তিনি ৯/৯/১৯২৬ সালে মিশরের পশ্চিম
প্রদেশের আল মাহাল্লাহ আল কুবরার “সাফত-তুরাব” গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। এটা অনেক
পুরনো গ্রাম, যেখানে মিশরে ইন্তেকাল করা সর্ব শেষ সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবন আলহারিস ইবন জুয’
আলযুবায়দি কবরস্ত হন। এখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা হাসিল করেন, এবং বয়স
দশে পৌঁছানোর আগেই আলকুরআন মুখস্ত করে ফেলেন।
এরপর রাজধানীতে আসেন। সেখানে “মা’হাদ আল-আযহার
এ প্রাথমিক সেকেন্ডারী ও “এ” লেভেল পাশ করেন। “এ” লেভেলে মিশরের মধ্যে তিনি
দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এখান থেকে আলআযহারের কুল্লিয়্যাত উসূলিদ্দীন থেকে ১৯৫৩
ডিগ্রী পাশ করেন প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হয়ে।
১৯৫৪ সালে তিনি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে
টিচিং এ ডিগ্রী নেন এবং পাঁচ শত ছাত্রের মধ্যে তিনি প্রথম হবার সৌভাগ্য অর্জন
করেন।
১৯৫৮ সালে তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্যে হায়ার
ডিপ্লোমা নেন এবং ১৯৬০ সালে কুরআন ও সুন্নাহ অনুষদ থেকে মাস্টার্স সমমান ডিগ্রী
অর্জন করেন।
এরপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তিনি
আলআযহার থেকে ডক্টরেটে ভর্তি হয়েও শেষে বহিস্কৃত হন। পরে পাকিস্তান থেকে ডক্টরেট
নেয়ার চেষ্টা করেন। অবশেষে আলআযহার থেকেই ১৯৭৩ সালে ডক্টরেট নিতে সক্ষম হন।
তিনি প্রথমে মসজিদের খাতীব হিসেবে কর্ম জীবন
শুরু করেন। এরপর মিনিস্ট্রি ওফ আওকাফের অধিনে শিক্ষক প্রশিক্ষণের সুপারভাইজার
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি আলআযহারের প্রকাশনা বিভাগে কাজ শুরু করেন।
১৯৬১ সালে তিনি ক্বাতার সরকারের আমন্ত্রনে
সেখানে “মা’হাদ সানাওয়ী” (“এ” লেভেল কলেজে) চাকরি শুরু করেন। এখানেই তিনি তার
প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পান। একে গোটা দেশের সেরা ইন্সটিটিউট হিসেবে গড়ে তুললেন
তিনি। ১৯৭৩ সালে সরকার তার কাঁধে ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক কলেজ অফ এডুকেশান
প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব তিনি। এটাই পরবর্তিতে ক্বাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। ১৯৭৭
ক্বাতার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি শরিয়াহ ফ্যাকাল্টির ডীন হিসেবে নিয়োগ
পান। এই পদে ছিলেন ১৯৯০ পর্যন্ত।
তাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ গবেষণা
বিভাগ “ বুহূথ আসসুন্নাহ ওয়া আস-সিরাহ” সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে
যোগদান করেন।
১৯৯১ সালে তাকে আলজেরিয়ার সরকার নিজ দেশের
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারভিশনের দ্বায়িত্ব দেন। সেখান
থেকে ফিরে এসে মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত ক্বাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের “বুহূথ আস
সুন্নাহ ওয়া আস-সীরাহ” র দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
তিনি তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ অনেক জাতীয়
ও আন্তর্জাতিক পুরুস্কার লাভ করেছেন। ১৯৯০ সালে তিনি অর্থনীতিতে অবদানের জন্য আই
ডি বি পুরুস্কার লাভ করেন। ১৪১৩ হিজরি অর্থাৎ ১৯৯২ সালে ইসলামি স্টাডিজে অসামান্য
অবদানের জন্য মুসলিম বিশ্বের নোবেল হিসেবে পরিচিত কিং ফয়সল পুরস্কারে সম্মানিত করা
হয় তাকে। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সৃষ্টিশীল কাজের জন্য ইন্টারন্যাশনাল ইসলামি
ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া তাকে পুরুস্কৃত করেন। ১৯৯৭ সনে তিনি ব্রুনায়ে সুলতান হাসান
বালখিয়া পদক লাভ করেন।
