এ কে এম আব্দুস সালামঃ এনালগ যুগের এক ব্যতিক্রমী নির্মাতা - আমার প্রিয় বাংলা বই

সাম্প্রতিকঃ

Post Top Ad

Responsive Ads Here

September 06, 2022

এ কে এম আব্দুস সালামঃ এনালগ যুগের এক ব্যতিক্রমী নির্মাতা


এমন মানুষ দেখবো না আর এই ভবেতে ফেরঃ মাওলানা আব্দুস সালাম আযাদী

নাম ছিলো আবুল খিজির মুহাম্মাদ আব্দুস সালাম, আমরা এ কে এম আব্দুস সালাম নামেই চিনতাম। গ্রেইট বৃটেইনে যারা ইসলাম প্রচারের কাজকে বেগবান করতে শক্ত হাতে কাজ করেছেন, তিনি ছিলেন তাদের অগ্রদূত। তার মূল বাড়ি সিলেটের উসমানী নগরের মুকতারপুরে। লন্ডনে আসেন ষাটের দশকে। তিনি সেই যুবক বয়সেই তৈরি করে ছিলেন বিশ্বের বড় বড় স্কলারগণের সাথে সখ্যতা। বিশেষ করে সাঊদির ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন বায, ডঃ আব্দুল মুহসিন আত তুরকী, সাবেক পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ডঃ আব্দুহু ইয়ামেনী সহ ডঃ আহমাদ তুতুঞ্জি, মুহাম্মাদ কুতুব, ডঃ কামাল হিলবাওয়ী এবং পাকভারতের মাওলানা মাওদূদী ও শায়খ আবুল হাসান নাদাওয়ী।

তিউনিসিয়ার রাশেদ গানুশি তাকে বড় ভাই বলে ডাকতেন, সুদানের হাসান তুরাবির সাথে তিনি রেখেছিলেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, ফিলাস্তিনের প্রফেসর ডঃ আযযাম তামিমি বরাবরই তাকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখেছেন, পাকিস্তানের খুররম মূরাদের সাথে ছিলো তার আবাল্য বন্ধুতা, ছিলো নাঈম সিদ্দীকীর প্রাণের ভাইজান। আর ছিলেন মালয়েশিয়ার আনোয়ার ইবরাহীমের প্রিয়পাত্র।

আমি নিজ চোখে দেখেছি পাকিস্তানের মিয়া মুহাম্মাদ তুফায়েল, ক্বাজি হুসায়ন আহমাদ, সাইয়েদ মুনাওয়ার তাকে সম্মানের চেয়ারে বসাতে, দেখেছি বৃটেইনের সর্বস্তরে মুসলিম নেতৃবৃন্দের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেতে।

তিনি ছিলেন মাওলানা মাওদূদির খুবই আস্থা ভাজন। মাওলানা যখন বৃটেইনে এসে ইসলামি আন্দোলনের বীজ বপন করতে চাইলেন, এবং ইউকে ইসলামি মিশনের গোড়া পত্তন করেন, সেই প্রথম দিন থেকে জনাব আব্দুস সালাম ছিলেন নেতৃস্থানীয়। এমনকি আমীর ও ছিলেন তার। আজ এই সংগঠন বৃটেনে শত শত মসজিদ মাদ্রাসা এবং এখানের একমাত্র ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মার্কফিল্ড ইন্সটিটিউট ফর হাইয়ার এডুকেশান (MIHE) প্রতিষ্ঠিত করেছে। যেখানে আব্দুস সালাম সাহেবের রয়েছে অনেক বড় অবদান।

আমি অনেক অনেক বার তার সাথে এই ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন সেমিনার ও প্রোগ্রামে গেছি। দেখেছি ঐখানে তিনি অনেক শ্রদ্ধার আসন পেতেন। আকারে তিনি ছিলেন কিছুটা খাট, কৃশকায় কিন্তু কথা বলতেন অনেক ঋজুতায়, অনেক কনফিডেন্টের সাথে, অনেক বড় গলায় এবং প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রেখে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইউকে ইসলামিক মিশন থেকে বাংলাদেশিদের আলাদা করে দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এন্ড আয়ার নামে নতুন সংগঠনের জন্ম হয়। সেখানে তিনি অনেক বার আমীর হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। তার আমীর থাকা অবস্থায় আমাদেরকে তিনি বাংলাদেশ থেকে আনেন, কারণ ছিলো তাদের প্রতিষ্ঠিত জামিয়াতুল উম্মাহ নামক প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর ভাবে চালানো। এই দাওয়াতুল ইসলামের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপের সেরা মসজিদ ও প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদ। তাদের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইউকের সর্ব প্রথম ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “ইসলামিক কলেজ”। তাদের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইউকের প্রথম সারির চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান "মুসলিম এইড"।

