শহীদ আব্দুল মালেক ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ও বীর সেনানী।শহীদ আব্দুল
মালেক একটি নাম,একটি প্রেরণা, একটি বিশ্বাস, একটি আন্দোলন, একটি ইতিহাস, একটি মাইলস্টোন।পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে
১৯৬৯ সালে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে কথা বলতে গিয়েই ঢাকায় ইসলাম বিদ্বেষী সেকুলার পন্থীদের হামলায়
মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ১৫ আগস্ট শাহাদাৎ বরণ করেন ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রপথিক
শহীদ আব্দুল মালেক।শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের শাহাদাতের তাৎপর্য ছাত্র সমাজের কাছে
তুলে ধরা এবং তাঁর আত্মত্যাগ থেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনুপ্রাণিত করার নিমিত্তে
ইসলামী ছাত্রশিবির এ দিনটিকে ‘ইসলামী শিক্ষা দিবস’ হিসেবে প্রতিবছর পালন করা আসছে।
শহীদ
আব্দুল মালেকের শাহাদাতের প্রেক্ষাপট ও ঘটনা:
১৯৬৯ সালে পাকিস্তান ঝুড়ে ব্যাপক
গন-অভ্যুত্থান দেখা দেয়।ফলে আইয়ুব সরকারের পতন ঘটে এবং জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতার
মঞ্চে আরোহণ করেন।এরই এক পর্যায়ে এয়ার মার্শাল নূর খানের নেতৃত্বে একটি শিক্ষা
কমিশন রিপোট প্রকাশিত হয়।এই রিপোট প্রকাশিত হবার পর শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে
বিতর্ক দেখা দেয়।ছাত্র সমাজের একটি অংশ ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে জাতীয় শিক্ষা
ব্যবস্থা পুনর্গঠনের দাবী তুলে।শহীদ আব্দুল মালেকসহ ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল
এয়ার মার্শাল নূর খানের সাথে সাক্ষাৎ করে দেশে সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা
চালুর দাবি করেন। শহীদ আব্দুল মালেকের প্রতিনিধি দলের পর দেশের অন্যান্য আরও সংগঠন
একই দাবি তুলেন।সবার দাবির মুখে অল্প কিছুদিনের মধ্যে সরকার নতুন শিক্ষানীতি
প্রণয়নের লক্ষে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন।এটি ছিল পাকিস্তান আমলের গঠিত সর্বশেষ
শিক্ষা কমিশন।গঠিত শিক্ষা কমিশন একটি শিক্ষা নীতিও ঘোষণা করেন, ঘোষিত শিক্ষানীতিতে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও এতে ইসলামী
আদর্শের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।কিন্তু বাধসাদে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের
ধ্বজাধারীরা।তারা এ শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবি জানায়।এমনই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের
শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কি হবে তা নিয়ে জনমত জরিপের আয়োজন করা হয়।জনমত
জরিপের অংশ হিসেবে ১৯৬৯ সালের ২ আগস্ট “National Institute of Public
Administration” (NIPA) এর উদ্যোগে সরকারের পক্ষ থেকে
‘‘শিক্ষার আদর্শিক ভিত্তি’’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে।।ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের
নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন আব্দুল মালেক সেই
আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মাত্র ৫ মিনিটের বক্তব্যে বামপন্থী সকল ছাত্র সংগঠনের সকল
যুক্তিকে হার মানিয়ে উপস্থিত সবার চিন্তার রাজ্যে এক বিপ্লবী ঝড় সৃষ্টি করে ইসলামী
শিক্ষার পক্ষে জনমত সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। ফলে সভার মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে
যায়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ ইসলামী শিক্ষার পক্ষে মতামত প্রকাশ করায়
সেকুলার মহল মরিয়া হয়ে উঠে।ছাত্রদের এ মতামতকে বানচাল করার জন্য পরবর্তীতে ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে ডাকসু কর্তৃক ১২ আগস্ট আরো একটি আলোচনা সভার
আয়োজন করা হয়।এর মূল আয়োজক ছিল বামপন্থী শিক্ষকরা।তারা সেখানে আব্দুল মালেককে অংশগ্রহণ
করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।আব্দুল মালেক তার সঙ্গী সাথীদের নিয়ে টিএসসির
আলোচনা সভা স্থলেই তার প্রতিবাদ করেন।এই প্রতিবাদ সংঘর্ষে রুপ লাভ করে। সংঘর্ষ এক
পর্যায়ে থেমে যায়।কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়ে আব্দুল মালেক ও তার কতিপয় সঙ্গীকে
টিএসসির মোড়ে সেকুলারপন্থীরা হামলা করে এবং রেসকোর্সে এনে তার মাথার নীচে ইট দিয়ে
উপরে ইট ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে এবং অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে
চলে যায়।ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন যৌথভাবে এ পরিকল্পিত হামলার নেতৃত্ব দান
করে।আব্দুল মালেক ভাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।কিন্তু তার আঘাত
এতটাই মারাত্মক ছিল যে,১৫ আগষ্ট তিনি শাহাদাৎ বরন করেন।
ইসলামী
শিক্ষার পক্ষে শহীদ আব্দুল মালেকের অবস্থানের যৌক্তিকতা:
শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে একটি দেশের ভবিষ্যত
প্রজন্মকে আলোকিত করার প্রধান সোপান,জাতীয়
উন্নতি ও অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি,জাতীয়
ঐক্যের প্রতীক,জনগনের মধ্যে চিন্তা ও কর্মের বিভাজন
দূরীকরণের সহায়ক শক্তি এবং জাতীয় মিশন ও ভিশন বাস্তবায়নের রুপকার।জনগনের সকল
প্রকার আর্থ-সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের উদ্দীপক ও প্রেরণাদানকারী শক্তি
হিসেবেও কাজ করে শিক্ষা ব্যবস্থা।শুধু তাই নয় জনগনকে তার সর্বোচ্চ ধর্মীয় চেতনায়
উদ্দীপ্ত করণে শিক্ষা ব্যবস্থার অপরিসীম ভূমিকা থাকে।জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি ও
শৃঙ্খলা স্থাপনে শিক্ষা ব্যবস্থা অদম্য প্রত্যয় সৃষ্টির মাধ্যমে জনগনের মধ্যে
শক্তি যোগায়।মূলতঃ শিক্ষা ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে একটি দেশের গোটা জাতীয়
সত্তার কাঠামো।কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত না হওয়ায় আমাদের জাতীয় জীবনে সৃষ্টি হয়েছে বিরাট
আদর্শিক শূর্ন্যতা,নৈতিক দুর্বলতা,ব্যক্তিত্বের মধ্যে বিভাজন,আগামী প্রজন্মের মধ্যে হতাশা,জাতীয় উন্নতিতে
স্থবিরতা,জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে অশান্তি,বিশৃংখলা ও অস্থিরতা ইত্যাদি ইত্যাদি।এ বাস্তবতা উপলব্ধি
