সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর শুরুর কথা !! আবুল হোসাইন মাহমুদ - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

September 20, 2022

সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর শুরুর কথা !! আবুল হোসাইন মাহমুদ

 


 

সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় কে হামদ, না‘ত ইসলামী গান রচনা করেছিলেন এবং তাতে সুরারোপ করে কে গেয়েছিলেন সে ইতিহাস আজো আমাদের অজানা। কারণ, ইসলাম ও মুসলিমদের এসব বিষয়ে এ অঞ্চলে গবেষণা হয়নি বললেই চলে। তবে সপ্তদশ শতকের মধ্যভাগ হতে ভক্তিমূলক সঙ্গীত সাধনার একটি সুরময় জগত বাংলা ভাষাভাষী জনপদে বিকাশ লাভ করেছে বলে অনেকে মনে করেন। এ সমস্ত সঙ্গীত মূলতঃ ইরানী আধ্যাত্মিক সঙ্গীতকলার প্রভাবে প্রভাবিত। একথা সত্য যে, মধ্যযুগের পুঁথি সাহিত্যে শুরুতে এবং শেষে হামদ না‘ত লিখার প্রচলন ছিল। পূঁথি যখন সুর করে পড়া হতো এই হামদ, না‘তগুলোকে সেই সুরেই গাওয়া হতো। মুর্শিদী, মারফতী, জারী এবং পালা গানেও হামদ, না‘ত ছিল । আলাউল, সৈয়দ মর্তুজা, খান গয়াস, ফাজিল নাসির মাহমুদ, মেছের শা, পঞ্জু শা, শেখ মদন বাউল, জোবেদ আলী, পাগলা কানাই, লালন শাহ্, হাসন রাজা, সীতালং শা, আরকুম শা, শাহনূর, দীনহীন, শেখ ভানু প্রমুখ সাধক কবিবৃন্দ ইসলামী আধ্যাতিক সঙ্গীতের উদ্ভব ও পরিণতির পর্যায়ের সুপ্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গ। তাদের অনেক পরে মীর মোশাররফ হোসেনের বাংলা মৌলুদ শরীফ, মুনশী মেহেরুল্লাহর ভক্তিমূলক হামদ না‘ত আমরা দেখতে পাই।

যাদের গানের কথা বলা হলো তাদের গানে রয়েছে ভক্তির উচ্ছাস । সমাজ বা সমাজের বিশেষ বিষয়ের কোন আবেদন ছিলনা তাদের গানে। মূলতঃই এগুলো ছিল ভক্তিগীতি। ১৭৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের পর হতে প্রথম মহাযুদ্ধের সময় পর্যন্ত যে সমস্ত ভক্তিমূলক হামদ না‘ত রচিত হয়, আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তার আমূল পরিবর্তন ঘটান কবি নজরুল ইসলাম- তার হামদ না‘ত ও ইসলামী গানে। তখন থেকে ইসলামী গান আর হামদ না‘ত থাকলো না। নজরুল ইসলাম তার গানে নিয়ে আসলেন ইসলামী জাগরণী, ঘুম ভাঙানী গান। মুসলমানদেরকে জেগে উঠার আহবান জানিয়ে খালিদ/তারিক/মুসা হবার অনুপ্রেরণা ছিল তার গানে। ইসলামী গান তখন থেকেই সমাজের গান হলো। ভাষা, সুর উপস্থাপনা সব মিলিয়ে চির আধুনিক হয়ে উঠল ইসলামী গান । সেই সময়ের জনপ্রিয় শিল্পী আব্বাস উদ্দীন এসব গানকে বিভিন্ন সভা-সমিতিতে গেয়ে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। সেই পথ ধরেই এগিয়ে এলেন কবি গোলাম মোস্তফা, আজিজুর রহমান, ফররুখ আহমদ। তারাও লিখলেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইসলামী গান। তাদের সময়ে বা তাদের পরে আরো বেশ ক‘জন গীতিকার ইসলামী গান লিখেছেন। তাদের মধ্যে আবদুল লতিফ, ফজলে খোদা, সাঈদ সিদ্দিকী, সাবের আহমদ চৌধুরী অন্যতম। তারাও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইসলামী গান লিখেছেন। এসব গানের দু‘টি ধারা ছিল। প্রথম ধারাটি বাদ্যযন্ত্র সহ গাওয়া হয়ে থাকে। যা সাধারণতঃ রেডিও, টেলিভিশনে যা গীত হয়। সেই বাদ্যযন্ত্রসহ গানটিই যখন কোন সভা-সমিতিতে বা ওয়াজ মাহফিলে খালি গলায় অর্থাৎ বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গাওয়া শুরু হলো তখনই দ্বিতীয় ধারাটি চালু হয়। বাদ্যযন্ত্রবিহীন ধারাটির সৃষ্টি হলো মূলত তাকওয়ার কারণে। ইসলামে বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ- এ ধারণা থেকেই এ ধারার জন্ম। যা এদেশের ইসলাম প্রিয় মানুষ বহু আগে থেকেই করে আসছিল। অবশ্য এটি সীমাবদ্ধ বেশি ছিল গ্রামাঞ্চলে মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের মধ্যে। বিশেষ করে মাদরাসা কেন্দ্রিক ওয়াজ মাহফিলগুলোতে।