আমি তার সাথে যত বারই একান্তে বসেছি, ইতিহাসের নানা উত্থান পতনের ঘটনার থলে তিনি আমার সামনে মেলে ধরেছেন। ঋদ্ধ হতাম, জানতে পারতাম অনেক গভীর তথ্য। কিভাবে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ পার্ট লন্ডনে দুইভাগ হয়, কারা কারা এখানে বড় বড় ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করে, কিভাবে বৃটেইনের মুসলিম কম্যুনিটিতে ফাটল ধরে- তার একটা ব্যাখ্যা আমি অনেকবার তার কাছে জানতে চেয়েছি। তিনি কারো নাম না ধরে একটা কথাই বলতেন, দেখেন ভাই, দাওয়াতুল ইসলামের উত্থান শয়তানের পছন্দ হয়নি। কারণ সে সময় গোটা ইউকেতে বাংগালি কম্যুনিটির যারা কোন ইসলামি সেন্টার করতে চাইতেন আমাদের দ্বারস্ত হতেন। এবং আমাদের হাতেই তা তুলে দিতেন। সংগঠন দুইভাগ না হলে বাংলাদেশিদের মাঝে ইসলামের কাজ অনেক অনেকগুণ বেড়ে যেতো।

তিনি খুব গম্ভীর, সিরিয়াস ও রাসভারী লোক ছিলেন। পড়াশুনা করতেন। উর্দুতে তিনি খুব ভালো ছিলেন ফলে উর্দু সাহিত্যের ভান্ডার তার আয়ত্বে ছিলো। ইংরেজিতে ছিলেন পারদর্শি, একাউন্টিং এ তিনি ছিলেন খুব ভালো বিশেষজ্ঞ। তবে জামায়াতে ইসলামিতে তিনি অসম্ভব রকমের কমিটেড ছিলেন। এমনকি তার পড়া শুনার গন্ডীও এই ধারার লিটারেচারের বাইরে নেন নি কোনদিন।

আমাকে দিয়ে তিনি অনেক আর্টিকেল ও বইএর অনুবাদ করাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমার অনাগ্রহে তা হয়নি। একবার তিনি একটা আর্টিকেল আমার হাতে দিয়ে বললেন, আপনিই অনুবাদ করেন। উস্তাযাহ হুমায়রা মাওদূদির লেখা। আমি সময় বের করতে পারিনি বলে তিনি খুব ক্ষেপে ছিলেন। পরে উনি বুঝেছিলেন আমার দিয়ে অনুবাদের কাজ আর হবে না। একবার ডঃ আব্দুল হালীম আবু শুক্কার ৪ খন্ডে লেখা “রাসূলের যুগের নারী স্বাধীনতা” (تحرير المرأة في عهد الرسالة) বইটা আমার হাতে তুলে দেন, এবং বলেন, "আপনি আমার এই দাবিটা রাখবেন। এই বই এর আলোকে “ইসলামে নারী” বিষয়ক একটা লেকচার সিরীজ শুরু করেন"। আমি ঐ বইটাকে সামনে রেখে কুরআন ও সাহিহ হাদীসের আলোকে “পীস টিভিতে” ৪২ এপিসোডের একটা সিরীজ আলোচনা রেখেছিলাম। আমি মনে করি ইসলামি নারী অধিকারের উপরে আলোচনাটা ভালো কাজ করেছে। এই ক্ষেত্রে তার অবদান ভোলার মত না।

তার জীবদ্দশায় তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। তিনি তার নিজের বাড়ি ছেলে সন্তানদের দিয়ে সরকারি বাড়িতে থাকতেন। প্রতি ঈদে আমরা তার সাথে দেখা করার সুযোগ নিতাম। গত রমাদানের ঈদে আমি, শায়খ আব্দুর রহমান মাদানি, শায়খ ডঃ আবুল কালাম আজাদ, শায়খ আবু তাহের তার বাসায় যাই। তাকে আমরা একটা খামে কিছু ঈদ গিফট দেই। তিনি খামে চুমা দেন এবং বলেন, একেতো ঈদের দিনের হাদীয়া, তার উপর আমার বাবারা নিয়ে এসেছেন, এটা আমার জন্য অনেক বড় বারাকাহ। পরে যখন দেখলেন এখানে অঙ্কটা একটু বেশি, মাদানি সাহেবকে টেলিফোন করে বললেন, আমি ভেবেছি ১০/২০ পাউন্ড হবে। কিন্তু আপনারা এতো গুলো দিলেন কেন, আমার তো টাকার অভাব নেই। আপনারা এটা নিয়ে যান। দুনিয়ার প্রতি তার এই অনীহা আমাকে মুগ্ধ করে।

তিনি খুব বড় স্কলার ছিলেন না। কিন্তু স্কলার তৈরি করতে পারতেন। তিনি আমাদের টিভি আলোচনা খুব নিবিষ্ট মনে শুনতেন। আমার আলোচনা শেষ হলে ফোন করতেন। বলতেন এই কথা টা, ঐ তথ্যটা, উমুক হাদীসটা আরেকবার চেক করবেন। আমি আপনার আলোচনা শুনে নোট করি। এভাবেই তিনি আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন, সম্মান দিয়েছেন, ভালোবেসেছেন, ভালোবাসা আদায় করেছেন। আমি যখন লন্ডনে পা রাখি, দাওয়াতুল ইসলামের আমীর হিসেবে তিনি আমাকে প্রথমে সাক্ষাতকার নেন। আমাকে সূরা ফাতিহা পড়তে বলেন। পড়া শেষের পর বললেন, صِرَاطَ এর “রা” যাবরের পর হারফে “ইস্তি’লার” “ত্বা” অক্ষরটা আসায় “রা” কে একটু বেশি তাফখীম করলে আরো ভালো শোনাতো। আমি উনার মুখের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসি দিলাম। এরপর বললেন, আর কেও পরুক আর না পরুক আপনি নিয়মিত পাগড়ি পরবেন। আমার একটা সবুজ পাগড়ি আছে ঐটা আপনাকে দেব ইন শা আল্লাহ। আমি আরেক বার তার মুখের দিকে তাকালাম। মাদানি সাহেব মুচকি হেসে চোখের ইশারায় আমাকে বিতর্কে যেতে নিষেধ করলেন। আমিও একটু হালকা করে দিয়ে বললাম, “আমীর সাহেবের মাথায় পাগড়ি থাকলে মা’মূর রা তো পরবেই”। দেখলাম কথাটা উনার পছন্দ হয়েছে, এবং একটা স্নিগ্ধ হাসি বিনিময় করে আমাকে ক্লাসে যেতে বললেন।