করে এবং ভবিষ্যতে এর সুদূর প্রসারী আরো নেতিবাচক প্রভাবের
কথা চিন্তা করে দেশের সামগ্রিক স্বার্থে সেদিন শহীদ আব্দুল মালেক ইসলামী শিক্ষার পক্ষে তার যুক্তিপূর্ণ
বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
ইসলামী
শিক্ষার সুদুরপ্রসারী প্রভাব:
শিক্ষাকে বলা হয় একটি জাতির মেরুদন্ড।যা
জাতিকে খাড়া রাখে কিংবা পড়ন্ত অবস্থা থেকে উঠিয়ে দাঁড় করায়।এটা তখনই সম্ভব হয় যখন
ঐ জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত পথ ও পদ্ধতি
অনুযায়ী।মিশরীয় দার্শনিক Professor Muhammad kutub তাঁর “ The Concept of
Islamic Education” প্রবন্ধে বলেছেন,“শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামের কাজ হলো পরিপূর্ণ মানবসত্তাকে
লালন করা,গড়ে তোলা এমন একটি কর্মসূচী যা মানুষের দেহ,তার বুদ্ধিবৃত্তি এবং আত্মা,তার বস্তুগত ও আত্মিক জীবন এবং পার্থিব জীবনের প্রতিটি কার্যকলাপের একটিকেও
পরিত্যাগ করেনা,আর কোন একটির প্রতি অবহেলাও প্রদর্শন করেনা”।
ইসলামী শিক্ষার ভিত্তি হল তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত।যা সর্বস্তরে উচ্চ নৈতিকতা সম্পন্ন, নির্লোভ, সৎ,যোগ্য ও দেশপ্রেমিক মানুষ তৈরী করে।মানুষের হাত-পা, মনন ও মস্তিষ্ক সবকিছুকে আল্লাহর অনুগত বানিয়ে থাকে।মানুষের
ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনকে আল্লাহর রঙে রঞ্জিত করে।ফলে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে
শয়তানের বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ চলে।কেননা শয়তান সর্বদা পৃথিবীতে বিশৃংখলা ও
অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়।এমতাবস্থায় ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি শয়তানের যাবতীয়
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সর্বদা পৃথিবীকে সুন্দরভাবে আবাদ করতে চায়।ফলে পৃথিবীর
জীবন পদ্ধতি অনেক সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়।
অপরদিকে শিক্ষা ব্যবস্থা যদি এর বিপরীত হয়, তাহলে ঘুণে ধরা বাঁশের মত জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ে।আজকের
পৃথিবীতে বড় বড় অশান্তির মূল কারণ হল শিক্ষিত নেতৃবৃন্দ।যাদের শিক্ষায়
আল্লাহভীরুতা নেই, আখেরাতে জবাবদিহিতা নেই।স্রেফ রয়েছে দুনিয়া
সর্বস্বতা।ফলে শিক্ষিত মানুষগুলোর মধ্যে মানবীয়গুনাবলীর বিপরীতে দানবীয় গুনাবলী
সৃষ্টি হচ্ছে।তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার কোন ঘাটতি না থাকলেও,সততা ও নৈতিকতার দিক থেকে তাদের অবস্থান অনেকটাই শুন্যের
কোটায়।এই শ্রেনীর মানুষগুলোই দুনিয়াতে ভদ্রবেশে সকল প্রকার শয়তানী অপকর্ম চালিয়ে
যাচ্ছে।একটি দেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে আরোহন করতে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একক ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর বিকল্প
নেই।আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের কোন সরকারের জন্য তা অপরিহার্যও বটে।
শহীদ
আব্দুল মালেকের শাহাদাতের প্রভাব:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সম্ভবতঃ আব্দুল
মালেক ভাইয়ের মত মেধাবী ছাত্র নেতার শাহাদাৎ এর আগে ঘটেনি।ফলে আব্দুল মালেক ভাইয়ের
শাহাদাতে গোটা দেশ স্তব্দ হয়ে যায়।সর্বমহলে এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। জাতির
এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের বিদায়ে কেঁদেছে গোটা জাতি। দলমত নির্বিশেষে সবাই এই
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সে সময়ের সংবাদ পত্র তার
সাক্ষী।আওয়ামী লীগের তদানীন্তন সভাপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানও বিবৃতি দিয়ে ঘটনার
তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভাবান ছাত্রনেতা আব্দুল
মালেকের শাহাদাতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। এছাড়াও সকল জাতীয় নেতারা নিন্দা ও ক্ষোভ
জানিয়েছিল।এ থেকেই বুঝা যায়,শহীদ আব্দুল
মালেকের শাহাদাৎ কতটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
শহীদ আব্দুল মালেকের জানাযা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে।আওলাদে রাসূল (সা)সাইয়েদ মোস্তফা আল মাদানী
জানাযার ইমামতি করেন।জানাজার পূর্বে আবেগ-আপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন- “শহীদ
আব্দুল মালেকের পরিবর্তে আল্লাহ যদি আমাকে শহীদ করতেন তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে
করতাম।বিশ্ববরেন্য ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ)তার শোক বানীতে
মন্তব্য করেন, “এক মালেকের রক্ত থেকে লক্ষ
মালেক জন্ম নিবে”।তার এ মন্তব্য অক্ষরে অক্ষরে সত্যে পরিণত হয়েছিল।
সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম
আব্দুল মালেক ভাইয়ের শাহাদাতের মূল্যায়ন করতে গিয়ে লিখেছেন, “আব্দুল মালেকের মতো একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব শহীদ হবার
ফলে গোটা আন্দোলনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে,নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি না হলে এতটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতোনা।আব্দুল মালেকের
শাহাদাত আর পরবর্তী শাহাদাতের তুলনা করলে এটাই দেখি একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির
শাহাদাতের ফলে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, ঐ ধরনের প্রতিক্রিয়া পরবর্তীদের ক্ষেত্রে হয়নি। আন্দোলন যখন শক্তি সঞ্চয় করেছে
মাত্র তখন একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির শাহাদাত আন্দোলনের শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে
দিয়েছিল” ।তিনি আরো লিখেছেন, “আব্দুল মালেক জীবিত
থেকে এই আন্দোলনের জন্য যে অবদান রাখতে পারতেন শহীদ হয়ে যেন তার চাইতে বেশী অবদান
রেখে গেলেন।তা্র এ শাহাদাতের প্রেরণায় আন্দোলন যতদূর অগ্রসর হয়েছে,যত লোকের মধ্যে শাহাদাতের জযবা সৃষ্টি হয়েছে তার মতো যোগ্য
কর্মী বেঁচে থাকলেও তিনি যতো যোগ্যই হোন না কেন তার একার জীবনে এতো বড় প্রভাব এবং
আন্দোলনে এতটা গতি দিতে পারতেন কিনা সন্দেহ”।শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাতের সংবাদ