তারপর এদেশে দ্বীন প্রতিষ্ঠার দীপ্ত প্রত্যয়ে মানুষের জাগরণ শুরু হয়। ইসলামী জীবন বিধানের সামগ্রিকতা জনমনে পরিব্যাপ্ত হতে থাকে। তখন থেকে সাধারণ শিক্ষিত লোকদের মাঝে শুদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবনাচারের বোধ জাগ্রত হয়। তাদের মধ্যে এ বোধ জাগ্রত হয় যে- আল্লাহ শুধু একজন স্রষ্টা মাত্র নন, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) একজন সর্বমান্য রাসূল শুধু নন, একজন বিপ্লবী নেতা, জীবনের সর্বত্র অনুসরণীয় আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক, এবং সমরবিশারদ। অর্থাৎ শিক্ষিত মানুষের মনে এটা জাগ্রত হলো যে ইসলাম শুধুমাত্র ধর্ম নয় বরং একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। কুরআনে বর্ণিত মুসলমানরা বিশ্ব বিপ্লব সৃষ্টির জন্য প্রেরিত একটি ‘‘উত্তম জাতি’’ । এভাবে ক্রমে ক্রমে বাড়তে থাকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।

যুগে যুগে নবী রাসূলগণ যে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন, সে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য পুরোমাত্রায় কাজ শুরু হলো এই জনপদে। অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হলো। দেশ স্বাধীনের পর সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এলো চরম বাধা। সেই চরম বিরোধিতার মধ্যেও এ আন্দোলন থেমে যায়নি। বলতে গেলে ঐ সময়টাতে সমস্ত অসম্ভবের বিরুদ্ধে কাজ করে যেতে হয়েছিল। একদল নিরলস ও নিষ্ঠাবান কর্মীবাহিনী এ ভূখন্ডে রাত দিন খেটে সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জিইয়ে রেখেছিলেন। অবশ্য তদানিন্তন সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে অনেক কর্মীকে। এজন্য খুব গোপনে (টেকনিক) বিভিন্ন স্থানে তারা প্রোগ্রাম করতো। এ সময়টাতে প্রোগ্রামগুলো হতো ঘরোয়াভাবে। মূলত এই সময়টা ছিল কর্মী তৈরীর সময়। তাই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম বেশী হতো। এসব প্রোগ্রাম নিতান্তই নিরস ছিল। এভাবেই প্রশিক্ষিত হতে থাকলো কর্মীরা এবং বাড়তে থাকলো তাদের পরিসর। একই সময়ে তাদের মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতির ধারনাও জাগ্রত হতে থাকলো। এভাবে চলল কয়েক বছর।

১৯৭৩ সালে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের একটি প্রশিক্ষণ শিবির হয়েছিল। ঐ প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রথম একটি উদ্যোগ নেন একজন কর্মী। তিনি ভাবলেন অনুষ্ঠান কুরআন তেলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়ার পর আর বাকী অনুষ্ঠানটুকু একঘেয়েমী বলে মনে হয়। তিনি বৈচিত্র আনার জন্য অনুষ্ঠানে মাঝে মধ্যে হামদ না‘ত গাওয়ার প্রস্তাব দেন। তিনিই প্রথম ঐ অনুষ্ঠানে একটি হামদ গেয়ে শোনান। হামদটি ছিল কবি গোলাম মোস্তফার ‘হে খোদা দয়াময় রহমান রহীম।’ হামদটি গাওয়ার পর অনেকের কাছেই তা ভাল লাগে। তিনি হলেন ডাঃ মোহসীন। তার দেখাদেখি আরো কয়েকজনকে পাওয়া গেল যারা গান গাইতে পারেন। এরপর থেকে অনুষ্ঠান গুলোতে এভাবে দু‘একজন হামদ না‘ত গাইতেন।

