ইসলামী আন্দোলনের মৌলিক ধারণা
ইসলামী আন্দোলন সম্পর্কে পরিপূর্ণ বুঝ ও
ধারণা না থাকার কারণে আস্থা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে সঠিক পন্থায় এ আন্দোলন করা এবং
এই পথে টিকে থাকা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই কাজের প্রতি প্রেরণা ও একাগ্রতা
পেতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের সঠিক ধারণা,
কর্মপন্থা
ও সফলতার প্রশ্নে ভুল বুঝাবুঝি দূর হওয়া দরকার। এ লেখায় কুরআন হাদীসের আলোকে সে
চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের উচিত বেশি বেশি কুরআন হাদীস অধ্যায়নের মাধ্যমে ইসলামী
আন্দোলনের পথে এগিয়ে যাওয়া।
মহান আল্লাহ তায়ালার মনোনিত একমাত্র সত্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম
إِنَّ الدِّيْنَ
عِنْدَ اللهِ الْإِسْلَامُ وَمَا
اخْتَلَفَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا
الْكِتٰبَ إِلَّا مِنْ
بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ
الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ
وَمَنْ يَّكْفُرْ بِاٰيٰتِ
اللهِ فَإِنَّ اللهَ
سَرِيْعُ الْحِسَابِ ـ
‘আল্লাহর
কাছে ইসলামই একমাত্র দ্বীন। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তারা
ঐ দ্বীনকে বাদ দিয়ে যেসব পথ বের করেছে তার কারণ এছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, তাদের
কাছে ইলম আসার পরও একে অপরের সাথে বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যেই এরূপ করেছে। আর যে
ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ ও হেদায়াত মেনে চলতে অস্বীকার করে তার কাছ থেকে হিসাব নিতে
আল্লাহর মোটেই দেরি হয় না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৯)
أَفَغَيْرَ دِيْنِ
اللهِ يَبْغُوْنَ وَلَهُ
أَسْلَمَ مَنْ فِى
السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا
وَّكَرْهًا وَّإِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ ـ
قُلْ اٰمَنَّا بِاللهِ
وَمَاۤ أُنْزِلَ عَلَيْنَا
وَمَاۤ أُنْزِلَ عَلٰۤى
إِبْرٰهِيْمَ وَإِسْمٰعِيْلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا
أُوْتِيَ مُوْسٰى وَعِيْسٰى
وَالنَّبِيُّوْنَ مِنْ رَّبِّهِمْ
۪ لَا نُفَرِّقُ
بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ
وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُوْنَ ـ
‘এখন
কি এরা আল্লাহর আনুগত্যের পথ (আল্লাহর দ্বীন) ত্যাগ করে অন্য কোনো পথের সন্ধান
করছে ? অথচ আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুই স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর
হুকুমের অনুগত (মুসলিম) এবং তাঁরই দিকে সবাইকে ফিরে যেতে হবে। হে নবী! বলো, আমরা
আল্লাহকে মানি, আমাদের ওপর অবতীর্ণ
শিক্ষাকে মানি, ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব
ও ইয়াকুব সন্তানদের ওপর অবতীর্ণ শিক্ষাকেও মানি এবং মুসা, ঈসা
ও অন্যান্য নবীদের তাদের রবের পক্ষ থেকে যে হিদায়াত দান করা হয় তার ওপরও ঈমান
রাখি। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত (মুসলিম)।’ (সূরা আলে ইমরান : ৮৩, ৮৪)
وَمَنْ يَبْتَغِ
غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا
فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ
ۚ وَهُوَ فِى
الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ ـ
‘এ
আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি
কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত
ও বঞ্চিত।’ (সূরা আলে ইমরান : ৮৫)
يٰاَيُّهَا الَّذِيْنَ
اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِي
السِّلْمِ كَافَّةً ۪
وَلَا تَتَّبِعُوْا خُطُوٰتِ
الشَّيْطٰنِ ۚ إِنَّهُ
لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ
ـ
‘হে
ঈমানদারগণ! তোমরা পুরোপুরি ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না, কেননা
সে তোমাদের সুস্পষ্ট দুশমন।’ (সূরা আল বাকারা : ২০৮)
وَمَاۤ أُمِرُوْۤا
إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ
مُخْلِصِيْنَ لَهٗ الدِّيْنَ
ۙ حُنَفَآءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلٰوةَ
وَيُؤْتُوا الزَّكٰوةَ وَذٰلِكَ
دِيْنُ الْقَيِّمَةِ ـ
‘তাদেরকে
তো এছাড়া আর কোনো হুকুম দেয়া হয়নি যে,
তারা
নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, নামায
কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক
দ্বীন।’ (সূরা আল বাইয়্যেনাহ : ৫)
পৃষ্ঠাঃ ৯-১০
ইসলাম কায়েম ও বিজয়ী হওয়ার জন্য এসেছে
شَرَعَ لَكُمْ
مِّنَ الدِّيْنِ مَا
وَصّٰى بِهٖ نُوْحًا
وَّالَّذِىْۤ أَوْحَيْنَاۤ إِلَيْكَ
وَمَا وَصَّيْنَا بِهٖۤ
إِبْرٰهِيْمَ وَمُوْسٰى وَعِيْسٰۤى
أَنْ أَقِيْمُوا الدِّيْنَ
وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِ
ؕ كَبُرَ عَلَى
الْمُشْرِكِيْنَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَيْهِ
ؕ اَللهُ يَجْتَبِيْۤ إِلَيْهِ
مَنْ يَّشَآءُ وَيَهْدِىْۤ إِلَيْهِ
مَنْ يُّنِيْبُ ـ
‘তিনি
তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার
আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি
আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম,
মুসা
ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত
করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মুশরিকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ
জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা
মনোনিত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়,
তাকে
পথ প্রদর্শন করেন।’ (সূরা আশ শূরা : ১৩)
هُوَ الَّذِيْۤ
أَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى
وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى
الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ
كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ ـ
‘তিনিই
সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত এবং ‘দ্বীনে হক’ দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্য সকল
দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই
অসহনীয় হোক না কেনো।’ (সূরা আস সফ : ৯)
هُوَ الَّذِيْۤ
أَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى
وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى
الدِّيْنِ كُلِّهِؕ وَكَفٰى
بِاللهِ شَهِيْدًا ـ
‘আল্লাহই
তো সে মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন তাকে
সমস্ত দ্বীনের ওপর বিজয়ী করে দেন। আর এ বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষই যথেষ্ট।’ (সূরা আল ফাতহ : ২৮)
هُوَ الَّذِيْۤ
أَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى
وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى
الدِّيْنِ كُلِّهٖ لا
وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ ـ
‘আল্লাহই
তার রসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার
দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ
করুক না কেন।’ (সূরা আত তাওবা : ৩৩)
দ্বীন কায়েমের জন্য সংগ্রাম করতে হয়
وَمَا لَكُمْ
لَا تُقَاتِلُوْنَ فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ وَالْمُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ
الرِّجَالِ وَالنِّسَآءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِيْنَ
يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ أَخْرِجْنَا مِنْ
هٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ
أَهْلُهَاۚ وَاجْعَل لَّنَا
مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا
ۙ وَّاجْعَل لَّنَا
مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا
ـ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا
يُقَاتِلُوْنَ فِي سَبِيْلِ
اللهِ ۚ وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا
يُقَاتِلُوْنَ فِي سَبِيْلِ
الطَّاغُوْتِ فَقَاتِلُوْاۤ أَوْلِيَآءَ الشَّيْطٰنِ ۚ
إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطٰنِ كَانَ
ضَعِيْفًا ـ
‘তোমাদের
কী হলো, তোমরা আল্লাহর পথে অসহায় নরনারী ও শিশুদের জন্য লড়বে না, যারা
দুর্বলতার কারণে নির্যাতিত হচ্ছে? তারা ফরিয়াদ করছে, হে
আমাদের রব! এই জনপদ থেকে আমাদের বের করে নিয়ে যাও, যার
অধিবাসীরা জালেম এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের কোনো বন্ধু, অভিভাবক
ও সাহায্যকারী তৈরি করে দাও। যারা ঈমানের পথ অবলম্বন করেছে তারা আল্লাহর পথে লড়াই
করে। আর যারা কুফরির পথ অবলম্বন করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। কাজেই শয়তানের
সহযোগীদের সাথে লড়ো এবং নিশ্চিত জেনে রাখো,
শয়তানের
কৌশল আসলে নিতান্তই দুর্বল।’ (সূরা আন নিসা : ৭৫,৭৬)
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ
اٰمَنُوْا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلٰى
تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِّنْ
عَذَابٍ أَلِيْمٍ ـ
تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهٖ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْؕ ذٰلِكُمْ
خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ
كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ـ
‘হে
ঈমান আনয়নকারীগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি ব্যবসায়ের সন্ধান দেবো যা তোমাদেরকে
কঠিন আযাব থেকে মুক্তি দেবে? তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলের
প্রতি ঈমান আনো এবং আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ও জান-প্রাণ দিয়ে জিহাদ করো এটাই
তোমাদের জন্য অতিব কল্যাণকর যদি তোমরা তা জানো।’ (সূরা আস সফ : ১০, ১১)
হক আদায় করে আল্লাহর পথে লড়তে হবে। আল্লাহ
নিজ অনুগ্রহে আমাদের বাছাই করেছেন।
وَجَاهِدُوا فِي
اللهِ حَقَّ جِهَادِهٖ
ؕ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا
جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي
الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ
ۚ
‘আল্লাহর
পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ করলে তার হক আদায় হয়। তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে
বাছাই করে নিয়েছেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি।’ (সূরা আল হজ্জ : ৭৮)
দ্বীন কায়েমকে অগ্রাধিকার দেয়া
قُلْ إِنْ
كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيْرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ نِ
اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ
كَسَادَهَا وَمَسٰاكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ أَحَبَّ
إِلَيْكُمْ مِّنَ اللهِ
وَرَسُوْلِهٖ وَجِهَادٍ فِيْ
سَبِيْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰى
يَأْتِيَ اللهُ بِأَمْرِهٖ
ؕ وَاللهُ لَا
يَهْدِي الْقَوْمَ الْفٰسِقِيْنَ ـ
‘হে
নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের
সন্তান, তোমাদের ভাই,
তোমাদের
স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন,
তোমাদের
উপার্জিত সম্পদ, তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা
দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাকো এবং তোমাদের যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ
করো-এসব যদি আল্লাহ ও তার রসূল এবং তার পথে জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশি
প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা
তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আল্লাহ ফাসেকদের কখনো সত্য পথের সন্ধান
দেন না।’ (সূরা আত তাওবা : ২৪)
ইসলামে দ্বীনদারী ও দুনিয়াদারী আলাদা নয়।
আল্লাহ ও রসূলের (সা.) দেখানো পন্থায় দুনিয়ার কাজ আঞ্জাম দিলে সেটাও দ্বীনদারিতে
পরিণত হয়। তাই সকল দুনিয়াবী কাজকে দ্বীন কায়েমের কাজের সাথে সম্পৃক্ত ও সামঞ্জস্য
করতে হবে। দুনিয়াবী কাজ যদি দ্বীন কায়েমের কাজের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে
তাহলে সেটা ছেড়ে দেয়ার নামই কুরবানি।
আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদার কাজ হচ্ছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ
الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا
وَهَاجَرُوْا وَجَاهَدُوْا فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ أَعْظَمُ
دَرَجَةً عِنْدَ اللهِ
ؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ
الْفَآئِزُوْنَ ـ يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ
بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَّجَنّٰتٍ
لَّهُمْ فِيْهَا نَعِيْمٌ
مُّقِيْمٌ ـ
‘আল্লাহর কাছে তো তারাই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী যারা ঈমান এনেছে এবং তার পথে ঘর-বাড়ি ছেড়েছে ও ধন-প্রাণ সমর্পন করে জিহাদ করেছে। তারাই সফলকাম। তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত, সন্তোষ ও এমন জান্নাতের সুখবর দেন, যেখানে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী।’ (সূরা আত তাওবা : ২০-২১)
পৃষ্ঠাঃ ১১-১৫
জান ও মাল আল্লাহর মর্জি মতো কাজে লাগানো
মুমিনের অঙ্গীকার। আর এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
إِنَّ اللهَ
اشْتَرٰى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ
لَهُمُ الْجَنَّةَ ؕ
يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ ؕ
وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا
فِيْ التَّوْرٰةِ وَالْإِنْجِيْلِ وَالْقُرْاٰنِ ۚ
وَمَنْ أَوْفٰى بِعَهْدِهٖ
مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ
بَايَعْتُمْ بِهٖ ؕ
وَذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ
الْعَظِيْمُ ـ
‘প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ
মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা
আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে। তাদের প্রতি তাওরাত, ইনজীল
ও কুরআনে (জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ। আর
আল্লাহর চাইতে বেশি ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে ?