তিনি হলেন ঐ সব আলিমগণের মধ্যে গণ্য যারা উম্মাতের জন্য সভ্যতা প্রকল্পের কাজ ই করেছেন। তার লেখা ১৩০টি বই আমার কাছে আছে। আরো ২০টার মত বই কয়েক বছরে বাজারে এসেছে। তার বহুমূখী কাজের বিভিন্ন লেখাগুলো সারা পৃথিবীকে ঋদ্ধ করেছে। তার অবদানগুলোকে আমরা নিচের কয়েকটি দিক ও বিভাগে পৃথক ভাবে আলোকপাত করতে চাচ্ছি, যাতে তার কাজের সামগ্রিকতা যে কেও অনুধাবন করতে পারেনঃ
১- মৌলিক ক্রিয়েটিভ ইজতিহাদি ও
ফিক্বহি অবদানঃ
বর্তমান যামানায় যারা ইসলামি জ্ঞান গবেষণায়
মৌলিক ও ক্রিয়েটিভ কাজ করেছেন তার মধ্যে ডঃ ক্বারাদাওয়ীর অবদান আকাশ ছোঁয়া। তিনি
ইসলামি ফিক্বহ, অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান,
আন্দোলন, থিয়োলজি, রাজনীতি বিজ্ঞান, ইসলামি সংস্কৃতি, ভাষা ও
সাহিত্য এবং ইতিহাস বিজ্ঞান ইত্যাদির উপর পঞ্চাশের উর্ধে বই লিখেছেন, যা সবটাই
মুসলিম সমাজ, অমুসলিম গবেষক এবং পৃথিবির নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার
করে। এখানে তার বৈশিষ্ট্য সমূহ হলোঃ
প্রথমতঃ তিনি তার লেখনির তথ্য উপাত্ত নিতে ইসলামের মৌলিক গ্রন্থাবলীর কাছেই গেছেন এবং
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করতঃ সালাফ সালেহীন কর্মপন্থাকে
অগ্রাধিকার দিয়ে নানা বিষয়ের আলোচনা করেছেন। এইসব করতে যেয়ে তার লেখনিতে আমরা যেমন
প্রাচীনতার স্বাদ পাই,
তেমন নতূনত্বের ব্যাঞ্জন উপলব্ধি করি এবং সব চেয়ে মজার বিষয়
পাই আধুনিকতম মেথোডোলোজির ব্যবহারে যুব ও উচ্চ শিক্ষিত মানুষের মন ও মনন ছোঁয়া অত্যন্ত হৃদয়াগ্রাহী উপস্থাপনা।
দ্বিতীয়তঃ তিনি তার আলোচনা ও পর্যালোচনায় তিনটি বিষয় খুব খেয়াল
করেছেন, তা হলোঃ জ্ঞান গবেষণার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, চিন্তা ও দর্শনের সঠিক প্রয়োগ, এবং সমাজ
সংস্কারে গভীর অনুধ্যান।
তৃতীয়তঃ তিনি অত্যন্ত নিখুঁত ও জ্ঞাত সারেই অন্ধ তাক্বলীদ, মাযহাবি
গন্ডী এবং প্রাচ্য প্রতিচ্যের ভাব দর্শনের ছায়া থেকে নিজকে সরিয়ে রেখেছেন। ফলে তার
লেখাগুলোতে ইসলামি ইজতিহাদের স্বাদ যেমন টুইটুম্বর, তেমন ইতিহাসের দার্শনিক ও
উলামাগণের সুগন্ধ
প্রতিটা ছত্রে ছড়িয়ে আছে।
চতূর্থতঃ তিনি অত্যন্ত সচেতন ভাবেই চিন্তা দর্শনে মধ্যপন্থা, প্রায়গিক
পর্যায়ে সহজতা এবং দাওয়তি ক্ষেত্রে ইনসাফ ও কোমলতা অনুসরণ করেছেন। ফলে তার
সিদ্ধান্ত সমূহ কোন রকম বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ির রোগমূক্ত হয়ে উঠেছে। এই জন্য “আল
উম্মাহ ম্যাগাযিনের সম্পাদক ডঃ হাসানাহ ডঃ ক্বারাদাওয়ী রচিত “আস সাহওয়াহ
আল-ইসলামিয়্যাহ বায়নাল জুমুদ ওয়া আততাতাররুফ” (উপেক্ষা ও উগ্রতার বেড়াজালে ইসলামি
আন্দোলন) বইয়ের ভূমিকায় বলেছেন,
إنه
من المفكرين الإسلاميين القلائل الذين يتميزون بالاعتدال ويجمعون بين محكمات الشرع
ومقتضيات العصر
“ডঃ ক্বারাদাওয়ী হলেন অতি সামান্য এমন ইসলামি চিন্তকদের অন্তর্ভূক্ত যারা
মধ্যপন্থী, যারা শরিয়াতের সরল দিকগুলো এবং যুগের চাহিদাগুলো এক করে উপস্থাপন করেছেন।
পঞ্চমতঃ তার লেখনিতে আড়ষ্টের কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। অত্যন্ত সহজ করে, মনোমুগ্ধকর
করে এবং সাহিত্যের ছোঁয়া ঋদ্ধ করে মানুষের নাগালে ইসলামের অত্যন্ত জটিল বিষয়গুলো
তুলে ধরেছেন।
ষষ্টতঃ তিনি তার
লেখাগুলো আধুনিক বিশ্বের ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরদ্ধে বারূদের মত ব্যবহার করেছেন।
ভেতর বাহিরের ইসলামের দুষমনদের তিনি চিনেছেন, ফলে একাধারে তার লেখা যেমন
ইসলামের চিরচেনা শত্রুদের দর্শনসমূহের জড় কেটেছেন, অন্য হাতে কলম ধরেছেন মুসলিম
সমাজের মাঝে ঘাপটি মেরে বসে থাকা বিদ্বেষিদের বিরুদ্ধে।
সপ্তমতঃ তার লেখনি, বক্তৃতা, ডিবেইট, আলোচনা সবটাতে একজন দাঈ ইলাল্লাহের ভাষা, একজন মুরব্বির আদর, এবং একজন
একনিষ্ঠ ইসলাম প্রেমীর ভালোবাসার বন্যা বয়ে যায়। তার সম্পর্কে যারাই লিখেছেন, বলেছেনঃ
أن مؤلفاته
وكتاباته تجمع بين دقة الفقيه، وإشراقة الأديب، وحرارة الداعية، ونظرة المجدد.
