ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলামঃঃ ইসলাম মানুষকে অনন্য শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে নানা নিয়ম-কানূন মেনে চলার জন্য ইসলাম নির্দেশনা দিয়েছে। তেমনি কারো বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রে ইসলাম অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتًا غَيْرَ بُيُوْتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوْا وَتُسَلِّمُوْا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্যদের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা তাদের অনুমতি নাও এবং গৃহবাসীদের প্রতি সালাম কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম’ (নূর ২৪/২৭)।
ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেন,
لا يجوز أن يدخل بيت غيره إلا بالاستئذان لهذه الآية، يعني: يجب الاستئذان إذا أراد الدخول إلى بيت غيره،
এ আয়াত দ্বারা (প্রমাণিত হয় যে,) অনুমতি ব্যতীত অন্যের ঘরে প্রবেশ করা জায়েয নয়। অর্থাৎ অন্যের গৃহে প্রবেশের ইচ্ছা করলে অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক’। অন্যের বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশের কিছু আদব রয়েছে। সেগুলি মেনে চললে সমাজ সুন্দর হয়। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দূরীভূত হয়। আর ঐ আদবগুলি না মানলে সমাজ হয় বিশৃঙ্খল। নিম্নে অনুমতি গ্রহণের আদবগুলি উল্লেখ করা হ’ল।-
১. অনুমতি গ্রহণের প্রাক্কালে সালাম দেওয়াঃ
অনুমতি গ্রহণের পূর্বেই সালাম দেওয়া সুন্নাত। যদি কেউ জবাব না দেয়, তাহ’লে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার অনুরূপ বলবে। তারপরও যদি কেউ উত্তর না দেয়, তাহ’লে ফিরে আসবে। হাদীছে এসেছে, কালাদাহ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) হ’তে বর্ণিত,
أَنَّ صَفْوَانَ بْنَ أُمَيَّةَ بَعَثَهُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِلَبَنٍ وَجِدَايَةٍ وَضَغَابِيسَ وَالنَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم بِأَعْلَى مَكَّةَ فَدَخَلْتُ وَلَمْ أُسَلِّمْ فَقَالَ ارْجِعْ فَقُلِ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ. وَذَاكَ بَعْدَ مَا أَسْلَمَ صَفْوَانُ بْنُ أُمَيَّةَ.
একদা ছাফওয়ান ইবনু উমাইয়াহ (রাঃ)-কে কিছু দুধ, একটি হরিণ ছানা ও কিছু শসা সহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট প্রেরণ করলেন। তখন নবী করীম (ছাঃ) মক্কার উঁচু স্থানে অবস্থান করছিলেন। (ছাফওয়ান বলেন) আমি সালাম না দিয়েই তাঁর নিকট প্রবেশ করলে তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং ‘আসসালামু আলাইকুম’ বল। এটা ছিল ছাফওয়ান ইবনু উমাইয়াহ (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের পর’।
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تَأْذَنُوْا لِمَنْ لَمْ يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ যে প্রথমে সালাম না দেয়, তোমরা তাকে প্রবেশের অনুমতি দিও না’।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রিবঈ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
رَجُلٌ مِنْ بَنِى عَامِرٍ أَنَّهُ اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ فِى بَيْتٍ فَقَالَ أَلِجُ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم لِخَادِمِهِ اخْرُجْ إِلَى هَذَا فَعَلِّمْهُ الاِسْتِئْذَانَ فَقُلْ لَهُ قُلِ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ. فَسَمِعَهُ الرَّجُلُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَأَدْخُلُ فَأَذِنَ لَهُ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم فَدَخَلَ.