কাজেই
তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’
(সূরা আত তাওবা : ১১১)
আল্লাহর পথে লড়াই করার যোগ্যতা শুধু তাদের
আছে যারা আখেরাতকে প্রাধান্য দেয়
فَلْيُقَاتِلْ فِيْ
سَبِيلِ اللهِ الَّذِينَ
يَشْرُونَ الْحَيٰةَ الدُّنْيَا
بِالْاٰخِرَةِ ۚ وَمَنْ
يُّقَاتِلْ فِيْ سَبِيْلِ
اللهِ فَيُقْتَلْ أَوْ
يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ
أَجْرًا عَظِيْمًا ـ
‘আল্লাহর পথে তাদের লড়াই
করা উচিত যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিকিয়ে দেয়। তারপর যে ব্যক্তি
আল্লাহর পথে লড়বে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি মহাপুরস্কার দান
করবো।’ (সূরা আন নিসা : ৭৪)
পৃষ্ঠাঃ ১৫-১৬
দ্বীনের কাজ একা করা যায় না জামায়াতবদ্ধ হয়ে লড়তে হয়
إِنَّ اللهَ
يُحِبُّ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ
سَبِيْلِهٖ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ
مَّرْصُوْصٌ ـ
‘আল্লাহ সেই সব লোকদের
ভালবাসেন যারা তাঁর পথে এমনভাবে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করে যেন তারা সিসা গলিয়ে
ঢালাই করা এক মজবুত দেয়াল।’ (সূরা আস সফ : ৪)
وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ
اللهِ جَمِيْعًا وَّلَا
تَفَرَّقُوْا ۪ وَاذْكُرُوْا نِعْمَتَ
اللهِ عَلَيْكُمْ إِذْ
كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ
بَيْنَ قُلُوْبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهٖۤ إِخْوَانًاۚ وَكُنْتُمْ
عَلٰى شَفَا حُفْرَةٍ
مِّنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِّنْهَاؕ
كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللهُ
لَكُمْ اٰيٰتِهٖ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَ ـ
وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ
يَدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ
وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ
الْمُنكَرِ ۚ وَأُولٰٓئِكَ هُمُ
الْمُفْلِحُونَ ـ وَلَا
تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ تَفَرَّقُوْا وَاخْتَلَفُوْا مِنْ
بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ
الْبَيِّنٰتُ ۚ وَأُولٰٓئِكَ لَهُمْ
عَذَابٌ عَظِيْمٌ ـ
‘তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর
রুজ্জু মজবুতভাবে আকঁড়ে ধরো এবং দলাদলি করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ
করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো। তোমরা ছিলে পরস্পরের শক্র। তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে
দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানিতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো। তোমরা একটি
অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে। আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন।
এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দশনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন। হয়তো এই
নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে। তোমাদের
মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে,
যারা
নেকী ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে,
ভালো
কাজের নির্দেশ দেবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই
সফলকাম হবে। তোমরা যেন তাদের মতো হয়ে যেয়ো না,
যারা
বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে
লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে।’ (সূরা আলে
ইমরান : ১০৩-১০৫)
জামায়াতবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর রসূল
(সা.) এর নির্দেশ
قَالَ النَّبِيُّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ: اَنَا امُرُكُمْ
بِخَمْسٍ اَللهُ اَمَرَنِىْ
بِهِنَّ الْجَمَاعَةُ وَالسَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالْهِجْرَةُ وَالْجِهَادُ فِىْ
سَبِيْلِ اللهِ فَاِنَّهٗ
مَنْ خَرَجَ مِنَ
الْجَمَاعَةِ قِيْدَ شِبْرٍ
فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ
الْاِسْلَامِ مِنْ عُنُقِهٖ
اِلَّا اَنْ يَّرْجِعَ
وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى
جَاهِلِيَّةٍ فَهُوَ مَنْ
جُثى جَهَنَّمَ ـ
قَالُوْا يَا رَسُوْلَ
اللهِ وَاِنْ صَامَ
وَصَلّى ؟ قَالَ
وَاِنْ صَامَ وَصَلِّى
وَزَعَمَ اَنَّهٗ مُسْلِمٌ
ـ
হযরত হারিসুল আশয়ারী রা. থেকে বর্ণিত, নবী
করীম (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি
বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ১.
জামায়াতবদ্ধ হবে ২. নেতার আদেশ মন দিয়ে শুনবে ৩. তার আদেশ মেনে চলবে ৪. আল্লাহর
পথে হিজরত করবে ৫. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। আর তোমাদের মধ্য হতে যে সংগঠন হতে
বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল, সে তার গর্দান থেকে
ইসলামের রশি খুলে ফেলল তবে যদি ফিরে আসে তা ভিন্ন কথা। আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের
দিকে আহ্বান জানায় সে জাহান্নামি। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া
রসূলাল্লাহ! সে যদি রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এরপরও? রসূল
(সা.) বললেন, যদি রোজা রাখে, নামাজ
পড়ে এবং নিজেকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে এরপরও জাহান্নামি হবে।
(মুসনাদে আহমাদ: হাদিসুল হারিসিল আশয়ারী আনিন নাবিয়্যি ১৬৫৪২)
عَنْ أَبِيْ
هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ
صَلّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ
" مَنْ
خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ
وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ
مَاتَ ميْتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ
قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ
عُمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ
أَوْ يَدْعُوْ إِلَى
عَصَبَةٍ أَوْ يَنْصُرُ
عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ
جَاهِلِيَّةٌ وَمَنْ خَرَجَ
عَلَى أُمَّتِيْ يَضْرِبُ
بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا وَلاَ
يَتَحَاشَ مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلاَ
يَفِي لِذِيْ عَهْدٍ
عَهْدَهُ فَلَيْسَ مِنِّيْ
وَلَسْتُ مِنْهُ "
ـ
আবূ হুরায়রা (রা.) এর সুত্রে নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,
যে
ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে
জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলো। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নের্তৃত্বের পতাকাতলে যুদ্ধ
করে গোত্রপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রের দিকে আহবান করে অথবা গোত্রের
সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে (আল্লাহর সন্তুষ্টির কোনো ব্যাপার থাকে না) আর তাতে নিহত
হয়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে। সে ব্যক্তি আমার উম্মাতের
ভালো মন্দ সকলকেই নির্বিচারে হত্যা করেছে মুমিনকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে সে
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তার প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করে না, সে
আমার (কেউ) নয় আমিও তার (কেউ) নই। (সহিহ মুসলিম)
عَنْ عَبْدِ
اللهِ بْنِ عَمْرٍ
وَاَنَّ النَّبِىَّ صـ
قَالَ لَايَحِلُّ لِثَلَاثَةٍ يَّكُوْنُوْنَ بِفَلاَةٍ
مِّنَ الْاَرْضِ اِلَّا
اَمَّرُوْا عَلَيْهِمْ اَحَدَهُمْ
ـ (منتقى)
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত
রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তি যদি কোনো
জঙ্গলেও বসবাস করে তবুও তাদের মধ্যে একজনকে নেতা নির্বাচন না করে বিচ্ছিন্নভাবে
অবস্থান করা জায়েজ নয়। (মুনতাকা)
عَنْ اَبِىْ
سَعِيْدِنِ الْخُدْرِىِّ رضـ
اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ
صـ قَالَ اِذَا
كَانَ ثَلٰثَةُ فِىْ
سَفَرٍ فَلْيُؤَمِّرُوْا اَحَدَهُمْ ـ
(ابو داؤد)
হযরত আবু যর গিফারী রা. হতে বর্ণিত
রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি জামায়াত ত্যাগ
করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল, সে যেন ইসলামের রজ্জু হতে
তার গর্দানকে আলাদা করে নিল। (আহমদ,
আবু
দাউদ)
عَنِ ابْنِ
عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ
رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
" يَدُ
اللهِ مَعَ الْجَمَاعَةِ " .
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সা.
বলেছেন, জামায়াতের প্রতি আল্লাহর (রহমত) এর হাত প্রসারিত থাকে।
(তিরমিযী)
عَنْ عُمَرَ
بْنْ الْخَطًابِ (رض)
قَالَ إنه لا
إسلام إلا بجماعة
ولا جماعة إلا
بإمارة ولا إمارة
إلا بطاعة
হযরত উমর (রা.) বলেছেন, সংগঠন
ছাড়া ইসলাম নেই, নেতৃত্ব ছাড়া সংগঠন নেই।
আনুগত্য ছাড়া নেতৃত্ব নেই। (দারেমী)
আম্বিয়ায়ে ক্বেরাম (আ.) পরিচালিত ইসলামী
আন্দোলনের গতিধারা অনুসরণ করেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এ
কাফেলার মূল জনশক্তি হল সদস্যগণ। দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জনই যাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য।
পৃষ্ঠাঃ ১৬-১৯
বাইয়াত হল জামায়াতী বন্ধনের সূত্র
দ্বীন কায়েমের এই ঐতিহাসিক জিম্মাদারী পালন
করতে গিয়ে শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. একটি সত্যপন্থী জামায়াত গঠন করেন।
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাহাবীদেরকে তিনি এমনভাবে তৈরি করেছিলেন যাদের নেতৃত্বে
বিশ্বব্যাপী ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল। সাহাবীরা দ্বীন কায়েমের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে নবী
সা. এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। এই বাইয়াতের কথা কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ রয়েছে।
দ্বীন কায়েমের জামায়াতের অধীনে বাইয়াতই হচ্ছে সহিহ বাইয়াত।
إِنَّ الَّذِيْنَ
يُبَايِعُوْنَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُوْنَ اللهَ
ؕ يَدُ اللهِ
فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ ۚ
فَمَنْ نَّكَثَ فَإِنَّمَا
يَنْكُثُ عَلٰى نَفْسِهٖۚ
وَمَنْ أَوْفٰى بِمَا
عَهَدَ عَلَيْهُ اللهَ
فَسَيُؤْتِيْهِ أَجْرًا عَظِيْمًا
ـ
‘হে নবী! যারা তোমার হাতে
বাইয়াত করছিল প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিল। তাদের হাতের ওপর ছিল
আল্লাহর হাত। যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার অশুভ পরিণাম তার
নিজের ওপরেই বর্তাবে। আর যে আল্লাহর সাথে কৃত এ প্রতিশ্রুতি পালন করবে, আল্লাহ
অচিরেই তাকে বড় পুরস্কার দান করবেন।’ (সূরা আল ফাতহ : ১০)
لَّقَدْ رَضِيَ
اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذْ
يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ
مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ فَأَنْزَلَ
السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا
قَرِيْبًا ـ
‘আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি
সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে তোমরা কাছে বাইয়াত করছিল। তিনি তাদের মনের
অবস্থা জানতেন। তাই তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন, পুরস্কার
স্বরূপ তাদেরকে আশু বিজয় দান করেছেন।’ (সূরা আল ফাতহ : ১৮)
قُلْ إِنَّ
صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ
رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ ـ
‘বলো, আমার
নামায, আমার ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার
জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রব্বুল আলামিনের জন্য।’ (সূরা আল আনআম : ১৬২)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি
রসূলুল্লাহ সা.কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে
তার হাত খুলে ফেলল, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর
সাথে সাক্ষাৎ করবে এমনভাবে যে তার বলার কিছু থাকবে না, আর
যে ব্যক্তি বাইয়াতের বন্ধন ছাড়াই মারা গেল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। (সহিহ
মুসলিম)
বাইয়াতের যে অর্থ সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রুকনিয়াত দ্বারা সে অর্থই বুঝায়। অর্থাৎ জেনে বুঝে জান
ও মালের কুরবানি। আমীর ও সদস্যদের (রুকনদের) মধ্যে বাইয়াতের ব্যাপারে যাতে
আনুগত্যের সীমা সামান্যও লঙ্ঘন না হয় সে উদ্দেশ্যে একটি গঠনতন্ত্র দ্বারা গোটা
সংগঠন পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। আমীরকে মজলিশে শুরার কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আবার
ভিন্নমত ব্যক্ত করা এমনকি বাইয়াত প্রত্যাহারের সুযোগ আছে যদি এর চেয়ে উন্নতমানের
দ্বীনি জামায়াতের সন্ধান পাওয়া যায়। ইসলাম,
ইসলামী
আন্দোলন, সংগঠন, ইকামতে
দ্বীন, বাইয়াত এগুলো মূলত একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ইসলামী আন্দোলনের সঠিক কর্মপন্থা
দাওয়াত ইলাল্লাহ ও শুহাদা আলান্নাছ
মানুষ হবে একমাত্র আল্লাহর দাস। সৎ নেতৃত্ব
প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীর বুক থেকে অশান্তি,
বিপর্যয়, পাপ
ও অন্যায়ের মূলৎপাটন করা দ্বীন ইসলামের মূল লক্ষ্য। এক আল্লাহর গোলামীর মধ্যেই
রয়েছে মানব সমাজের যাবতীয় সমস্যার সমাধান। মহান আল্লাহর রসূল (সা.) এর সময়ে গোটা
দেশ ও জাতি ছিল অজ্ঞতা, নৈতিক অধঃপতন, দারিদ্র, দীনতা, ব্যভিচার
ও পারস্পারিক কলহ বিবাদে চরমভাবে নিমজ্জিত। অর্থনৈতিক জুলুম ছিল মারাত্নক। রোম ও
পারস্যের সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র বিপর্যস্ত করে রেখেছিল আরব বিশ্বকে। হাজারো সমস্যা
থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর রসূল (সা.) শুরুতে অন্য সমস্যার প্রতি মনোনিবেশ না করে
শুধু আল্লাহ তা’য়ালার দাসত্ব মেনে নেয়ার প্রতি আহ্বান করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য
সমস্যার সমাধানও আল্লাহর রসূল (সা.) পর্যায়ক্রমে করেছিলেন।
وَمَنْ أَحْسَنُ
قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَآ
إِلَى اللهِ وَعَمِلَ
صَالِحًا وَّقَالَ إِنَّنِيْ
مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ ـ وَلَا
تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا
السَّيِّئَةُ ۚ اِدْفَعْ
بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ
فَإِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ
وَبَيْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهٗ
وَلِيٌّ حَمِيْمٌ ـ
وَمَا يُلَقّٰهَاۤ إِلَّا
الَّذِيْنَ صَبَرُوْاۚ وَمَا
يُلَقّٰهَا إِلَّا ذُوْ
حَظٍّ عَظِيْمٍ ـ
وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ
الشَّيْطٰنِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِؕ
إِنَّهٗ هُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ ـ
‘সেই ব্যক্তির কথার চেয়ে আর
কার কথা উত্তম হবে, যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, সৎ
কাজ করলো এবং ঘোষণা করলো আমি মুসলমান। হে নবী! সৎ কাজ ও অসৎ কাজ সমান নয়। তুমি অসৎ
কাজকে সেই নেকী দ্বারা নিবৃত্ত করো যা সবচেয়ে ভালো। তাহলে দেখবে যার সাথে তোমার
শত্রুতা ছিল সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে গেছে। ধৈর্যশীল ছাড়া এ গুণ আর কারো ভাগ্যে জোটে
না এবং অতি ভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা আর কেউ লাভ করতে পারে না।’ (সূরা হামিম আস
সাজদা : ৩৩-৩৬)
وَكَذٰلِكَ جَعَلْنٰكُمْ أُمَّةً
وَّسَطًا لِّتَكُونُوا شُهَدَآءَ
عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ
الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا
ۗ
‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে
একটি ‘মধ্যপন্থী’ উম্মাতে পরিণত করেছি,
যাতে
তোমরা দুনিয়াবাসীদের ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রসূল হতে পারেন তোমাদের ওপর সাক্ষী।’
(সূরা আল বাকারা : ১৪৩)
নেতা ছিলেন আদর্শের মডেল
وَإِنَّكَ لَعَلٰى
خُلُقٍ عَظِيْمٍ ـ
‘নিঃসন্দেহে তুমি (মুহাম্মদ
সা.) নৈতিকতার অতি উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন।’ (সূরা ক্বলম : ৪)
لَقَدْ كَانَ
لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ
اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوْ
اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ
وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
ـ
‘আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর
রসূলের মধ্যে ছিল একটি উত্তম আদর্শ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ
দিনের আকাক্সক্ষী এবং বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (সূরা আল আহযাব : ২১)
قُلْ إِنْ
كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ
فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ
وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕ
وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
ـ
‘‘হে নবী! লোকদের বলে দাও, ‘যদি তোমরা যথার্থই আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে
আমার অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়’। তাদেরকে বলো,
আল্লাহ
ও রসূলের আনুগত্য করো।’’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১)
আল্লাহর রসূল (সা.) তার নিজের আগমন সম্পর্কে
বলেন, ‘আমাকে সচ্চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের নিমিত্তেই প্রেরণ করা
হয়েছে।’ (জামেউল আহাদিস)
আল্লাহর রসূল (সা.) এর মাধ্যমে উন্নত নৈতিকতার বিকাশ সাহাবাদের জিন্দেগীতে ঘটেছে। যার বর্ণনা স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা দিয়েছেন সূরা মুমিনের প্রথম দশ আয়াত এবং সূরা ফুরকানের শেষ রুকুতে। আল্লাহর রসূলের হাতে গড়া সাহাবীদের ব্যাপারে ইসলামের কট্টোর দুশমনদের বক্তব্য ছিল, ‘তারা রাতের দরবেশ আর দিনে অশ্বারোহী বীরযোদ্ধা, কর্মচঞ্চল সৈনিক। তারা কাউকে ধোকা দেয় না, তাদেরকেও কেউ ধোকা দিতে পারে না।’
পৃষ্ঠাঃ ২১-২৪
ঈমানের অগ্নি পরীক্ষায় নিখাদ প্রমাণিত হওয়া
آلــمّٓ ـ
أَحَسِبَ النَّاسُ أَن
يُتْرَكُوْۤا أَنْ يَّقُوْلُوْا اٰمَنَّا
وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ ـ
وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ
مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ
الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ ـ
‘লোকেরা
কি মনে করে রেখেছে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া
হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না ?
অথচ
আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে
সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক।’
(সূরা আল আনকাবুত : ১-৩)
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ
الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ
مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرٰتِ ؕ
وَبَشِّرِ الصّٰبِرِيْنَ ـ
الَّذِيْنَ إِذَاۤ أَصَابَتْهُم مُّصِيْبَةٌ ۙ
قَالُوْۤا إِنَّا لِلّٰهِ
وَإِنَّاۤ إِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ
ـ
‘আর
নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ
ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানী হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ
অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোনো বিপদ আসে বলে, ‘আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের
ফিরে যেতে হবে’। (সূরা আল বাকারা : ১৫৫-১৫৬)
تَبٰرَكَ الَّذِيْ
بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ
عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ
قَدِيْرٌ نِ ـ
الَّذِيْ خَلَقَ الْمَوْتَ
وَالْحَيٰوةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ
أَحْسَنُ عَمَلًاؕ وَهُوَ
الْعَزِيْزُ الْغَفُوْرُ ـ
‘অতি
মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি যাঁর হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের কর্তৃত্ব। তিনি সবকিছুর
ওপর ক্ষমতা রাখেন। কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার
জন্য।’ (সূরা আল মূলক : ১,২)
مَۤا أَصَابَ
مِنْ مُّصِيْبَةٍ إِلَّا
بِإِذْنِ اللهِ ؕ
وَمَنْ يُّؤْمِنْ بِاللهِ
يَهْدِ قَلْبَهٗ وَاللهُ
بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ
ـ
‘আল্লাহর
অনুমোদন ছাড়া কখনো কোনো মুসিবত আসে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করে
আল্লাহ তার দিলকে হিদায়াত দান করেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন।’ (সূরা আত তাগাবুন : ১১)
مَۤا أَصَابَ
مِنْ مُّصِيْبَةٍ فِي
الْأَرْضِ وَلَا فِيْۤ
أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِيْ
كِتٰبٍ مِّنْ قَبْلِ
أَنْ نَّبْرَأَهَا ۚ
إِنَّ ذٰلِكَ عَلَى
اللهِ يَسِيْرٌ ـ
‘পৃথিবীতে
এবং তোমাদের নিজেদের ওপর যেসব মুসিবত আসে তার একটিও এমন নয় যে, তাকে
আমি সৃষ্টি করার পূর্বে একটি গ্রন্থে লিখে রাখিনি। এমনটি করা আল্লাহর জন্য খুবই
সহজ কাজ।’ (সূরা আল হাদিদ : ২২)
ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যেও নবী ও তার সঙ্গীরা
সংগ্রাম করেছেন, ঘাবড়ে যাননি। বরং স্বয়ং
নবী করীম সা. বলেছেন, “কসম সেই সত্তার যার হাতে মুষ্টিবদ্ধ আমার প্রাণ। আমার বড়
সাধ আল্লাহর পথে নিহত হই, আবার জীবন লাভ করি। আবার
নিহত হই, আবার জীবিত হই। আবার নিহত
হই, আবার জীবিত হই,
আবার
শহীদ হই”। (সহিহ আল বুখারী)
জুলুম নির্যাতনকে তোয়াক্কা না করে আল্লাহর
রসূল সা. এর নেতৃত্বে সাহাবীরা মার খেয়ে সংগ্রাম করে গেছেন। জিহাদের ডাক পেলে
সাহাবায়ে ক্বেরাম বাসর রাতকেও উপেক্ষা করে জিহাদের ময়দানে ছুটেছেন। হযরত হানজালা
রা. ওহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তিনি স্ত্রীর সান্নিধ্যে ছিলেন। যুদ্ধের ডাক
শুনে নাপাক অবস্থাতেই ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং শাহাদাত বরণ করেন। শাহাদাতের পর
ফেরেশতারা তাকে গোসল দেন।
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘উহুদ যুদ্ধের পর আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে
হারাম (রা.) শহীদ হলে রসুল (সা.) আমাকে বলেন,
হে
জাবের, আল্লাহ তা’আলা তোমার পিতার সঙ্গে যে কথা বলেছেন আমি কি তা
অবহিত করব না ? তিনি বলেন, অবশ্যই
হে আল্লাহর রসুল! রসূল (সা.) বললেন,
আল্লাহ
তা’আলা কখনো অন্তরাল ছাড়া কারো
সঙ্গে কথা বলেননি।
কিন্তু তোমার পিতার সঙ্গে অন্তরাল ছাড়াই কথা
বলেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে আমার বান্দা! আমার কাছে চাও, আমি
তোমাকে দেব। তোমার পিতা বলল, হে আল্লাহ! আমাকে জীবন দান
করুন, যাতে আমি আপনার পথে পুনরায় শহীদ হতে পারি। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো আগেই লিপিবদ্ধ করে দিয়েছি যে মানুষ
(মৃত্যুর পর) আর (পৃথিবীতে) ফিরে যাবে না।’ তোমার পিতা বলল, ইয়া
আল্লাহ! তাহলে আমার উত্তরসূরিদের (আমার সৌভাগ্যের) এ খবর পৌঁছে দিন।’ অতঃপর রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ
তা’আলা এ আয়াত নাজিল করেন, ‘যাঁরা আল্লাহর পথে শহীদ হয়েছেন, তোমরা
তাঁদের কখনো মৃত মনে করো না; বরং তাঁরা জীবিত এবং
তাঁদের রবের কাছে জীবিকাপ্রাপ্ত।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৬৯), (ইবনে মাজাহ)।
বীরযোদ্ধা খালিদ বিন ওয়ালিদ কোনো যুদ্ধে
পরাজয় বরণ করেননি। শাহাদাত নসিব হয়নি বলে তিনি মৃত্যুর সময় কেঁদেছিলেন। এমনই ছিল
সাহাবীদের ত্যাগ-কুরবানি। কিছু ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
মুমিন জীবনে পরীক্ষা অতি স্বাভাবিক বিষয়। মুমিনের মর্যাদা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য মহান
আল্লাহ পরীক্ষা নেন, মুসিবতে ফেলানোর জন্য নয়।
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমেই আল্লাহ তা’য়ালা বান্দাকে সত্যের পতাকাবাহী, মুত্তাকি
এবং হেদায়াত প্রাপ্তির স্বীকৃতি প্রদান করেন।
لَيْسَ الْبِرَّ
أَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ
الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ
الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ
بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ
وَالْمَلٰٓئِكَةِ وَالْكِتٰبِ وَالنَّبِيِّنَ ۚ
وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى
حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبٰى
وَالْيَتٰمٰى وَالْمَسٰكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِۙ وَالسَّائِلِيْنَ وَفِي
الرِّقَابِ وَاَقَامَ الصَّلٰوةَ
وَاٰتَى الزَّكٰوةَ وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا
عٰهَدُوْاۚ وَالصَّابِرِيْنَ فِيْ الْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ
الْبَأْسِؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ
صَدَقُوْاؕ وَأُولٰٓئِكَ هُمُ
الْمُتَّقُوْنَ ـ
তোমাদের মুখ পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার
মধ্যে কোনো পুণ্য নেই। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে,
মানুষ
আল্লাহ, কিয়ামতের দিন,
ফেরেশতা
আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে
উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ,
আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকীন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী
ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে। আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দান
করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর
করবে তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী। (সূরা আল বাকারা : ১৭৭)
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ
الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ
مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرٰتِ ؕ
وَبَشِّرِ الصّٰبِرِيْنَ ـ
الَّذِيْنَ إِذَاۤ أَصَابَتْهُمْ مُّصِيْبَةٌ قَالُوْاۤ
إِنَّاۤ لِلّٰهِ وَإِنَّا
إِلَيْهِ رٰجِعُوْنَ ـ
اُولٰٓئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوٰتٌ
مِّنْ رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ
وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُوْنَ ـ
আর নিশ্চয়ই আমরা ভীতি, অনাহার, প্রাণ
ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে এবং উপার্জন ও আমদানি হ্রাস করে তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ
অবস্থায় যারা সবর করে এবং যখনই কোনো বিপদ আসে বলে, “আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকে আমাদের
ফিরে যেতে হবে, তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও।
তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের ওপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে, তাঁর
রহমত তাদেরকে ছায়াদান করবে এবং এই ধরণের লোকেরাই হয় সত্যানুসারী। (সূরা আল বাকারা
: ১৫৫-১৫৭)
আদর্শের স্বাভাবিক ও কার্যকর বিপ্লব
মদীনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র ছিল
সাহাবীদের নিয়ে আল্লাহর রাসূলের প্রানান্তকর প্রচেষ্টার স্বাভাবিক পরিণতি। মহান
আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এমনই। হঠাৎ করে আচমকা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় না।
মহান আল্লাহর রসূলের ইসলামী বিপ্লবে কেবল
রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরং মানুষের মন মানসিকতা এবং চিন্তাভাবনাও
পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। এতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। চিন্তা পদ্ধতি বদলে
যায়। জীবন যাপন পদ্ধতির পরিবর্তন হয়ে যায়। নৈতিক চরিত্রের জগতে আসে আমূল পরিবর্তন।
স্বভাব ও অভ্যাস বদলে যায়। এ থেকে বুঝা যায় ইসলামী বিপ্লবের ব্যাপকতা অনেক
প্রসারিত। তড়িঘড়ি অসম্পূর্ণ অর্জন ইসলামী বিপ্লবের জন্য যথেষ্ট নয়। *(ইসলামী
বিপ্লবের পথ)
আল্লাহর রসূলের ইসলামী বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য
হচ্ছে, ইসলামের চরমতম দুশমনরা ইসলামের পতাকাতলে শামিল হয়েছিল।
খালিদ বিন ওয়ালিদ, আবু সুফিয়ান, হিন্দার
মতো ব্যক্তিরা ইসলামের জন্য নিবেদিত হয়ে যান। সামাজিক অনাচারে যারা নেতৃত্ব দিতেন
তারা ব্যক্তি ও সমাজের নিরাপত্তারক্ষী হয়ে যান। পারস্য সাম্রাজ্যের পতন হলে এর
রাজমুকুট যার হস্তগত হয় তিনি অত্যন্ত গোপনে সেনাপতির নিকট জমা দেন যাতে তার
আমানতদারীর খ্যাতি ছড়িয়ে না পড়ে। ন্যায়পরায়নতা ও সততার অজস্র দৃষ্টান্ত স্থাপিত
হয়। সেই সময়ে শাসকদের জীবনাচারণ ও শাসন ছিল ইতিহাসের একমাত্র স্বর্ণযুগ।
যিম্মাদারীর অনুভূতি সার্বক্ষণিক ধ্যান ও পেরেশানি ছিল রসূলের জীবন
فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ
نَّفْسَكَ عَلٰۤى اٰثَارِهِمْ إِنْ
لَّمْ يُؤْمِنُوْا بِهٰذَا
الْحَدِيْثِ أَسَفًا ـ
إِنَّا جَعَلْنَا مَا
عَلَى الْأَرْضِ زِيْنَةً
لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ
أَحْسَنُ عَمَلًا ـ
‘হে মুহাম্মাদ! যদি এরা এ শিক্ষার প্রতি ঈমান না আনে, তাহলে দুশ্চিন্তায় তুমি হয়তো এদের পেছনে নিজের প্রাণটি খোয়াবে। আসলে পৃথিবীতে এ যা কিছু সাজ সরঞ্জামই আছে এগুলো দিয়ে আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য বিধান করেছি তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্য থেকে কে ভালো কাজ করে।’ (সূরা আল কাহফ : ৬,৭)
পৃষ্ঠাঃ ২৫-৩০
ইসলামী আন্দোলন থেকে নিস্ক্রিয়তার কারণ
ইসলামী আন্দোলন থেকে নিস্ক্রিয়তার কারণ ২টি।
দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়া আর পরীক্ষাকে ভয় করা।
কখনো যুদ্ধবিগ্রহ থেকে হাত গুটিয়ে রেখে নামায
কায়েম ও যাকাত আদায় করতে বলা হয়েছে,
কখনো
আবার যুদ্ধের হুকুম দেয়া হয়েছে। নিস্ক্রিয়রা আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে সব অবস্থাতেই
গড়িমসি করেছে।
اَلَمْ تَرَ
إِلَى الَّذِيْنَ قِيْلَ
لَهُمْ كُفُّوْا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيْمُوا الصَّلٰوةَ
وَاٰتُوا الزَّكٰوةَ فَلَمَّا
كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ
إِذَا فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ
يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ
اللهِ أَوْ أَشَدَّ
خَشْيَةًۚ وَقَالُوْا رَبَّنَا
لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا
الْقِتَالَ ۚ لَوْلَاۤ
أَخَّرْتَنَاۤ إِلٰۤى أَجَلٍ
قَرِيْبٍۚ قُلْ مَتَاعُ
الدُّنْيَا قَلِيْلٌ ؕ
وَالْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّمَنِ
اتَّقٰى وَلَا تُظْلَمُوْنَ فَتِيْلًا
ـ
“তোমরা
কি তাদেরকেও দেখেছো, যাদের বলা হয়েছিল, তোমাদের
হাত গুটিয়ে রাখো এবং নামায কায়েম করো ও যাকাত দাও ? এখন
তাদেরকে যুদ্ধের হুকুম দেয়ায় তাদের একটি দলের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা
মানুষকে এমন ভয় করেছে যেমন আল্লাহকে ভয় করা উচিত অথবা তার চেয়েও বেশি। তারা বলছে, হে
আমাদের রব! আমাদের জন্য এই যুদ্ধের হুকুমনামা কেনো লিখে দিলে ? আমাদের
আরো কিছু সময় অবকাশ দিলে না কেন ? তাদের বলো, দুনিয়ার
জীবন ও সম্পদ অতি সামান্য এবং একজন আল্লাহর ভয়ে ভীত মানুষের জন্য আখেরাতই উত্তম।
আর তোমাদের ওপর এক চুল পরিমাণও জুলুম করা হবে না।” (সূরা আন নিসা : ৭৭)
মুমিন হলে আল্লাহকেই ভয় করা উচিত
أَلَا تُقَاتِلُوْنَ قَوْمًا
نَّكَثُوْاۤ أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا
بِإِخْرَاجِ الرَّسُوْلِ وَهُمْ
بَدَءُوْكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍؕ
أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللهُ
أَحَقُّ أَنْ تَخْشَوْهُ
إِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ ـ
قَاتِلُوْهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللهُ
بِأَيْدِيْكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ
وَيَشْفِ صُدُوْرَ قَوْمٍ
مُّؤْمِنِيْنَ ـ وَيُذْهِبْ
غَيْظَ قُلُوْبِهِمْؕ وَيَتُوْبُ
اللهُ عَلٰى مَنْ
يَّشَآءُ ؕ وَاللهُ
عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ـ
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ
تُتْرَكُوْا وَلَمَّا يَعْلَمِ
اللهُ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا
مِنْكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُوْا مِنْ
دُوْنِ اللهِ وَلَا
رَسُوْلِهٖ وَلَا الْمُؤْمِنِيْنَ وَلِيْجَةً
ۚ وَاللهُ خَبِيْرٌ
بِمَا تَعْمَلُوْنَ ـ
‘তোমরা
কি লড়াই করবে না এমন লোকদের সাথে যারা নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে এসেছে এবং যারা
রসূলকে দেশ থেকে বের করে দেবার দুরভিসন্ধি করেছিল আর বাড়াবাড়ি সূচনা তারাই করেছিল ? তোমরা
কি তাদের ভয় করো ? যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো, তাহলে
আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন। তাদের সাথে লড়াই করো, আল্লাহ
তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করবেন, তাদের
মোকাবিলায় তোমাদের সাহায্য করবেন এবং অনেক মুমিনের অন্তর শীতল করে দেবেন। আর তাদের
অন্তরের জ্বালা জুড়িয়ে দেবেন এবং যাকে ইচ্ছা তাওবা করার তাওফিকও দান করবেন। আল্লাহ
সবকিছু জানেন এবং তিনি মহাজ্ঞানী। তোমরা কি একথা মনে করে রেখেছো যে তোমাদের এমনিই
ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ আল্লাহ এখনো দেখেননি
তোমাদের মধ্য থেকে কারা (তার পথে) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালালো এবং আল্লাহ, রসূল
ও মুমিনদের ছাড়া কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে গ্রহণ করলো না ? তোমরা
যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন।’ (সূরা আত তাওবা : ১৩-১৬)
فَأَمَّا مَن
طَغَىٰ ـ وَاٰثَرَ
الْحَيَاةَ الدُّنْيَا ـ
فَإِنَّ الْجَحِيْمَ هِيَ
الْمَأْوٰى ـ وَأَمَّا
مَنْ خَافَ مَقَامَ
رَبِّهٖ وَنَهَى النَّفْسَ
عَنِ الْهَوٰى ـ
فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ
الْمَأْوٰى ـ
‘তখন যে ব্যক্তি সীমালংঘন করেছিল এবং দুনিয়ার জীবন বেশি ভালো মনে করে বেছে নিয়েছিল, জাহান্নামই হবে তার ঠিকানা। আর যে ব্যক্তি নিজের রবের সামনে এসে দাঁড়াবার ব্যাপারে ভীত ছিল এবং নফসকে খারাপ কামনা থেকে বিরত রেখেছিল তার ঠিকানা হবে জান্নাত।’ (সূরা আন নাযিয়াত : ৩৭-৪১)
পৃষ্ঠাঃ ৩০-৩২
ইসলামী নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য
*মুহাম্মদ (ﷺ) ছিলেন আদর্শ নেতা ও শিক্ষক
كَمَاۤ أَرْسَلْنَا فِيْكُمْ
رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْ
عَلَيْكُمْ اٰيٰتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ
وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ
تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ ـ
‘আমি
তোমাদের মধ্যে স্বয়ং তোমাদের থেকেই একজন রসূল পাঠিয়েছি, যে
তোমাদের আমার আয়াত পড়ে শোনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে
সুসজ্জিত করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত
শিক্ষা দেয় এবং এমন সব কথা তোমাদের শেখায়,
যা
তোমরা জানতে না। (সূরা আল বাকারা : ১৫১)
لَقَدْ مَنَّ
اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ إِذْ
بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا
مِّنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْ
عَلَيْهِمْ اٰيٰتِهٖ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ
وَالْحِكْمَةَۚ وَإِنْ كَانُوْا
مِنْ قَبْلُ لَفِيْ
ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ ـ
‘আসলে
ঈমানদারদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন নবী পাঠিয়ে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহ
করেছেন। সে তাঁর আয়াত তাদেরকে শোনায়,
তাদের
জীবন পরিশুদ্ধ ও সুবিন্যস্ত করে এবং তাদেরকে কিতাব ও জ্ঞান শিক্ষা দেয়। অথচ এর আগে
এই লোকেরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৬৪)
সকল নবীর কাজ ছিল দাওয়াত পৌঁছানো
وَمَاۤ أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ
إِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْۤ
إِلَيْهِمْ فَسْئَلُوْا أَهْلَ
الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ
لَا تَعْلَمُوْنَ ـ
‘আর
হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের
কাছে আমি ওহি পাঠাতাম। তোমরা যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদের জিজ্ঞেস করো।’ (সূরা আল আম্বিয়া : ৭)
أُبَلِّغُكُمْ رِسَلٰتِ
رَبِّي وَأَنْصَحُ لَكُمْ
وَأَعْلَمُ مِنَ اللهِ
مَا لَا تَعْلَمُوْنَ ـ
‘তোমাদের
কাছে আমার রবের বানী পৌঁছে দিচ্ছি। আমি (নূহ) তোমাদের কল্যাণকামী। আল্লাহর পক্ষ
থেকে আমি এমন সব কিছু জানি যা তোমার জানো না।’ (সূরা আল আরাফ : ৬২)
قَالَ يٰقَوْمِ
لَيْسَ بِيْ سَفَاهَةٌ
وَّلٰكِنِّيْ رَسُوْلٌ مِّنْ
رَّبِّ الْعٰلَمِيْنَ ـ
أُبَلِّغُكُمْ رِسٰلٰتِ رَبِّي
وَأَنَا لَكُمْ نَاصِحٌ
أَمِيْنٌ ـ
‘সে
(হুদ) বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আমি নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত নই।
বরং আমি রব্বুল আলামিনের রসূল। আমার রবের বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছাই এবং আমি
তোমাদের এমন হিতাকাঙ্ক্ষী যার ওপর ভরসা করা যেতে পারে।’ (সূরা আল আরাফ : ৬৭, ৬৮)
فَتَوَلّٰى عَنْهُمْ
وَقَالَ يٰقَوْمِ لَقَدْ
أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي
وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلٰكِنْ
لَّا تُحِبُّوْنَ النَّاصِحِيْنَ ـ
‘আর
সালেহ একথা বলতে বলতে তাদের জনপদ থেকে বের হয়ে গেলো, ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমার রবের বাণী আমি
তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি এবং আমি তোমাদের জন্য যথেষ্ট কল্যাণ কামনা করেছি।
কিন্তু আমি কী করবো, তোমরা তো নিজেদের
হিতাকাক্সক্ষী পছন্দই করো না।’ (সূরা আল আরাফ : ৭৯)
নবীগণ ছিলেন মানবতার মহান বন্ধু ও কল্যাণকামী
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُوْنَ
بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ
فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ
الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءَ الزَّكَاةِ
وَكَانُوْا لَنَا عَابِدِيْنَ ـ
তাদেরকে আমি ইমাম বানিয়েছি, যারা
আমার হুকুমে মানুষকে হেদায়াত করতেন। আর আমি তাদের প্রতি নেক কাজ করা, নামায
কায়েম করা ও যাকাত দেওয়ার জন্য ওহী পাঠিয়েছি। তারা আমারই ইবাদতকারী ছিল। (সূরা আল
আম্বিয়া : ৭৩)
وَمَۤا اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا
رَحْمَةً لِّلْعٰلَمِيْنَ ـ
(হে নবী!) আমরা আপনাকে
দুনিয়াবাসীর জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি। (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)
সহকর্মীদের সাথে নেতৃত্বের আচরণ
চরিত্র ও কর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
যোগ্য উত্তরসূরী তৈরি করতে মর্যাদার অনুভূতি সহকারে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন জরুরি।
পর্যবেক্ষণ ও ইহতেসাবের মাধ্যমে যোগ্যতার বিকাশ সাধন করতে হবে। যোগ্যতা ও সামর্থ
অনুযায়ী দায়িত্ব বন্টন এবং পরামর্শ ভিত্তিক কাজ করতে হবে। কোমলতা, সহজতা, ক্ষমা
ও বিনয়ের গুণে গুণান্বিত হতে হবে।
পৃষ্ঠাঃ ৩২-৩৪
সাফল্যের জন্য নেতা কর্মীদের মধ্যে যে অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা আবশ্যক
*কথা ও কাজের মিল থাকা
يٰۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ
اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا
لَا تَفْعَلُوْنَ ـ
كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ
اللهِ أَنْ تَقُوْلُوْا مَا
لَا تَفْعَلُوْنَ ـ
‘হে
মু’মিনগণ! তোমরা এমন কথা কেনো
বলো যা নিজেরা করো না ? আল্লাহর কাছে এটা অত্যন্ত
অপছন্দনীয় কাজ যে, তোমরা এমন কথা বলো যা করো
না।’ (সূরা আস সফ : ২,৩)
চরিত্র ও মাধুর্য *
খোদার পথে যারা কাজ করে তাদের উদার হৃদয় ও
বিপুল হিম্মতের অধিকারী হতে হবে, সৃষ্টির প্রতি
সহানুভুতিশীল ও মানবতার দরদী হতে হবে। তাদের হতে হবে ভদ্র ও কোমল স্বভাবসম্পন্ন, আত্মনির্ভরশীল
ও কষ্টসহিষ্ণু, মিষ্টভাষী ও সদালাপী।
তাদের দ্বারা কোনো ক্ষতি হবে এমন কোনো ধারণাও যেন কেউ পোষণ করতে না পারে এবং তাদের
নিকট থেকে কল্যাণ ও উপকার সবাই কামনা করবে। তারা নিজেদের প্রাপ্যের চাইতে কমের ওপর
সন্তুষ্ট থাকবে এবং অন্যকে তার প্রাপ্যের চাইতে বেশি দিতে প্রস্তুত থাকবে। তারা
মন্দের জবাব ভালো দিয়ে দেবে অথবা কমপক্ষে মন্দ দিয়ে দেবে না। তারা নিজেদের
দোষ-ত্রুটি স্বীকার করবে এবং অন্যের গুণাবলীর কদর করবে। তারা অন্যের দুর্বলতার
প্রতি নজর না দেবার মতো বিরাট হৃদয়পটের অধিকারী হবে, অন্যের
দোষ-ত্রুটি ও বাড়াবাড়ি মাফ করে দেবে এবং নিজের জন্যে কারোর ওপর প্রতিশোধ নেবে না।
তারা অন্যের সেবা গ্রহণ করে নয় বরং অন্যকে সেবা করে আনন্দিত হবে। তারা নিজের
স্বার্থে নয় বরং অন্যের ভালোর জন্য কাজ করবে। কোনো প্রকার প্রশংসার অপেক্ষা না করে
এবং কোনো প্রকার নিন্দাবাদের তোয়াক্কা না করে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাবে। খোদা
ছাড়া আর কারো পুরস্কারের প্রতি দৃষ্টি দেবে না। তাদেরকে বল প্রয়োগে দমন করা যাবে
না। ধন-সম্পদের বিনিময়ে ক্রয়করা যাবে না কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের সামনে তারা
নির্দ্বিধায় ঝুঁকে পড়বে। তাদের শত্রুরাও তাদের ওপর এ বিশ্বাস রাখবে যে, কোনো
অবস্থায় তারা ভদ্রতা ও ন্যায়-নীতি বিরোধী কোনো কাজ করবে না। এ চারত্রিক গুণাবলী
মানুষের মন জয় করে নেয়। এগুলো তলোয়ারের চাইতে ধারালো এবং হীরা, মণি-মুক্তার
চাইতেও মূল্যবান। যে এহেন চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনকারী সে তার চারপাশের জনবসতির
ওপর বিজয় লাভ করে। কোনো দল পূর্ণাঙ্গরূপে এ গুণাবলীর অধিকারী হয়ে কোনো মহান
উদ্দেশ্য সম্পাদনের জন্যে সুসংবদ্ধ প্রচেষ্টা চালালে দেশের পর দেশ তার করতলগত হতে
থাকে এবং দুনিয়ার কোনো শক্তিই তাকে পরাজিত করতে সক্ষম হয় না।
ধৈর্য *
-তাড়াহুড়া না করা, নিজের
প্রচেষ্টার ত্বড়িত ফল লাভের জন্যে অস্থির না হওয়া এবং বিলম্ব দেখে হিম্মত হারিয়ে
না বসা।
-তিক্ত স্বভাব, দুর্বল
মত ও সংকল্পহীনতার রোগে আক্রান্ত না হওয়া।
-বাঁধা বিপত্তির বিরোচিত
মোকাবিলা করা এবং শান্ত চিত্তে লক্ষ্য অর্জনের পথে যাবতীয় দুঃখ কষ্ট বরদাশত করা।
-দুঃখ-বেদনা, ভরাক্রান্ত
ও ক্রোধান্বিত না হওয়া এবং সহিষ্ণু হওয়া।
-সকল প্রকার ভয়ভীতি ও
লোভ-লালসার মোকাবিলায় সঠিক পথে অবিচল থাকা,
শয়তানের
উৎসাহ প্রদান ও নফসের খায়েশের বিপক্ষে নিজের কর্তব্য সম্পাদন করা।
প্রজ্ঞা *
-মানবিক মনস্তত্ব অনুধাবন
করে সেই অনুযায়ী মানুষের সাথে ব্যবহার করা এবং মানুষের মনের ওপর নিজের দাওয়াতের
প্রভাব বিস্তার করে তাকে লক্ষ্য অর্জনে নিয়োজিত করার পদ্ধতি অবগত হওয়া।
-নিজের কাজ ও তা সম্পাদন
করার পদ্ধতি জানা এবং তার পথে আগত যাবতীয় বাঁধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতা-বিরোধিতার
মোকাবেলা করা।
-পরিস্থিতির প্রতি নজর রাখা, সময়-সুযোগ
অনুধাবন করা এবং কোন সময়ে কোন ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে, এসব
জানাও প্রজ্ঞারই পরিচয়।
-দ্বীনের ব্যাপারে সূক্ষ্ম
তত্ত্বজ্ঞান ও দুনিয়ার কাজ-কারবারের ক্ষেত্রে তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি রাখা।
(*
ইসলামী
আন্দোলন সাফল্যের শর্তাবলী)
ইসলাম ইসলামী আন্দোলন ও আমলে সালিহাতের ব্যাপারে কিছু বিভ্রান্তির অসারতা
সেক্যুলার বুদ্ধিজীবীদের লেখনি ও বক্তব্যের
দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কিছু ইসলামিক স্কলার,
বক্তা
ও লেখকদের একটি অংশের মধ্যে রাজনীতি থেকে ইসলামকে আলাদা করে দেখার একটি প্রবণতা
রয়েছে। তারা বলতে চান, ইসলামী আন্দোলন বা
রাজনীতির প্রয়োজন নেই। নেক আমল করলেই হবে। তারা বর্তমান সময়ের চাহিদাকে সামনে রেখে
সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে গড়ে ওঠা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ও স্বীকৃত ইসলামী আন্দোলন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লোক তৈরির কতিপয় বিশেষ কার্যক্রমের বিষয়েও প্রশ্ন তোলার
চেষ্টা করে থাকেন। আবার ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তিদের মধ্যেও
ইসলামী আন্দোলনের সফলতার ব্যাপারে ভ্রান্তি লক্ষ্য করা যায়। সফলতার বিশ্লেষণ ও
আকাক্সক্ষার ক্ষেত্রে এবং উপরে উল্লেখিত বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য আল কোরআনের
বক্তব্যের দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
পৃষ্ঠাঃ ৩৫-৩৮
কিছু নেক কাজ জিহাদ তথা আল্লাহর পথে সংগ্রামের সমতুল্য হতে পারে না
أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ
الْحَآجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ
كَمَنْ اٰمَنَ بِاللهِ
وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَجٰهَدَ
فِي سَبِيْلِ اللهِ
ؕ لَا يَسْتَوُوْنَ عِنْدَ
اللهِ ؕ وَاللهُ
لَا يَهْدِي الْقَوْمَ
الظَّالِمِيْنَ ـ
‘তোমরা
কি হাজীদের পানি পান করানো ও মাসজিদে হারামের খিদমত করাকে ঐ লোকের কাজের সমান মনে
করে নিয়েছো, যে ঈমান এনেছে আল্লাহ ও
আখিরাতের ওপর এবং যে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করেছে ? আল্লাহর
কাছে তো এরা দুজন সমান নয়, আর আল্লাহ যালিম কাওমকে হেদায়াত
করেন না।’ (সূরা আত তাওবা : ১৯)
لَيْسَ الْبِرَّ
أَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ
الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ
الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ
بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ
وَالْمَلٰٓئِكَةِ وَالْكِتٰبِ وَالنَّبِيِّنَ وَاٰتَى
الْمَالَ عَلٰى حُبِّهٖ
ذَوِي الْقُرْبٰى وَالْيَتٰمٰى وَالْمَسٰكِينَ وَابْنَ
السَّبِيْلِ ۙ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِي
الرِّقَابِ وَاَقَامَ الصَّلٰوةَ
وَاٰتَى الزَّكَاةَ ۚ
وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا
عٰهَدُوْاۚ وَالصّٰبِرِيْنَ فِي الْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ
الْبَاْسِؕ أُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ
صَدَقُوْاؕ وَأُولٰٓئِكَ هُمُ
الْمُتَّقُوْنَ ـ