শুনে সেদিন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী
(রহ.)বলেছিলেন-‘‘আব্দুল মালেক এদেশের ইসলামী আন্দোলনের প্রথম শহীদ তবে শেষ নয়।’’
আব্দুল মালেক ভাইকে শহীদ করার মাধ্যমে সেদিন
সেকুলার পন্থীরা ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের পক্ষে আওয়াজ তোলাকে বন্ধ করে দিতে
চেয়েছিল কিন্তু তাদের সে পরিকল্পনা সাময়িক বাস্তবায়িত হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী তাদের
জন্য বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।যে কোন আন্দোলনের কোন ব্যক্তিত্ব বিশেষ করে
উল্লেখযোগ্য কোন ব্যক্তি যখন শহীদ হন তখন সে আন্দোলনকে দমিয়ে দেয়া সম্ভব হয়না বরং
উল্টো সে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে যারা ভীরু এবং
কাপুরুষ তারা পিছিয়ে যায়।আর যারা এ আন্দোলনকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে এবং ইসলামী আন্দোলনের
স্পিরিটকে যারা বুঝে আগের চাইতে তারা আরো দ্রুত এগিয়ে যায়।তাছাড়া এ অবস্থায়
আন্দোলনে নতুন নতুন লোকও এগিয়ে আসে।বাস্তবে এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।এক আব্দুল
মালেককে শহীদ করে শত্রুরা শত শত আব্দুল মালেক সাপ্লাই করেছে আন্দোলনে।এক আব্দুল
মালেকের শাহাদাতের ফলে আন্দোলন শত শত আব্দুল মালেককে পেয়েছে যারা তার মতো
মনে-প্রানে শাহাদাৎ কামনা করে।এটা যে কোন আন্দোলনের জন্য সত্য আর ইসলামী আন্দোলনের
জন্য বেশী সত্য।শহীদ আব্দুল মালেককে হত্যা করে ইসলামী আদর্শকে স্তব্ধ করা
যায়নি।বরং এক মালেকের রক্ত বাংলার ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে ছড়িয়ে একটি আন্দোলনের
জন্ম দিয়েছে।লক্ষ-কোটি মালেক আজ একই আদর্শের ছায়াতলে সমবেত।সুতরাং শহীদ আব্দুল
মালেকের খুনীরা আজ অভিশপ্ত, ঘৃণিত এবং পরাজিত।জাতি তাদের ঘৃণাভরে
প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রেরণায়
ভাস্বর এক কিংবদন্তী শহীদ আব্দুল মালেক:
একজন মানুষ এ ভূবনে স্ব-মহিমায়, জ্ঞানে, ধ্যানে, চিন্তা-চেতনায় কত উজ্জ্বল ভাস্বর হতে পারে শহীদ আব্দুল
মালেক তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে থাকবে অনাগত পৃথিবীর কাছে।শহীদ আব্দুল মালেক
ভাইয়ের ব্যক্তিগত জীবন, ছাত্রজীবন,সাংগঠনিক জীবন,তাঁর লেখনি, চিঠি-পত্রের আদান-প্রদান, দায়িত্বশীলদের সাথে মেলামেশা, সহপাঠি ও বন্ধুদের প্রকাশিত লেখায় মাধ্যমে যতটুকু জানার সুযোগ হয়েছে তাতে একথা
নিদ্ধিধায় বলা যায়, শহীদ আব্দুল মালেক হচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের
কর্মীদের জন্য প্রেরনায় ভাস্বর এক কিংবদন্তী, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এক অনুপম আদর্শ।তাইতো শহীদ আব্দুল মালেক
ভাইয়ের শাহাদাতের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম
লিখেছেন- “শহীদ আব্দুল মালেক তরুণ বয়সেই এমন এক উজ্জ্বল নজির রেখে গেছেন যা এদেশে
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে চিরদিন প্রেরণা যোগাবে। এতগুলো গুণ একজন ছাত্রের
মধ্যে এক সাথে থাকা অত্যন্ত বিরল।একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে শিক্ষক ও ছাত্র মহলে
তার সুখ্যাতি সত্ত্বেও তার নিকট ছাত্রজীবন থেকে আন্দোলনের জীবনই বেশী প্রিয়
ছিল।যথাসম্ভব নিয়মিত ক্লাসে হাজির হওয়াই যেন তার জন্য যথেষ্ট ছিল। পরীক্ষায় ভাল
করার জন্য তার মধ্যে কোনো ব্যস্ততা ছিলনা।ওটা যেন অতি সহজ ব্যাপার ছিল।ক্লাসের
বাইরে তাঁকে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো চিন্তাধারা বা আলাপ-আলোচনা করতে বড়
একটা দেখা যেত না।তার সহপাঠী ও সহকর্মীরা তাকে পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করার দিকে
মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিলে মৃদু হেসে বলতেন, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ডিগ্রি নিতে হবে যাতে আয়-রোজগারের একটা পথ হয়। কিন্তু
ওটাকে জীবনের চরম লক্ষ্য বানিয়ে নিতে চাই না।খুব ভাল রেজাল্টের ধান্ধা করলে
ক্যারিয়ার গড়ে তুলবার নেশায় পেয়ে বসবার আশঙ্কা আছে।
ইসলামী আন্দোলনের বর্তমান প্রজন্মের কর্মীদের
অনুপ্রেরনার জন্য শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের জীবনের কিছু খন্ড চিত্র নিম্নে
উপস্থাপন করা হল।
১.অদম্য
মেধা:
বাড়ীর পাশের খোকসা বাড়ির প্রাইমারি স্কুল
থেকে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়।আব্দুল জলিল সাহেব ছিলেন খোকশাবাড়ী প্রাইমারী
স্কুলের প্রধান শিক্ষক।তিনি স্কুলে ভর্তি হবার সময় শিশু আব্দুল মালেককে কয়েকটি
প্রশ্ন করলেন।সবকটি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে তিনি এতই অভিভূত হলেন যে আব্দুল মালেককে
তিনি সরাসরি ২য় শ্রেনীতে ভর্তি করে নিলেন।বাড়ী থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে
গোসাইবাড়ী হাই স্কুল।এলাকার মধ্যে এ স্কুলটির বেশ সুনাম থাকায় শিশু আব্দুল মালেক
সে স্কুলে পড়ার আগ্রহ পোষণ করেন।অতঃপর ৪র্থ শ্রেনীতে তাকে সে স্কুলে ভর্তি করা
হল।১৯৬০ সালে আব্দুল মালেক জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের
স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন।আব্দুল মালেক চাচ্ছিলেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি
পরীক্ষা দিতে।কিন্তু গোসাইবাড়ী হাই স্কুলে তখনও বিজ্ঞান বিভাগ ছিলনা।আব্দুল মালেকের
প্রত্যাশা অনুযায়ী তাকে বগুড়া জেলা স্কুলে নবম শ্রেনীতে ভর্তি করা হল।সেখান থেকে
এসএসসি তে বিজ্ঞান বিভাগে মেধাতালিকায় ত্রয়োদশ স্থান অর্জন করেন।এ সময়ে তার পিতা
ইন্তেকাল করেন।এরপর তিনি ভর্তি হন রাজশাহী সরকারী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে।সেখানেও
তিনি কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে মেধাতালিকায় ৪র্থ
স্থান অধিকারের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন এবং
ডিপার্টমেণ্টের মেধাবী ছাত্র হিসেবে ১ম স্থান অধিকার করেন।স্কুল জীবন থেকে শহীদ
আব্দুল মালেক মৌলভী মহিউদ্দিন সাহেবের মাধ্যমে ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর খুব দ্রুত সংগঠনে এগিয়ে এসে সর্বোচ্চ মান সদস্যে
উন্নীত হন। একপর্যায়ে ঢাকা মহানগরী এবং নিখিল পাকিস্তান ছাত্র ইসলামী আন্দোলনের
কেন্দ্রীয় মজলিস-উশ-শূরার সদস্য নির্বাচিত হন।
২.সাদাসিধে