তার জামাতা হলেন ইউকের প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার মাওলানা আহমাদ আব্দুল মালেক। ছেলে মেয়েদের তিনি ইসলামের উপরেই লালন পালন করেছেন।

আজ ০২/০৯/২০২২ শুক্রবার বিকেলে তিনি ইন্তেকাল করেছেন ঘুমের ভেতরেই। ১০ দিন আগে শায়খ মাদানিকে তিনি ফোন দিয়েছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, ২৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি লন্ডনে আছেন কিনা। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। ঐদিনে আমার নাতি দেশ থেকে ফিরবে। এর মধ্যেই যদি আমি মরে যাই আপনি জানাযা পড়াবেন। আর এর পরে মারা গেলে আমার নাতি জানাযা পড়াবে। মাদানি সাহেব তাকে এই নিয়ে চিন্তা না করার জন্য অনুরোধ জানালে তিনি বলেন, আমার শেষ সময় এসে গেছে। দুয়া করবেন যেন ঈমানের সাথে শুক্রবারে আমার মরণ হয়।

তিনি নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েন। এবং ঐ ঘুমের মাঝেই খুব আরামের সাথে তার চাওয়া দিনেই আল্লাহর রহমতের চাদর গায়ে নিয়ে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ আমার মুরুব্বিকে মাফ করে দিন। জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান বানিয়ে নিন।

 শ্রদ্বেয় সালাম চাচা আর নেইঃ হামীদ হোসাঈন আযাদ

যুক্তরাজ্যের প্রবীন ইসলামী ব্যক্তিত্ব, দাওয়াতে দ্বীনের অগ্র সৈনিক, অত্যন্ত দরদী মুরব্বী ও সমাজসেবক, দাওয়াতুল ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমীর, বিশ্বের প্রতম সারীর মুসলিম চ্যারিটি মুসলিম এইডের প্রাক্তন ট্রাষ্টী, জনাব এ কে এম আবদুস্সালাম (সালাম চাচা) কিছুক্ষন আগে লন্ডনে নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রওয়াজিউন।

এটি সত্যিই একটি দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক খবর। চাচার সাথে প্রায়সই ফোনে কথা হত। সামাজিক কাজ এবং চ্যারিটি সংক্রান্তে কোন কথা মনে আসলেই তিনি আমাকে ফোন করতেন। কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি আমাকে একটি এতিমের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে কিছু পরামর্শ চাইতে ফোন করেছিলেন, যাকে তিনি নিয়মিত সাহায্য করতেন একটি চ্যারিটির মাধ্যমে। দুর্ভাগ্যবশত, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যস্ততার কারণে আমি তার সাথে কথা বলতে পারিনি। কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি ফোন করেছিলেন। আমি দেশের বাইরে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এ ব্যস্ত থাকার কারনে ফোনটা ধরতে পারিনি। দেশে ফিরার পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে plan করছি চাচাকে একটা ফোন করব, কিন্তু প্রতি দিনই যখন ঘরে আসি অনেক রাত হয়ে যায় বিধায় আর করা হয়নি। সে ফোন আর কখনও করা হবেনা। এ অপারগরতার ব্যথা নিয়েই বাকী জিন্দেগী কাটাতে হবে। জানিনা কি বলতে চেয়েছিলেন। হে দয়াময় আল্লাহ, এ অপারগতার জন্যে আমাকে মাফ করে দিন, আমীন।

তিনি একজন খুব স্নেহশীল চাচা এবং খুব যত্নশীল পরোপকারী মানুষ ছিলেন। আমাকে তিনি বাবা (বাপু) বলে সম্বোধন করতেন আর আমার স্ত্রীকে সম্বোধন করতেন মা বলে। ফোন করলেই দুটো প্রশ্ন না করে ফোনালাপ শেষ করতেননা। ১. মা রুবি কেমন আছে? ২. মাওলানা সাহেব (অর্থাৎ আমার শ্বশুর সাহেব) কেমন আছেন? টেলিভিশনে অথবা অন্য কোন মিডিয়াতে আমার কোন প্রোগ্রাম দেখলেই সাথে সাথে ফোন করে খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ফিডব্যাক দিতেন এবং বলতেন “এ বিষয়ে বই লিখ।”