‘তোমাদের
মুখ পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে ফিরাবার মধ্যে কোনো পুণ্য নেই। বরং সৎকাজ হচ্ছে এই
যে, আল্লাহ, কিয়ামতের দিন, ফেরেশতা
আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মানুষ মনে প্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর প্রেমে
উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ,
আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকীন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী
ও ক্রীতদাসদের মুক্ত করার জন্য ব্যয় করবে। আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দান
করবে। যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করবে এবং বিপদে-অনটনে ও হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর
করবে তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী।’ (সূরা আল বাকারা : ১৭৭)
তাই ‘ইসলামী আন্দোলন বা রাজনীতির প্রয়োজন নেই; নেক
আমল করলেই হবে’ এমন বক্তব্য আর যৌক্তিক হতে
পারে না। রাজনীতি থেকে ইসলামকে আলাদা করে দেখার প্রবণতা রয়েছে। আধুনিক সময়ের রাষ্ট্র
ব্যবস্থা, রাজনীতি, গণতন্ত্র, নির্বাচন, ক্ষমতার
পরিবর্তনের ধারণাগুলো যেভাবে প্রতিষ্ঠিত আল্লাহর রসূলের সময়ে এমন ছিল না। একদল
ব্যক্তি আল্লাহর রসূলকে দেখেন ইবাদত বন্দেগী ও পরহেযগারিতার গণ্ডিতে। অন্যদল আবার
আল্লাহর রসূলের সময়ের যুদ্ধ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চরমপন্থী হয়ে ওঠেন। একপেশে ধারণার
কারণে পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে বুঝে উঠতে পারেন না।
আল্লাহর রসূল সা. ইসলামের আলোকে ব্যক্তি ও
পারিবারিক জীবন সাজিয়েছেন। মানুষকে দ্বীন ইসলামের দিকে আহ্বান করে ইসলামী সমাজ
প্রতিষ্ঠা করেছেন। দ্বীন ইসলামের আলোকে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আধুনিক পরিভাষায় রাজনীতি বলতে এমন কতগুলো
কাজকে বুঝায় যা অত্র সমাজ ও দেশের ক্ষমতার প্রকাশকে প্রভাবিত বা পরিবর্তন করে। এই
দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর রসূল (সা.) যা করেছেন সেটা রাজনীতির মধ্যেই পড়ে। যেমন-
وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ
اللهِ جَمِيعًا وَّلَا
تَفَرَّقُوا ـ
‘তোমরা
সম্মিলিতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)
মহান আল্লাহর রসূলের (সা.) সময়ে গোত্র, গোষ্ঠী
ও আদর্শের ভিত্তিতে মানুষ সংঘবদ্ধ থাকতো। বস্তুত ইসলাম কতগুলো মূলনীতি ঘোষণা করে।
সংবদ্ধ হওয়ার মূলনীতি হচ্ছে শুধুমাত্র আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরার ভিত্তিতে
একত্রিত হতে হবে। বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ
থাকা তাই জরুরি হয়ে পড়ে।
وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ
أُمَّةٌ يَدْعُوْنَ إِلَى
الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ
الْمُنْكَرِ ؕ وَأُولٰٓئِكَ هُمُ
الْمُفْلِحُوْنَ ـ
‘তোমাদের
মধ্যে এমন কিছু লোক অবশ্যি থাকতে হবে,
যারা
নেকি ও সৎকর্মশীলতার দিকে আহবান জানাবে,
ভালো
কাজের নির্দেশ দিবে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে। যারা এ দায়িত্ব পালন করবে তারাই
সফলকাম হবে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)
এখানে যেসব দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে তা কি
রাজনীতি ছাড়া সম্ভব? গোপনে এই কাজগুলো করলেও
আদতে তা রাজনীতির অংশ। আর যে রাজনীতি ইসলামের নির্দেশনার ভিত্তিতে হয় সেটাই তো
ইসলামী আন্দোলন। যদিও ইসলামী আন্দোলন কথাটার ব্যাপকতা অনেক বেশি। রাজনীতি কথাটা
সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। অন্যদিকে ব্যক্তি ও পরিবার গঠনের কাজও
ইসলামী আন্দোলনের অন্তর্ভূক্ত।
দাওয়াতি কাজ ও নেক আমল করতে থাকলে দেশে এমনিতেই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে এমন কথা
প্রচলিত রয়েছে, কিন্তু কথাটা অসম্পূর্ণ।
বস্তুত রাজনীতি ছাড়া, প্রতিষ্ঠিত অসৎ নেতৃত্ব
পরিবর্তন করে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আবার দাওয়াতি কাজ ও নেক আমল ছাড়া
শুধু রাজনীতি করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে অন্য কোনো আদর্শ
প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। মূলত দাওয়াতি কাজ ও নেক আমল ইসলামী রাজনীতিরই অংশ।
ইকামতে দ্বীনের প্রয়োজনীয়তা
ইকামতে দ্বীন নিয়ে কিছু ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা
জেনে নেয়া যাক :
১. আক্বীদা
ও আমল সংশোধন করে এরপর ইকামতে দ্বীনের কাজ করতে হবে।
২. আল্লাহ
তায়ালার অধিকাংশ নবী তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে গেছেন। ইকামতে দ্বীনের কাজ করেননি।
৩. আল্লাহর
রসূল (সা.) বাদশাহীর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন কিন্তু আক্বীদা সংশোধনের ধারা
অব্যাহত রেখেছেন।
এখানে দেখা যাচ্ছে আক্বীদা ও আমল সংশোধন এবং
দাওয়াতি কাজ থেকে ইকামতে দ্বীনকে পৃথকভাবে চিন্তা করা হচ্ছে। অথচ এগুলো ইকামতে
দ্বীনেরই অংশ।
إِلَّا الَّذِيْنَ
تَابُوْا وَأَصْلَحُوْا وَاعْتَصَمُوْا بِاللهِ
وَأَخْلَصُوْا دِيْنَهُمْ لِلّٰهِ
فَأُولٰٓئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ ؕ
وَسَوْفَ يُؤْتِ اللهُ
الْمُؤْمِنِيْنَ أَجْرًا عَظِيْمًا
ـ
‘তবে
তাদের মধ্য থেকে যারা তাওবা করবে, নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন
করে নেবে, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে
ধরবে এবং নিজেদের দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে নেবে, তারা
মুমিনদের সাথে থাকবে। আর আল্লাহ নিশ্চিয়ই মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার দান করবেন।’ (সূরা আন নিসা : ১৪৬)
شَرَعَ لَكُم
مِّنَ الدِّيْنِ مَا
وَصّٰى بِهٖ نُوْحًا
وَّالَّذِيْۤ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ
وَمَا وَصَّيْنَاۤ بِهٖۤ
إِبْرٰهِيْمَ وَمُوْسٰۤى وَعِيْسٰى
أَنْ أَقِيْمُوا الدِّيْنَ
وَلَا تَتَفَرَّقُوْا فِيْهِؕ
كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِيْنَ مَا
تَدْعُوْهُمْ إِلَيْهِؕ اَللهُ
يَجْتَبِيْۤ إِلَيْهِ مَنْ
يَّشَآءُ وَيَهْدِيْۤ إِلَيْهِ
مَنْ يُّنِيْبُ ـ
‘তিনি
তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার
আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি
আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম,
মুসা
ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত
করো এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মুশরিকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ
জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা
মনোনিত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়,
তাকে
পথ প্রদর্শন করেন।’ (সূরা আশ শূরা : ১৩)
দ্বীন কায়েম করতে হবে কোথায় ? ব্যক্তির
আক্বীদা-বিশ্বাসে, ইবাদতে, লেনদেনে, আচার
ব্যবহারে। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে। আগে ছিল রাজ্য, গোত্র, গোষ্ঠী
ইত্যাদি। আধুনিক সময়ে এসেছে রাষ্ট্র। ইসলাম ব্যক্তি থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ
ও রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েমের কথা বলেছে। আদম (আ.) থেকে শুরু করে মুহাম্মদ (সা.)
পর্যন্ত সকল নবীর জীবনে তিনটি কাজ অবশ্যই ছিল। ১) দাওয়াত, ২)
তরবিয়াত/প্রশিক্ষণ এবং ৩) দ্বীন কায়েমের জন্য চেষ্টা চালানো। এই তিনটি কাজই ইকামতে
দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। শুধু রাজনৈতিক চেষ্টার নাম ইকামতে দ্বীন নয়। এজন্য জামায়াতে
ইসলামীর অধিকাংশ কাজ দাওয়াত ও ব্যক্তি গঠনের জন্য দ্বীনি প্রশিক্ষণ।
মহান আল্লাহ বলেন :
فَلِذٰلِكَ فَادْعُ
وَاسْتَقِمْ كَمَاۤ أُمِرْتَ
وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْۚ وَقُلْ
اٰمَنْتُ بِمَاۤ أَنْزَلَ
اللهُ مِنْ كِتٰبٍ
ۚ وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ
بَيْنَكُمُ ؕ اَللهُ
رَبُّنَا وَرَبُّكُمْ ؕ
لَنَاۤ أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ
أَعْمَالُكُمْ ۖ لَا
حُجَّةَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْؕ اَللهُ
يَجْمَعُ بَيْنَنَا وَإِلَيْهِ
الْمَصِيْرُ ـ
‘হে
মুহাম্মাদ! এখন তুমি সেই দ্বীনের দিকেই আহবান জানাও এবং যেভাবে তুমি আদিষ্ট হয়েছো
সেভাবে দৃঢ়তার সাথে তা আঁকড়ে ধরো এবং এসব লোকের ইচ্ছা আকাঙ্খার অনুসরণ করো না।
এদের বলে দাও, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল
করেছেন আমি তার ওপর ঈমান এনেছি। আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যেন তোমাদের মধ্যে ইনসাফ
করি। আল্লাহই আমাদেরও রব এবং তোমাদেরও রব তিনিই। আমাদের কাজকর্ম আমাদের জন্য আর
তোমাদের কাজকর্ম তোমাদের জন্য। আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোনো বিবাদ নেই। একদিন
আল্লাহ আমাদের সবাইকে একত্রিত করবেন। তাঁর কাছেই সবাইকে যেতে হবে।’ (সূরা আশ শূরা : ১৫)
সূরা হুদ এবং আরাফে মহান আল্লাহ কয়েকজন নবী ও
রসূলের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে দুনিয়ায় তাদের কাজের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। তাদের
কওমের প্রতি তাদের আহ্বান সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। এই উদাহরণ থেকে স্পষ্ট যে শুরু
থেকে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক নবী-রসূল দাওয়াতী কাজ ও ব্যক্তি গঠনকে গুরুত্ব দিয়ে
করেছেন। এর পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য ইকামতে দ্বীনের কাজ
করেছেন। এগুলো মনগড়া বিষয় নয়। বরং এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ।
هُوَ الَّذِيْۤ
أَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى
وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى
الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ
كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ ـ
‘তিনিই
সেই মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত এবং ‘দ্বীনে হক’ দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দ্বীনকে অন্য সকল
দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই
অসহনীয় হোক না কেন।’ (সূরা আস সফ : ৯)
هُوَ الَّذِيْۤ
أَرْسَلَ رَسُوْلَهُ بِالْهُدٰى
وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى
الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَكَفٰى
بِاللهِ شَهِيْدًا ـ
‘আল্লাহই
তো সে মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন তাকে
সমস্ত দ্বীনের ওপর বিজয়ী করে দেন। আর এ বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষই যথেষ্ট।
(সূরা আল ফাতহ : ২৮)
هُوَ الَّذِيْۤ
أَرْسَلَ رَسُوْلَهُ بِالْهُدٰى
وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى
الدِّيْنِ كُلِّهٖ وَلَوْ
كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ ـ
আল্লাহই তার রসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন
সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দ্বীনের ওপর বিজয়ী করেন, মুশরিকরা
একে যতই অপছন্দ করুক না কেন।’ (সূরা আত তাওবা : ৩৩)
আল্লাহর রসূল (সা.) বাদশাহী ফিরিয়ে দিয়েছেন
এটাই তো নবীসুলভ কাজ যা আমাদের জন্য শিক্ষা। বাদশাহী ফিরিয়ে দিলেও আল্লাহর রসূল
(সা.) ইকামতে দ্বীনের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। দাওয়াতি কাজ, ব্যক্তি
গঠন এর পাশাপাশি মদীনায় সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। মদীনার ইসলামী নেতৃত্বকে
সুসংহত ও বিস্তৃত করেছেন। আল্লাহর রসূলের (সা.) এই রাজনৈতিক জীবন কিছু মানুষের
