লাইং সেন্টার বানিয়েছেন, তেমনি সাথে সাথে দূষিত
কার্বন-ডাই-অক্সাইড হজম করার জন্য ঐ পাতাকেই প্রস্তুত করে রেখেছেন (সুবহানাল্লাহি
অবিহামদিহি)। যে মহান আল্লাহ তায়ালার দেয়া সবকিছু নিয়ে বেঁচে আছি সে মহান আল্লাহ
তায়ালার জন্যই সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে শহীদ হওয়ায় ঈমানের দাবি।
আমার কলেজজীবনে সর্বপ্রথম শহীদ আবদুল মালেক
ভাইয়ের জীবনীর ওপর বক্তব্য শুনেছিলাম তদানীন্তন দায়িত্বশীল ডক্টর মোরশেদ আলী
ভাইয়ের কাছ থেকে। রাজশাহী কলেজের করাই তলায় ঐতিহাসিক সভায় শহীদ শব্দটির ওপর কথা
শুনেছিলাম এবং উৎসাহিত ও আকর্ষিত হয়েছিলাম।
দু’টি কথাও আমাকে
খুবই মুগ্ধ করেছিল একটি শোনা আমার কাছে ইসলামী আন্দোলনের একটি আলোচনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসের চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেখানে আল্লাহর আইন
অনুযায়ী চলা যায় না সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে জাহান্নামে যাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা দেখা
যায় না। তিনি শিক্ষা সম্পর্কে বলেছিলেন এডুকেশন ইজ দি হারমনিয়াস ডেভেলপমেন্ট অব
বডি মাইন্ড অ্যান্ড সোল।
কথাগুলো শুনে ভালোভাবে না বুঝলেও আমাকে
প্রভাবিত করেছিল। তার জের ধরে সাবেক ছাত্রসংগঠনে জড়িয়ে পড়ি এবং সংগঠনের কাজে
অগ্রসর হই তারপরেই এই পথ চলা। প্রায় ৫০ বছরের সাংগঠনিক জীবন এখন অতিবাহিত করছি এটি
মহান আল্লাহতালার বিশেষ মেহেরবানি।
পাক-ভারত উপমহাদেশের ইসলামী আন্দোলনের
প্রাণপুরুষ মাওলানা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী
রাহিমাহুল্লাহ আবদুল মালেক ভাইয়ের শাহাদাতের পর বলেছিলেন, ইসলামের
পথে শহীদ আবদুল মালেকের শাহাদাত প্রথম হতে পারে কিন্তু শেষ নয়। তাই বিগত ৪০ বছরের
ইসলামী আন্দোলনে দেখলাম একের পর এক ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রায় তিনশত শহীদ এবং
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমিরে জামায়াতসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের শাহাদাত। আল্লাহ
তায়ালা এই সকল শহীদের শাহাদাত কবুল করুন আমিন। শহীদদের রক্ত এই উপমহাদেশের প্রতিটি
ইঞ্চি জমিনে ইসলামী আন্দোলনের গতিকে আরো বেগবান করে দিয়েছে। এক শহীদের রক্ত থেকে
হাজার হাজার শহীদ তৈরি হচ্ছেন। শহীদগণ কখনো মরে না, তারা
আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। সহবতের তীব্র আকাক্সক্ষা পাকিস্তান
ভারত বাংলাদেশসহ আজকে হিমালয়ান উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, By Him in Whose Hands my life is! I would love to be
martyred in Allah’s Cause and then get resurrected and then get martyred, and
then get resurrected again and then get martyred and then get resurrected again
and then get martyred.
“সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, আমি
পছন্দ করি আমাকে যেন আল্লাহর রাস্তায় শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, এরপর শহীদ করা হয়। আবার জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ
করা হয়। তারপর জীবিত করা হয়, পুনরায় শহীদ করা হয়।” (সহীহ বুখারি)
কখন আমার মৃত্যু হবে আমি জানি না। তবে আমি
নিশ্চিত যে আমাকে একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ পৃথিবীতে কেউই বেঁচে থাকতে
পারেনি, বেঁচে থাকতে পারবেও না। মৃত্যু সকলের জন্যে অবধারিত। এমনকি যে
আজরাইল আ. মানুষের জান কবজ করছেন তারও একদিন মৃত্যু হবে। মৃত্যু থেকে পালিয়ে কেউই
রেহাই পাবে না। “তোমরা যেখানেই থাকো না কেন সেখানে মৃত্যু
তোমাদের নাগাল পাবেই, তোমরা কোন মজবুত প্রাসাদে অবস্থান
করলেও।” (সূরা নিসা : ৭৮)
মরতেই যখন হবে তখন এমন মৃত্যুবরণ করতে চাই যে
মৃত্যু নিশ্চিত জান্নাতে নিয়ে যাবে। শহীদ হওয়ার আকর্ষণ সে কারণেই। কুরআন-হাদিস
থেকে অল্প যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছি সেই জ্ঞান শহীদ হওয়ার জন্য আমার মধ্যে তীব্র
আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। শিবিরের লক্ষ লক্ষ তরুণের কণ্ঠে উচ্চারিত শহীদি গানে আমিও
শরিক হয়ে বলি : “ফাঁসির রশিকে ভয় করি না আমি শহীদি মরণ চাই।”
‘রব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাস সামিউল
আ’লীম, অতুব আলায়না ইন্নাকা
আনতাত্তাওয়াবুর রাহিম।’ আমিন- ইয়া রাব্বাল আলামিন।
যে সব কারণে আমি শহীদ হতে চাই-
১. হিসাব দিয়ে জান্নাতে যাওয়া কঠিন। দ্বীনের
জন্য শহীদ হতে পারলে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাওয়া যাবে।
২. সাধারণ মৃত্যুর কষ্ট খুবই কঠিন, শহীদ হতে পারলে পিঁপড়ার কামড়ের মত সহজেই বিনা কষ্টে মৃত্যু হবে।
৩. শহীদি মৃত্যুর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেখে তা
পাওয়ার আকর্ষণে রাসূল সা. তিনবার জীবিত হয়ে তিনবার শহীদ হতে চেয়েছেন। তার শহীদ
হওয়ার আকর্ষণই আমার আকর্ষণ।
৪. দুনিয়ার সব কিছুর চেয়ে অনেক বেশি মর্যাদা
শহীদের মর্যাদা যা আল্লাহর কাছে আছে, তা দেখে একমাত্র
শহীদ ব্যতীত কেউ আবার দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে না। জান্নাতে থেকেও যে শহীদি
মৃত্যুর জন্য আসার ইচ্ছা হবে সেটার সুযোগ হাতছাড়া না করা।
৫. জান্নাতে শহীদদের ঘরের চাইতে সুন্দর ঘর আর
নেই। এই ঘরের অধিকারী হওয়ার তীব্র আকাক্সক্ষা।
৬. বদরের যুদ্ধের দিন হারিসা রা. শহীদ হলেন। আর তখন তিনি অপ্রাপ্ত
বয়স্ক ছিলেন। রাসূল সা. হারিসা রা.-এর মাকে বললেন, তোমার
ছেলে হারিসা তো রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউসের মাঝে।
৭. মহিলারাও শহীদ হয়েছেন, হিজরতের পূর্বে ইসলামে সর্বপ্রথম শহীদ হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছেন শহীদি পরিবার
হযরত আম্মার রা.-এর আম্মা হযরত সুমাইয়া রা.।
৮. শহীদদের জন্যই জান্নাতের সকল দরজা খোলা।
সুন্দর সুন্দর পাখি হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা জান্নাতের সকল জায়গায় ঘুরে বেড়াবেন।
৯. “আল্লাহ শহীদকে
জান্নাতের মধ্যে নবী, সিদ্দিকিনের সাথে এক কাতারে রাখবেন।”