অর্থাৎ তার গ্রন্থসমূহ ও লেখনিতে একজন বোদ্ধা
ফক্বীহের চুলচেরা বিশ্লেষণ,
একজন সাহিত্যকের চমক, একজন দাঈ ইলাল্লাহের উষ্ণ আবাহন, কিংবা
একজন মুজাদ্দিদের গভীর দৃষ্টি দেখতে পাবেন।
তিনি নাটক লিখেছেন, (عالم وطاغية)। কবিতা
লিখেছেন (نفحات ولفحات), স্কুল
কলেজের উপযোগি বই লিখেছেন,
গবেষণা ঋদ্ধ আর্টিকেলে বিশ্ব লাইব্রেরিকে সমৃদ্ধ করেছেন, তার
যুগের সেরা সব ম্যাগাযিন ও সাময়িকে লেখার ঢেও তুলেছেন।
যারা তার “ইসলামে হালাল হারাম” পড়েছেন, “ফিক্বহ আয-যাকাত” দেখেছেন, তারা অকপটে স্বীকার করবেন যেন ইসলামি ফিক্বহের যে ডাইমেনশান এখানে তিনি রচনা করেছেন তাতে মৌলিকত্ব, আধুনিকতা, ইজতিহাদ এবং যুক্তির প্রাখর্য যুগপৎ ভাবে ফুটে উঠেছে।
২- ফিক্বহ ও ফাতওয়াঃ
ডঃ ক্বারাদাওয়ী আধুনিক ফিক্বহ ও ফাতওয়ার মিছিলকে একটা নতুন মহাসড়কে প্রতিস্থাপন করেছেন। তিনি ফিক্বহের একটা নতুন দিক উন্মোচন করেছেন, যার নাম দিয়েছেন "الفقه الميسر" অথবা "تيسير الفقه" তথা ইসলামি ফিক্বহকে সহজিকরণ করা, এবং ইসলামি ফাতওয়াগুলোতে কোমলতার ছায়া দেয়া। তিনি তার “ফাতাওয়া মু’আসিরাহ” গ্রন্থের ভূমিকায় ও "الفتوى بين الانضباط والتسيب" (শৃংখলতা ও বিশৃংখলতার মাঝে ফাতওয়া) গ্রন্থে কিংবা “নাহওয়া ফিক্বহ মুয়াসসার” তথা ফিক্বহের সহজিকরণ সিরীজ সমূহে তার এই নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে তার লেখা ১৫টি বই আসলেই বিস্ময়কর।
৩- দাওয়াহ ও তারবিয়াহঃ
তিনি বর্তমান সময়ের সেরা দাঈদের একজন।
পৃথিবিময় চষে বেড়িয়েছেন,
সেরা মসজিদ সমূহে খুতবাহ দিয়েছেন, বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে অংশ নিয়েছেন, নানান পত্র পত্রিকার সম্পাদনা
করেছেন, অনলাইনে ইসলাম প্রচার শুরু করেছেন, মেডিয়ার সবগুলো আবিস্কারকে কাজে
লাগিয়েছেন, এবং পৃথিবির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা মুসলিম সমাজকে জাগিয়ে তুলতে নিরন্তর কাজ
করেছেন। তার ভাষার কারুকার্য, সাহিত্যের প্রবাহ, কন্ঠের ঋজুতা ও ভাব গম্ভিরতা, অর্গলভেদী
সুরের ঝংকারে তিনি গত প্রায় এক শতাব্দি দাওয়াতি মিম্বরসমূহে দখল করে ছিলেন। টিভিতে
দেয়া তার আলোচনা,
টক শো, বক্তৃতা কিংবা ডিবেইট অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো। তার দাওয়াতি
কাজের বৈশিষ্ট্যগুলোঃ
(ক) তিনি কোন দূর্বোধ্য বিষয় খুব সহজে তুলে ধরতে পারতেন।
(খ) তিনি যেমন মানুষের চিন্তা ও মননে প্রবেশ করতেন, তেমন
আবেগ অনুভূতিও জাগাতে পারতেন। ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা শুনলেও তা বিরক্তিকর
হতোনা।
(গ) তার মাথায় ভরা ছিলো ইসলামের পুরনো গ্রন্থাবলীর টেক্সট সমূহ, কুরআনের
আয়াত, এবং হাদীসের শব্দ-বাক্য। তার সাথে ছিলো বর্তমান যুগের প্রসিদ্ধতম লেখক, গবেষক ও
দার্শনিকদের জ্ঞান। ফলে তিনি নতুন-প্রাচীনের শুধু সেতু বন্ধন হিসেব কাজ করেননি, এনেছেন
নতুনত্ব, দিয়েছেন দিক নির্দেশনা এবং করেছেন সংস্কার, অথবা দিয়েছেন অল্টারনেটিভ কিংবা