কাছে কেন উপেক্ষিত থেকে গেলো তা আসলেই রহস্য। কিছু মানুষ আবার চরমপন্থার দিকে চলে
যায়। তারা আল্লাহর রসূলের (সা.) দাওয়াত ও তরবিয়াতের কাজ চোখে দেখে না।
لَقَدْ كَانَ
لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ
اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
لِّمَنْ كَانَ يَرْجُو
اللهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ
وَذَكَرَ اللهَ كَثِيْرًا
ـ
আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে ছিল
একটি উত্তম আদর্শ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিনের আকাঙ্ক্ষী এবং
বেশি করে আল্লাহকে স্মরণ করে। (সূরা আল আহযাব : ২১)
পৃষ্ঠাঃ ৩৮-৪৪
জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠন পদ্ধতি জরুরি কেন
জামায়াতে ইসলামী দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ
করছে। সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যক্তি,
পরিবার
ও সমাজ পরিবর্তনকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করে। জনমত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনৈতিক
পট পরিবর্তনের চেষ্টা করে। জামায়াতের উদ্দেশ্যের সাথে একমত হলেও সংগঠন পদ্ধতির
সাথে কেউ কেউ একমত হতে পারেন না। বিশেষ করে রিপোর্ট রেখে পর্যায়ক্রমে কর্মী ও
সদস্য (রুকন) হওয়ার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আপত্তি করেন।
দ্বীন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য এবং কর্মসূচির
মূলনীতি হিসেবে ইসলাম যা ঠিক করে দিয়েছে সেখানে ব্যক্তি ও সংগঠনকে বিশেষভাবে তৈরি
হওয়ার দাবি রাখে। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও প্রচলিত অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও কর্মীদের
বৈশিষ্ট্য ধারণ করলে ইসলাম অনুযায়ী চলা সম্ভব না। ইসলাম যেমন লক্ষ্য উদ্দেশ্য ঠিক
করে দিয়েছে তেমনি সেই লক্ষ্যপাণে কীভাবে ছুটতে হবে সেটাও শিখিয়ে দিয়েছে। এজন্য
সংগঠন ও বাইয়াতবদ্ধ জীবনের বিকল্প নেই।
لَّقَدْ رَضِيَ
اللهُ عَنِ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذْ
يُبَايِعُوْنَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ
مَا فِي قُلُوْبِهِمْ فَأَنْزَلَ
السَّكِيْنَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا
قَرِيْبًا ـ
‘আল্লাহ
মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন
যখন তারা গাছের নিচে তোমার কাছে বাইয়াত করছিল। তিনি তাদের মনের অবস্থা জানতেন। তাই
তিনি তাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন,
পুরস্কার
স্বরূপ তাদেরকে আশু বিজয় দান করেছেন।’ (সূরা আল ফাতহ : ১৮)
‘যে
ব্যক্তি আনুগত্য পরিত্যাগ করল এবং জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মারা গেল সে
জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।’ (সহিহ মুসলিম)
মনে করা হয়, বাইয়াতের
জন্য ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখাকে জামায়াতে ইসলামী শর্ত হিসেবে দিয়েছে। এখানে
উপস্থাপনার ভুলের কারণে অনেকে ভুল বুঝে থাকেন। জামায়াতে ইসলামী শর্ত দিয়েছে মূলত
প্রতিদিন কুরআন-হাদীস অধ্যয়ন ও ইসলামী জ্ঞান অর্জন করার। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
জামায়াতের সাথে আদায় করার। দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণমূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার।
এছাড়া রয়েছে সংগঠন পরিচালনা ও আত্মসমালোচনায় সময় দেয়ার। এই শর্তগুলোর ব্যাপারে
আপত্তি থাকতে পারে না। কিন্তু এগুলোকে উহ্য করে কেউ কেউ ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখাকে
বেদয়াত বলে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি করতে চান। সংগঠন রিপোর্ট রাখার মাধ্যমে উপরের
কাজগুলোতে ব্যক্তিকে অভ্যস্ত করাতে চায়। এ ব্যাপারে উক্ত ব্যক্তিকে সহযোগিতা করা
হয়।
বাইয়াতের জন্য সংগঠন শুধুমাত্র রিপোর্টের ওপর
নির্ভর করে না। ব্যক্তির দাওয়াতি কাজ,
আমলিয়াত, লেনদেন
ইত্যাদি ঠিক আছে কিনা দেখা হয়। মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে তার আক্বীদা ও দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামসম্মত কিনা সেটা বুঝার চেষ্টা করা হয়। বস্তুত যিনি জীবনটাকে ইসলাম অনুযায়ী
চলাতে পারেন তিনি রিপোর্ট রাখার ব্যাপারে আপত্তি করেন না। রিপোর্ট রাখা তখনই
আপত্তিকর হতো যখন এর মধ্যে এমন কিছু কাজ রাখা হতো যেটা ইসলামসম্মত নয়। কিন্তু আদতে
তেমন কিছু ব্যক্তিগত রিপোর্টে নেই। রিপোর্ট রাখায় ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে
রিপোর্টে উল্লেখিত কাজ করার মধ্যে। লোক দেখানো ইবাদত করা কিংবা ব্যক্তিগত রিপোর্টে
গোজামিল লেখা সংগঠন শেখায় না। সংগঠন ইসলামের আলোকে ব্যক্তির প্রকৃত সংশোধন চায়।
ব্যক্তিগত রিপোর্টকে ব্যক্তির সংশোধনের একটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে। রিপোর্ট
ছাড়াও ব্যক্তিগত যোগাযোগ, কুরআন ও হাদীসের দারস এবং
বিভিন্ন ক্লাসের মাধ্যমে ব্যক্তিকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দ্বীন কায়েম
জামায়াতে ইসলামী সমাজের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ও
বিপ্লবের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করবে। এটি হচ্ছে
জামায়াতের স্থায়ী মূলনীতি। জামায়াতের গঠনতন্ত্রের ধারা- ৩, ৪, ৫
সহ আরও অনেক জায়গায় এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর এই প্রচেষ্টাকে প্রচলিত
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা বলে আখ্যা দিয়ে নিন্দা করা হয়। বলা হয়, ইসলামে
গণতন্ত্র হারাম অথচ জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্রের অনুসারী!
বস্তুত ইসলামের সাথে কিছুটা সাদৃশ্য পেলে
কোনো কিছু ইসলামিক হয়ে যায় না। আবার সাদৃশ্যের কারণে ইসলাম থেকে সেই বিষয়টা বাতিল
করাও যায় না। সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
এ যুগের ক্ষয়িষ্ণু ও পতনন্মোখ মতবাদ। এক সময়ের ঝাঝালো চটকদার নাম। এগুলোর কিছু
কিছু বিষয়ের সাথে ইসলামের মিল রয়েছে। কিন্তু নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামের সাথে
এগুলোর স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে। গণতান্ত্রিক মতবাদে অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস বা
ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কিন্তু ইসলামে মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও তাঁর
প্রতিনিধিত্বভিত্তিক শাসন স্বীকৃত। তাই মতবাদ হিসেবে গণতন্ত্র কখনোই গ্রহণযোগ্য
নয়।
ইসলামের দ্বীন ও শরীয়ত শ্বাসত। গণতান্ত্রিক
মতবাদ অনুযায়ী ইসলামের দ্বীন ও শরীয়ত পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তবে ইসলামে
পরামর্শভিত্তিক কাজের কথা বলা হয়েছে। সংগঠন,
সমাজ
ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পরামর্শ করা ইসলামী পদ্ধতির অংশ।
আধুনিক জমানার নির্বাচন ব্যবস্থা
জনশক্তি/জনগণের পরামর্শ গ্রহণের নামান্তর। এক্ষেত্রে ইসলামের সাথে গণতন্ত্রের মিল
রয়েছে। বস্তুত আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজেও মদীনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার সময় মদীনার
মানুষের সমর্থন পেয়েছেন যা মক্কায় পাননি। মদীনায় ইসলামের পক্ষে মানুষের সমর্থন ছিল
আর মক্কায় রক্তপাতহীন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে কায়েম হয়েছে। দুই স্থানেই কিছু বিষয়
বিদ্যমান ছিল। যেমন সৎ নেতৃত্ব তৈরি এবং দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্য
থেকে সমর্থন আদায়। ক্ষমতার পরিবর্তন যে উপায়ে হোক না কেনো ইসলাম কিছু মূলনীতি বেধে
দিয়েছে। সেটা হচ্ছে জনগণের ওপর যেনো জুলুম করা না হয়। জামায়াতে ইসলামী আল্লাহ
প্রদত্ত ও রসূল (সা.) প্রদর্শিত পদ্ধতি অনুযায়ী সমাজ পরিবর্তনের কাজ করে যাচ্ছে।
এতে কিছু কিছু মতবাদের সাথে মিল থাকতে পারে কিন্তু ইসলামের সাথে সাংঘার্ষিক হয় এমন কিছু জামায়াত করছে না।
فَبِمَا رَحْمَةٍ
مِّنَ اللهِ لِنْتَ
لَهُمْۚ وَلَوْ كُنْتَ
فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ
لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ
ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ
وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي
الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا
عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى
اللهِ ۚ إِنَّ
اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ ـ
‘(হে নবী!) এটা আল্লাহর বড়ই অনুগ্রহ যে, তোমার
ব্যবহার তাদের প্রতি বড়ই কোমল৷ নয়তো যদি তুমি রুক্ষ স্বভাবের বা কঠোর চিত্ত হতে, তাহলে
তারা সবাই তোমার চার পাশ থেকে সরে যেতো। তাদের ক্রটি ক্ষমা করে দাও। তাদের জন্য
মাগফিরাতে দোয়া করো এবং দ্বীনের ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শে তাদেরকে অন্তরভুক্ত
করো। তারপর যখন কোনো মতের ভিত্তিতে তোমরা স্থির সংকল্প হবে তখন আল্লাহর ওপর ভরসা
করো। আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে কাজ করে।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৫৯)
পৃষ্ঠাঃ ৪৪-৪৮
ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে চরমপন্থা কাম্য নয়
জামায়াতে ইসলামী বিগত দিনে অনেক অত্যাচার
নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জেল, জুলুম, রিমান্ড, ফাঁসি, চাকরি
ও ব্যবসা হারানো সব রকম পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর
নেতাকর্মীদের। জামায়াতের রাজনৈতিক আন্দোলন যখন মারাত্নক দমন পীড়নের শিকার হয়েছে
তখন থেকে একদল ব্যক্তিকে বলতে শোনা গিয়েছে জামায়াতে ইসলামী কেন হার্ডলাইনে যাচ্ছে
না? একই সময়ে বিশ্বব্যাপী আইএস এর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায়
রাজনৈতিক আন্দোলনের পরিবর্তে সশস্ত্র সংগ্রাম বা বিপ্লবের দিকে ঝোঁক প্রবণতা
বৃদ্ধি পেয়েছে। আর শুধু ইসলামের নামে চরমপন্থা নয় বরং বিশ্বব্যাপী ন্যাশনালিজম, হোয়াইট
সুপ্রিমেসি, হিন্দুইজম, জায়োনিজম
ইত্যাদি ব্যাপক বেড়েছে। সহনশীলতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার
আজ সর্বত্র ভূলণ্ঠিত। এসব দেখে অনেকের চরমপন্থা রেসিপি অনুযায়ী সমাজ পরিবর্তনের
ভূত চেপেছে। কিন্তু ইসলাম তো এসব থেকে ব্যতিক্রম।
ইসলাম সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন চায়
কিন্তু সেটা সন্ত্রাসের মাধ্যমে নয়। সমাজের মানুষের চিন্তাজগতের পরিবর্তনের
মাধ্যমে সেটার সূচনা করতে হয়। জনমত তৈরি ব্যতিরেকে যেনোতেনো উপায়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা
হয় না। মক্কার অধিকাংশ ব্যক্তি ইসলামে শামিল হয়নি। কিন্তু মদীনার মানুষেরা ইসলামের
ডাকে সাড়া দিয়েছিল। তাই আল্লাহর রসূল মক্কার আগে মদীনায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে
পেরেছিলেন। মদীনার বাসিন্দাদের মধ্যে আল্লাহর রসূলের নেতৃত্ব মেনে নিতে
স্বতস্ফূর্ততা কাজ করেছে। এটা এমনি এমনি হয়ে যায়নি। দাওয়াতী কাজ, নেক
আমল ও রাজনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে জনমত তৈরির কাজ করেছেন আল্লাহর রসূল। রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার পর সেটাকে টিকিয়ে রাখা এবং সুসংহত করার জন্য আল্লাহর রসূলকে যুদ্ধ করতে
হয়েছে। ইসলামের উদ্দেশ্য হচ্ছে নৈতিক সংশোধন। অযথা রাজ্য জয় আল্লাহর রসূলের
উদ্দেশ্য ছিল না। এজন্য যুদ্ধের আগে তিনি ইসলামের দিকে আহ্বান করতেন। তাদের
সংশোধনের সুযোগ দিতেন। চরম বৈরি পরিবেশের মধ্যেও দাওয়াতী টিম প্রেরণ করতেন।
অবস্থা এমন হয়েছে যে, ইসলামে
রাজনীতি নেই বলে কেউ কেউ পানিতে না নেমেই সাঁতার শিখতে চান। সাইকেলে না চড়েই