১৯৭৪ সালের শেষের দিকে আবুল কাশেম মিন্টু খুলনায় বেড়াতে যান। সেখানে আনসার উদ্দীন হেলালের বাড়ীতে প্রোগ্রাম হয়েছিল। ঐ প্রোগ্রামে প্রথম ইসলামী সঙ্গীত গাওয়া হয়। গান গেয়েছিলেন মতিউর রহমান মল্লিক। তার রচিত ঐ গানটি ছিল ‘‘মুসলিম আমি সংগ্রামী আমি/আমি চির রণবীর/আল্লাহকে ছাড়া কাউকে মানিনা/ নারায়ে তাকবীর। অবশ্য ষাটের দশক থেকেই বিশেষ করে ৬৭/৬৮ সালের দিকে মতিউর রহমান মল্লিক মাদরাসার ছাত্রাবস্থায় এ ধরনের গান লিখে নিজেই মাদরাসার বিভিন্ন মাহফিলে গাইতেন বলে জানা যায়। তার আল বদর আল বদর গানের মাধ্যমেই গানের জগতে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল। যাহোক ঐ অনুষ্ঠানে তার গানটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কারণ, তখনও এ আন্দোলনের কোন অনুষ্ঠানেই এ ধরনের গান গাওয়া হতো না। যে সমস্ত গান গাওয়া হতো ঐগুলোর মধ্যে হামদ না‘তই ছিল প্রধান। বিশেষ করে কাজী নজরুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা প্রমূখের হামদ না‘ত গাওয়া হতো।

মুসলিম আমি সংগ্রামী’ গানটির কথা এবং সুরে ছিল নতুনত্ব। প্রচলিত হামদ না‘ত থেকে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের। মতিউর রহমান মল্লিকের এ গানটির নতুনত্ব দেখে আবুল কাশেম মিন্টু তাকে কাছে আনেন এবং অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় তাকে নিয়ে একই রিক্সা ভ্যানে করে আসেন। পথে তার কাছ থেকে আরো অনেক গান শুনেছিলেন। যার সবগুলোই ছিল গায়কের স্বরচিত। সেখান থেকেই আবুল কাশেম মিন্টু তাকে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেন। সম্ভবতঃ পরবর্তীতে দায়িত্বশীলদের সাথে এ ব্যাপারে আলাপও হয়েছিল।

১৯৭৫ সালে দায়িত্বশীল আবু তাহেরের ইঙ্গিতে মতিউর রহমান মল্লিক ঢাকাতে আসেন। তখন ঢাকায় সংগঠনের শুরার প্রোগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন তিনি। কিছুদিন তিনি ঢাকায় থাকেন। কিন্তু ঢাকায় তার ভাল লাগলোনা। তার এ ভাল না লাগার কথাটি জানান আবুল কাশেম মিন্টু, বাশারত হোসেন ও আনসার উদ্দীন হেলালকে। তখন তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে অনুমতি দেয়া হয়। ইতিমধ্যেই ঢাকাতে একটি সাংস্কৃতিক পরিকল্পনা হয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকাতেই থেকে যেতে হয়।

পরিকল্পনা হওয়ার পর কামরুজ্জামান মাসুম তাকে কাজ শুরু করতে বলেন। কাজ শুরু করতে বলার অর্থ গোষ্ঠী নামে কাজ করা নয়। শুধু শিল্পী বের করাই ছিল প্রথম কাজ। যাদের কণ্ঠ ভাল তাদের মধ্য থেকে শিল্পী সংগ্রহের অভিযান চললো। মূলত তখন সংগঠনের মধ্য থেকেই এ কাজ চলছিল। এ কাজে সহযোগিতা করলেন আবদুল্লাহ ও হেমায়েত হোসেন।