তাজদীদের ছোঁয়া।
(ঘ) বর্তমান শতকের উপযুক্ত করে তিনি যেমন থিউরি দিয়েছেন, তেমন কাজ
করেছেন, আন্দোলনে নেমেছেন,
জেল জুলুমে দেশান্তর হয়েছেন, হকের পক্ষে থাকায় লাঞ্চনা- গঞ্জনা, মনো-দৈহিক
আঘাত ও খেয়েছেন জীবন ভর। তিনি যেমন দার্শনিকের সগম্ভীর আলোচনা দিতেন, তেমন
জিহাদের হুংকারে কাঁপাতেন,
ওয়াজের কোমলতায় হৃদয় গলাতেন, আবার শত্রুর সামনে যুক্তিও শক্তির
প্রকান্ড পাহাড় হয়ে দাঁড়াতেন।
(ঙ) তার দাওয়াতি কন্টেন্টে যেমন
ব্যক্তির আলোচনা থাকতো,
তেমনি পরিবারের দিগদর্শন স্থান পেতো, সমাজের
রন্ধ্র সমূহে পদচারণা দেখা যেতো, রাস্ট্রের বিভাগ সমূহকে আলোর পথ দেখাতো, এমনকি
আভ্যন্তরিন ভূগোলের সীমানা পেরিয়ে তা হতো আন্তর্জাতিক। তিনি ব্যক্তি মুসলিম নিয়ে
যেমন ভেবেছেন, উম্মাহ কেন্দ্রিক চিন্তায় তার নির্ঘুম রাতও কেটেছে। সেই জন্য তিনি উম্মাতের
শুধু মুরুব্বি হয়ে উঠেননি,
উম্মাতের কান্ডারি হিসেবেও ইতিহাসের মঞ্চে
আসন পেয়ে গেছেন।
(চ) তার দাওয়াতের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো “দাওয়াহ, ফিক্বহ ও
দর্শনের সমন্বয় সাধন” করা।
এই পর্যায়ে তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ৬টি।
৪- সেমিনার, সিম্পজিয়াম,
ও গবেষণাধর্মী আন্তর্জাতিক সমাবেশঃ
বিশ্বে যেখানেই কোন গবেষণাধর্মী অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহনকারী সমাবেশ হতো সেখানে দাওয়াত পেতেন ডঃ ক্বারাদাওয়ী। শত শত আন্তর্জাতিক সেমিনারগুলোতে তিনি শুধু উপস্থিত থেকেছেন তাই না, বরং তার আলোচনা, পর্যালোচনা, দিক নির্দেশনা এবং উপসংহারই হতো সেমিনারগুলোর সেরা সৌন্দর্য। এইজন্য তিনি প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশে ভ্রমন করেছেন। বিশ্বের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ফি বছর যেতেন। আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া কিংবা কানাডা ছিলো তার দ্বিতীয় বাড়ির মত।
৫- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে তার
সংযোগ ও সংশ্লিষ্টতাঃ
বর্তমান শতকের মুসলিমদের একটা বড় অর্জন হলো বিগত শতাব্দি সমূহের নিগড় থেকে বের হবার পথ আবিস্কার করা। এ ক্ষেত্রে জ্ঞানের দৈন্যদশা থেকে বের হতে যেমন তারা নানা দেশে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছে, ইসলামি জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্র বানিয়েছে, ইসলামি গবেষণার নতুন দ্বারও উন্মুক্ত করেছে। ইসলামি লাইব্রেরি হয়েছে দুনিয়ায় সেরা সেরা শহরে। কালচালার প্রতিষ্ঠান হয়েছে প্রতিটি দেশে। ইসলামি অর্থনীতি পেয়েছে নতুন ধারা, এবং ইসলামি প্রকাশনা জগত হয়েছে উদীয়মান জ্ঞান-সূর্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলো ডঃ ক্বারাদাওয়ীর যায়গা। তিনি নিজেই ছিলেন অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে, আর ছিলেন একজন সহকর্মী হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে। তিনি ইসলাম অনলাইনের প্রতিষ্ঠাতা, আল-ইত্তেহাদ আল-আলামি লিউলামা আল-মুসলিমীন নামক আন্তর্জাতিক স্কলারগণের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