জীবন যাপন
শহীদ আব্দুল মালেক অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন
করতেন।পোশাক বলতে ছিল একটি কমদামী সাদা পাজামা ও পাঞ্জাবী যাতে ইস্ত্রির দাগ কেউ
কখনো দেখেছে বলে জানা যায়না ।রাতের বেলায় নিজ হাতে তিনি তা পরিস্কার করতেন।যেন
পরের দিনের সূচনায় তা আবার পরা যায়।অনেকের মত নূর মুহাম্মদ মল্লিকও লিখেছেন, “সারাদিন কাজ করে রাতের বেলায় তাঁর নিজের হাতে
ক্লান্ত শরীরে সেই একমাত্র পাজামা পাঞ্জাবী ধোয়া রুটিন কাজের কথা।কোন এক রাতে সেটি
ধোয়া সম্ভব হয়নি বলে সকালে ধোয়া পাঞ্জাবী আধা ভেজা অবস্থায় গায়ে জড়িয়ে মালেক ভাই
গিয়েছিলেন মজলিসে শূরার বৈঠকে যোগ দিতে।মালেক ভাইয়ের পোশাক যেমন সাধাসিধে ছিল, দিলটাও তেমন সাধাসিধে শুভ্র মুক্তার মত ছিল।প্রাণখোলা
ব্যবহার তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
শহীদ আব্দুল মালেক ভাই সম্পর্কে তাঁর এক
হলমেট লিখেছেন-শহীদ আব্দুল মালেকের পোশাকাদি ও স্যান্ডেল দেখে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে
কেউ তাঁকে Underestimate করতে পারতো।কিন্তু
তার সাথে কথা বলার স্কোপ হলে ৫ মিনিটের মধ্যে এই ভুল বিশ্বাস অবশ্যই ভেঙ্গে যেতে
বাধ্য হত।
শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের সহকর্মী আবু শহীদ
মোহাম্মদ রুহুল সাক্ষাৎকারে আব্দুল মালেক ভাই সম্পর্কে বলেছেন- “একদা আমরা একসাথে
চকবাজারে কালেকশানে যাই।তখন তাঁর অতি সাধারণ
ইস্ত্রিবিহীন পাঞ্জাবী-পায়জামা এবং চপ্পল দেখে এক সুধী মালেক ভাইকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয় বলে মনে করেন।এতে সহকর্মীরা ক্ষুদ্ধ হলে মালেক ভাই
আমাদেরকে এ বলে সান্ত্বনা দেন যে,আমি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিনা তা আল্লাহই ভাল জানেন।আমি আমার জন্য যে মানের পোশাক
প্রয়োজন মনে করেছি সে মানের পোশাকই পরিধান করেছি।কে আমার পোশাক দেখে কি ভাবল তাতে
আমার কোন ভাবনা নেই”।
শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের সাথে মারাত্মক আহত
হওয়া মাওলানা মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী শহীদ আব্দুল মালেক ভাই সম্পর্কে সাক্ষাৎকারে
বলেন-মালেক ভাই খুব সাদাসিধে থাকতেন।অনেক সময় পাজামা-পাঞ্জাবীর সাথে ইংলিশ সু
পরতেন।আমরা বলতাম ,মালেক ভাই এটাতো মিলল না।উনি বলতেন।এত কিছু
দেখার সময় আছে নাকি?মালেক ভাই প্রায়ই বলতেন,পড়াশুনা করে শুধু বড় ডিগ্রী নিয়ে কি লাভ যদি আল্লাহর কাছে
ক্ষমা না পাওয়া যায়।ডিগ্রি তো নেয়া শুধু বাঁচার তাকিদে।
৩.সংগ্রামী
জীবন:
ইসলামী নেতৃত্ব সংগ্রাম,সংঘাত ও কঠিন অগ্নী পরীক্ষার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়।শহীদ
আব্দুল মালেক তাঁর সংগ্রামী জীবনের পদে পদে সেই পরীক্ষাই দিয়ে গেছেন।সারাটা জীবন
কষ্ট করেছেন।আর্থিকভাবে খুবই অসচ্ছল একটি পরিবারে তার জন্ম হয়েছিল।তাই জীবন যাপনের
অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ থেকেও তিনি ছিলেন বঞ্চিত। সেই কচি বয়সে যখন তাঁর মায়ের কোলে
থাকার কথা,তিনি থেকেছেন বাড়ী থেকে অনেক দূরে লজিং
বাড়িতে।দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়েছে তাকে।ক্ষুধার যন্ত্রনা,অমানুষিক পরিশ্রম কিংবা দুঃখ-কষ্টের দিনযাপন কোন কিছুই
পিচ্ছিল করতে পারেনি তাঁর চলার পথ।সামান্য বৃত্তির টাকা সম্বল করে নিজের জীবন এবং
বিধবা মায়ের সংসার চালাতে হতো তাকে ।জনাব নূর মোহাম্মদ মল্লিক এক সময়ে কোন এক
কারনে বেশ কিছু দিনের জন্য মালেক ভাইয়ের মেহমান হয়ে ছিলেন।তাকে মেহমানদারী করতে
গিয়ে নীরবে নিভৃতে শহীদ আব্দুল মালেক কিভাবে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটিয়েছেন তার
চোখ ভেজানো বর্ননা দিয়েছেন তিনি তার ‘চিরভাস্বর একটি নাম’ শীর্ষক স্মৃতিচারণমূলক
প্রবন্ধে : “স্কলারশীপের টাকায় তাঁর সবকিছু চলতো।কিছু টাকা মায়ের কাছেও
পাঠাতেন।বাকী টাকা খাওয়া পরা ও আন্দোলনের জন্য খরচ করতেন।বেশ কয়েকদিন থাকার পর আমি
লক্ষ্য করলাম মালেক ভাই ডাইনিং হলে খাচ্ছেন না।মনে করলাম মজলিশে শুরার বৈঠকের জন্য
হয়তো তাঁদের সকলে একসঙ্গে খান সময় বাঁচানোর জন্য।শুরার বৈঠক শেষ হলো।এরপরও তাকে
দেখিনা।এরপর একদিন দেখলাম তিনি রুটি আনাচ্ছেন।কারণ জিজ্ঞেস করলে বললেন,শরীর খারাপ।আমার সন্দেহ হলো,আমার জন্যই বোধ হয় তাকে কষ্ট করতে হচ্ছে।সামান্য ক’টি টাকাতে হয়তো তিনি কুলিয়ে
উঠতে পারছিলেন না এবং এজন্য বিশেষ করে আমার ভার বহনের জন্যই তাকে অনাহারে
অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে বুঝতে পেরে তাঁর কাছ থেকে অন্য কোথাও চলে যাবার জন্য দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ হলাম”।
৪.জ্ঞানপিপাসু:
শহীদ আব্দুল মালেক ছিলেন অসম্ভব
জ্ঞানপিপাসু।জানতে হলে পড়তে হয়। অধ্যয়নের কোনো বিকল্প নেই।শহীদ আব্দুল মালেক এ
বিষয়ে আমাদের সকলের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। আন্দোলনী কর্মকাণ্ডের শত ব্যস্ততা মালেক
ভাইয়ের জ্ঞানার্জনের পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি আর্থিক সঙ্কট
সত্ত্বেও তিনি নাশতার পয়সা বাঁচিয়ে বই কিনতেন, সংগঠনের এয়ানত দিতেন।অথচ তাঁর রেখে যাওয়া এই দেশের ইসলামী আন্দোলনের অধিকাংশ
নেতা-কর্মীই এক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে অনেকটা পিছিয়ে আছেন।
শ্রদ্ধেয় কৃতী শিক্ষাবিদ ড. কাজী দীন
মুহাম্মদ-এর স্মৃতিচারণ থেকে আমরা জানতে পারি, শত ব্যস্ততার মাঝেও জ্ঞানপিপাসু আব্দুল মালেক দীন মুহাম্মদ স্যারের কাছে মাঝে
মধ্যেই ছুটে যেতেন জ্ঞানের অন্বেষায়।তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ইসলামী আন্দোলন করতে
হলে কুরআন-হাদীস, অর্থনীতি, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিং-বীমা, সমাজনীতি, বিচারব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় জানতে হয় কিংবা জ্ঞান থাকতে হয়।
মরহুম আব্বাস আলী খান এ প্রসঙ্গে এক
স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধে বলেন : “বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর পাকা হাতের লেখা
পড়তাম মাসিক পৃথিবীতে। বয়স তখন তাঁর উনিশ-বিশ বছর। একেবারে নওজোয়ান। কিন্তু তার
লেখার ভাষা ও ভঙ্গী বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর তীক্ষ ও গভীর জ্ঞান তাঁর প্রতি
এক আকর্ষণ সৃষ্টি করে।”