বনী আমিরের এক লোক আমাকে বলল, সে নবী করীম (ছাঃ)-এর এক ঘরে অবস্থানকালে তাঁর নিকটে প্রবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে বলল, আমি কি আসবো? নবী করীম (ছাঃ) তখন তাঁর খাদেমকে বললেন, তুমি বের হয়ে তার নিকটে গিয়ে তাকে অনুমতি গ্রহণের নিয়ম শিখিয়ে দাও। তুমি তাকে বল যে, তুমি বল, আসসালামু আলাইকুম’ আমি কি ভিতরে আসতে পারি? লোকটি একথা শুনে বলল, আসসালামু আলাইকুম’ আমি কি ভিতরে আসতে পারি? নবী করীম (ছাঃ) তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে ভিতরে প্রবেশ করল’। এ হাদীছ দ্বারা অনুমতি গ্রহণের শিষ্টাচার সহজেই অনুমতি হয়। সুতরাং অনুমতির জন্য কলিংবেল বাজালেও, সেই সাথে মুখে সালাম বলা উচিত।
২. তিনবার অনুমতি চাওয়াঃ
কারো বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশকালে তিনবার অনুমতি চাওয়া প্রয়োজন। এরপরও অনুমতি না মিললে ফিরে আসতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلاَثاً فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ فَلْيَرْجِعْ- তোমাদের কেউ যদি তিনবার অনুমতি চায়। কিন্তু তাতে অনুমতি দেয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়’।
অন্য হাদীছে এসেছে, আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি আনছারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবূ মূসা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেন, আমি তিনবার ওমর (রাঃ)-এর নিকটে অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হ’ল না। তাই আমি ফিরে আসলাম। ওমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে কিসে বাধা দিল? আমি বললাম, আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হ’ল না। তাই আমি ফিরে আসলাম। (কারণ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাতে অনুমতি দেয়া না হয়, তবে সে যেন ফিরে যায়’। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে এ কথার উপর অবশ্যই দলীল প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মাঝে কেউ আছে কি যিনি নবী করীম (ছাঃ) থেকে এ হাদীছ শুনেছে? তখন উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আপনার কাছে প্রমাণ দিতে দলের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিই উঠে দাঁড়াবে। আর আমি দলের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, নবী করীম (ছাঃ) অবশ্যই এ কথা বলেছেন’।
উল্লেখ্য, তিন বার অনুমতি চাওয়ার কারণ হ’ল প্রথমবার শ্রবণের, দ্বিতীয়বার প্রস্ত্ততি গ্রহণের এবং তৃতীয়বার অনুমতি প্রদানের জন্য। আর তিন বারের অধিক অনুমতি চাওয়া সমীচীন নয়। আবুল আলানিয়া (রহঃ) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)-এর বাড়িতে এসে সালাম দিলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হয়নি। আমি পুনরায় সালাম দিলাম, কিন্তু অনুমতি প্রাপ্ত হ’লাম না। আমি তৃতীয়বার উচ্চৈঃস্বরে বললাম, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ দার। এবারও আমি অনুমতি প্রাপ্ত হ’লাম না। অতএব আমি একপাশে সরে গিয়ে বসে থাকলাম। আমার নিকটে একটি গোলাম বের হয়ে এসে বলল, প্রবেশ করুন। আমি প্রবেশ করলে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) আমাকে বলেন, তুমি আরো অধিকবার অনুমতি প্রার্থনা করলে তোমাকে অনুমতি দেয়া হ’ত না’।
৩. অনুমতি গ্রহণকারীর পরিচয় পেশ করাঃ
অনুমতি গ্রহণের সময় অনুমতি প্রার্থীর জন্য খুবই যরূরী হ’ল নিজের পরিচয় পেশ করা।
হাদীছে এসেছে, জাবির (রাঃ) বলেন,
أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فِى دَيْنٍ كَانَ عَلَى أَبِى فَدَقَقْتُ الْبَابَ فَقَالَ مَنْ ذَا فَقُلْتُ أَنَا فَقَالَ أَنَا أَنَا كَأَنَّهُ كَرِهَهَا.
আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল, এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে আসলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি। তখন তিনি বললেন, আমি আমি, যেন তিনি তা অপসন্দ করলেন’। অন্যত্র এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে বুরায়দা (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,
خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْمَسْجِدِ، وَأَبُوْ مُوْسَى يَقْرَأُ فَقَالَ: مَنْ هَذَا؟ فَقُلْتُ: أَنَا بُرَيْدَةُ جَعَلْتُ فِدَاكَ، قَالَ: قَدْ أُعْطِيَ هَذَا مِزْمَارًا مِنْ مَزَامِيْرِ آلِ دَاوُدَ.