(সূরা আলে ইমরান : ৬৯)
১০. “আল্লাহ তোমাদের
মধ্যে কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান।” সেই
সৌভাগ্যবানদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ইচ্ছা।
১১. সূরা মুহাম্মাদের চতুর্থ আয়াতে আল্লাহ
বলেন: “আর যারা আল্লাহর পথে নিহত- শহীদ হবে আল্লাহ কখনো তাদের আমলসমূহ
ধ্বংস করবেন না।”
১২. সূরা আলে ইমরান ১৫৭ আয়াতে আল্লাহ বলেন যদি
তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও বা মারা যাও তা হলে তোমরা আল্লাহর যে রহমত ও ক্ষমা লাভ
করবে, তা এরা যা কিছু জমা করে তার চাইতে ভালো।
১৩. সূরা আলে ইমরান ১৯৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন:
যারা আমার জন্য লড়েছে ও মারা গেছে, তাদের সমস্ত
গোনাহ আমি মাফ করে দেবো এবং তাদেরকে এমন সব বাগানে প্রবেশ করাবো যার নিচে দিয়ে
ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে। এসব হচ্ছে আল্লাহর কাছে তাদের প্রতিদান এবং সবচেয়ে ভালো
প্রতিদান আল্লাহর কাছেই আছে।
১৪. সাধারণ মৃত্যুতে মরণের সময় ক্ষণ জানা যায়
না, ফলে তওবা করার ও অনুতপ্ত অশ্রুসিক্ত অবস্থায় প্রাণভরে আল্লাহর
কাছে মাফ চাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় না। কিন্তু শহীদের ক্ষেত্রে সাধারণত মৃত্যুর সময়
ক্ষণ জানতে পারা যায়। ফলে জীবনের কৃত সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে
অকল্পনীয় অশ্রুসিক্ত পরিবেশে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া যায়, মাফ
চাওয়ার সুযোগ হয়।
আল্লাহর কালেমাকে উঁচু করার উদ্দেশ্য থাকলে শহীদ
শহীদ তাঁদের বলা হয়, যাঁরা আল্লাহর হুকুম আহকাম, আদেশ-নিষেধ বাস্তবায়ন
করার জন্য নিজের মাল ও জানকে বিলিয়ে দেন। শহীদ শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে সাক্ষী।
শহীদ বলতে এমন ব্যক্তি বুঝায় যে নিজের জীবনের
সমগ্র কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার ঈমানের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করে। সে কাজটি হলো
আল্লাহর কালেমাকে উঁচু করা। আল্লাহর পথে লড়াই করে প্রাণ উৎসর্গকারীকে এ কারণেই
শহীদ বলা হয় যে, সে প্রাণ উৎসর্গ করে এ কথা প্রমাণ করে দেয়
যে, সে যে জিনিসের ওপর ঈমান এনেছিল তাকে যথার্থই সাচ্চা দিলে
সত্য মনে করতো এবং তা তার কাছে এত বেশি প্রিয় ছিল যে, তার
জন্য নিজের প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি।
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে তাদের সহযোগী হবে,
যাদেরকে আল্লাহ পুরস্কৃত করেছেন নবী, সিদ্দিক,
শহীদ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে। মানুষ যাদের সঙ্গ লাভ করতে পারে
তাদের মধ্যে এরা কতই না চমৎকার সঙ্গী।” (সূরা আলে ইমরান :
৬৯)
ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব আজকের নুতন কোন
সৃষ্টি নয়, এটি ঐতিহাসিক। ইসলাম যত পুরাতন এ
দ্বন্দ্বের ঘটনা তত পুরাতন। হাবিল ও কাবিলের দ্বন্দ্ব এর সর্বপ্রথম দ্বন্দ্ব।
আল্লাহ তায়ালার নিয়ম মানার পক্ষে একজন আর অন্যজন হত্যা-সন্ত্রাস করে হলেও নিজের
স্বার্থ পূরণ করে নিয়ম মানার বিপক্ষে।
প্রথম মহিলা শহীদ সুমাইয়া রা.
“ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এ ছাড়া আর
কোন কারণ ছিল না যে তারা মহাপরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল।”
(সূরা বুরুজ : ৮)
নারী জাতির জন্য এক বিস্ময়কর গৌরবের ইতিহাস
হলো ইসলামের প্রথম শহীদ হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রা.। তার স্বামীর নাম ইয়াসির
ইবনে আমির রা.। তিনি কাহতানের অধিবাসী। হারানো ভাইকে খুঁজতে মক্কায় এসেছিলেন এবং
কী মনে করে স্থায়ীভাবে মক্কায় বসবাস করতে শুরু করেন। অপরিচিত এলাকা মক্কায় এসে
তিনি চুক্তি ও সন্ধিবদ্ধ হন হুজায়ফার সঙ্গে। অবশেষে হুজায়ফার দাসী সুমাইয়াকে বিয়ে
করেন। এ যুগল থেকে জন্ম নেন হযরত আম্মার রা.। কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল না
তাদের। খুব অসহায় ছিল মক্কায় তাদের জীবন। হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাদিয়াল্লাহু
আনহা ছিলেন শুরুর দিক থেকে ইসলাম গ্রহণ করার মাঝে ১৭তম ব্যক্তি। নরাধম আবু জাহেল
হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং উনার স্বামী হযরত ইয়াসির ইবনে
আমির রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মক্কার আল-বাতহা উপত্যকার মরুভূমির তপ্ত বালুর মাঝে
লোহার পোশাক পরিয়ে শুয়িয়ে রাখত। ইসলাম গ্রহণ করার কারণে আবু জেহেল হযরত সুমাইয়া
বিনতে খুব্বাত রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি কত অত্যাচারই না করেছিল কিন্তু হযরত
সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাদিয়াল্লাহু আনহা দ্বীন ইসলাম থেকে একচুলও সরে যাননি।
রাসূলুল্লাহ সা. একবার হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাদিয়াল্লাহু আনহার পাশ দিয়ে
যাওয়ার সময় হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জান্নাতের সুসংবাদ
দেন। তখন হযরত সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত রা. বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ
সা.! আমি জান্নাতের সুগন্ধ এই তপ্ত মরুভূমির বুকে শুয়েই পাচ্ছি।” একদিন নরাধম আবু জাহেল হযরত সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত রাদিয়াল্লাহু আনহার
লজ্জাস্থানে বর্শা নিক্ষেপ করে উনাকে শহীদ করে ফেলে। পরে নরাধম আবু জেহেল উনার
স্বামী হযরত ইয়াসির ইবনে আমির রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তীরবিদ্ধ করে শহীদ করে ফেলে।
প্রথম পুরুষ শহীদ হারিস ইবনে আবী হালাহ রা.
ইসলামের প্রথম পুরুষ শহীদ হচ্ছেন ‘হযরত হারিস ইবনে আবী হালাহ রা.’। নবুওয়াতের ৫ম-৬ষ্ঠ বছরে হুজুরে পাক সা. কাবার সামনে প্রকাশ্যে কালেমা উচ্চারণ
করলে মুশরেকরা তাঁকে মারধর করতে লাগলো। তখন হারিস রা. হযরত সা.কে বাঁচাতে এলে তাকে
শহীদ করে ফেলা হয়। ইসলামের শুরু থেকে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেকেই
জীবন দিয়েছেন।
শহীদের মর্যাদা যারা পাবেন
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, যে মুসলমান
১) তার দ্বীনের জন্য নিহত হয় সে শহীদ
২) যে তার জীবন রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ
৩) যে তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ
৪) যে পরিবার রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ।
(মুসলিম, মিশকাত হা/৩৮১১)।
৫) যে ব্যক্তি মহামারীতে মারা যায় সে শহীদ
৬) যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় (কলেরা, ডায়রিয়া) মারা যায় সে শহীদ
৭) যে ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায় সে শহীদ।