শিল্পী সংগ্রহ অভিযানে মুটামুটিভাবে সফল হলেন। বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান কণ্ঠের লোক পাওয়া গেল। এদের মধ্যে খন্দকার রাশিদুল হাসান তপন, হাসান আখতার, গিয়াসউদ্দীনকে প্রথম পাওয়া যায়। শিল্পী পাওয়া গেলে কি হবে। গান শেখানো হবে কোথায়? কোন অফিস নেই, কিছু নেই। তারপরও গান তো শিখতে হবে। তাই আগামসিহ লেনের একটি ঝুপড়িতে গানের প্রথম ক্লাশ হয়। উক্ত তিনজনই ঐ ক্লাসে ছিলেন। পরবর্তীতে দায়িত্বশীল আবদুল্লাহর সহযোগিতায় পাওয়া গেল সূত্রাপুরের আলী আহমদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল হালিম খানকে। পরে পাওয়া যায় শফিকুল্লাহকে। তিনি বেশ আগ্রহী ছিলেন। তাদেরকে নিয়ে তিন চারদিন ধরে গানের প্রশিক্ষণ হলো।

সংগঠনের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তাদের গান শেখার কাজ চললো। তাদের প্রথম প্রোগ্রাম করার ডাক পড়লো ঢাকার মোহাম্মদপুর সেন্ট্রাল কলেজে। এখানে সংগঠনের প্রশিক্ষণ শিবির চলছিল । ঐ শিবিরে আবদুল হালিম ‘‘তীর হারা ঐ ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে’’ গানটি গেয়ে শোনান। ওখানে গানগুলো এককভাবে গাওয়া হয়। শিল্পী ছিলেন আবদুল হালিম, ডালিম ও আলী আহমদ । গানগুলো ছিল-

‘‘মুসলিম আমি সংগ্রামী আমি’’

‘‘এখানে কি কেউ নেই’’

‘‘চলো মুজাহিদ চলো’’

‘‘এলো কে কাবার ধারে’’

অনুষ্ঠানে বৈচিত্রের জন্য প্রচলিত কিছু নির্দোষ গান গাওয়া হয়। অনুষ্ঠানটির ধারা লিখেছিলেন মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুব। ঐ অনুষ্ঠানটি বেনামে করা হয়। অর্থাৎ কোন গোষ্ঠীর নাম হয়নি তখনো।

যখন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শুরু হলো তখন সাংস্কৃতিক সম্পাদক করা হয় মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুবকে। তিনি সাহিত্য সাংস্কৃতিতে খুবই আগ্রহী ছিলেন। চমৎকার চমৎকার সব দেয়ালিকা বের করতেন তিনি। বিভিন্ন ব্যাপাারে তখন মতিউর রহমান মল্লিক তার সাথে কথাবার্তা বলতেন। যদিও মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুব সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন এবং এসব বুঝতেনও ভাল। তবু গানের দিকটা মতিউর রহমান মল্লিকই দেখতেন।

ইতিমধ্যেই আরো কয়েকজন শিল্পী পাওয়া গেল। এদের মধ্যে নুরুজ্জামান ফারুকী ছিলেন অন্যতম। এ সময় গান শেখা হয় বেশ কয়েকটি। তখন শিল্পীরা নিজেরা নিজেরাই বিভিন্ন গান শিখতেন। প্রচলিত নির্দোষ গান সাধারণত শেখা হতো। এরই মধ্যে সংগঠনের ভিতরে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কথা ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য নাম ছড়িয়ে পড়ে গোষ্ঠীর নাম অনুযায়ী নয়। বরং শিল্পীদের একটি গ্রুপ হয়ে উঠেছে এ হিসেবে। এরই ফলশ্রুতিতে একটি প্রোগ্রামের ডাক আসে সংগঠনের বাইরে থেকে। তখন ঢাকা জেলা সভাপতি শফিকুল্লাহ। তিনি প্রোগ্রাম নেন। প্রোগ্রামটি হলো ঢাকার মোড়াপাড়া কলেজে। কলেজের অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কলেজের অধ্যাপক মাহমুদ হোসাইন আল মামুনের মাধ্যমে এ অফার এসেছিল। প্রোগ্রাম নেয়া হলো। মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুবের নেতৃত্বে মতিউর রহমান মল্লিক, আবদুল হালিম, নূরুজ্জামান ফারুকী সহ কয়েকজন শিল্পী যান ঐ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে গান শুরু হলে ছাত্ররা ক্ষুব্ধু হয়ে উঠে এবং প্রতিবাদ জানাতে থাকে। ঐ অনুষ্ঠানে দারুনভাবে লজ্জিত হওয়ার কারণ ছিল যেহেতু শিল্পী গোষ্ঠী নাম দিয়ে গান গাওয়া হচ্ছে অথচ গানের সাথে বাদ্যযন্ত্রের কোন একটিও ব্যবহার করা হয়নি- এ জন্য। তাছাড়া ছাত্ররা যেহেতু যুগের সব ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে গান শুনে অভ্যাস্ত সেখানে বাদ্যযন্ত্রহীন গান তো খারাপ লাগারই কথা। এখানে একটি কথা বলে রাখা দরকার। অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার আগে তাৎক্ষনিকভাবে গোষ্ঠীর নাম দেয়া হয় ‘ব্যতিক্রম শিল্পী গোষ্ঠী’। এ অনুষ্ঠানে দারুন লজ্জা পেলেও তাৎক্ষনিক ‘ব্যতিক্রমের’ শিল্পীরা হতাশ হননি। সেখানে থেকে এসেই সবাই ভাল প্রোগ্রাম উপহার দেয়ার জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেন।