শহীদ মোহাম্মদ কামারুজ্জমান আব্দুল মালেক ভাই
সম্পর্কে লিখেছেন –“রাতে ঘুমানোর আগে দেখতাম মালেক ভাই ইংরেজি একটি ম্যাগাজিনের
পাতা উল্টাচ্ছেন।আবার কিছু কিছু নোট করছেন।তিনি মাসিক পৃথিবীতে চলমান বিশ্ব
পরিস্থিতির উপর লিখতেন। বুঝলাম সেই লেখার জন্য মালেক ভাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।তখন
থেকেই বিদেশী ম্যাগাজিন পড়ার ব্যাপারে আমার মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। মালেক ভাইয়ের
অনেক স্মৃতি আমাদের তাড়িয়ে বেড়ায়”।
শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের হলমেট ড: এ জামান
আব্দুল মালেক ভাইকে নিয়ে তাঁর স্মৃতিচারণ মূলক লেখায় লিখেছেনঃশহীদ আব্দুল মালেকের
বৃত্তির একটা বড় অংশ ব্যয় হত বই কেনার পেছনে।ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকের বাইরে ইসলামী
আন্দোলন সংক্রান্ত বহুবিধ পুস্তক তাঁ ব্যক্তিগত পাঠাগারে সংগৃহীত ছিল।
৫.আন্দোলনের
কর্মীদের সাথে আচরণ:
শহীদ আব্দুল মালেক প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতেন
তাঁর কর্মীদের। সে ভালোবাসা ছিল নিখাদ নিঃস্বার্থ।তাঁর জীবনালেখ্য রচয়িতা ইবনে
মাসুম লিখেছেন :“কর্মীদের তিনি ভালোবাসতেন।তিনি ছিলেন তাদের দুঃখ-বেদনার সাথী।তাঁর
এই আন্তরিকতার জন্য অনেক কর্মীর কাছে তিনি ছিলেন অভিভাবকের মত।কর্মীদের সাথে দেখা
হলেই কুশল আলাপ করতেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তাঁর রুম ছিল কর্মীদের জন্য
তীর্থস্থান।কর্মীদের সাথে আন্তরিকতার সাথে মিশে জেনে নিতেন তার দুঃখ-বেদনা,তার দুর্বলতা,যোগ্যতা
সবকিছু।দুঃখে জানাতেন সহানুভূতি।দুর্বলতাকে ইঙ্গিত করে উপদেশ দিতেন তা শুধরে
নিতে।সাধারণ কর্মীদের অত্যন্ত কাছাকাছি ছিল তাঁর অবস্থান।সকলের সমস্যা শুনতেন
অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে,অনুভব করতেন নিজের মত করে এবং সমাধান দিতেন
একান্ত আপনজন হিসেবে।কর্মীর যোগ্যতাকে সামনে রেখে উপদেশ দিতেন, অনুপ্রেরণা যোগাতেন প্রতিভা বিকাশে।ভাবতে অবাক লাগে, প্রতিটি কর্মী সম্পর্কে তিনি নোট রাখতেন।প্রতিটি কর্মীর
ব্যাপারে নিজের ধারণা লেখা থাকতো তাঁর ডাইরিতে। এমনিভাবে ভাবতেন তিনি কর্মীদের
নিয়ে।ফলে কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় মালেক ভাই, একজন অভিভাবক, একজন নেতা।”
৬.আন্দোলনের
প্রতি কমিটমেণ্ট:
শহীদ আব্দুল মালেক বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের
অধিকারী হলেও আন্দোলনের প্রতি তাঁর কমিটমেন্ট ছিল প্রবল।তাঁর এই কমিটমেন্ট শুধু যে
সদস্য হওয়ার শপথ বাক্যে উচ্চারিত হয়েছে তা নয়,সাবেক লজিং
মাস্টার জনাব মহিউদ্দিন সাহেবের কাছে লেখা চিঠির ভাষাও তাঁর সেই কমিটমেন্টের
প্রতিধবনি-‘‘জানি আমার দুঃসংবাদ পেলে মা কাঁদবেন, কিন্তু উপায় কি বলুন? বিশ্বের সমস্ত শক্তি আল্লাহর দেয়া জীবন
বিধানকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা মুসলমান যুবকেরা বেঁচে
থাকতে তা হতে পারে না। হয় বাতিল উৎখাত করে সত্যের প্রতিষ্ঠা করবো নচেৎ সে
প্রচেষ্টায় আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে। আপনারা আমায় প্রাণভরে দোয়া করুন জীবনের শেষ
রক্ত বিন্দু দিয়েও যেন বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে পারি। কারাগারের অন্ধকার, সরকারি যাতাকলের নিষ্পেষণ যেন আমাকে ভড়কে দিতে না পারে।”
৭.দায়িত্বানুভূতি
ও স্বতঃস্ফূর্ততা:
দায়িত্বানুভূতি ও স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল শহীদ
আব্দুল মালেকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অন্যতম দিক। এব্যাপারে আমীরে জামায়াত
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী শহীদ আব্দুল মালেক ভাইকে নিয়ে স্মৃতিচারণ মূলক লেখা
‘আমার প্রিয় সাথী’ তে লিখেছেন -‘‘সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে একদিন ঢাকায় প্রবল
বৃষ্টি হয়ে গেল। আগামসি লেনস্থ সংঘের পূর্ব পাক দফতর থেকে বেরোবার উপায় ছিল না
আমাদের।বস্তির লোকেরা বিশ্ববিদ্যালয় পুরাতন কলাভবন, হোসেনী দালান ও সিটি ল’কলেজে আশ্রয় নিয়েছে।আমি কোনোমতে ফজলুল হক হলে
গেলাম।ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে আমরা কি করতে পারি সে সম্পর্কে পরামর্শ করাই
ছিল আমার উদ্দেশ্য।এ প্রসঙ্গে কথা উঠার আগেই আব্দুল মালেকের মুখে খবর পেলাম ঢাকা
শহর অফিসে পানি উঠেছে।বৃষ্টি একটু থেমে যেতেই তিনি অফিসে গিয়ে সব দেখে এসেছেন।অধিক
পানি ওঠায় কাগজপত্রাদি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।আব্দুল মালেক ওগুলো সব ঠিকঠাক
করে এসেছেন।তাঁর দায়িত্ব সচেতনতার এ চাক্ষুষ প্রমাণটুকু আমার পক্ষে কোনোদিনই ভুলে
যাওয়া সম্ভব হয়নি। তারপর কর্মী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে একদিন নিউমার্কেট ও আরেক দিন
জিন্নাহ এভিনিউয়ে রোড কালেকশন করা হলো।অল্প সময়ে কর্মীদেরকে জমায়েত করে এত বড় কাজ
আঞ্জাম দেয়ার মতো আর কোন কর্মীই ছিল না।আমারতো কাজ ছিল শুধু কাগজের টুকরায় কিছু
নোট লিখে অথবা আধঘণ্টা পনের মিনিটের আলাপে মোটামুটি কিছু বুঝিয়ে দেয়া।আব্দুল
মালেকের সুদক্ষ পরিচালনায় সংগৃহিত অর্থের নিখুঁত হিসাব পেলাম।সিকি, আধুলি, পাই পয়সা থেকে নিয়ে
কত টাকার নোট কতটি, তার হিসেবের ব্যবস্থাও তিনি করে
রেখেছিলেন।এরপর তিন দিন তিন রাত একটানা পরিশ্রম করে আব্দুল মালেক অল্প সংখ্যক
কর্মী নিয়ে চাল বন্টনের কাজ সমাধান করে ফেললেন। সেদিন আব্দুল মালেককে স্বচক্ষে
অমানুষিক পরিশ্রম করতে দেখেছি।আর আমি মুরুব্বি সেজে পরামর্শ
দিয়েছি কাজটা আর একটু সহজে কিভাবে করা যায়।এই ভাগ্যবান ব্যক্তির পরিশ্রমকে লাঘব করার
জন্য সেদিন তার সাথে মিলে নিজ হাতে কিছু করতে পারলে আজ মনকে কিছু শান্ত্বনা দিতে
পারতাম।’’
৮.দায়িত্বশীলতা
ও দায়িত্বসচেতনতা:
সাধারণত একজন নেতার যে সকল গুণাবলী থাকা
দরকার শহীদ আব্দুল মালেকের মধ্যে তার পুরোটাই ছিল।১৯৬৮-৬৯ এর সেশন শুরু হয়েছে।
আব্দুল মালেক ঢাকা শহর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।কেন্দ্রীয় কার্যকরি পরিষদের
নিখিল পাকিস্তান ভিত্তিতে নির্বাচিত তিনজন সদস্যের মধ্যে তিনি অন্যতম।ইসলাম
প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি ছিলেন আপোষহীন, নির্ভীক।তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইসলামী আন্দোলনের কাজ অনেকটা গতিশীল হলো।তিনি