‘নবী করীম (ছাঃ) মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হ’লেন। তখন আবু মূসা (রাঃ) কুরআন পড়ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি বুরায়দা, আপনার জন্য উৎসর্গপ্রাণ। তিনি বললেন, তাকে দাঊদ (আঃ) পরিবারের সুমধুর কণ্ঠস্বর থেকে একটি কণ্ঠস্বর দান করা হয়েছে’। অন্যত্র এসেছে, উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাঃ) বলেন,
ذَهَبْتُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَامَ الْفَتْحِ، فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ، وَفَاطِمَةُ ابْنَتُهُ تَسْتُرُهُ قَالَتْ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ مَنْ هَذِهِ؟ فَقُلْتُ أَنَا أُمُّ هَانِئٍ بِنْتُ أَبِى طَالِبٍ. فَقَالَ مَرْحَبًا بِأُمِّ هَانِئٍ.
‘আমি ফতেহ মক্কার বছর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন। আর তাঁর মেয়ে ফাতিমাহ (রাঃ) তাঁকে আড়াল করে রেখেছেন। তিনি বলেন, আমি তাঁকে সালাম প্রদান করলাম। তিনি জানতে চাইলেন, কে? আমি বললাম, আমি উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব। তিনি বললেন, মারহাবা, হে উম্মু হানী’!
উপরোক্ত হাদীছগুলোতে অনুমতি প্রার্থনার জন্য নিজের পরিচয় পেশ করা হয়েছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, অনুমতি চাওয়ার জন্য নিজের পরিচয় পেশ করতে হবে। এর ফলে গৃহকর্তার জন্য অনুমতি দেওয়া সহজ হয়।
৪. জোরে জোরে দরজা খটখট না করাঃ
কারো বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশের সময় অনুমতি গ্রহণকালে খুব জোরে দরজা ধাক্কানো বা বিকটভাবে কড়া নাড়া যাবে না। কারণ এতে গৃহের অভ্যন্তরের লোকদের অসুবিধা হ’তে পারে। কেউ ঘুমন্ত থাকলে তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে। রোগী থাকলে তার বিশ্রামে বিঘ্ন ঘটবে। শিশুরা থাকলে ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। আনাস (রাঃ) বলেন,أَنَّ أَبْوَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم كَانَتْ تُقْرَعُ بِالأَظَافِيرِ ‘নবী করীম (ছাঃ)-এর দরজায় নখ দ্বারা (হালকাভাবে) আঘাত করা হ’ত’।
৫. অনুমতি গ্রহণের সময় দরজা বরাবর না দাঁড়ানোঃ
অনুমতি গ্রহণের সময় দরজা বরাবর দাঁড়ানো যাবে না। বরং ডান বা বাম দিকে সরে দাঁড়াবে। যাতে তার দৃষ্টিতে এমন কিছু না পড়ে যা তার জন্য দেখা বৈধ নয়। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَى بَابَ قَوْمٍ لَمْ يَسْتَقْبِلِ الْبَابَ مِنْ تِلْقَاءِ وَجْهِهِ وَلَكِنْ مِنْ رُكْنِهِ الأَيْمَنِ أَوِ الأَيْسَرِ وَيَقُولُ السَّلاَمُ عَلَيْكُمُ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ. وَذَلِكَ أَنَّ الدُّوْرَ لَمْ يَكُنْ عَلَيْهَا يَوْمَئِذٍ سُتُوْرٌ.