৮) যে ব্যক্তি মযলুম অবস্থায় নিহত হয়, সে শহীদ। (আহমাদ, সহিহুল জামে হা/৬৪৪৭।)
৯) যে ব্যক্তি তার ন্যায্য অধিকার রক্ষায় নিহত
হয়, সে ব্যক্তি শহীদ। (আবু ইয়ালা হা/৬৭৭৫; হাসান।)
আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ১৬৯
নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেছেন, “আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয় তাদেরকে
তুমি কখনো মৃত মনে করো না বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও
জীবিকাপ্রাপ্ত।”
উমাইর ইবনে হুমাম রা. হাতের খেজুর ছুড়ে ফেলে দিলেন
আল কুরআনের সূরা আল আনফালের ১২-১৪ নম্বর আয়াতে
আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন- “তোমরা পরস্পরে ঈমানদারদের
মনোবল ও সাহস বৃদ্ধি করো। আর আমি অচিরেই কাফেরদের অন্তকরণে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করবো।
তোমরা কাফিরদের ঘাড়ে আঘাত কর এবং জোড়ায় জোড়ায় আঘাত কর।” রাসূল
সা.-এর উৎসাহব্যঞ্জক কথা শুনে উমাইর ইবনে হুমাম রা. হাতের খেজুর ফেলে দিয়ে বলতে
লাগলেন, আমি কি শহীদ হলে জান্নাতে যাবো। রাসূল সা. উত্তরে
বললেন, হ্যাঁ। এ কথা শুনে উমাইর রা. খেজুর রেখে দিয়ে বললেন,
আমি যদি জীবিত থাকি এবং খেজুরগুলো খেতে থাকি, তাহলে
আমার জান্নাতে যাওয়া দেরি হয়ে যাবে। এ বলেই তিনি খেজুর নিক্ষেপ করে যুদ্ধে
অংশগ্রহণ করে শাহাদাতবরণ করলেন।
বিয়ের অনুষ্ঠান ছেড়ে শহীদ হলেন যিনি হযরত সাদে
সালমি রা. সেই যুবকের নাম, যার বিয়ের সমস্ত আয়োজন সমাপ্ত হয়েছে,
বাজার থেকে বিয়ের সামগ্রী নিয়ে কনের বাড়ির দিকে ফিরছেন, এমন সময় তার কানে এলো, “কে আছ, ইসলামকে বিজয়ী কর; কে আছ, জান্নাতের
দিকে ছুটে চল” বলে কে যেন চিৎকার করছে। এই কথাগুলো শোনার পর
বিবাহ, সুন্দরী স্ত্রীর মধুময় প্রেম, বাসরশয্যা-
সব তার মন থেকে মিলিয়ে গেল। ফিরে গিয়ে দোকানিকে বললেন, এগুলো
ফেরত নিয়ে আমাকে একটি ভালো তরবারি দাও। তারপর তিনি ছুটে চললেন যুদ্ধের ময়দানে এবং
বীরের মত যুদ্ধ করে শহীদ হলেন। যুদ্ধ শেষে তার লাশ ঘিরে সাহাবিগণ কাঁদতে লাগলেন।
কিন্তু নবী মুহাম্মদ সা. মিটমিট করে হাসছেন। প্রশ্ন করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি হাসছেন কেন? তিনি বললেন সাদে
সালমিকে স্বাগত জানানোর জন্য জান্নাত থেকে হুরেরা ফুল নিয়ে এসেছেন।
গাসিলুল মালায়েকা হযরত হানজালা রা.
হযরত হানজালা রা. সবেমাত্র বিয়ে করেছেন, স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছেন। গোসল করে পাক পবিত্র হয়ে ফজরের জামায়াত ধরবেন।
গোসল করে পাক পবিত্র হবার আগেই জিহাদের ডাক এসে গেল। জিহাদের ডাক শুনামাত্রই দেরি
না করে জিহাদের ময়দানে ছুটে চললেন। হযরত হানজালা রা. সেই শহীদের নাম যার ফরজ গোসল
বাকি ছিল, জিহাদের ডাকে ময়দানে হাজির হন ও জিহাদ করে শহীদ
হয়ে যান। ফেরেশতাগণ তাকে গোসল করিয়ে দেন। এ জন্য তাকে গাসিলুল মালায়েকা বলা হয়।
হযরত হামজা রা. সেই শহীদের নাম যার দেহ শত্রুরা টুকরো টুকরো করে কেটে বিকলাঙ্গ
করেছিল এবং কলিজা চিবিয়ে ছিল।
সারারাত ইবাদাত করার চেয়ে উত্তম
আবু হুরাইরাহ রা. বলেন, নবী সা. ইরশাদ করেন, আল্লাহর পথে জিহাদের ময়দানে
মুসলিম বাহিনীর হিফাজতের দায়িত্বে এক রাত চৌকিদারি করা কদরের রাত্রে কাবা শরীফে
হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে সারারাত ইবাদাত করার চেয়ে বহুগুণে উত্তম।
(বুখারী-অধ্যায় আফাযালুন নাসি মুমিনুন মুজাহিদুন)
শহীদের কবরে জান্নাতের হুরগণ পৌঁছে যায়
একজন লোক এসে নবী সা.কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আগে ইসলাম গ্রহণ করব নাকি জিহাদে অবতীর্ণ হবো?