দুঃখজনক হলেও রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা কখনই তার সাথে আর কথা বলতে পারব না। আর কখনও দরদমাখা কন্ঠে শুনবনা বাপু কেমন আছ। আল্লাহ আমাদেরকে এমন জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন যাতে আমরা জান্নাতে তার সাথে দেখা করতে পারি, আমিন।

আল্লাহ চাচার সকল নেক আমল কবুল করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস মর্যাদার আসন দান করুন, আমিন। আল্লাহ তার পরিবারের পাশে থাকুন এবং তাদেরকে এই কঠিন সময়ে সাবর অবলম্বন করার তৌফিক দান করুন, থুম্মা আমিন।

সবাই জনাব এ কে এম আবদুস্সালাম সাহেবের জন্য মন খুলে দোয়া করবেন।

ইসলামী আন্দোলনের একজন নির্মাতা সংগঠক এ কে এম আবদুস সালাম সাহেবের বিদায়ঃ আব্দুল কাদির সালেহ

বৃটেনের অন্যতম প্রাচীন সংগঠন দাওয়াতুল ইসলামের সাবেক আমীর শায়খ এ কে এম আবদুস সালাম গতকাল শুক্রবার বাদ জুমআ লন্ডনে নিজ বাসায় ইনতিকাল করেছেন । ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন এই দোয়া করি।

বার্ধক্যজনিত কারনে দীর্ঘদিন থেকেই তিনি আর ঘরের বাহির হননি।একান্ত ইচ্ছে ছিল বাসায় গিয়ে দেখা করবো এবং আমার মনের জগতে তাঁর জন্যে পুষে রাখা একটা শ্রদ্ধার কথা তাঁকে জানাবো।

কারন তিনি বৃটেনে ইসলামের দাওয়াতী মিশনকে জোরদার করার জন্যে মক্কা মদীনা বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন অন্চল থেকে সেরা রেজাল্টধারী আলেম গ্রাজুয়েটদেরকে স্পন্সর করে বৃটেনে নিয়ে আসেন।এতে তাঁর প্রজ্ঞা দূরদর্শিতা ও ইসলামের বিজয়াকাংখার উচ্চতার ধারনা পাওয়া যায়।এজন্যেই তাঁকে আমি ইসলামী আন্দোলনের একজন নির্মাতা সংগঠক মনে করি।

তাঁকে আমি প্রথম দেখি ৮১ সালে ঢাকার রমনা গ্রীনে অনুষ্ঠিত

ছাত্র শিবিরের সম্মেলনে।বেশ আবেগ পূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন।

১৯৯০ সালে ছাত্রমজলিসের আত্ম প্রকাশ ঘটলে দলীয় অনেক নিয়ম কানুনের পাবন্দী সত্বেও তিনি ছাত্র মজলিসের প্রতিষ্ঠা স্মারকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছিলেন।

কেউ কেউ একমত নাও হতে পারেন, তবে আমার ব্যাক্তিগত প্রত্যক্ষন থেকে বলছি , যাদের ত্যাগ এবং ঔদার্যে একটা আন্দোলন হৃষ্ঠ হয়ে আত্ম প্রতিষ্ঠা পায় কনভেনশনাল দলীয় সিস্টেমে এক সময় সেই লোকেরা তার সহযোগি ও অনুসারীদের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেন। তবে এ সবের উর্ধে মুসলিম কমিউনিটিতে আবদুস সালাম সাহেব ছিলেন এক অনন্য শ্রদ্ধার

পাত্র ও সম্মানীয়।এটা তাঁর সারল্য বিণয় ঔদার্য এবং একনিষ্ঠতাপূর্ণ চরিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ফসল।

আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতের উচ্চমাকাম দান করুন।


যে জীবন তৃপ্তিময় সাফল্যে গাঁথা; যে মরণ সময়ের অমরত্বে ঢাকাঃ সিরাজুল ইসলাম শাহীন
sirajulislamshaheen@yahoo.com
পাশ্চাত্যে দ্বীনের দাওয়াহ - তানজিমের সুনিপুণ কারিগর উস্তাদ এ কে এম আব্দুস সালাম ইন্তেকাল করেছেন গত ২রা সেপ্টেম্বর শুক্রবার। ইউরোপের বৃহত্তম ইসলামী মারকাজ ''ইস্ট লন্ডন মসজিদে'' জানাজা শেষে লন্ডনের '' Waltham Forest Muslim Cemetery ''-তে মঙ্গলবার দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজা ও দাফনে তাঁর প্রতি বিরল সম্মান-শ্রদ্ধা, আন্তরিকতায় সফল জীবনের অমরত্বের অভিযাত্রা অনুভূত হয়েছে গভীরভাবে। এ অঞ্চলে দ্বীনের খেদমতে অন্তঃপ্রাণদের জন্য শোকের মধ্যে প্রশান্তির সমীরণ যেন। শেষ বিদায়ের মুহূর্তেও পারস্পরিক আন্তরিকতাময় হয়ে চলার আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন পেয়ে গেলেন। আলহামদুলিল্লাহ।
ঐদিন জোহরের জামাতের ইমামতি করেন সাবেক প্রধান ইমাম শায়েখ হাফিজ আবু সাঈদ চৌধুরী। জানাজার পূর্বে প্রধান ইমাম ও খতিব শায়েখ আব্দুল কাইয়ুমের অনুরোধে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন দাওয়াতুল ইসলামের আমীর এবং এমসিএ কেন্দ্রীয় সভাপতি। পরিবারের পক্ষথেকে কৃতজ্ঞতা জানান মরহুমের বড় জামাতা দারুল উম্মাহ মসজিদের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মাওলানা এ মালেক। জানাজায় ইমামতি করেন তাঁর ওসিয়ত অনুযায়ী স্নেহধন্য নাতি মাওলানা মুজাক্কির হুসাইন চৌধুরী। উইকডে সত্ত্বেও মুসল্লিয়ানদের উপচে পড়া উপস্থিতি ও অশ্রুসিক্ত অভিব্যক্তি ছিল অভূতপূর্ব। দাফন কার্য শেষ পর্যন্ত উভয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ,কমিউনিটি মুরুব্বীয়ান ও উলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত থেকে সম্পন্ন করেন। যদিও দাফন শেষে মোনাজাতের সময় নেমেছিল মুষলধারে বৃষ্টি। জানাজার আপডেট জানিয়ে সকলকে উপস্থিত থাকার জন্য এমসিএ -র পক্ষ থেকে জনশক্তির প্রতি একাধিক রিমাইন্ডারও দেয়া হয়।
কমার্শিয়াল রোড থেকে স্থানান্তর হয়ে আজকের ইস্ট-লন্ডন মসজিদ এবং দারুল উম্মাহ মসজিদ গড়ে উঠার বিবর্তনের প্রত্যক্ষদর্শী তথা ওয়াকিবহাল মহলের জন্য এ জানাজা-দাফনের সম্মিলনী দৃশ্যটি অত্যন্ত তাৎপর্যমন্ডিত। দারুল উম্মাহ-তে জানাজার প্রস্তুতি থাকলেও মরহুমের ব্যাপক অবদান ,জানাজার উপস্থিতি আর পারস্পরিক সৌহার্দ বিবেচনায় ইস্ট লন্ডন মসজিদই উপযুক্ত মনে করা হয়। শনিবার সকালে এ নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় কিন্তু বাস্তব কারণেই সংশয় থেকে যায়। ইতিমধ্যে ইস্ট লন্ডন মসজিদ কর্তৃপক্ষ মরহুমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে বরফ গলতে শুরু করে। পরবর্তীতে এমসিএ - দাওয়াতুল ইসলাম নেতৃবৃন্দ সরাসরি আলাপ করে বিষয়টি সহজতর করে তুলেন।
১৯৬১ সালে '' মুসলিম স্টুডেন্ট সোসাইটি, ব্রিটেন '' নামে ব্যারিস্টার মাওলানা কুরবান আলী-রা কাজ শুরু করলে কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে যোগ দেন এ কে এম আব্দুস সালাম। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলের বৃহত্তম দাওয়াহ সংগঠন ,'' ইউ কে ইসলামিক মিশন '' এর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠে দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এন্ড আয়ার। ইস্ট লন্ডন মসজিদ আধুনিকীকরণ, লন্ডন মুসলিম সেন্টার, দারুল উম্মাহ কমপ্লেক্স সহ গোটা ইউরোপে শতাধিক দ্বীনি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয় এই সংগঠনটির হাত ধরে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে এক ঝাঁক মেধাবী আলেম-সংগঠক এনে ধরে রেখে পাশ্চাত্যে দাওয়াতি কাজের সম্প্রসারণে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করা হয়। এই দাওয়াতুল ইসলাম থেকে আই এফ ই হয়ে আজকের এম সি এ সহ অনেক সংগঠন ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ জুড়ে। বাংলাদেশের সকল ক্রান্তিকালে দায়ী ইলাল্লাহদের জন্য মদিনার আনসারদের ভূমিকায় এরাই। এসবের নেপথ্য নায়কদের পুরোধা নিভৃতচারী, প্রচার বিমুখ, কর্ম পাগল এ মানুষটি।
আন্তর্জাতিক মুসলিম চ্যারিটি ''মুসলিম এইড''-র অন্যতম ফাউন্ডার ট্রাস্টি তিনি। সমসাময়িক বিশ্বের ইসলামিক স্কলার-নেতৃবৃন্দের সাথে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলেন। ডঃ নাজমুদ্দিন আরবাকান, ডঃ হাসান তুরাবী, ডঃ আহমদ তুতুনজি প্রমুখদের সাথে ছিল ''ভাই-দোস্ত-বন্ধু'' এই পর্যায়ের সম্পর্ক। যোগাযোগ রক্ষা করতেন সর্বপর্যায়ে। ১৯৯৫ সালে সিলেট শাবি অডিটোরিয়ামে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে ভারত উপমহাদেশে আন্তরাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন যা তাঁর সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারা ও সাহসিকতার পরিচয় বহন করে। দেশ-বিদেশের ইসলামী আন্দোলন এবং গরিব অসহায় মানুষদের জন্য ছিলেন সার্বক্ষণিক পেরেশান। সামর্থবানদের থেকে প্রাপ্ত দান খয়রাত হকদারদের পৌঁছাতে নিখুঁত হিসাব নিকাশ করতেন। দুর্বল শরীর নিয়ে এত কষ্ট কেন করছেন এমন প্রশ্নে জবাবটা ভুলার নয়, ''বাবাজি, লুটে নেই যা পারি- এখনই তো সময়।"
স্বচ্ছতা, উদারতা, সবর, স্নেহ -মমতা ও সক্রিয়তায় ছিলেন অনন্য। সহায় সম্পত্তি সন্তান স্বজনদের জন্য লিখিত উইল করে গেছেন বহু আগে থেকেই। সরাসরি কষ্ট দিয়েছেন এমন সংশ্লিষ্টদের বুকে জড়িয়ে নিতে পারতেন হাসি মুখে। মতের ভিন্নতা তথা মান অভিমান থাকলেও আচার আচরণে কথা বার্তায় সংগঠনের যে কোন প্রকার ক্ষতি থেকে পরহেজ রেখে কল্যাণ কামনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার উদাহরণ রেখে গেছেন। সক্রিয় ছিলেন শেষদিন পর্যন্ত। অর্জন করে গেছেন সার্বজনীন বিরল গ্রহণযোগ্যতা।রেখে গেছেন সদকায়ে জারিয়ার সংখ্যাহীন উৎসধারা। পাশ্চাত্যে মুসলিম ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবেন তিনি। জীবনের এমন সাফল্য আর অমরত্বময় মরণ শুধুমাত্র অতি ভাগ্যবানদেরই হয় ।
২০১৩ সালে দেশ ছেড়ে আসার পর একাধিকবার নিজে গাড়ি চালিয়ে এসে খোঁজ নিয়ে গেছেন। ''--কে ফোন করতাম নি বা, আমার ভাতিজা মোহাজির বেটার খোঁজ খবর ঠিকমত নিরানি তাইন তাইন ''। বারকয়েক সপরিবারে তাঁর বাসায় দাওয়াত নিতে হয়েছিল ২০১৪ তে তারা এখানে আসার পর I ''ভাতিজা, বাবাজি, ওবা শাহীন'' সপ্তাহান্তে টেলিফোনের অপর প্রান্তে স্নেহভরা এমন শব্দ আর শুনা যাবে না। চাচা আমার জন্য নাম ধরে দুআ করবেন বলতেই, ''ওবা বাবাজি, আমিন কও'' বলেই লম্বা দুআ শুরু করতেন। কিছু কিছু দুআ ইমেল করে আমল করতে তাগিদ করতেন। মাঝে মাঝে বাসায় গিয়ে তৃপ্তি নিয়ে ফিরে আসার সহবতের এমন জায়গাটুকু আর রইলো না।
ইয়া আল্লাহ, দয়া করে তোমার এই গোলাম কে মাফ করে দাও। সকল নেক আমল কবুল কর। জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল কর। আমাদের দ্বীনের পথে হকের উপর সাবিত কদম করে দাও। উত্তরসূরীদের ময়দানের দাবি পূরণে ক্ষমা ও খুলূছিয়াতের সাথে দৃপ্ত পদে এগিয়ে যাওয়ার তাওফিক দাও। আমিন।

