দারসুল কুরআন
বিষয়ঃ ইসলামী আন্দোলন বা বায়আতের গুরুত্ব
সূরাঃ আত-তাওবা (১১১-১১২)
﴿إِنَّ
اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّلَهُمُ
الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَۖ
وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ
وَمَنْأَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ
الَّذِيبَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
﴿التَّائِبُونَ
الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَالسَّاجِدُونَ
الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنكَرِوَالْحَافِظُونَ
لِحُدُودِ اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ﴾
আয়াতের অনুবাদঃ
(১১১) প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ
মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে
লড়াই কর এবং মারে ও মরে । তাদের প্রতি তাওরাত,
ইন্জিল
ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়্দাা বিশেষ। আর
আল্লাহর চাইতে বেশী ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে?
কাজেই
তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা বেছা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
(১১২) আল্লাহর দিকে বার বার
প্রত্যাগমনকারী, তার ইবাদত কারী,তার
প্রশংসা বাণী উচ্চারণ কারী, তার সামনে রুকু কারী ও
সেজদা কারী, সৎ কাজের আদেশ কারী, অসৎ
কাজ থেকে বিরতকারী এবং আল্লাহর সীমা সংরক্ষনকারী (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা
আল্লাহর সাথে কেনা বেচার সওদা করে)। আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও!
সূরা আত্ তাওবার নাম করণঃ
এ সূরাটির দু’টি নামে পরিচিত: আত্ তাওবাহ ও আল বারাআতু। তাওবা
নাম করনের কারণ, এ সূরার ১১৮ নং আয়াতে
কতিপয় ঈমানদারের গোনাহ মাফ করে তাওবা বতবুল করার কথ বলা হয়েছে। আর এর শুরুতে
মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা ঘোষনা করা হয়েছে বলে একে বারায়াত (অর্থাৎ
সম্পর্কচ্ছেদ) নামে অভিহিত করা হয়েছে।
সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ না লেখার কারণঃ
১.
এটা যখন সংকলন করা হয় তখন সাহাবীদের মধ্যে মতা নৈক্য দেখা দেয়। কেহ কেহ বলেনঃ এই সূরা আনফালের অংশ অথবা কেহ
কেহ বলেনঃ আলাদা সূরা।
২.
বিসমিল্লাহ্ হলো রহমত কামনা ও নিরাপত্তার জন্য,
আর
এ সূরার মধ্যে কাফের মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা হয়েছে, তাই
বিসমিল্লাহ্ লেখা হয়নি।
৩.
ইমাম কায়েশী বলেনঃ জিব্রাঈল (আ.) এই সূরা নাযিলের সময় বিসমিল্লাহ নিয়ে আসেন নাই
তাই।
৪.
ইমাম রাযী বলেনঃ নবী করিম (সাঃ) নিজেই এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখেন নি, কাজেই
সাহাবা কেরাম ও লেখেন নি এবং পরবর্তী লোকেরা ও এ রীতি অনুসরণ অব্যাহত রেখেছেন।
পবিত্র কুরআন যে নবী (সাঃ) থেকে হুবুহু ও সামান্যতম পরিবর্তন-পরিবর্ধন ছাড়াই গ্রহন
করা হয়েছিল এবং যে ভাবে তিনি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই তাকে সংরক্ষন করার জন্য যে