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোন কওমের নিকটে এলে সরাসরি দরজায় মুখ করে দাঁড়াতেন না, বরং দরজার ডান অথবা বাম পাশে সরে দাঁড়িয়ে বলতেন, আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম। কারণ সে যুগে দরজায় পর্দা টানানো থাকতো না’।
বর্তমান যুগে দরজায় পর্দা থাকলেও পর্দা সরে গেলে ভিতরের অনেক কিছু দৃষ্টিগোচর হ’তে পারে, যা দেখা আগন্তুকের জন্য বৈধ নয়। এজন্য দরজা বরাবর না দাঁড়িয়ে এক পাশে দাঁড়ানো উচিত।
৬. অনুমতির জন্য অপেক্ষা করাঃ
বাড়ীর মালিক, খাদেম বা বাড়ীর অন্য কোন জ্ঞান সম্পন্ন লোকের অনুমতির অপেক্ষা করা। যারা বাড়ীর অবস্থা সম্পর্কে জানে। অনুমতির ক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বালক-বালিকার কথায় গুরুত্ব না দেওয়া। কেননা তারা অনেক সময় আগন্তুককে ভিতরে প্রবেশের জন্য আহবান জানায়, অথচ অভ্যন্তরের পরিবেশ সে জানে না বা বোঝে না। তখন অনুমতি প্রার্থী বা আগন্তুক ভিতরে প্রবেশ করে কোন বিব্রতকর পরিস্থির মুখোমুখি হ’তে পারে কিংবা তার দৃষ্টি গোচর হ’তে পারে এমন কোন জিনিস যা তার জন্য দেখা বৈধ নয়।
৭. বিনা অনুমতিতে অন্যের বাড়ী বা গৃহের অভ্যন্তরে না তাকানোঃ
বাড়ীর মালিকের অনুমতি ছাড়া বাড়ীর ভিতরে তাকানো নিষেধ। সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّمَا جُعِلَ الاِسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ، ‘দৃষ্টির কারণেই (প্রবেশ) অনুমতির বিধান করা হয়েছে’। অর্থাৎ দৃষ্টি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে এ নির্দেশ।
কারো বাড়ীর ভিতরে তাকালে বাড়ীর মহিলাদের অজ্ঞাতে তাদের দেখা হয়ে যেতে পারে। যাতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হ’তে পারে। আর এভাবে কেউ তাকালে বাড়ীর লোকেরা বুঝতে পেরে ঐ লোকের চোখ ফুড়ে দিলে তাদের উপরে কোন দোষ বর্তাবে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,مَنِ اطَّلَعَ فِىْ بَيْتِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَقَدْ حَلَّ لَهُمْ أَنْ يَفْقَئُوْا عَيْنَهُ. ‘যে ব্যক্তি কোন কওমের ঘরে তাদের অনুমিত ব্যতিরেকে উকি-ঝুঁকি মারে, তাহ’লে তার চোখ ফুড়ে দেওয়া তাদের জন্য বৈধ’। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَوْ أَنَّ رَجُلاً اطَّلَعَ عَلَيْكَ بِغَيْرِ إِذْنٍ فَخَذَفْتَهُ بِحَصَاةٍ فَفَقَأْتَ عَيْنَهُ مَا كَانَ عَلَيْكَ مِنْ جُنَاحٍ. ‘কোন ব্যক্তি যদি বিনা অনুমতিতে তোমার প্রতি উকি-ঝুঁকি মারে, আর তুমি তাকে কংকর মেরে তার চোখ ফুঁড়ে দাও, তাহ’লে তোমার কোন দোষ নেই’।
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَجُلاً اطَّلَعَ مِنْ جُحْرٍ فِىْ دَارِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَالنَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يَحُكُّ رَأْسَهُ بِالْمِدْرَى فَقَالَ لَوْ عَلِمْتُ أَنَّكَ تَنْظُرُ لَطَعَنْتُ بِهَا فِىْ عَيْنِكَ، إِنَّمَا جُعِلَ الإِذْنُ مِنْ قِبَلِ الأَبْصَارِ-
এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর ঘরের দরজা দিয়ে ভিতরে উঁকি দিল। নবী করীম (ছাঃ) তখন লোহার একটি চিরুনী দিয়ে তাঁর মাথা আচড়াচ্ছিলেন। তখন তিনি তাকে দেখে বললেন, আমি যদি জানতে পারতাম যে, তুমি (উঁকি মেরে) আমাকে দেখছ, তাহ’লে আমি এই চিরুনী দিয়ে তোমার চোখে আঘাত করতাম। দৃষ্টির কারণেই তো (প্রবেশ) অনুমতির বিধান করা হয়েছে’।