আগেই বলা হয়েছে তাদের গান প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য কোন অফিস ছিলনা। যার ফলে ইচ্ছা থাকা সত্বেও মনের মত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। তাছাড়া সংগঠনের অফিসে গানের ক্লাশ হলে অন্যান্য প্রোগ্রামের ক্ষতি হবে। তাই তারা অন্যত্র গানের প্রশিক্ষণ নেয়ার চেষ্টায় থাকেন। একবার তারা একটি স্থানের সন্ধান পেলেন। মাওঃ আবদুল খালেকের এর মাধ্যমে সন্ধান পেয়েছিলেন ঐ স্থানটির। তিনি সেখানে থাকতেন। স্থানটি হলো বংশালের একটি রিক্সা গ্যারেজ মেস। স্থানটি তেমন উন্নত ছিল না।

পরবর্তীতে সেখানে গানের প্রশিক্ষণ চলতো। যখন গানের ক্লাশ চলতো তখন আবার সেখানে রান্নার আয়োজন করতো বাবুর্চী। ফলে সবটুকু স্থান ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যেত। এই ধোঁয়ার মধ্যেই চলতো গানের ক্লাশ। খুব কষ্ট করে গান শেখা হতো তখন। এভাবে তাদের গানের প্রশিক্ষণ ধীরে ধীরে এগোতে থাকে।

তখন গান শেখার পাশাপাশি যে কাজটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো শিল্পী সংগ্রহ করা। এজন্য এ গ্রুপটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিবস পালনে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো। যেমন- ফররুখের জন্ম মৃত্যু দিবস, একুশে, সীরাতুন্নবী ও অন্যান্য দিবস। এসব দিবসে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকতো। হামদ না‘ত, আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠ ইত্যাদি বিষয় রাখা হতো। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিছু শিল্পী অবশ্য পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আবুল কাশেম অন্যতম। তাকে পাওয়া যায় বাংলাদেশ পরিষদ মিলানায়তনের একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে। আবদুল করিম নামে আরো একজন শিল্পীকে পাওয়া গিয়েছিল। যিনি ভাল নজরুল সঙ্গীত গাইতে পারতেন। কিন্তু পরবর্তী সময় তাকে আর পাওয়া যায়নি।

শিল্পীদের একটি গ্রুপ তৈরী হওয়ার পর সংগঠনের সব দায়িত্বশীলই এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিতেন । তখন এ ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের মধ্যে বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

এনামুল হক মঞ্জু যখন মহানগরী সেক্রেটারী ছিলেন তখন তিনি বেশ খোঁজ খবর নিতেন। এটিএম আজহারুল ইসলাম যখন মহানগরীতে আসেন তখন থেকেই শিল্পী গোষ্ঠী নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে এবং তার সময়েই একটি সদস্য বৈঠকে শিল্পী গোষ্ঠী গঠনের প্রস্তাব আসে নাম সহ। ‘সাইমুম’ নামটি তখন প্রস্তাবে আসে। ঐ বৈঠকে এ নামের প্রস্তাবক ছিলেন মিয়া মুহাম্মদ আইয়ুব । প্রস্তাব দেয়ার পর এটা নিয়ে আলোচনা হয় এবং পরে ‘সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী’ নামে তা গৃহীত হয়। সালটি ছিল ১৯৭৮ সাল।

📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘
আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুনটেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন


No comments:

Post a Comment

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।