সর্বোচ্ছ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে এটি তার একটি প্রমাণ।
সূরা আত-তাওবা নাযিলের সময়কালঃ
এ সূরা ৩টি ভাষনে নাযিল হয়ঃ
প্রথম
ভাষণঃ
১ম হতে ৫ম রুকুর শেষ পযর্ন্ত। এ অংশ ৯ম হিজরীর যিলক্বদ মাসে নাযিল হয়।
দ্বিতীয়
ভাষণঃ
৬ষ্ঠ রুকু থেকে ৯ম রুকুর শেষ পযর্ন্ত ,
৯ম
হিজরীর রজব মাসে নাযিল হয়।
তৃতীয়
ভাষণঃ ১০ম
রুকু থেকে সূরার শেষ পযর্ন্ত তাবুক যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন কালে অবতীর্ণ হয়।
সূরা আত-তাওবার বিষয় বস্তুঃ
o বিধর্মীদের
সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে (১ম রুকু)।
o তাবুক
যুদ্ধের অভিযান (৬ষ্ঠ-১০ম রুকু)।
o মুনাফিকদের
পরিণাম ও পরলৌকিক শাস্তি।(৪২-৪৩,৪৭-৫৯,৬১-৬৮,৭৪-৯০,৯৩-৯৮,১০১,১০৭-১১০,১২৪ ও ১২৭ আয়াত)
o মসজিদে
জেরার নির্মাণের পরিণাম ও উহা ধ্বংস করার নির্দেশ ( ১০৮ নং আয়াত)।
o শহীদের
মর্যাদা,
মাহাত্ম সৎপথে অর্থ ব্যয় এর পরিণাম (১৪তম রুকু)।
আলোচ্য আয়াতগুলোর শানে নুযুলঃ
অধিকাংশ মুফাস্সিরের মতে এ আয়াতগুলো নাযিল
হয়েছে ‘বায়আতে আকাবায়’ অংশগ্রহনকারী লোকদের ব্যাপারে।এ বায়’আত নেয়া হয়েছিল মক্কায় মদীনার আনসারদের থেকে।
তাই এই সূরাটি মাদানী হওয়া সত্ত্বে ও এ আয়াতগুলোকে মাক্কী বলা হয়েছে।
আকাবাঃ “এখানে আকাবা বলতে বোঝায় মিনার জমরায়ে আকাবার সাথে
মিলিত পর্বতাংশকে”। এখানে মদীনা থেকে আগত আনসারগণের তিন দফায় বায়আত
নেয়া হয়।
o
১ম দফা নেয়া হয় নবুয়তের একাদশ বছরে, তখন মোট ৬ জন লোক ইসলাম
গ্রহন করে মদীনায় ফিরে যায়। এত মদীনার ঘরে ঘরে ইসলাম ও নবী করীম (স.) -এর চর্চা
শুরু হয়।
o
২য় দফায় পরবর্তী বছর হজ্জ্বের মৌসুমে পূর্বের
৫ জন সহ মোট ১২ জন নবী করিম (স.) এর হাতে বায়আত গ্রহন করে। আর এভাবে মদীনায়
মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে থাকে (৪০ জনের ও বেশী)। ফলে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নবী
করিম (স.) হযরত মোসআব বিন উমাইর (রা:) কে কোরআন তালিমের জন্য প্রেরণ করেন।
o
৩য় দফায় নবুয়তের ত্রয়োদশ বছর ৭০ জন পুরুষ ও ২
জন মহিলা সহ ৩য় ও সর্বশেষ বায়আত এ আকাবায় অনুষ্ঠিত হয়। ‘সাধারণত একেই বায়’আতে আকাবা বলা হয়।
আয়াতের ব্যাখ্যাঃ
১১১ নং আয়াতঃ
﴿إِنَّ
اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّلَهُمُ
الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَۖ
وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ
وَمَنْأَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ
الَّذِيبَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
§ ১১১
নং আয়াতটি-ই জিহাদ সংক্রান্ত ১ম আয়াত। কারণ মুহাম্মদ (স.) মক্কায় অবস্থান কালে এ
পযর্ন্ত জিহাদ সংক্রান্ত কোন হুকুম নাযিল হয়নি।
জিহাদ অর্থঃ
জিহাদের সংজ্ঞাঃ
জিহাদের স্তরঃ ৫টি
১.
দাওয়াত ইলাল্লাহ।
২.
শাহাদাৎ আলান্ নাস।
৩.
কিতাল ফি-সাবিলিল্লাহ।
৪.
আমল বিল মা’রুফ নাহি আনিল মুনকার।
৫.