অন্যত্র তিনি বলেন,مَنِ اطَّلَعَ فِى بَيْتِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَفَقَئُوا عَيْنَهُ فَلاَ دِيَةَ لَهُ وَلاَ قِصَاصَ. ‘যে ব্যক্তি কোন গোত্রের গৃহে তাদের বিনা অনুমতিতে উঁকি মারে এবং তারা (দেখতে পেয়ে) তার চক্ষু ফুটিয়ে দেয়, তবে তাতে কোন রক্তপণ (দিয়াত) বা অনুরূপ বদলা (ক্বিছাছ) নেই’।
অতএব কারো গোপনীয় বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করা জায়েয নয়। সুতরাং দরজা, জানালা, দেওয়ালের ছিদ্র, বাড়ীর ছাদ থেকে সরাসরি কিংবা দুর্বিন বা দূরদর্শন যন্ত্রের সাহায্যে অন্যের বাড়ীর অভ্যন্তরে তাকানো বৈধ নয়। এরূপ কেউ করলে সে পাপী হবে।
৮. দৃষ্টি অবনমিত রাখাঃ
অন্যের বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশের পর এদিক-সেদিক তাকানো হ’তে বিরত থাকবে এবং দৃষ্টি অবনত রাখবে। যাতে এমন কোন বস্ত্তর প্রতি দৃষ্টি নিপতিত না হয় যা তার জন্য দেখা বৈধ নয়।
৯. অনুমতি দেওয়া না হ’লে ফিরে আসাঃ
প্রবেশের অনুমতি চাওয়ার পর অনুমতি না দিলে ফিরে আসবে। আল্লাহ বলেন,وَإِنْ قِيْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا فَارْجِعُوْا هُوَ أَزْكَى لَكُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِيْمٌ، ‘আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও! তাহ’লে তোমরা ফিরে এসো। এটাই তোমাদের জন্য পবিত্রতর। আর আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত’ (নূর ২৪/২৮)।
অনুমতি না পেলে মন খারাপ করা উচিত নয়। কারণ বাড়ীর মালিকের বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে। যেমন ঘুমানো, যদিও সেটা অসময় হয়; ছায়েম থাকতে পারে, বাড়ীতে আগত মেহমানদের সাথে বিশেষ বৈঠক, পারিবারিক তা‘লীম, অসুস্থ-রোগী কিংবা পারিবারিক বিশেষ কোন বৈঠক থাকতে পারে। সুতরাং যে কারণেই হোক অনুমতি না দিলে ফিরে আসাই শ্রেয়। এক্ষেত্রে অনুমতি না দেওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা বা মনে কষ্ট নেওয়া উচিত নয়।
১০. বাসিন্দা বিহীন বাড়ী বা ঘরে প্রবেশে অনুমতি নিষ্প্রয়োজনঃ
যে বাড়ীতে বা গৃহে কেউ বসবাস করে না, সেখানে প্রয়োজন থাকলে প্রবেশ করা যাবে। এক্ষেত্রে অনুমতির প্রয়োজন নেই। আল্লাহ বলেন,لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَدْخُلُوْا بُيُوتًا غَيْرَ مَسْكُوْنَةٍ فِيهَا مَتَاعٌ لَكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُوْنَ وَمَا تَكْتُمُوْنَ، ‘যে গৃহে কেউ বসবাস করে না। সেখানে তোমাদের মাল-সম্পদ থাকলে তাতে প্রবেশে তোমাদের কোন দোষ নেই। বস্ত্ততঃ আল্লাহ জানেন যা কিছু তোমরা প্রকাশ কর এবং যা তোমরা গোপন কর’ (নূর ২৪/২৯)।
১১. কাউকে ডাকার জন্য লোক পাঠানো হ’লে অনুমতি নিষ্প্রয়োজনঃ