সাইকেল চালানো শিখতে চান। অন্যদিকে কেউ আবার সাইকেল চালাতে না পেরে সাইকেল ভেঙে
ফেলতে চান, পুকুর বুঁজে দিতে চান।
উচিত হচ্ছে দ্বীনের জন্য মেহনত করা। কষ্ট হলেও ইকামতের দ্বীনের কাজে আমাদের
সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
لَقَدْ خَلَقْنَا
الْإِنْسَانَ فِي كَبَدٍ
ـ
‘আসলে
আমি মানুষকে কষ্ট ও পরিশ্রমের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা আল বালাদ : ৪)
আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন সাফল্য অর্জনই
ইসলামী আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য
يَغْفِرْ لَكُمْ
ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنّٰتٍ
تَجْرِيْ مِن تَحْتِهَا
الْأَنْهٰرُ وَمَسٰكِنَ طَيِّبَةً
فِي جَنّٰتِ عَدْنٍ
ؕ ذٰلِكَ الْفَوْزُ
الْعَظِيْمُ ـ
‘আল্লাহ
তোমাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমনসব বাগানে প্রবেশ করাবেন যার নীচে
দিয়ে ঝর্ণাধারা বয়ে চলবে। আর চিরস্থায়ী বসবাসের জায়গা জান্নাতের মধ্যে তোমাদেরকে
সর্বোত্তম ঘর দান করবেন। এটাই বড় সফলতা।’ (সূরা আস সফ : ১২)
فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ
بَايَعْتُمْ بِهٖ وَذٰلِكَ
هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ ـ
‘কাজেই
তোমরা আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।’ (সূরা আত তাওবা : ১১১)
فَلْيُقَاتِلْ فِيْ
سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ
يَشْرُوْنَ الْحَيٰوةَ الدُّنْيَا
بِالْاٰخِرَةِؕ وَمَنْ يَّقَاتِلْ
فِي سَبِيْلِ اللهِ
فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ
فَسَوْفَ نُؤْتِيْهِ أَجْرًا
عَظِيْمًا ـ
‘আল্লাহর
পথে তাদের লড়াই করা উচিত যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিকিয়ে দেয়। তারপর যে
ব্যক্তি আল্লাহর পথে লড়বে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি
মহাপুরস্কার দান করবো।’ (সূরা আন নিসা : ৭৪)
জামায়াতে ইসলামীর রুকনিয়াতের শপথনামায় আখেরাতের সফলতাকেই চুড়ান্ত সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে
‘দুনিয়ায়
সামগ্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবজাতির কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’য়ালা প্রদত্ত ও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রদর্শিত দ্বীন কায়েমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন
সাফল্য অর্জন করাই আমার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং এই লক্ষ্য হাসিলের প্রচেষ্টা
চালাইবার জন্য আমি খালিসভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে শামিল হইতেছি।’
দুনিয়াবী পরাজয়কে পাত্তা দেয়া হয়নি
বহু নবী (আ.) দ্বীন কায়েম করতে পারেননি। তারা
কি ব্যর্থ? যেনতেন বা সাময়িক সাফল্যকে
দ্বীনের বিজয় বুঝায় না। এটা একটা আমুল পরিবর্তনকে বুঝায়। আল্লাহ তায়ালার অনেক নবী
দুনিয়াতে ইকামতে দ্বীনের কাজ করতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। এটাকে ব্যার্থতা বলা
হয়নি। লক্ষ করুন সূরা আলে ইমরানের ২১,
১১২, ১৮১, ১৮৩
নম্বর এবং সূরা আল বাকারার ৬১ ও ৯১ নম্বর আয়াত।
দুনিয়াতেও সাফল্যের প্রতিশ্রুতি আল্লাহ দিয়েছেন
وَعَدَ اللهُ
الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ
وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي
الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِيْنَ
مِنْ قَبْلِهِمْ ۪
وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِيْنَهُمُ
الَّذِي ارْتَضٰى لَهُمْ
وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِّن بَعْدِ
خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ
يَعْبُدُوْنَنِي لَا يُشْرِكُوْنَ بِيْ
شَيْئًاؕ وَمَنْ كَفَرَ
بَعْدَ ذٰلِكَ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ
الْفَاسِقُوْنَ ـ
‘আল্লাহ
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা
ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন
যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন। তাদের জন্য তাদের দ্বীনকে
মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন যা আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের
(বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা শুধু আমার
বন্দেগী করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরীক না করে। আর যারা এরপর কুফরী করবে তারাই
ফাসেক।’ (সূরা আন নূর : ৫৫)
আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, তিনি
খেলাফত দিবেন। কিন্তু কখন দিবেন এটা একান্ত তাঁর এখতেয়ার। এমনকি এই এখতেয়ার নবীকেও
দেয়া হয়নি। এটা জোর করে আদায় করার বিষয় নয়। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। প্রকৃত
মুমিন হওয়া এবং সৎকাজ অব্যাহত রাখা আমাদের দায়িত্বের অংশ।
وَمَا النَّصْرُ
إِلَّا مِنْ عِنْدِ
اللهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ ـ
বিজয় ও সাহায্য সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে
আসে। তিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও মহাজ্ঞানী। (সূরা আলে ইমরান : ১২৬)
وَلَا تَهِنُوا
وَلَا تَحْزَنُوْا وَأَنْتُمُ
الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ
مُّؤْمِنِيْنَ ـ
‘মনমরা
হয়ো না, দুঃখ করো না,
তোমরাই
বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।’ (সূরা আলে ইমরান : ১৩৯)
পৃষ্ঠাঃ ৪৮-৫২
দ্বীন প্রতিষ্ঠার
কাজ আল্লাহ তায়ালার নিজের কাজ
প্রকৃতপক্ষে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ আল্লাহ
তায়ালার নিজের কাজ। এ কাজে আমরা মহান আল্লাহর সহযোগী মাত্র।
يٰۤأَيُّهَا الَّذِيْنَ
اٰمَنُوْا كُوْنُوْا أَنْصَارَ
اللهِ كَمَا قَالَ
عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ
لِلْحَوَارِيِّنَ مَنْ أَنْصَارِيْ إِلَى
اللهِؕ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ
أَنْصَارُ اللهِ فَاٰمَنَت
طَّآئِفَةٌ مِّنْ بَنِيْ
إِسْرَآئِيْلَ وَكَفَرَتْ طَّائِفَةٌۚ فَأَيَّدْنَا الَّذِيْنَ
اٰمَنُوْا عَلٰى عَدُوِّهِمْ فَأَصْبَحُوْا ظَاهِرِيْنَ ـ
‘হে
ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। ঠিক তেমনি, যখন
ঈসা ইবনে মারয়াম হাওয়ারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর দিকে (আহবান করার ক্ষেত্রে) কে আমার
সাহায্যকারী?’
তখন
হাওয়ারীরা জবাব দিয়েছিল, ‘আমরা আছি আল্লাহর সাহায্যকারী’। সেই সময় বনী ইসরাঈল জাতির একটি দল ঈমান আনয়ন
করেছিল এবং আরেকটি দল অস্বীকার করেছিল। অতপর আমি ঈমান আনয়নকারীদেরকে তাদের শত্রুদিগের
বিরুদ্ধে শক্তি যোগালাম এবং তারাই বিজয়ী হয়ে গেল।’ (সূরা আস সফ : ১৪)
قُلْ أَطِيْعُوْا اللهَ
وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَۚ فَإِنْ
تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ
مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُم مَّا
حُمِّلْتُمْؕ وَإِنْ تُطِيْعُوْهُ تَهْتَدُوْاؕ وَمَا
عَلَى الرَّسُوْلِ إِلَّا
الْبَلَاغُ الْمُبِيْنُ ـ
‘বলো, ‘আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের হুকুম মেনে চলো।
কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে ভালোভাবে জেনে রাখো, রসূলের
ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে
দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী। তাঁর আনুগত্য করলে তোমরা
নিজেরাই সৎ পথ পেয়ে যাবে, অন্যথায় পরিস্কার ও
দ্ব্যর্থহীন হুকুম শুনিয়ে দেয়া ছাড়া রসূলের আর কোনো দায়িত্ব নেই।’ (সূরা আন নূর : ৫৪)
إِنَّمَا تُنْذِرُ
مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ
وَخَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ ۚ
فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَّأَجْرٍ
كَرِيْمٍ ـ
‘তুমি
তো তাকেই সতর্ক করতে পারো যে উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে, তাকে
মাগফেরাত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদানের সুসংবাদ দাও।’ (সূরা ইয়াসিন : ১১)
قَالُوْا رَبُّنَا
يَعْلَمُ إِنَّاۤ إِلَيْكُمْ
لَمُرْسَلُوْنَ ـ وَمَا
عَلَيْنَاۤ إِلَّا الْبَلَاغُ
الْمُبِيْنُ ـ
‘রসূলরা
বললো, আমাদের রব জানেন আমাদের অবশ্যই তোমাদের কাছে রসূল হিসেবে
পাঠানো হয়েছে এবং সুস্পষ্টভাবে পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আমাদের ওপর আর কোনো
দায়িত্ব নেই।’ (সূরা ইয়াসিন : ১৬, ১৭)
فَذَكِّرْ إِنْ
نَّفَعَتِ الذِّكْرٰى ـ
سَيَذَّكَّرُ مَنْ يَّخْشٰى
ـ
‘কাজেই
তুমি উপদেশ দাও, যদি উপদেশ উপকারী হয় যে ভয়
করে সে উপদেশ গ্রহণ করে নেবে।’ (সূরা আল আলা : ৯, ১০)
মানুষ ছাড়াও অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ
তাঁর বিধান কায়েম করেছেন। এমনকি মানুষের দেহের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। কিন্তু
মানব সমাজের বিধানের ক্ষেত্রে মানুষকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সাহায্যকারীর মর্যাদা
দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব চুড়ান্ত চেষ্টা করা। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
জামায়াতে ইসলামীর অনন্য ভূমিকা
প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী আল্লাহ
তায়ালার দাসত্ব এবং রসূলের (সা.) আনুগত্যের ভিত্তিতে সংগঠন
পরিচালনা করে আসছে। মানুষের কাছে ইসলামের সুমহান আহ্বান পৌঁছে দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক
পদ্ধতিতে বাংলাদেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য জনমত তৈরির কাজ করছে। আলহামদুলিল্লাহ, এই
কাজে জামায়াতে ইসলামীর উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জনের মধ্যে রয়েছে :
*সম্মানিত আলেম সমাজের
মধ্যে সাংগাঠনিক জীবনের প্রয়োজনীয়তার উপলব্ধি তৈরি হয়েছে।
*তাফসীর, সাহিত্য
ও ব্যক্তিগত দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের ব্যাপক প্রচার, প্রসারসহ
ইসলামী আন্দোলন প্রসঙ্গে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।
*সারা দুনিয়ায় এ কাফেলার
লোকেরা ছড়িয়ে পড়েছে।
*শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক
ও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে অজ্ঞতা,
কুসংস্কার
দূর ও দারিদ্র বিমোচনে আর্থসামাজিক উন্নতি সাধিত হয়েছে।
*বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
নবী রসূলদের অনুসরণে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
*মহান আল্লাহর হেদায়াতের
ওপর দৃঢ়ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত সংগঠন হিসেবে শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন ও সমর্থন তৈরি
হয়েছে।
*মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির
জন্য আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে জানমালের কুরবানির এক নবদৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।
তবে প্রকৃত সফলতা হচ্ছে দুনিয়াতে দ্বীনের কাজ
করে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আখেরাতে নিজেদের মুক্তি। দুনিয়ায়
রাজনৈতিক অর্জন মহান আল্লাহর উপহার স্বরূপ। আমাদের কাজ হচ্ছে দ্বীন ইসলামের পথে
নিরন্তর সংগ্রাম করে যাওয়া। সর্বশক্তি দিয়ে সবকিছুর ওপরে দ্বীন কায়েমকে গুরুত্ব
দিয়ে অবিরাম প্রচেষ্টা চালানো, আল্লাহর সাহায্য লাভের
উপযোগী হওয়ার চেষ্টা করা এবং সবর ও তাওয়াক্কুল করা। কবে হবে ? দেরি
হয়ে যাচ্ছে, বিভিন্ন মানবিক দুর্বলতায়
ভোগা এবং অস্থিরতা প্রদর্শন করা কাম্য নয়।
পৃষ্ঠাঃ ৫২-৫৫ (সমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।