৬- ইসলামি অর্থনীতিঃ
ইসলামি অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে তিনি প্রয়োগিক ক্ষেত্রে যেমন দৃশ্যমান থেকেছেন, তেমনি দুই হাতে লিখেছেন ইসলামি অর্থনীতির নানা শাখায়। সুদের উপর লেখা তার ২টা বই, যাকাত ব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য বিমোচনের রূপরেখা, মুরাবাহা ব্যাঙ্ক বিজেনেস এবং ইন্স্যুরেন্স ব্যাবস্থাপনার উপর তার লেখা গ্রন্থগুলো আসলেই মাইল ফলক। তিনি প্রায় অধিকাংশ ইসলামি ব্যাংক সমূহের শরীয়াহ কন্সাল্টেন্ট ছিলেন, সদস্য ছিলেন প্রায় ২৫টা ব্যাংক ও অর্থকরী প্রতিষ্ঠানের।
৭- ইসলামি আন্দোলনের রূপরেখা
বিনির্মানঃ
বিশ শতকের প্রথম দিকে মুসলিম দেশ সমূহে
স্বাধিকার অর্জনে একটা বড় ধরণের জাগৃতির সূচনা হয়। এটা আমরা সাধারণ অর্থে ইসলামি
আন্দোলন বা মুসলিম রেনেসাঁ নামে অভিহিত করি।
ভারতের তাবলীগ জামাআত ও মিশরের ইখওয়ানুল
মুসলিমুন ১৯২৩ এর খিলাফাতে উসমানিয়াহ ধ্বংশের আগেই প্রিতিষ্ঠিত হয়। ভারতের আরেকটা
আন্দোলন “জামাআতে” ইসলামি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪১ সালে। ১৯৪৮ এ
মালায়েশিয়াতে গঠিত হয় PAS এবং তিউনিসিয়ায় নাহদাহ ১৯৭১ সালে।
এই সব ইসলামি আন্দোলনের ইতিবাচক ফল ছিলো তাদের
প্রভাবে মুসলিমদের মনে স্বাধিকারের কাংক্ষা তৈরি হয়। মুসলিম দেশগুলো থেকে
সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটে। তবে এই আন্দোলনগুলো সদ্য স্বাধিনতা প্রাপ্ত মুসলিম
দেশগুলোর মুসলিম সরকার সমূহের প্রত্যক্ষ শত্রুতার সম্মুখীন হয়। এতে করে এই
আন্দোলনগুলো নানা ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
ডঃ ইউসুফ ক্বারাদাওয়ী ছিলেন এই আন্দোলন্নগুলোর
“মুখাদরাম” অর্থাৎ দুই যুগের প্রত্যক্ষদর্শি। তিনি ইখওয়ানের হাসানুল বান্নাহকে
দেখেছেন। ইখওয়ানের সাথে যুক্ত হয়েছেন। এই কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত
হয়েছেন, সাইয়েদ কুতুবদের সাথে জেল খেটেছেন। দেশান্তর হয়েছেন। এবং আমৃত্যু তিনি ইসলামি
আন্দোলনের সাথে থেকেছেন।
এ ক্ষেত্রে তার অবদানগুলো হলঃ
প্রথমতঃ তিনি হাসানুল বান্না (র) এর বিশ মূলনীতির এক জন সফল ব্যাখ্যাতা। তিনি ৬ খন্ডে
এই উসূলগুলোর ব্যাখ্যা করেছেন। প্রতিটি খন্ড খুব গভীর আলোচনা ঋদ্ধ একেকটি গবেষণা
গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। আমি ডঃ যায়দান ও শায়খ মুহাম্মাদ গাযালির ব্যাখ্যার সাথে ডঃ
কারাদাওয়ীর ব্যাখ্যার তুলনা মূলক স্টাডী করেছি। পড়ার পরে মনে হয়েছে ডঃ কারাদাওয়ী
চেষ্টা করেছেন ইখওয়ানের মূলনীতিকে ইসলামের মূল উদ্দেশ্যের সাথে মিল খাওয়া আধুনিক
দুনিয়ার মুসলিম জাগরণের নিখুঁত রোডম্যাপ রূপে প্রমান করতে।
দ্বিতীয়তঃ তিনি ইসলামি আন্দোলনের ব্যাপারে অনেক অনেক ভুল ধারণা অপনোদন করেছেন। এই