রাসূল সা. বললেন, আগে ইসলাম কবুল কর, তারপর জিহাদ কর। লোকটি কালেমা তাইয়্যিবা পাঠ করল এবং কিছুক্ষণ পর লড়াইরত
অবস্থায় শাহাদাত লাভে ধন্য হলো। আল্লাহর নবী সা. নিজ পবিত্র হাতে তাকে কবরে রাখেন।
কিন্তু কবরে রেখেই তিনি অতি দ্রুত কবর থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রিয়নবী সা.-এর আচরণ
দেখে সাহাবিগণ হকচকিত হয়ে গেলেন। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, হে
আল্লাহর রাসূল! কবর আজাবের কোন আলামত দেখেই কি আপনি তড়িঘড়ি করে কবর থেকে বেরিয়ে
এলেন? প্রিয়নবী সা. তাদেরকে আশ্বস্ত করে বললেন- না কোন আজাব
নয়। বরং তার জন্য নির্ধারিত জান্নাতের হুরগণ পৌঁছে গিয়েছিল। এ জন্যই পর্দা
রক্ষার্থে আমি দ্রুত বের হয়ে এসেছি (সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি)। (আত-তারগিব
ওয়াত্ তারহিব-কিতাবুল জিহাদ)
শহীদগণ সুপারিশ করতে পারবেন
ইসলাম কবুল করার পর উক্ত ব্যক্তি এক ওয়াক্ত নামায
অথবা একটা সিজদা করেনি। শুধুমাত্র জিহাদের বরকতে সে পেলো উচ্চতম স্থান। শুধু কি
তাই? পরবর্তীতে তার বংশধরদের মধ্যে যারা ইসলাম কবুল করবে, সে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। আবুদ্দারদা রা. বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ সা.কে বলে শুনেছি, শহীদ তার পরিবারবর্গের সত্তর
জনের জন্য সুপারিশ করার অধিকার পাবে। (আবু দাউদ, আত-তারগীব
ওয়াত্ তারহিব)
শহীদগণ জান্নাতুল ফিরদাউসে অবস্থান করেন
উম্মে হারিস রা. এর ছেলে বদর যুদ্ধে শাহাদাত
বরণ করেন। তার মা উম্মে হারিস প্রিয়নবী সা.-এর কাছে ছুটে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ছেলে যদি জান্নাতবাসী না হয় তবে আমি বিলাপ করে
কাঁদব। এ কথা শুনে প্রিয়নবী সা. মহিলাকে বলেন, কী বলছ তুমি!
সে তো এখন জান্নাতুল ফিরদাউসে অবস্থান করছে। (বুখারি) জিহাদে শহীদ হওয়ার পর শহীদকে
প্রতিশ্রুত পুরস্কার দেয়ার জন্য আল্লাহ এক মুহূর্ত বিলম্ব করেন না। শহীদ প্রসঙ্গে
আল্লাহ বলেন, “আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো
না। এই ধরনের লোকেরা আসলে জীবিত। কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোন চেতনা
থাকে না।” (সূরা বাকারা : ১৫৪)
মৃত্যু শব্দটি এবং এর ধারণা মানুষের মনে ভীতির
সঞ্চার করে। মৃত্যুর কথা শুনে সে সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই আল্লাহর পথে
শহীদদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে মৃত বললে ইসলামী দলের লোকদের
জিহাদ, সংঘর্ষ ও প্রাণ উৎসর্গ করার প্রেরণা স্তব্ধ হয়ে যাবার
সম্ভাবনা দেখা দেবে। এর পরিবর্তে ঈমানদারদের বলা হয়েছে যে, আল্লাহর
পথে যে ব্যক্তি প্রাণ দেয় সে আসলে চিরন্তন জীবন লাভ করে। এ চিন্তা পোষণের ফলে সাহস
ও হিম্মত তরতাজা থাকে এবং উত্তরোত্তর তা বাড়তে থাকে। জিহাদ ও শহীদ হওয়ার জন্য আরো
আকাক্সক্ষী হয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেন- “যারা
ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, আর যারা কাফির তারা
সংগ্রাম করে তাগুতের পথে। তাই
শয়তানের সাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাও। জেনে রাখ শয়তানের চাল বড়ই দুর্বল।” (সূরা নিসা : ৭৬)
“এরা তাদের মুখের ফুঁ দিয়ে আল্লাহর নূরকে
নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহর ফয়সালা হলো তিনি তাঁর নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন।