কাউকে ডাকার জন্য লোক পাঠানো হ’লে এবং সে ঐ লোকের সাথে আসলে তার জন্য অনুমতির প্রয়োজন হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,رَسُولُ الرَّجُلِ إِلَى الرَّجُلِ إِذْنُهُ، ‘কোন ব্যক্তিকে ডেকে আনার জন্য কোন লোক পাঠালে তা তার অনুমতি হিসাবে ধর্তব্য’। তিনি আরো বলেন,إِذَا دُعِىَ أَحَدُكُمْ إِلَى طَعَامٍ فَجَاءَ مَعَ الرَّسُوْلِ فَإِنَّ ذَلِكَ لَهُ إِذْنٌ. ‘যখন তোমাদের কেউ পানাহারের জন্য আমন্ত্রিত হয় এবং সে আমন্ত্রণকারীর প্রতিনিধির সঙ্গে আসে, তবে তার জন্য এটাই অনুমতি’।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, إِذَا دُعِيْتَ فَقَدْ أُذِنَ لَكَ ‘যখন তোমাকে ডাকা হয়, সেটাই তোমার জন্য অনুমতি’।
১২. মাহরাম মহিলাদের নিকটে প্রবেশকালে অনুমতি নেওয়াঃ
মাহরাম মহিলা অর্থাৎ যাদের সাথে বিবাহ হারাম, তাদের নিকটে প্রবেশকালেও অনুমতি নিতে হবে। অর্থাৎ মা, বোন, মেয়ে, নানী, দাদী, খালা, ফুফু ও অনুরূপ মহিলাদের নিকটে তাদের বিশ্রাম স্থলে প্রবেশের সময় অনুমতি নিতে হবে। অন্যথা এমন অবস্থায় তাদের দেখা হয়ে যাবে যে অবস্থায় দেখা উচিত নয়। অনুরূপভাবে মহিলারাও মাহরাম পুরুষের নিকটে প্রবেশের সময় অনুমতি নিবে। যাতে তারা কোন বিব্রতকর পরিস্থির শিকার না হয়। আলকামা (রহঃ) বলেন,جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عَبْدِ الله قال: أأستأذن عَلَى أُمِّي؟ فَقَالَ: مَا عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهَا تحب أن تراها. ‘এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, আমি কি আমার মায়ের নিকটে (প্রবেশ করতেও) অনুমতি চাইব? তিনি বলেন, প্রতিটি মুহূর্তে তুমি তাকে দেখতে পসন্দ করবে না’।
ছা‘লাবা ইবনে আবু মালেক আল-কুরাযী (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি ‘পর্দার তিন সময়’ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য জন্তুযানে আরোহণ করে বনু হারিছা ইবনুল হারিছ-এর সদস্য আব্দুল্লাহ ইবনে সুয়াইদ (রাঃ)-এর নিকটে গেলেন। কারণ তিনি এই তিন সময়ের নিয়ম মেনে চলতেন। তিনি বলেন, তুমি কি জানতে চাও? আমি বললাম, আমি ঐ তিন সময়ের বিধান মেনে চলতে চাই। তিনি বলেন, দুপুরের সময় যখন আমি আমার পোশাকাদি খুলে রাখি তখন আমার পরিবারের কোন বালেগ সদস্য আমার অনুমতি ব্যতীত আমার নিকট প্রবেশ করতে পারে না। অবশ্য আমি যদি তাকে ডাকি, তবে এটাও তার জন্য অনুমতি। আর যখন ফজরের ওয়াক্ত হয় এবং লোকজনকে চেনা যায়, তখন থেকে ফজরের ছালাত পড়া পর্যন্ত সময়ও (কেউ অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করতে পারে না)। আর আমি এশার ছালাত পড়ার পর পোশাক খুলে রেখে ঘুমানো পর্যন্ত (অনুমতি ব্যতীত প্রবেশ করে না)।
মায়ের গৃহে প্রবেশের ন্যায় বোনের নিকটে প্রবেশকালেও অনুমতি নিতে হবে। আতা (রহঃ) বলেন, আমি ইবনে আববাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কি আমার বোনের নিকটেও প্রবেশানুতি প্রার্থনা করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, আমার প্রতিপালনাধীনে আমার দু’টি বোন আছে, আমিই তাদের পৃষ্ঠপোষক (নিরাপত্তা দানকারী) এবং আমিই তাদের ভরণ-পোষণ করি, আমি কি তাদের নিকটেও প্রবেশানুমতি চাইব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তুমি কি তাদেরকে উলঙ্গ দেখতে পসন্দ করবে? অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত আয়াত পড়েন (অনুবাদ) ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের দাস-দাসীরা এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখনো প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি তারা যেন তিন সময়ে তোমাদের কাছে আসতে অনুমতি গ্রহণ করে। ফজরের ছালাতের পূর্বে, দুপুরে যখন বিশ্রামের জন্য তোমরা কাপড় খুলে রাখ এবং এশার ছালাতের পর। এ তিনটি সময় তোমাদের জন্য পর্দার’ (নূর ২৪/৫৮)। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, পর্দার এই তিন সময়ই তাদেরকে অনুমতি প্রার্থনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের শিশুরা বয়ঃপ্রাপ্ত হ’লে তারাও যেন অনুমতি গ্রহণ করে পূর্ববর্তীদের ন্যায়’ (নূর ২৪/৫৯)।
১৩. শিশুদের অনুমতি গ্রহণঃ
শিশুরা প্রাপ্ত বয়স্ক হ’লে তাদেরকেও বাড়ী-ঘরে প্রবেশকালে এবং পিতা-মাতা ও বোন, ফুফু-খালার ঘরে প্রবেশের অনুমতি নিতে হবে। আল্লাহর বাণী,وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ ‘আর তোমাদের শিশুরা বয়ঃপ্রাপ্ত হ’লে তারাও যেন অনুমতি গ্রহণ করে পূর্ববর্তীদের ন্যায়। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতসমূহ ব্যাখ্যা করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’ (নূর ২৪/৫৯)। ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তার কোন সন্তান বালেগ হ’লেই তিনি তাঁকে পৃথক (বিছানা) করে দিতেন। সে অনুমতি ব্যতীত তার নিকটে প্রবেশ করতে পারতো না।
১৪. বাড়ীতে বা গৃহে কেউ না থাকলে সেখানে প্রবেশ না করাঃ
কোন বাড়ীতে বা গৃহে যদি কেউ না থাকে তাহ’লে স্বাভাবিকভাবে সেখানে প্রবেশ না করা উত্তম। আল্লাহ বলেন,فَإِنْ لَمْ تَجِدُوْا فِيْهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوْهَا حَتَّى يُؤْذَنَ لَكُمْ ‘যদি তোমরা গৃহে কাউকে না পাও, তাহ’লে সেখানে প্রবেশ করো না তোমাদেরকে অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত’ (নূর ২৪/২৮)। অনুমতি ব্যতীত কারো বাড়ীতে প্রবেশ করা অনুচিত। কারণ এতে অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হয়। যেমন হয়তো সে বাড়ীতে চুরি হ’ল। বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে সন্দেহ ঐ ব্যক্তির দিকে যেতে পারে। অথবা বাড়ীতে ঘুমন্ত কেউ রয়েছে, যাকে দেখা প্রবেশকারীর জন্য বৈধ নয়। তাই অনুমতি প্রদানের মত কেউ না থাকলে ফিরে আসা যরূরী।
১৫. বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশকালে স্ত্রীকে সতর্ক করাঃ
বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশকালে সালাম প্রদান ও অন্য শারঈ কোন যিকর বা অন্য কোন আওয়াযের মাধ্যমে স্ত্রীকে সতর্ক করা, যাতে স্বামী বাড়ীতে প্রবেশ করে তাকে এমন কোন অবস্থায় না দেখে, যে কারণে স্বামীর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কিংবা সে অসন্তুষ্ট হয়। আর এর পরিণতি হয় ভয়াবহ। শয়তান সর্বদা মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিতে লিপ্ত থাকে। তাই মনে সন্দেহের কোন অবকাশ যেন না থাকে তার ব্যবস্থা করা।
১৬. তাসবীহ বলা বা হাতে হাত মারার মাধ্যমে অনুমতি প্রদানঃ
