আলী আহমদ মাবরুরঃঃ চাঁপাই নবাবগঞ্জের ঈদগাহ ময়দান। কুরআন দিবসের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। সেখানে দাঁড়িয়ে একজন ভাই আমাকে বলছিলেন, মরহুম মাওলানা মীম ওবায়দুল্লাহ একটি কাপড়ের ব্যাগে মুড়িয়ে নারিকেলের নাড়ু আর মুড়ি নিয়ে কয়েকদিনের জন্য বেরিয়ে যেতেন। একেকটি এলাকায় গিয়ে থাকতেন, নামাজ পড়তেন। মানুষকে ইকামাতে দ্বীন বোঝাতেন। এভাবে রাজশাহী, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের নানা জেলায় ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি রচিত হয়।
রাজশাহীতে পরবর্তীতে আরো যারা এই আন্দোলনে এসেছেন বিশেষ করে মরহুম আতাউর রহমান, সালেকুর রহমান, এডভোকেট আশরাফুজ্জামান, আব্দুল আজীজ, নাটোরের আলী আশরাফ সাহেবসহ অনেকেই তার মাধ্যমে এই সংগঠনে শামিল হন। স্বাধীন বাংলাদেশে যখনও জামায়াত প্রকাশ্যে কাজ করার সুযোগ পায়নি, তখনও তিনি রাজশাহী জেলা আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮১ সালে আবারও তিনি জেলা আমীর হয়েছিলেন। তার সাথে জেলা সেক্রেটারী হয়েছিলেন বর্তমান নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সাহেব। মাওলানা মীম ওবায়দুল্লাহ মরহুমের কাজের একটি স্টাইল ছিল, তিনি যুবকদের সাথে বেশ সুসম্পর্ক রাখতেন। তাদেরকে আন্দোলনে ধরে রাখতে চাইতেন। মূলত মাওলানা মীম ওবায়দুল্লাহ’র এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও ইসলামী আন্দোলন সুপরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা পায়- যার ফলাফল পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও দৃশ্যমান হয়েছে।
মীম ওবায়দুল্লাহ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও প্রথম নির্বাচিত শুরা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও নাচোল) আসন থেকে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি সহ জামায়াতের ১০ জন সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
তখনকার সময় এলাকার মানুষগুলোকে তৈরি করার জন্য ব্যাপকভাবে কুরআনিক স্টাডি সার্কেল ও শববেদারি আয়োজনের চর্চা করেছিলেন মাওলানা মীম ওবায়দুল্লাহ মরহুম। পাশাপাশি, সীরাত মাহফিলও হতো নানা পরিসরে। এরই প্রভাবে, গোটা রাজশাহীর ইমাম, মুআজ্জিন ও খতীবদের মধ্যেও ইসলামী আন্দোলনের কাজ ছড়িয়ে পড়ে।
দায়িত্বশীলদের আবাসন সংকট নিরসনে তিনি নানা জায়গায় মেস ও বাসা তৈরিতে সহযোগিতা করেন। কেন্দ্র থেকে মেহমানরা গেলেও এই মেসগুলোতে উঠতেন। এই মেসগুলো হওয়ার আগ পর্যন্ত মেহমানদের আবাসন নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। কারণ সাংগঠনিক জনশক্তির আর্থিক অবস্থা তখনো সেই মানে পৌঁছায়নি। তাছাড়া তিনি ছাত্রদের জন্যেও মেস সিস্টেম চালু করেছিলেন। রাজশাহী মহানগরীর বর্তমান আমীর ড. কেরামত আলীও তার ছাত্রজীবনে এই ছাত্রাবাসে থেকেছিলেন বলে জানা যায়।
শহরের হোসনিগঞ্জ ফায়ার ব্রিগেডের পাশে জামায়াতের প্রথম অফিস ছিল। মাওলানা মীম ওবায়দুল্লাহ’র বাড়ি দূরে হওয়ায় অনেক সময় তিনি এই অফিসেই থাকতেন। অনেক সময় নিজেই রান্না করতেন। খুবই কষ্ট করে তিনি ও তার প্রজন্ম কাজ করে গেছেন। মাওলানা মীম ওবায়দুল্লাহ এবং তার কর্মকৌশলবে আমাদের আরো বেশি স্মরণ করা প্রয়োজন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর তার ইন্তেকাল দিবস ছিল। তিনি ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইন্তেকাল করেন।
আল্লাহ তাআলা মাওলানা মীম ওবায়দুল্লাহকে কবুল করুন। তার নেক আমলগুলো কবুল করে নিন। আমিন।
📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘
আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।