ক্ষেত্রে তিনি তিনটি বই লিখে প্রমান করেছেন বর্তমান যুগে ইসলামি আন্দোলন ছিলো
মুসলিম মিল্লাতের একটা অবিচ্ছেদ্য দিক।
তৃতীয়তঃ তিনি এই সব আন্দোলনগুলোতে আসা দোষ ত্রুটির সমালোচনা করেছেন। এবং সেগুলোকে আবার
সঠিক রাস্তায় পরিচালিত হতে পথ দেখায়েছেন। এক্ষেত্রে তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ৩৭টি।
২০টা লিখেছেন এই সব আন্দোলনগুলোকে পথ দেখাতে। যেখানে একাধারে তিনি যেমন আদর্শিক
পদস্খলনের দিক সমূহ ব্যপক আলোচনা করেছেন, অন্য দিকে আলোচনা করেছেন ঐ সব
ভুলগুলোর মূল কারণ উদঘাটনে এবং তা থেকে ফিরে আসার পথসমূহ নির্ণয়ে।
বিশেষ করে ইখওয়ানের মধ্যে আসা খাওয়ারিজদের
চিন্তা ও কর্ম পদ্ধতিকে তিনিই সর্বপ্রথম চ্যালেঞ্জ করেছেন। বিশেষ করে এখানে আসা
তাকফীর ও টেররিস্টদের তিনি শুধু বের করে দিতে বলেন নি, তাদের
থেকে নিজকেও নিঃসম্পর্কের ঘোষণা দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু কিছু বই এই সব
আন্দোলনের জন্য ছিলো নতুন সংযোজন। যেমনঃ
أولويات
الحركة الإسلامية،
ملامح
المجتمع الإسلامي الذي ننشده،
أمتنا
بين قرنين،
تاريخنا
المفترى عليه،
نحن
والغرب
আমার মতে এই বইগুলো ইসলামি আন্দোলনের
সিদ্ধান্তগ্রহনকারীদের পড়া একান্ত কর্তব্য।
তিনি আরো ১৭টি বই লিখেছেন ইসলামি আন্দোলনের
সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য। তিনি চাননি শুধু আমাদের ভুল ধরতে।
তিনি চেয়েছেন আমাদের ভুলগুলোর কুরআন ও সুন্নাহের দৃষ্টিতে কত টুকু ক্ষতিকর তা
প্রমান করতে। তিনি চেয়েছেন আমাদের যুব সমাজকে একটা শুদ্ধতম পরিবেশে তারবিয়াহ দিতে।
তিনি চেয়েছেন ইসলামি আন্দোলনের কন্টিনিউয়েশান।
তিনি ইসলামি সভ্যতায় আমাদের অংশগ্রহনের জন্য নারী সমাজকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে পথ দেখিয়েছেন। সাহিত্য সংস্কৃতিতে ইসলামের সামগ্রিকতার পথ উন্মুক্ত করেছেন। ইসলামি পরিবার গঠনের আসল পদ্ধতির দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
৮- কুরআন ও সুন্নাহ অনুধাবনের
আধুনিক পদ্ধতিঃ
কুরআন ও সুন্নাহকে আধুনিক মানসের উপযোগি করে
তুলে ধরতে তিনি ৯টি বই লিখেছেন। সবগুলোই কুরআন সুন্নাহ স্টাডীর একেকটা মাইল ফলক।
كيف
نتعامل مع القرآن العظيم؟
كيف
نتعامل مع السنة النبوية؟
السنة
مصدرا للحضارة الإسلامية
এই সব বইগুলো পড়লে আমাদের চোখ খুলে যায়।
৯- গঠন মূলক সমালোচনাঃ
তিনি নিজকে কখনো সমালোচনার উর্ধে মনে করতেন না, অপরের
ক্ষেত্রেও তিনি তেমনটি মনে করতেন। তিনি গত শতকের সেরা আলিমদের কাছে গেছেন, মিশেছেন, ভালোবেসেছেন।
তিনি হাসান আল বান্নার চিন্তার প্রসার ঘটিয়েছেন। সাইয়েদ কুতুবকে ভালোবেসেছেন।
মাওলানা মাওদূদিকে ইমাম মনে করেছেন, তার জানাযা নামাজ পড়তে সুদূর মিশর
থেকা পাকিস্তানে ছুটে গেছেন। মুহাম্মাদ গাযালির প্রাণের স্পর্শে গেছেন। আবুল হাসান
নাদাওয়ীকে নিজের ভালোবাসার উপহার দিয়েছেন। ডঃ হাসান তুরাবিকে ভাই বলে সম্বোধন
করেছেন। শায়খ ইবন বাযকে নিজের শায়খ মনে করেছেন। তাদের অনেকের উপর বইও লিখেছেন।