কাফেররা তা যতই অপছন্দ করুক না কেন। তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে
হিদায়াত এবং দ্বীনে হক দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্য সকল দ্বীনের ওপর
বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন।”
(৬১ : ৮-৯)
হক ও বাতিলের লড়াই চলছে। হক ও বাতিলের এ লড়াই
এ আমাদের জিততে হবে। লড়াইয়ের ময়দানে থেকে পালানো যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন- “তারাই সত্যিকার মুমিন, যারা আল্লাহ তার রাসূলের
প্রতি ঈমান এনেছে, এরপর এতে কোনো সন্দেহ করেনি এবং আল্লাহর
পথে জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে। এরাই সাচ্চা মুমিন।” (সূরা
আলে ইমরান : ১৬০)।
আল্লাহ ও তার নির্দেশিত পথে চলতে গেলে ইসলামী
আন্দোলনের নেতাকর্মীদের চাকচিক্যময় জীবন ও দুনিয়ার চাহিদা, ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসা উপেক্ষা করে- এক কথায় দুনিয়ার
জীবনের সুখ সুবিধাকে আখেরাতের বিনিময়ে বিক্রি করে আদর্শের ওপর অটল থাকতে হবে। “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম
সা. এরশাদ করেছেন- তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কামনা বাসনাকে আমার উপস্থাপিত দ্বীনের অধীনে করতে না পারবে।”
(আল ইবনাতুল কুবরা লি ইবনি বাত্তাহ-২১৯)।
“লোকেরা বললো, তোমাদের
বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটেছে। তাদেরকে ভয় করো, তা শুনে
তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছে: আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং
তিনি সবচেয়ে ভালো কার্য উদ্ধারকারী।” (সূরা আলে ইমরান : ১৭৩)
জবাবে তাদের রব বললেন, “আমি তোমাদের কারো কর্মকাণ্ড নষ্ট করবো না। পুরুষ হও বা নারী, তোমরা সবাই একই জাতির অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যারা আমার জন্য নিজেদের
স্বদেশভূমি ত্যাগ করেছে এবং আমার পথে যাদেরকে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া ও
কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং যারা আমার জন্য লড়েছে ও মারা গেছে, তাদের
সমস্ত গোনাহ আমি মাফ করে দেবো এবং তাদেরকে এমন সব বাগানে প্রবেশ করাবো যার নিচে
দিয়ে ঝরনাধারা বয়ে চলবে। এসব হচ্ছে আল্লাহর কাছে তাদের প্রতিদান এবং সবচেয়ে ভালো
প্রতিদান আল্লাহর কাছেই আছে।” (সূরা আলে ইমরান : ১৬৮)
মুসলমানরা যদি তাদের চেতনাকে মজবুত করে কালজয়ী আদর্শের ওপর অবিচল
থাকতে পারে তাহলে বিজয়ের মুকুট তাদের জন্যই অপেক্ষা করছে।
হাদিসে শাহাদাত
১. হযরত বারআ রা. থেকে বর্ণিত, নাবী সা.-এর নিকট এক ব্যক্তি অস্ত্রসজ্জিত হয়ে এলো এবং বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি প্রথমে জিহাদ করব না ইসলাম গ্রহণ করব? তিনি বললেন প্রথমে ইসলাম গ্রহণ কর তারপর জিহাদ কর। লোকটি ইসলাম গ্রহণ করলো,
তারপর জিহাদে লিপ্ত হলো এবং শহীদ হয়ে গেল। নাবী সা. বললেন এই
ব্যক্তি সামান্য আমল করলো কিন্তু বিপুল প্রতিদান লাভ করলো। (বুখারী ও
মুসলিম-রিয়াদুস সালেহীন হাদিস নম্বর-১৩১২)
২. হযরত সুমামাহ রা. হতে বর্ণিত হযরত ওসমান
রা. বলেন একদা রাসূল সা. মক্কার অদূরে সাবির পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়েছিলেন, তার সাথে তখন হযরত আবু বকর রা. হযরত ওমর রা. এবং আমি (হযরত ওসমান রা.)