ছিলেন কর্মীদের একজন আস্থাবান দায়িত্বশীল।এত বড় একজন দায়িত্বশীল হয়েও তিনি
কর্মীদের খোঁজ-খবর নিতে ভুলতেন না।
একটি শিক্ষা শিবির পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত
ছিলেন তিনি।এক সময় জরুরী প্রয়োজনে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।হঠাৎ তাকে দেখা গেল
শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহৃত ল্যাট্রিনের পাশে।তবে ল্যাট্রিন ব্যবহারের জন্য নয়।এক
বুক পানিতে নেমে তিনি ল্যাট্রিন মেরামতের কাজে মগ্ন।এ অবস্থা দেখে তো চোখ
ছানাবড়া।অথচ এ কাজটি তিনি অন্যকে দিয়েও করাতে পারতেন।কতটুকু দায়িত্ব সচেতনতা তাঁর
মধ্যে ছিল এ থেকে তা অনুমান করা যায়।শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের একটা চিরাচরিত
অভ্যাস ছিল চিঠির মাধ্যমে কর্মীদের প্রেরণা যোগানো।তিনি নিয়মিতই বিভিন্ন কর্মীকে
চিঠি লিখতেন।এমনি একজন কর্মী বেলালকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন-‘‘সৃষ্টির আদি থেকে
একটি শ্বাশ্বত নিয়মের মতো এ সত্য চলে এসেছে যে, মহাপুরুষরা সত্যের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজের মন-প্রাণ বিলিয়ে
দিয়েছেন।নির্মম সমাজ সেই মহাপুরুষকেই কঠিন ও নির্দয়ভাবে আঘাতের পর আঘাত
হেনেছে।বিদ্রুপ, লাঞ্ছনা ও গঞ্জনার এই ইতিহাস নতুন কিছু
নয়।আরবের বালুকণা ও প্রস্তর কাদের তাজা খুনে রঞ্জিত হয়েছিল? ওমর, ওসমান, আলী আর হাসান হোসাইন এর জীবন নাশের জন্য কারা দায়ী? ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ, মুহাম্মদ ইবনে কাশিম, কোতায়বা কাদের চক্রান্তে নিহত হয়েছিলেন? ইসলামের ইতিহাস পড়ে দেখ, রক্তের লাল স্রোত শুধু কারবালাতেই শেষ হয়ে যায়নি।আজও পৃথিবীর বুকে সহস্র
কারবালা সৃষ্টি হচ্ছে।আজো মুসলমান ফাঁসির মঞ্চে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে খোদার
দ্বীনকে টিকিয়ে রাখার জন্য। তোমরাতো পৃথিবী দেখনি, দেখনি মুসলমানদের উপর নির্যাতন, শোননি তাদের হাহাকার।যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানব নিজের
জীবন তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন, যার জন্য হাজারো মুজাহিদের তপ্ত রক্ত পৃথিবীর মাটি লাল করে দিয়েছে, সেই ইসলামই লাঞ্ছিত হচ্ছে মুসলমানদের হাতে।”
৯.স্বচ্ছতা
ও জবাবদিহিতা:
ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের জন্য সংগঠন
পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।শহীদ আব্দুল মালেক ভাই
ছিলেন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অগ্রপথিক।তৎকালীন সময়ে ঢাকা মহানগরীর সভাপতি অধ্যাপক
ফজলুর রহমান মালেক ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “আমি যখন ঢাকা মহানগরীর সভাপতি,মালের ভাই তখন ছিলেন শাখা সেক্রেটারী।একদিন রাতের বেলায়
অফিসে গিয়ে দেখলাম মালেক ভাই মোম জ্বালিয়ে খাতা কলম নিয়ে হিসেব করছেন।আমি ঢুকে
সাংগঠনিক কথা শুরু করলে তিনি হটাৎ মোমবাতিটি নিভিয়ে দিলেন।মোমবাতি নিভানোর কারণ
জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,বন্যার্ত মানুষের জন্য সংগৃহীত রিলিফের টাকা
দিয়ে মোমটি কেনা হয়েছে।রিলিফের টাকায় কেনা মোম দিয়ে সাংগঠনিক কাজ করা ঠিক নয়।পরে
তিনি সংগঠনের টাকায় কেনা মোম জ্বালালেন।বন্যাটি ছিল ১৯৬৭ সালের।এ থেকে তার অত্যধিক
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিচয় পাওয়া যায়”।মালেক ভাইয়ের সেদিনের স্মৃতি আজও আমাকে
অনেক বেশী নাড়া দিয়ে থাকে।
১০.আকর্ষনীয়
ব্যক্তিত্ব:
শহীদ মুহাম্মদ কামারুজ্জামান আব্দুল মালেক
ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন,“আমি যখন নবম শ্রেণীর ছাত্র তখন জিঞ্জিরা(কেরানীগঞ্জ)পি এম হাই স্কুলে আয়োজিত
এক শিক্ষা শিবিরে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন মালের ভাই।আমিও যোগদান করেছিলাম সেই
শিবিরে।আমার মনে হয় সেখানে আমি ছিলাম সর্বকনিষ্ঠ কর্মী।রাতে খাবার পর হাত ধৌত করার
সময় মালেক ভাইকে দেখলাম তিনি নিজে থালা বাসন পরিস্কার করছেন।এসএসসি পরীক্ষা শেষে
আমি আরো একটি শিক্ষা শিবিরে অংশ নিয়েছিলাম।শহীদ আব্দুল মালেক ভাই সেই শিক্ষা
শিবিরের পরিচালক ছিলেন।রাতে মালেক ভাইয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের ১১২ নম্বর কক্ষে
আমার থাকার ব্যবস্থা করা হলো।আমার সাথে আমার এক সঙ্গীও সেখানে ছিল।রাতে প্রোগ্রাম
শেষে আমরা শয়ন করলাম মালেক ভাইয়ের সিটে।লক্ষ্য করলাম অনেক রাতে তিনি শুতে
আসলেন।অতঃপর মাথায় পত্রিকার কাগজ দিয়ে ফ্লোরে একটি চাঁদর বিছিয়ে শুয়ে পড়লেন।এক
রাতের ঘটনা।আমার সঙ্গীটি হটাৎ বিছানা থেকে পড়ে গেলেন।আর মালেক ভাই নীচে থেকে তাকে
পাজাকোলে ধরে ফেললেন।ফলে সেই ভাইটি কোন ব্যথা পায়নি।জামালপুরে আশেক মাহমুদ কলেজে
ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র থাকাকালীন একদিন সকালে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য উঠে দেখি
ছাত্রাবাসে আমার কক্ষের সামনের বারান্দায় একটি হালকা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে মালেক
ভাই।আবেগে অভিভূত হয়ে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।খুব অভিমানে জিজ্ঞেস করলাম কতক্ষণ
দাড়িয়েছেন,ডাক দিলেন না কেন?তিনি জবাবে বললেন তিনটার দিকে পৌঁছেছি।ভাবলাম সকালে তো
ফজরের নামাজ পড়তে উঠবেই।তাছাড়া চিন্তা করলাম অনেক পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়েছ,তোমার ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে লাভ কি?দুইজনের বদলে একজন কষ্ট করাই ভালো।তাই এখানে দাঁড়ালাম।আমার
কিছু অসুবিধা হয়নি।
১১.নিষ্ঠা
ও ঐকান্তিকতা:
শহীদ আব্দুল মালেক একজন নীরব ও নির্ভরযোগ্য
কর্মী ছিলেন।অতুলনীয় প্রতিভার অধিকারী হয়েও তিনি কখনো গর্ব করে বেড়াতেন না।তিনি
শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করেই সামনের দিকে এগুতে চাইতেন।শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের
দায়িত্বশীল আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বলেছেন- আব্দুল মালেক ভাই
ঢাকা শহর শাখার অফিস সম্পাদক থাকা অবস্থায় অল্প সময়ের মধ্যেই সেই অফিসের চেহারা
পাল্টে দিলেন। আব্দুল মালেকের সহযোগিতায় ঢাকা শহর শাখার পর পর তিনজন সভাপতি যত
সহজে বিরাট দায়িত্ব পালন করেছেন তেমন আরামে ও সহজে গুরুদায়িত্ব পালনের সুযোগ