কিন্তু যখন তাদের চিন্তা ও দর্শনের আলোচনা করেছেন, সেগুলোর নেতিবাচক দিকগুলোও তুলে
ধরেছেন।
সাইয়েদ কুতুবের জাহিলিয়্যাত তত্বের সাথে তিনি
একমত হননি।
সাইয়েদ মাওদূদীর হাকিমিয়্যাহ তত্বের তিনি
মোডিফাই করেছেন, ব্যাখ্যা দিয়েছেন। খেলাফতে রাশেদার পর ইসলামের অবস্থার উপর তার নেতিবাচক
আলোচনার জবাবও তিনি দিয়েছেন।
শায়খ নাদাওয়ির লেখা “ইসলামের রাজনৈতিক
ব্যাখ্যা” গ্রন্থের সমালোচনা করেছেন। তার দর্শন, “ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা
ইসলামের প্রধান বিষয় নয়,
বরং সেকেন্ডারি বিষয় (أمر
ثنوي)” এর
কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি সাইয়েদ তানতাওয়ীর ”ব্যাঙ্কের ইন্টারেস্ট
সুদ হবেনা” ব্যখ্যার সাথে একমত হননি, এবং তার কঠোর সমালোচনা করেছেন।
তিনি ফিক্বহের ক্ষেত্রে “জাহেরি” মানহাজের
সমালোচনা করেছেন।
আমি তাজ্জব হয়ে গেছি তার এই ভালোবাসার সাথে
সমালোচনার ধরণ দেখে। তিনি যাদের সমালোচনা করেছিলেন তারা ছিলেন তার জীবনের সবচেয়ে
কাছের আলিম। তাদের প্রতি তার বিন্দু মাত্র শ্রদ্ধাবোধের যেমন ঘাটতি ছিলো না, তেমন
ভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোন পার্সোনাল আঘাত তিনি কখনো করেননি। তার আলোচনা ও সমালোচনার
ভাষা এতো মার্জিত ও অব্জেক্টিভ হতো, যে তাতে মানুষের মনে কখনো খারাপ
লাগেনা।
ডঃ ক্বারাদাওয়ীর উপর লেখা বইয়ের
তালিকাও কম লম্বা নয়। তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ গুলো নিম্নে দেয়া হলঃ
১- ডঃ মুহাম্মাদ আম্মারাহঃ القرضاوي
والمشروع الفكري ক্বারাদাওয়ী ও তার দার্শনিক প্রকল্প
২- ডঃ হামদি ঈদঃ يوسف القرضاوي
شاعرا
কবি
হিসেবে ইউসুফ ক্বারাদাওয়ী
৩- উস্তায আমর আব্দুল করীমঃ المرأة
في فكر القرضاوي ক্বরাদাওয়ীর দৃষ্টিতে নারী
৪- ডঃ আকরাম নাদাওয়ীঃ كفاية
الراوي في سيرة العلامة القرضاوي
১০- আন্তর্জাতিক রাজনীতিঃ
এটা ঠিক যে ডঃ ক্বারাদাওয়ী সারা বিশ্বের
মুসলিমদেরকে এক উম্মাহর দৃষ্টিতে দেখেছেন। কাজেই তিনি যেখানেই গেছেন সেখানে
মুসলমানদের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন। বিশেষ করে তিনি ছিলেন ইসলামি আন্দোলনেরই
মুখপাত্র।
তিনি ফিলাস্তীনের স্বাধীনতা আন্দোলনকে কখনই
শুধুমাত্র ফিলাস্তীনীদের বিষয় বলে ভাবেন নি। তিনি এটা সকল মুসলিমেরই “রাজনৈতিক
বিষয়” হিসেবে তুলে ধরেছেন। সেখানে তার কিছু আবেগময় বক্তব্য আছে যা অন্যন্য মুসলিম
চিন্তকদের থেকে বেশ আলাদা মনে হয়। অন্যন্য মুসলিম ইস্যুতে তিনি পাশ্চত্য বিরোধি ও
মুসলিম স্বার্থের পক্ষে কথা বলেছেন। যা তাকে পাশ্চাত্যে সন্ত্রাসী বা কালো তালিকায়
দেখানো হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরপেক্ষ ভাবে মতামত যাচাইকারীরা তাকে
মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিন্তকের তালিকায় রেখেছেন।
১১- ডঃ ক্বারাদাওয়ীর বিরুদ্ধে সমালোচনাঃ
ডঃ কারাদাওয়ীর বিরুদ্ধে এই পর্যন্ত যা লেখা