ছিলাম। হঠাৎ পাহাড়টি নড়ে উঠলে রাসূল সা. এতে পদাঘাত করে বললেন হে সাবীর স্থির হও,
তোমার ওপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক এবং দু’জন শহীদ রয়েছে। (তিরমিযি, নাসাঈ)
শাহাদাতের আগেই আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় কর
যদিও সে সময় মুসলমানদের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত
নাজুক ছিল মুসলমানদেরকে আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করার আহবান জানানো হয়েছে। সামনে
প্রশ্ন ছিল এই যে, ইসলাম এবং মুসলমানরা টিকে থাকবে কী থাকবে
না। তাদের কাছে দাবি ছিল এই যে, মুসলমানরা নিজেদেরকে এবং
নিজেদের দীনকে কুফরের আধিপত্যের হাত থেকে রক্ষা করার এবং আল্লাহর দীনের বিজয়ী করার
জন্য তাদের জীবন কোরবানি করবে এবং যুদ্ধ প্রস্তুতিতে নিজেদের সমস্ত সহায় সম্পদ
যথাসম্ভব অকৃপণভাবে কাজে লাগাবে। এ মুহূর্তে যে ব্যক্তি কৃপণতা দেখাবে সে
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না, বরং নিজেদের
ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ মানুষের মুখাপেক্ষী নন। কোন একটি দল বা গোষ্ঠী
যদি তার দীনের জন্য কোরবানি পেশ করতে টালবাহানা করে তাহলে আল্লাহ তাদের অপসারণ করে
অপর কোন দল বা গোষ্ঠীকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন।
প্রত্যেক জীবনকেই মরণের স্বাদ নিতে হবে
পৃথিবীতে কোন মানুষ চিরস্থায়ী নয়। প্রত্যেক
মানুষই মরণশীল। মরণের স্বাদ সকলকেই গ্রহণ করতে হবে। মরণের পর একজন মানুষের সব
কিছুই বিলীন হয়ে যায়, শুধু বিলীন হয় না তার আমল। মানুষ তার কর্ম
এবং ব্যবহারের মাধ্যমেই বেঁচে থাকে মরণের পরও।
শহীদগণের মরণ পিঁপড়ার কামড়ের মতো
মরণের সময় শহীদগণের কোন মরণ কষ্ট হয় না, কেবলমাত্র পিঁপড়ার কামড়ের মতো মনে হবে। উল্লেখ্য যে শহীদগণের যেমন কোনো
মরণ কষ্ট হয় না তেমনি শহীদগণের কোনো কবরের আজাব হয় না। কবরের ভয়াবহ শাস্তি থেকে
শহীদগণ মুক্ত।
শহীদ হওয়ার জন্য দোয়া করা
হযরত উমার রা. দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মারজুকনা শাহাদাতান ফি সাবিলিকা অরজুকনা মাউতান ফি বালাদি
নাবিয়িক’ অর্থাৎ হে আল্লাহ তোমার পথে আমাকে শহীদি মৃত্যু দাও,
এবং তোমার নবীর শহরে আমার মৃত্যু দাও।
যেহেতু শহীদি মৃত্যু হলেও ঋণ মাফ হয় না, তাই
আমাদের কর্তব্য হবে আল্লাহর বান্দাদের সব হক বুঝে দেয়া। শহীদি মৃত্যুর সুযোগ হলে
সকল চিন্তার অবসান হবে। অমা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ। সুবহানাকা আল্লাহুম্মা
অবিহামদিকা আসহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরকা অআতুবু ইলায়কা
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক; সাবেক সংসদ সদস্য
#প্রবন্ধটি A4 সাইজে পিডিএফ ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। লেখাটি ছাত্র সংবাদ থেকে কপিকৃত।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।