কোনদিন কেউ পেয়েছে বলে আমার জানা নাই।
তিনি স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আরো লিখেছেন-
‘‘তুমি পরে এসে আগে চলে গেছো, আল্লাহর দরবারে
অনেক বড় মর্যাদায় ভূষিত হয়েছ, তাই তোমাকে বড়
ঈর্ষা হয়। শাহাদাতের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তোমাকে বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে, একনিষ্ঠ সহকারী হিসেবে নির্দেশ দিয়েছি।কিন্তু আল্লাহর
দরবারে শাহাদাৎ কবুলের মুহূর্ত থেকে আমি তোমাকে নেতা মানছি।তোমার কর্মতৎপরতা, আত্মগঠনে নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের
প্রশ্নে সতর্কতা ও ন্যায়নিষ্ঠার যে উদাহরণ তোমার জীবন থেকে আমি পেয়েছি তা সাধ্যমত
নিজে অনুসরণ করা ও অন্যকে অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করাকে আমার নৈতিক দায়িত্ব মনে করছি।”
১২.মানবদরদী:
ইসলামী আন্দোলনের একজন উদীয়মান কর্মী হিসেবে
তাঁর মন ছিল মানবতার দরদে ভরপুর। দুঃখ দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের অবস্থা জানাও ছিল
তাঁর অন্যতম কর্মসূচি।আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী লিখেছেন-‘‘ঈদুল
আজহা উপলক্ষে কর্মীরা বাড়িতে যাচ্ছে। রাতের ট্রেনে আব্দুল মালেক বাড়ি যাবেন
শুনেছি। দু’একদিনের মধ্যে দেখা হয়নি।সময় মতো স্টেশনে গিয়ে হাজির হলাম।আব্দুল
মালেককে খুঁজে পেতে বেশ সময় লেগেছে।কারণ তিনি মধ্যম শ্রেণীতে উঠেননি।আমাকে দেখে
তিনি বেশ অপ্রস্তুত হলেন।আমার স্টেশনে যাওয়া তাঁর কাছে কেমন যেন লেগেছে।বেশ একটু
জড়সড় হয়ে বলতে লাগলেন, আপনি স্টেশনে আসবেন জানলে আমি যে করেই হোক
দেখা করেই আসতাম।অবশ্য একবার খোঁজ করেছি আপনাকে পাইনি।আমি কথাগুলোর দিকে কান না
দিয়ে কামরাটার দিকে ভালো করে দেখছিলাম।তিল ধরনের জায়গা নেই।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে
হবে সারারাত।আমি চেষ্টা করলাম ইন্টারে জায়গা করে দেয়ার।টিকিটের ঝামেলাও চুকিয়ে
দেয়া যেত।কিন্তু রাজি করানো সম্ভব হলো না।আব্দুল মালেক অকপটে বলেই ফেললেন, এই লোকগুলোর সাথে আলাপ করলে আমার ভালো লাগবে।তখনো বুঝতে
পারিনি কত মর্যাদাবান ব্যক্তির কাছে এই কথাগুলো শুনছি।’’
১৩.দৃঢ়তা ও
আপোষহীনতা:
শহীদ আব্দুল মালেক জানতেন যে ইসলামী আন্দোলনে
নেতৃত্ব দেয়া মানেই কঠিন পরীক্ষাকে মাথা পেতে নেয়া।সেটা জেনে পথ চলার কারণেই কোনো
প্রতিবন্ধকতা তাঁর পথ আগলে রাখতে পারেনি।ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি ছিলেন
আপোষহীন, নির্ভীক।পাহাড়সম দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে ছিলেন
সম্মুখ পানে।তাঁর বলিষ্ঠতা, আত্মবিশ্বাস এবং সংগ্রামী চেতনার পরিচয় মিলে
নিম্নের এই বক্তব্যের মাধ্যমে-
শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা (রাহ.)এক সময়ে শহীদ
আব্দুল মালেক ভাই সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বললেন : আমি যখন ছাত্র ইউনিয়ন
থেকে ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দিলাম তখন এক কর্মী শিক্ষা শিবিরে ঢাকায় আসলাম। আব্দুল
মালেকের কথা শুনেছি কিন্তু তাঁকে তখন পর্যন্ত দেখা হয়নি। তিনি ছিলেন সেই শিক্ষা
শিবিরের ব্যবস্থাপক।কিন্তু প্রায় তাঁকে দেখা যেত না। শেষ দিনে এসে তিনি একটা ছোট্ট
বক্তব্য দিলেন। তাঁর বক্তব্যটা ছিল এরকম-
‘‘আমরা তো জেনে বুঝেই এ পথে এসেছি। এই পথ থেকে
ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। আমরা যদি পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো যে
অনেকদূর পথ পেরিয়ে এসেছি, কিন্তু সামনের দিকে তাকালে মনে হবে আমাদের
আরও অনেক পথ চলতে হবে। এই পথে চলতে গিয়ে যদি আমরা দ্রুতগামী কোনো বাহন পাই তাহলে
সেটাতে সওয়ার হয়েই মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছবো, যদি তেমনটা না পাই তাহলে শ্লোথ কোনো বাহনে করে হলেও আমরা সেই মঞ্জিলে পৌঁছার
চেষ্টা করবো”।সত্যিই আব্দুল মালেককে কোনো কিছুই ভড়কে দিতে পারেনি। তিনি পাহাড়ের
মতো অটল অবিচল থেকে দ্বীনের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে গেছেন।
১৪.দাওয়াতী
চরিত্র:
দ্বীনের দাওয়াতী কাজে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
ছিলেন শহীদ আব্দুল মালেক । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানরসায়ন বিভাগের সেরা
ছাত্র হয়েও দেখুন তিনি কিভাবে দাওয়াতী তৎপরতায় শামিল ছিলেন এবং দাওয়াতী কাজের প্রতি তাঁর পেরেশানী কেমন
ছিলো।
# মাসের এক তারিখেই তিনি লিস্ট করে ফেলতেন কোন
কোন ছাত্রদের কাছে তিনি দাওয়াত পৌঁছাবেন।লিস্ট অনুসারে বেরিয়ে পরতেন কাজে।একদিন
তার এক বন্ধু সন্ধ্যায় গিয়ে দেখলেন মালেক ভাইয়ের মন অনেক খারাপ।চোখে জল টলমল করছে।
জিজ্ঞেস করাতে বললেন, আগামী কাল থেকে ক্যাম্পাস দু’তিন দিনের জন্য
বন্ধ থাকবে।তিনি তার লিস্ট অনুসারে সবার কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে পারেননি বলে তার মন
খারাপ।মন বেশী খারাপ হয়েছে তাদের জন্য যাদেরকে সবে দাওয়াত দিয়েছেন।এখন তাদের সাথে
দু’তিন দিন দেখা সাক্ষাৎ না থাকা মানে তারা আবার নতুন হয়ে যাবে।
# আব্দুল মালেক ভাই সবাইকেই সালাম দিতেন।এক
নাস্তিক তাকে একদিন বলল, আমি সালাম নেইনা তবুও আপনি আমাকে বার বার
সালাম দেন কেন ? তিনি বললেন, সালাম মানে তো শান্তি কামনা করা।আমি কেন আপনার শান্তি কামনা করবনা ? এভাবেই কথা শুরু।অবশেষে একদিন এই নাস্তিকটিও ইসলামী
আন্দোলনের পথে এসেছিলেন আব্দুল মালেক ভাইয়ের দাওয়াতী তৎপরতার কারনে।মালেক ভাইয়ের
মতে,
সালাম দিলে কথা বলার একটা সুযোগ এসে যায় আর
তাতে দাওয়াতী কাজ করা সহজ হয়ে যায়।
# আব্দুল মালেক ভাইয়ের দাওয়াতে একজন কর্মী
হয়েছেন।কিন্ত সেই কর্মী কিছুতেই ফজরের নামাজ পড়তে পারে না। বার বার ক্বাযা করে
ফেলে।মালেক ভাই বিচলিত হয়ে পড়েন তার নামাজ ক্বাযা বন্ধ নিয়ে।মালেক ভাই থাকতেন
ফজলুল হক হলে আর সেই কর্মী থাকতো পুরোনো ঢাকায়।তথাপিও মালেক ভাই প্রতিদিন ফজরের
নামাজ পরতেন সেই কর্মীর মেসের পাশের মসজিদে তাকে সাথে নিয়ে।এভাবে প্রায়
কয়েকমাস।অবশেষে কর্মীটি সাথী শপথ নিতে সমর্থ হয়।
# আব্দুল মালেক ভাই গভীর রাতে জায়নামজে বসে কাঁদতেন
নিজের গুনাহ মাফের জন্য, ইসলামী আন্দোলনের জন্য, বিশ্ব মুসলিমদের জন্য।আর একটি বিষয় নিয়েও কাঁদতেন।সেটি হল