কোন সময় কোন বাড়ীতে কেউ অনুমতির জন্য করাঘাত করল, অথচ বাড়ীর মালিক তখন ছালাতে দন্ডায়মান তখন মালিক ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে আওয়াজ করবে, এটাই তার অনুমতি। অথবা বাড়ীতে মহিলা ছালাতে দন্ডায়মান থাকলে সে হাতে হাত মেরে আওয়াজ করবে, এটাই আগন্তুকের জন্য অনুমতি। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا اسْتُؤْذِنَ عَلَى الرَّجُلِ وَهُوَ يُصَلِّي فإِذْنُهُ التَّسْبيْحُ وَإِذَا اسْتؤْذِنَ عَلَى المَرْأةِ وَهِيَ تُصَلِّي فإِذْنُها التَّصْفِيْقُ، ‘যখন ছালাতে দন্ডায়মান কোন পুরুষের নিকটে অনুমতি চাওয়া হয়, তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা তার অনুমতি। আর যদি ছালাতে দন্ডায়মান কোন মহিলার নিকটে অনুমতি চাওয়া হয়, তখন হাতে হাত মেরে আওয়াজ করা তার অনুমতি’।
১৭. অনুমতি প্রার্থীকে স্পষ্ট বা অস্পষ্ট ভাষায় প্রত্যাখ্যান করাঃ
বাড়ীর মালিক কোন সমস্যা থাকলে বা ব্যবস্ততার কারণে স্পষ্ট ভাষায় কিংবা অস্পষ্ট ভাষায় অনুমতি প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়ীর মালিক বা গৃহকর্তা কোন কারণ দর্শাতে বাধ্য নয়। আবার অনুমতি প্রার্থীকেও মালিকের অসুবিধা বা অপারগতার বিষয়টি খুটে খুটে জিজ্ঞেস করা উচিত নয়।
১৮. বাড়ী বা গৃহ থেকে বের হওয়ার সময় অনুমতি নেওয়াঃ
কারো বাড়ীতে গেলে তার অনুমতি ব্যতীত সে বাড়ী থেকে বের হওয়া যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا زَارَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَجَلَسَ عِنْدَهُ فَلاَ يَقُوْمَنَّ حَتَّى يَسْتَأْذِنَهُ، ‘তোমাদের কেউ যখন তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য যায়, অতঃপর তার পাশে বসে। সে যেন তার (বাড়ীর মালিকের) অনুমতি ব্যতীত বের না হয়’। বাড়ীতে প্রবেশে যেমন অনুমতি গ্রহণ প্রয়োজন তেমনি বের হওয়ার সময়ও অনুমতি নিয়ে বের হ’তে হবে। যাতে অপ্রীতিকর কোন কিছু দৃষ্টিগোচর না হয়।
১৯. জিহাদের জন্য পিতা-মাতার অনুমতি চাওয়াঃ
জিহাদ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা যায়, বহিঃশত্রু দমন করা যায় এবং অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যায়। তবে কারো যদি পিতা বা মাতা কিংবা উভয়ই বেঁচে থাকে তাহ’লে তাদের অনুমতি ব্যতীত জিহাদে গমন বৈধ নয়। যেমনভাবে দেশের শাসক বা প্রধানের অনুমতি ব্যতীত জিহাদে গমন করা বৈধ নয়। ‘মু‘আবিয়া ইবনে জাহিমা আস-সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহর সন্তোষ লাভের এবং আখেরাতে জান্নাত প্রাপ্তির আশায় আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ফিরে গিয়ে তার সেবা-যত্ন করো। এরপর আমি অপর পাশ থেকে তাঁর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হ্যাঁ। তিনি বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং তার সেবা-যত্ন কর। এরপর আমি তাঁর সম্মুখভাগে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, তোমার জন্য আফসোস! তার পায়ের কাছে পড়ে থাক, সেখানেই জান্নাত’।
অতএব কারো বাড়ীতে বা গৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রে উপরোক্ত আদব বা শিষ্টাচার সমূহ মেনে চলা যরূরী। এর ফলে সমাজে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করবে এবং সেখান থেকে নানা অনাচার-দুরাচার দূরীভূত হবে। সেই সাথে এগুলি পালনের মাধ্যমে অশেষ ছওয়াব হাছিল হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।