হয়েছে তা কম নয়। আর তার মত সব্যসাচী লেখক ও বক্তার নানা ভুল হওয়া স্বাভাবিক।
কিন্তু তার ভুলগুলো ইসলামের কষ্টি পাথরে কোন পর্যায়ের তা দেখা দরকার।
তিনি আক্বীদার উপর বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন।
সেগুলো পড়ে তার উপর আলোচনা আসা দরকার। তিনি নিজকে সালাফগণের আক্বীদাহর ধারক বলে
ঘোষণা করেছেন। নিজকে তাওহীদবাদি হিসেবে তুলে ধরেছেন। আমার পড়া বইগুলোতে দেখিনি
তিনি ইসলামি আক্বীদার বাইরে গেছেন। যদিও আল্লাহ তাআলার সিফাত ফেইললিয়্যার ব্যাপারে
তার নেয়া পথ বড় বড় ইমামগণের পথ হিসেবে দেখেছেন তিনি।
ফিক্বহি মাসআলায় তার বিরোধিতা করেছেন অনেকেই।
এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার ফিক্বহি মাসআলায় মতভেদ হলে কাওকে কাফির বলা যায়না, ইসলাম
থেকে খারিজ করাও যায়না। তার বিরুদ্ধে যত বড় বড় কথা শুনেছি সবই রাজনৈতিক। আরব
বসন্তের পর তার পদক্ষেপ ও প্রাধান্য নিয়ে সব চেয়ে খেপেছেন বেশ কিছু আরব উলামা। যে
যে কারণে তাকে ইসলাম থেকে খারিজ মনে করা হচ্ছে তার মূলে হলো তিনি আরব বসন্তের সময়
করাপ্টেড মুসলিম দেশ-প্রধানদের অনেকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে মদদ দিয়েছিলেন। এটা একদম
রাজনৈতিক কারণ। ইয়েমেনের এক শায়খ তার বিরুদ্ধে অনেক বড় এক বই লিখেছিলেন যার নাম
দিয়েছিলেনঃ إسكات الكلب العاوي يوسف بن عبد الله القرضاوي মানে “ঘেউ ঘেউ করা কুকুর ইউসুফ আব্দুল্লাহ আলক্বারাদাওয়ীর মুখ
বন্ধ করা”। এই ধরণের শীরোনাম দেখলেই বুঝা যায় যারা তার বিরুদ্ধে লিখেছেন তারা
কতটুকু ইহসান করেছেন।
তার বিরুদ্ধে লেগেছে শিয়ারা। তিনি এক সময়
‘তাক্বরিবুল মাযাহিব আল ইসলামিয়্যাহ” এর সাথে কাজ করছিলেন। ইমাম আবু যুহরাহ সহ
তাদের এই কাজ খুব জোরে চলছিলো। তাদের নিয়্যাত ছিলো মুসলিমদের মাঝে বৃহৎ ঐক্য গড়ার
লক্ষ্যে কাজ করা। কিন্তু পরে যখন দেখা গেলো শিয়ারা আহলুস সুন্নাহ অধ্যুষিত এলাকায়
মারাত্মক ভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তখন তিনি শিয়াদের ব্যাপারে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন।
তার বিরুদ্ধে লেগেছে অতি জিহাদি সন্ত্রাসীরাও।
তিনি আইসিস এর উত্থানকে ভালো নযরে দেখেননি। এবং এদের বেশ কিছু কাজকে সমালোচনা
করেন। ফলে তারাও ক্ষেপেছে তার উপর।
যাহোক, আমি তাকে নিষ্পাপ মনে করিনা, তিনি
ভুলের উর্ধে ছিলেন তাও বিশ্বাস করিনা। তিনি মানুষ ছিলেন। গবেষক ছিলেন। আলিমে দ্বীন
ছিলেন। মুজতাহিদ পর্যায়ের ফক্বীহ ছিলেন। দ্বীনের তাজদীদের কাজ করেছেন। অন্যন্য
আলিমগণের মত তার ও ভুল হতে পারে। আল্লাহ তা ক্ষমা করুন। এবং জান্নাতুল ফেরদাওসের
মেহমান হিসেবে কবুল করুন। নাবিয়্যীন, সিদ্দিক্বীন, শুহাদা ও
সালিহীনদের সাথে তার স্থান করে দিন। আমীন।
(সূত্রঃ আস সীরাহ আয যাতিয়্যাহঃ ডঃ ইউসুফ আল ক্বারদাওয়ী)
📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘
আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।