ইক্বামতে দ্বীন।
যেমনঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
﴿تُؤْمِنُونَ
بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِبِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ
ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْتَعْلَمُونَ﴾
“তোমরা আল্লাহ ও রাসুল (স.) এর প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবন বাজি রেখে জিহাদ করবে। এটাই
তোমাদের জন্য উত্তম; যদি
তোমরা বুঝতে পার”। (আস্ সফ-১১)
জিহাদের সফলতাঃ
§ আখেরাতের
সফলতাঃ আল্লাহ বলেনঃ
﴿فَلْيُقَاتِلْ
فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَابِالْآخِرَةِ ۚ وَمَن
يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْفَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا
عَظِيمًا﴾
“(এ
সব লোকদের জেনে রাখা উচিত যে) আল্লাহর পথে লড়াই করা সে সব লোকদেরই কর্তব্য, যারা
পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রি করে দেয়। যারা আল্লাহর পথে লড়াই করবে ও নিহত
হবে কিংবা বিজয়ী হবে, অচিরেই তাকে আমি বিরাট পুরষ্কার দান করব”। (সূরানিসা: ৭৪)
﴿يَغْفِرْ
لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَاالْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ
طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُالْعَظِيمُ﴾
“আল্লাহ তোমাদের সব গুণাহ মাফ করে দিবেন এবং
তোমাদের এমন বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাদ্বারা বহে চলবে।আর চির
স্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে সর্বোত্তম ঘর দান করবেন। এটাই বড়
সফলতা”। ( আছ্ ছফ-১২)
তাদেরকে
এমন জান্নাতে প্রবেশ করা হবে যার নেয়ামত সমূহ অশেষ ও চিরন্তন। (আছ্ ছফ:১২-১৩)
§
শহীদের মর্যাদাঃ
o প্রথম
রক্তপাতেই তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
o জান্নাতে
তার স্থান তাকে দেখানো হবে (কবরে)।
o কবরের
আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হবে।
o ‘কবরে’ বড় বিপদ আপদ থেকে নিরাপদ থাকবে।
o হাশরের
ময়দানে তার মাথায় একটা আকর্ষনীয় মূকুট পড়ানো হবে।
o তাকে
তার ৭০ জন আত্মীয়ের শাফায়াতের অনুমতি দেয়া হবে।
§
বাইয়াতঃ
আভিধানিক
অর্থঃ ক্রয়- বিক্রয়, লেন-দেন, চুক্তি, আনুগত্যের
শপথ, অঙ্গীকার, নেতৃত্ব মেনে নেয়া।
পরিভাষায়ঃ
“আল্লাহর সন্তুষ্টি অজর্নের
লক্ষ্যে নিজের জান ও মালকে ইসলামী সংগঠনের দায়িত্বশীলের নিকট আনুগত্যের শপথের মাধ্যমে
আল্লাহর পথে সপে দেয়ার ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির নাম বাইয়াত”।
( ফাতহ-১০, ১৮)
إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ
اللَّهَ يَدُ اللَّهِفَوْقَ أَيْدِيهِمْ ۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ
نَفْسِهِ ۖ وَمَنْأَوْفَىٰ بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا(১০)
لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ
يُبَايِعُونَكَ تَحْتَالشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ
عَلَيْهِمْوَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا(১৮)
§
বাইয়াতের ব্যাপক অর্থঃ
o আল্লাহর
সাথে জান মালেন চুক্তি। -আত্ তাওবা:১১
o আল্লাহর
আনুগত্য প্রকাশে শপথ। -
সকল
ধরনের হারাম বা নিষেধকৃত কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চুক্তি। - মুমতাহিন: ১২
﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُيُبَايِعْنَكَ
عَلَىٰ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا
يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍيَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ
وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِيمَعْرُوفٍ ۙ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ
اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌرَّحِيمٌ﴾
১২)
হে নবী, ঈমানদার নারীগণ যখন তোমার কাছে বাইয়াত গ্রহণরে জন্য আসে এবং
এ র্মমে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কছিুকে শরীক করবে না, চুরি
করবে না, যনিা করবে না, নিজেদের
সন্তানদরে হত্যা করবে না৷ সন্তান সর্ম্পকে কোন অপবাদ তৈরী করে আনবে না এবং কোন ভাল
কাজে তোমার অবাধ্য হবে না। তাহলে তাদের থেকে বাইয়াত গ্রহণ করো এবং তাদের মাগফিরাতের
জন্য দোয়া করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।
§
বাইয়াতের গুরুত্বঃ
o নফস
বা প্রবৃত্তি।
o ঘনিষ্ঠ
ব্যক্তি।
o ইবলিশ।
o রাসূল
(স.) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি বাইয়াত ছাড়া মারা
যাবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। (মুসলিম)
§
বাইয়াতের ফজিলতঃ
o আল্লাহর
সাথে কৃত ওয়াদা বাস্তবায়ন এবং দুনিয়ার জীবনের চেয়ে পরকালের জীবনকে প্রাধান্য দেয়ার
জন্য। (আন্ নিসা-৭৪)
o আল্লাহর
মাগফিরাত। ( আল ইমরানঃ ১৩৩,
হাদীদঃ ১১৬)
o সর্বোচ্চ
ঈমানের অধিকারী হওয়া। (আল ইমরানঃ ১০২)
o পরকালীন
নিশ্চিত সফলতার গ্যারান্টি। (আলাঃ ১৪, শামসঃ ৯)
o জাহান্নামের
আগুন থেকে বাচার জন্য। ( আস-সাফঃ ৯, শামসঃ ৯)
§
বাইয়াত কার নিকট করতে হবেঃ
o আল্লাহর
নিককট।
o রাসূল
(স.) এর নিকট।
o রাসূলের
(স.) এর অবর্তমানে ইসলামী সংগঠনের নিকট।
§
বাইয়াতের অবস্থাঃ
o ৬ষ্ঠ
হিজরীতে হুদায়বিয়া নামক স্থানে সাহাবীরা রাসূল (স.) এর হাতে বাবলা গাছের নীচে হযরত
ওসমান (রা:) হত্যার সংবাদে যে বাইয়াত গ্রহন করেন, তাকে বাইয়াতুল রিদওয়ান বলে।
o রাসূল
(স.) এর ইন্তেকালের পরে খোলাফায়ে রাশেদীনের হাতে মুসলিম মিল্লাতের বাইয়াত গ্রহন
মুসলিম জাতির জন্য বাস্তব দৃষ্টান্ত।
§
বাইয়াত পরিহার করার পরিণামঃ
o পরকালে
পীড়াদায়ক শাস্তি। (বনী ইসরাঈল-৩৪, আন্ নাহল-৯১)
o জাহেলিয়াতের
মৃত্যু।
o কিয়ামতের
ময়দানে অপমান জনক চিহ্ন দ্বারা চিহ্নিত করবেন।
সূরা আত্ তাওবার ১১১ নং আয়াতে মৌলিকভাবে
তিনটি কথা উল্লেখ যোগ্য। সে গুলো হলঃ
o প্রথমতঃ
আল্লাহর
সাথে মুমিনদের ক্রয়-ব্ক্রিয়ের চুক্তি।
o দ্বিতীয়তঃ চুক্তি সম্পাদক করা
মুমিনদের কাজ। আর সেটা হচ্ছে- জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ। যার ধরন হলো মরবে ও মারবে। (সূরা তাওবা-৪১, আন নিসা-৭১ নং আয়াত)
o তৃতীয়তঃ
মুমিনগণ
আল্লাহর সাথে যে বাইয়াত বা চুক্তি সম্পাদন করেছে তাদের জন্য সুসংবাদ এজন্যই যে, আল্লাহর এ জান্নাতের ওয়াদা
সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত। আর আল্লাহর চাইতে অধিক প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কেউ নেই।
১১২ নং আয়াতঃ
﴿التَّائِبُونَ
الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ
الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنكَرِ وَالْحَافِظُونَ
لِحُدُودِ اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১১২ নং আয়াতে বাইয়াত গ্রহনকারী মুমিনদের ৮ টি
গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ১ম
সাতটি
গুণের সংক্ষিপ্ত সার হলো ৮ম গুণ।
§ التَّائِبُونَ আত্ তা‘য়িবুনা-তাওবাকারীগণঃ
অর্থাৎ
যারা অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হয়ে কৃত অপরাদের ক্ষমা চেয়ে তা আর না করার ওয়াদা করে। (সূরা আল ইমরান- ৯০,১৩৫; নিসা-
১৭,১১০; আন আম- ৫৪; আরাফ-১৫৩;মুমিন-৩; আস্শুরা-
২৫; নাহল-১১৯;)
§
الْعَابِدُونَ আল আবিদুনা-ইবাদতকারীগণ।
§ الْحَامِدُونَ আল হামিদুনা-প্রশংসাকারীগণ, শুকরিয়াকারীগণ।
অর্থাৎ
যারা বিপদে-মুসিবতে, সুখে-দুখে, সবসময়
আল্লাহর পশংসা করে। সূরা নসর-৩
§ السَّائِحُونَ আছ্ ছা‘য়িহুনা-পরিভ্রমণকারীগণ।
কারো
কারো মতে রোজা পালনকারীগণ। এখানে ইসলামের জন্য,
জিহাদের
জন্য ও হালাল রুজির জন্য ভ্রমন ও হতে পারে। ইসলাম পূর্ব যুগে খ্রীস্ট ধর্মে দেশ
ভ্রমণকে ইবাদত মনে করা হতো। ইসলাম ধর্মে একে বৈরাগ্যবাদ বলে অভিহিত করে নিষিদ্ধ
ঘোষনা করা হয়েছে এবং এর পরিবর্তে রোযা পালনকে এর স্থলাভিসিক্ত করা হয়েছে। কারন দেশ
ভ্রমনের উদ্দেশ্য সংসার ত্যাগ। অথচ রোযা এমন এক এবাদত, যা
পালন করতে গিয়ে যাবতীয় পার্থিব বাসনা ত্যাগ করতে হয় এর ভিত্তিতে কতিপয় বণর্নাকরী
জিহাদকে ও দেশ ভ্রমনের অনুরুপ বলা হয়। রাসূল (স.) বলেছেন- আমার উম্মতের দেশ ভ্রমণ
হলো জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ। (ইবনে মাজা ও বায়হাকী)
হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন,
কুরআন
মাজীদে ব্যবহ্নত ‘সা‘য়িহুন’ অর্থ রোযাদার। হযরত ইকরামা (রা:) এ শব্দের ব্যাখ্যায়
বলেন যে, এরা হলো দ্বীনের
শিক্ষার্থী, যারা এলম হাসিলের জন্য
ঘর-বাড়ী ছেড়ে বের পয়ে পড়ে।
§ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ আর-রা‘কিয়ূনাস্ সাজিদুনা-রুকুকারী ও সিজদাকারীগণ।
অর্থাৎ
যারা নামাজ কায়েম করে। যেমন- সূরা হজ্জ: ৭৭,
লোকমান:
১৭, আন কাবুত: ৪৫।
§
الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ
আল আ‘মীরুনা বিল মা‘রুফ-সৎ কাজের আদেশ দানকারী এবং
ভালো কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ কারী।
§
النَّاهُونَ عَنِ
الْمُنكَرِ আন্ নাহু না আনীল মুনকার-মন্দ ও খারাপ কাজের বাধাদান কারী।
§
الْحَافِظُونَ لِحُدُودِ
اللَّهِ আল হাফিজুনা লি-হুদুদিল্লাহ-আল্লাহর সীমা হিফাজত কারী, সংরক্ষনকারীগণ, আল্লাহর নিষেধ যথাযথভাবে পালনকারীগণ।
প্রথম সাতটি গুণের মধ্যে যে তফসিল রয়েছে , তার সংক্ষিপ্ত সার কথা হলো এ
যে, এরা নিজেদের প্রতিটি কর্ম ও কথায় আল্লাহর নির্ধারিত তথা শরীয়তর হুকুমের অনুগত
ও হেফাজতকারী।
শিক্ষনীয় দিকঃ
১.
আল্লাহর তায়ালা মুমিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন।
২.
আল্লাহর পথে জিহাদ করতে হবে, মরলে শহীদ বাচলে গাজী।
৩.
জিহাদের বিনিময়ে জান্নাত এটা আল্লাহর পাকাপোক্ত ওয়াদা।
৪.
আল্লাহর পথে জিহাদ করলে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জায়গায় সফলতা লাভ করা যায়।
৫.
মুমিনদের জীবনের একমাত্র কামনা হওয়া উচিত আল্লাহর পথে জিহাদ।
৬. মুমিনের যে গুণগুলোর কথা বলা হয়েছে এগুলো পুরোপুরি নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা
সূরা তাওবার এই দারসুল কুরআনটি সংগ্রহ করা হয়েছে muslimspokesperson ব্লগ থেকে। দারসটি A4 সাইজের পিডিএফ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
অসাধারণ।
ReplyDeleteধন্যবাদ আপনাকে।
Delete