তার দাওয়াতী কাজের সফলতার জন্য।যাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর চিন্তা করতেন তাদের নাম
ধরে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে হেদায়াতের জন্য দোয়া করতেন।
# দাওয়াতী কাজ ছিল শহীদ আব্দুল মালেক ভাইয়ের
প্রাণ।সে কারনেই তিনি বলেছিলেন, আমার প্রিয়
ক্যাম্পাসের ছাত্রদের ইসলামের দিকে ডাকব আমার ডান হাত দিয়ে, ইসলামের শত্রুরা যদি আমার ডান হাত কেটে ফেলে তাহলে বাম হাত
দিয়ে ডাকব, ওরা যদি আমার বাম হাতও কেটে ফেলে দুটো পা
দিয়ে হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে ডাকব।ওরা
যদি আমার দুটো পাও কেটে ফেলে তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি
ছেলেকে ইসলামের দিকে ডাকব। ওরা যদি আমার চলার গতিকে স্তব্ধ করে দেয়, তাহলে আমার যে দুটি চোখ বেঁচে থাকবে সে চোখ দিয়ে হলেও ছাত্রদের
ইসলামের দিকে ডাকব,আমার চোখ দুটিকে যদি উপরে ফেলে তাহলে আমার
হৃদয়ের যে চোখ রয়েছে তা দিয়ে হলেও আমি আমার জীবনের শেষ গন্তব্য জান্নাতের দিকে
তাকিয়ে থাকবো।
১৫.ইকামতে
দ্বীনের কাজকে অগ্রাধিকার:
পৃথিবীর সকল কাজের মধ্যে ইকামাতে দ্বীনের
কাজকেই সবচেয়ে বেশী প্রিয় করে নিয়েছিলেন শহীদ আব্দুল মালেক।দ্বীনকে তিনি অন্যতম নয়
বরং একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন। আর এ উদ্দেশ্য পূরণে বাধা হিসেবে যা
কিছু সামনে এসেছে তা মাড়িয়ে এগিয়ে গেছেন।বগুড়া জিলা স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি
হয়েই বাবার কাছে চিঠি লিখেছিলেন, পাক জনাবেষু, ‘বাড়ির কথা ভাবিনা, আমার শুধু এক উদ্দেশ্য, খোদা যেন আমার উদ্দেশ্য সফল করেন।কঠিন
প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং কঠোর সংগ্রামে অবতীর্ণ,দোয়া করবেন খোদা যেন সহায় হন।আমি ধন-সম্পদ কিছুই চাই না,শুধু মাত্র যেন প্রকৃত মানুষরূপে জগতের বুকে বেঁচে থাকতে
পারি’।
কলেজের গন্ডি পেরিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের
চত্বরে প্রবেশ করলেন তখন তার এ সংকল্প আরও দৃঢ় হল।তাইতো ফজলুল হক হলের ১১২ রুমের
দরজার উপর লিখে রেখেছিলেন শহীদ সাইয়েদ কুতুবের সেই বিপ্লবী বাণী “আমরা ততদিন
পর্যন্ত নিস্তব্ধ হবনা, নীরব হবনা, নিথর হবনা, যতদিন না কোরআনকে এক অমর শাসনতন্ত্র হিসেবে
দেখতে পাব।আমরা এ কাজে হয় সফলতা অর্জন করব নয় মৃত্যবরণ করব।” এ মহান মঞ্জিলে পৌছার
জন্য মায়ের বন্ধনও ছিন্ন করার দৃপ্ত শপথ নিয়েছিলেন তিনি।১৯৬৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী
তাঁর বাবার কাছে লেখা চিঠিতে লিখেছেন, “মায়ের বন্ধন ছাড়া আমার আর কিছুই নেই।বৃহত্তর কল্যাণের পথে সে বন্ধনকে ছিঁড়তে
হবে। কঠিন শপথ নিয়ে আমার পথে আমি চলতে চাই।আশীর্বাদ করবেন,সত্য প্রতিষ্ঠার এ সংগ্রামে যেন আমার জীবনকে আমি শহীদ করে
দিতে পারি।আমার মা এবং ভাইরা আশা করে আছেন,আমি একটা বড়
কিছু হতে যাচ্ছি। কিন্তু মিথ্যা সে সব আশা।আমি চাইনে বড় হতে, আমি ছোট থেকেই স্বার্থকতা পেতে চাই।বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা
ছাত্র হয়ে বিলেত থেকে ফিরে যদি বাতিল পন্থীদের পিছনে ছুটতে হয়, তবে তাতে কি লাভ?
১৬.পরিশ্রম
প্রিয়তা:
শহীদ আব্দুল মালেক ভাই ছিলেন অনেক বেশী
পরিশ্রমী। নূর মুহাম্মদ মল্লিকের ভাষায়, ‘ তাঁকে দেখতাম সারাদিন এবং অধিকাংশ রাতভর কত কাজ করতে।ক্লাস করছেন, সময় পেলে পড়ছেন। এরপর আন্দোলনের কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায়
যাওয়া-আসা করছেন।রাতে হয়তো পোস্টারও লাগাচ্ছেন কর্মীদের সাথে।মনে পড়ে মালেক ভাই
অনেক সময় পোস্টার লাগাবার পর অন্যান্যদের কাজ শেষ করার পূর্ব পর্যন্ত
একটু সময় পেতেন, তখন সিঁড়িতে ঠেস দিয়ে অথবা পীচঢালা নির্জন
পথে একটু বসে বিশ্রাম নিতেন।”
১৯৬৯ সালের ৩১ শে মে প্রিয় বেলালকে আব্দুল
মালেক ভাই লিখেছেন-মনের অবস্থাটা খুব বেশী ভাল নয়।এ কথাটা কাউকে বলতেও
পারছিনা।বিরাট আন্দোলনের নগন্য এক কর্মী আমি ।ঢাকা ইসলামী ছাত্রসংঘের মত বিরাট
সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব আমায় হাঁপিয়ে তুলেছে।সবাই কর্মী আর এই কর্মীদের পরিচালনার
গুরুদায়িত্ব আমার কাঁধেই চেপেছে।তাই মন খারাপ থাকলেও কর্মীদের সামনে জোর করে হাসতে
হয়।শরীর খারাপ থাকলেও জোর করে বাইরে বেরুতে হয়।কারণ আল্লাহর দ্বীনের এ আন্দোলনের
সামান্যতম ক্ষতি হোক ,এটা চিন্তা করাও মুশকিল।যখন এক থাকি,তখনই যত রাজ্যের চিন্তা এসে মাথায় জট পাকায়।জীবনের এক কঠিন
দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে আমার প্রতিটি মুহুর্ত কাটছে।
আগামী ১৫ আগষ্ট পালিত হবে শহীদ আব্দুল
মালেকের ৪৬তম শাহাদাৎবার্ষিকী এবং ইসলামী শিক্ষা দিবস। শহীদ আব্দুল মালেক আজকে
আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া প্রেরণা চির ভাস্বর
হয়ে আছে এবং থাকবে।শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাতের এতো বছর পরেও আরো বেশী প্রয়োজন
হয়ে পড়েছে তার কথা স্মরণ করার।তার শিক্ষাকে,তার
কুরবানীকে,তার আদর্শকে,তার চরিত্রকে বর্তমান ছাত্রদের সামনে উপস্থাপন করার, যাতে এ দেশের ছাত্র মহলে যারা ইসলামী আদর্শের দিকে এগুচ্ছে
তারা এ মহান আদর্শ থেকে যাতে বিচ্যুত না হয় এবং শহীদ মালেক যেন তাদেরকে প্রেরণা
যোগায়।একজন আব্দুল মালেকের জায়গায় আজ লাখ লাখ আব্দুল মালেক ছুটে এসেছে এ আন্দোলনে।
শহীদ আব্দুল মালেক ইসলামী শিক্ষা বা ইসলামী আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠিত হিসেবে দেখে যেতে
পারেননি ঠিকই কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য তাঁর উত্তরসূরিরা
জানবাজ চেষ্টা করছে এবং করবে। পেছন থেকে প্রেরণা যোগাবে লক্ষ কোটি শহীদের মিছিলে
শামিল হওয়া শহীদ আব্দুল মালেক। মরহুম কবি মতিউর রহমান মল্লিকের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে
বললে বলতে হয়-
‘‘শহীদ মালেক আজো আমায় ডাকে
সকল বাধা
পেরিয়ে যেতে
সেই দিশারী
আড়াল থেকে হাঁকে …’’
লেখাটি লেখকের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহিত।
লেখকঃ আতিকুর রহমান, প্রাক্তণ কেন্দ্রীয় সভাপতি; বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
শহীদ আব্দুল মালিক স্মৃতি সংকলনঃ প্রেরণার বাতিঘর পড়ুন এখানে।
📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘
আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।