লেখকঃ সিরাজুল ইসলাম শাহীন-ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রাক্তণ কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও সিলেট মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারী। বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী।

 চলে গেলেন আমীর আব্দুস সালামঃ সাঈদ চৌধুরী

চলে গেলেন প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব, বিলেতে মুসলিম কমিউনিটির শ্রদ্ধেয় মুরব্বি, দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এণ্ড আয়ার‘র প্রতিষ্ঠাতা আমীর একেএম আব্দুস সালাম। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জিউ‘ন। গত শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর ২০২২) তিনি লন্ডনের ওয়ালথামস্টো এলাকায় নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন। রেখে গেছেন এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান, নাতি-নাতনি সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী। তাঁর ইন্তেকালের খবরে দেশ-বিদেশের পরিচিত মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

একেএম আব্দুস সালাম ছিলেন প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক, আদর্শ সংগঠক ও নিবেদিতপ্রাণ দাঈ ইলাল্লাহ। আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থা ও ইসলামী সমাজ সম্পর্কে ব্যাপক অধ্যয়নের ফলে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত ছিল । রাসুল (স.) জীবনের ওপর বিশেষ পাণ্ডিত্য ছিল। ইসলামী সমাজ গঠনে মরহুমের গবেষণালব্ধ বহু কর্মপন্থা বিলেতে মুসলিম কমিউনিটির বিকাশে ছিল অনন্য সহায়ক। সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে তিনি ঠাণ্ডা মাথায় যে কোন জটিল ও কঠিন সমস্যা সমাধানে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তাঁর পরে অনেকেই দাওয়াতুল ইসলামের আমীর হয়েছেন, কিন্ত তিনিই আমীর আব্দুস সালাম হিসেবে সর্ব মহলে খ্যাতি লাভ করেছেন।

একেএম আব্দুস সালাম সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বালাগঞ্জ মোক্তারপুর গ্রামের আলোকিত সন্তান। অল্প বয়সে তিনি লন্ডন চলে আসেন এবং দাওয়াতে ইসলামের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন সহজ-সরল, সজ্জন ও অমায়িক। জনহিতকর কাজে এমন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ এ যুগে বিরল। সমাজ হিতৈষী, সংস্কৃতিসেবী ও শিক্ষানুরাগী বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বের মহা প্রয়ানের মধ্য দিয়ে একটি বর্ণাঢ্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটল।

আমি লন্ডন আসার পর তাঁর সাথে পরিচয় হয়। দাওয়াতুল ইসলামের শিক্ষা ও সেবা সেন্টার দারুল উম্মাহ'র পাশেই ছিল আমার শশুর আবু বকর চৌধুরীর বাসা। তাঁরা উভয়ে বেশ ঘনিষ্ট ছিলেন। প্রথম সাক্ষাতে আমিও যেন আপন হয়ে গেলাম।

একবার সংলাপ সাহিত্য-সংষ্কৃতি ফ্রন্টের উদ্যোগে আমি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। ড. হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ কর্তৃক অনুদিত সাইয়েদ কুতুব শহীদের ‘তাফসীর ফী যিলালিল কোরআন’ প্রকাশনা অনুষ্ঠান। সেখানে তিনি আমাদের অতিথি ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় তিনি সাইয়েদ কুতুব শহীদের জন্ম-মৃত্যু, ফী যিলালিল কোরআনের ভূমিকা এবং অন্যান্য তাফসীরের সাথে মৌলিক তফাৎ, তখনকার সমাজ ব্যবস্থা ও কুতুব শহীদের বিশ্লেষন ইত্যাদি চমৎকার ভাবে বলতে থাকলেন। অনর্গল ভাবে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও বলছিলেন। কারণ অনুষ্ঠানে আরেক অতিথি ছিলেন মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের ইউরোপীয় প্রতিনিধি, সৌদী আরবে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (World Assembly of Muslim Youth-WAMY) এর প্রথম নির্বাহী পরিচালক ড. কামাল হালবাওয়ী (Dr. Kamal Helbawy)আমরা উপস্থিত সকলে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনলাম। অবশেষে ড. কামাল হালবাওয়ীর বক্তব্যে আব্দুস সালাম সাহেবের আলোচনার এবং দাওয়াতুল ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর কঠোর শ্রম ও মেধার ভূয়সী প্রশংসা করলেন।

তখন থেকেই এই মহতি ব্যক্তিত্বের কাজের ব্যাপকতার সাথে পরিচিত হই। এরপর সব সময় যোগাযোগ ছিল। প্রায়ই টেলিফোনে নানা বিষয়ে আলোচনা হত। হঠাৎ করে তিনি চলে গেলেন, রেখে গেছেন অনেক স্মৃতি। বড় পরিসরে তা লিখবো ইনশাআল্লাহ।

মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমীন।

ইসলামের এক নক্ষত্র আল্লাহর জিম্মায় গেলেনঃ ফখরুল ইসলাম খান

দাওয়াতুল ইসলাম ইউকের প্রতিষ্টাতা আমীর মুহতারাম আব্দুস সালাম সাহেব ২রা সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে ইন্তেকাল করেছেন- إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ


বৃটেনের প্রচীনতম ইসলামী কমিউনিটি সংগঠন দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এণ্ড আয়ার‘র প্রতিষ্ঠাতা আমীর, বহু মসজিদ-মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও বৃটেনে ইসলামী আন্দোলনের বীর সেনানী এ কে এম আব্দুস সালাম আর নেই। তিনি শুক্রবার লন্ডনস্থ নিজ বাসভবনে এশার নামায আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েন এবং ঘুমের মধ্যেই ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, দুই মেয়ে, বহু নাতি-নাতনী এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এ কে এম আব্দুস সালাম ওসমানীনগরের মোক্তারপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশে গ্র্যাজুয়েশন করার পর পরই ষাটের দশকে তিনি বৃটেনে পাড়ি জমান। গত কয়েক বছর যাবৎ বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি বাইরে বের হতেন না। বাড়িতে বসে লেখাপড়া ও ইবাদত-বন্দেগী করে সময় কাটাতেন। বৃটেনে মুসলমানদের নানা ঘটনার তিনি প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ইউরোপের সর্ববৃহৎ ইস্ট লণ্ডন মসজিদকে আধুনিক পর্যায়ে উন্নীত করার ব্যাপারে তাঁর রয়েছে সীমাহীন ত্যাগ। তাঁর পুরো নাম আবুল খিজির মুহাম্মাদ আব্দুস সালাম, তবে এ কে এম আব্দুস সালাম নামেই সবাই চিনতেন। গ্রেট বৃটেনে যারা ইসলাম প্রচারের কাজকে বেগবান করতে শক্ত হাতে কাজ করেছেন, তিনি ছিলেন তাদের অগ্রদূত। তিনি যুবক বয়সেই তৈরি করে ছিলেন বিশ্বের বড় বড় স্কলারগণের সাথে সখ্যতা। বিশেষ করে সাঊদির ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন বায, ডঃ আব্দুল মুহসিন আত তুরকী, সাবেক পেট্রলিয়াম মন্ত্রী ডঃ আব্দুহু ইয়ামেনী সহ ডঃ আহমাদ তুতুঞ্জি, মুহাম্মাদ কুতুব, ডঃ কামাল হিলবাওয়ী এবং পাকভারতের মাওলানা মাওদূদী ও শায়খ আবুল হাসান নাদাওয়ী সাথে তাঁর ছিলো সখ্যতা। তিউনিসিয়ার রাশেদ গানুশি তাকে বড় ভাই বলে ডাকতেন। সুদানের হাসান তুরাবি, ফিলাস্তিনের প্রফেসর ডঃ আযযাম তামিমি, পাকিস্তানের খুররম মূরাদ ও মালয়েশিয়ার আনোয়ার ইবরাহীমের সাথে ছিলো তাঁর সখ্যতী। মাওলানা মওদুদী যখন বৃটেনে ইসলামি আন্দোলনের বীজ বপন করতে চাইলেন এবং ইউকে ইসলামি মিশনের গোড়া পত্তন করেন, সেই প্রথম দিন থেকে আব্দুস সালাম ছিলেন নেতৃস্থানীয়। বৃটেনে শত শত মসজিদ মাদ্রাসা এবং একমাত্র ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মার্কফিল্ড ইন্সটিটিউট ফর হাইয়ার এডুকেশান প্রতিষ্ঠার পেছনে আব্দুস সালামের রয়েছে বড় অবদান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইউকে ইসলামিক মিশন থেকে বাংলাদেশিদের আলাদা করে দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এন্ড আয়ার নামে নতুন সংগঠনের জন্ম হয়। সেখানে তিনি অনেক বার আমীর হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এই দাওয়াতুল ইসলামের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপের সেরা মসজিদ ও প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদ। তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইউকের সর্ব প্রথম ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান “ইসলামিক কলেজ ও ইউকের প্রথম সারির চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান “মুসলিম এইড”। তিনি খুব রাসভারী লোক ছিলেন। পড়াশুনা করতেন। উর্দুতে তিনি খুব ভালো ছিলেন ফলে উর্দু সাহিত্যের ভান্ডার তার আয়ত্বে ছিলো। ইংরেজিতে ছিলেন পারদর্শি, একাউন্টিং এ তিনি ছিলেন খুব ভালো বিশেষজ্ঞ। জীবদ্দশায় তার স্ত্রী ইন্তেকাল করেন। তিনি তার নিজের বাড়ি ছেলে সন্তানদের দিয়ে সরকারি বাড়িতে থাকতেন। তার জামাতা হলেন ইউকের প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার মাওলানা আব্দুল মালেক। ছেলে মেয়েদের তিনি ইসলামের উপরেই লালন পালন করেছেন।

একেএম আবদুস সালাম : দাওয়াতের এক অনন্য মিশন সমাপ্ত করে চিরবিদায় হলেন : আবদুল কাদের তাপাদার

বৃটেন তথা ইউরোপে ইসলামি আন্দোলনের বীর সিপাহসালার, দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এন্ড আয়ার এর প্রতিষ্ঠাতা আমির, বৃটেন জুড়ে বহু মসজিদ মাদ্রাসা সহ অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ার কারিগর, বৃটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিখ্যাত ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব সিলেটের কৃতিসন্তান একেএম আবদুস সালাম আর নেই। দুনিয়ায় ইসলামের অপরিহার্য এক বিশাল দাওয়াতি মিশন সমাপ্ত করে চিরবিদায় হলেন তিনি। তিনি শুক্রবার বাদ জুমা লন্ডনের ওয়ালথাম স্টো এলাকায় তাঁর নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল হয়েছেন। ইন্নালিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহী রাজিউন।

মরহুম আবদুস সালাম এর পৈতৃক নিবাস বৃহত্তর বালাগঞ্জের ওসমানী নগর উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামে। যৌবন বয়সে তিনি বৃটেন পাড়ি জমান। বৃটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির তিনি একজন প্রবীন মুরব্বি ও ইসলামি আন্দোলনের নেতা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর হাত ধরে ইউরোপে আধুনিক কালে ইসলাম এবং মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ড বিকশিত হয়ে উঠেছে।

একেএম আবদুস সালাম ইউরোপের অনৈসলামিক সমাজের বৈরী পরিবেশে মুসলমানদের মধ্যে কোরআনের সমাজ গড়ার

এক বিরল সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন জীবনভর। এজন্য তাঁকে অনেক কঠিন বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এক্ষেত্রে মরহুমের সীমাহীন আত্মত্যাগ উত্তরসুরীদের অনুপ্রাণিত করবে নি:সন্দেহে।

আবদুস সালাম এর ইন্তেকালের খবরে বৃটেন ও ইউরোপ জুড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দিন। তাঁর সকল খেদমত কবুল করুন এবং এর বিনিময়ে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উঁচু মাকামে জায়গা করে দিন। এই দোয়া করি। মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবার পরিজন ও স্বজনদের আল্লাহ তায়ালা সবরে জামিলা দান করুন। আমিন।

📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘

আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।



2 comments:

  1. আল্লাহ তায়ালা আপনার গোলাম কে জান্নাতুল ফেরদৌসের সর্বোচ্চ মাকাম দ্বান করুন🤲🤲🤲

    ReplyDelete

আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।