অনুবাদঃ
আবূ জার গিফারি
রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে বলেছেনঃ তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহকে ভয় করো,
অন্যায় করার পর
ভাল কাজের অনুকরণ করো। তাহলে অন্যায়টিকে ভাল কাজটি মিটিয়ে দিবে
এবং মানুষের সাথে ভাল আচরণ করো। (তিরমিজি-১৯৮৭, হাদিসটি হাসান)
রাবি পরিচিতিঃ
أَبِىْ
ذَرٍّ - আবূ জার।
নামঃ
জুনদুব ইবনু জাসাদা ইবনে সুফ্ইয়ান।
বংশঃ
গিফার আল কিনানী।
ডাকনামঃ
আবূ জার।
জন্মঃ
মদিনা মুনাওয়ারা। বাল্যকাল থেকেই তিনি অসীম সাহস, প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টির জন্য
ছিলেন সকলের থেকে স্বতন্ত্র।
ইসলাম
গ্রহণঃ ইসলাম গ্রহণের দিক দিয়ে চতুর্থ বা পঞ্চম ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ সা.
সর্বপ্রথম তাকে ইসলামী তাহিইয়্যা তথা সালাম জানান। মক্কায় তিনিই সর্বপ্রথম
প্রকাশ্যভাবে ইসলামের ঘোষণা করেন। হযরত আবু জার ছিলেন প্রকৃতিগতভাবেই সরল,
সাদাসিধে,
দুনিয়াবিরাগী ও
নির্জনতা প্রিয় স্বভাবের। এ কারণে রাসূল সা. তাঁর উপাধি দিয়েছিলেন- ‘মসিরুল
ইসলাম।’
মৃত্যুঃ তিনি মদিনা থেকে ২০০ কি. মি.দূরে হিজরি ৩১ মতান্তরে
৩২ সনে রাবজা মরুভূমিতে ইন্তেকাল করেন।
হাদিসের ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদিসে পাপ মোচনের জন্য তিনটি উপদেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম উপদেশঃ
اتَّقِ اللَّهَ حيثُما كنتَ
‘আল্লাহ তায়ালার
ভয় তথা তাক্ওয়া অর্জনের উপদেশ।’
তুমি যেখানে যে
অবস্থায় থাকো না কেন আল্লাহকে ভয় করো। সেটা জনসম্মুখে হোক বা নির্জনে, রাস্তায় হোক
বা বাড়িতে হোক, দিনের আলোতে হোক বা রাত্রির অন্ধকারে হোক, সর্বাবস্থায় তুমি
আল্লাহকে ভয় করো।
يتقوى-এর ব্যাখ্যাঃ
تقوى-এর মূল ধাতু وق
ى আর তা হলোঃ একটি জিনিসকে অপর একটি
জিনিসের মাধ্যমে কোনো কিছু দূর করা। যেমনঃ রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ اتقوا النار ولو بشق تمرة আল্লাহকে ভয় করো যদিও একটি খেজুর টুকরার মাধ্যমে হয়। তিনি
সা. বলতে চাচ্ছেন খেজুরের টুকরাকে তোমার এবং আগুনের মাঝে বাঁচার মাধ্যম করো (ঢাল
বানাও)।
পারিভাষিক অর্থঃ সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি
নির্দেশ বাস্তবায়ন করা এবং প্রতিটি নিষেধ থেকে বিরত থাকা।
تقوى শব্দটি আল কুরআনে সাধারণতঃ পাঁচটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছেঃ
(১) الخوف والخشية ভয়-ভীতি অর্থেঃ আল্লাহ তায়ালাকে সত্যিকার ভয় করা।
﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ
إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيْمٌ﴾
“হে মানুষ সকল!
তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো নিশ্চয়ই কিয়ামাতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। (সূরা
হাজ্জঃ ১)
(২) العبادة ‘ইবাদাত অর্থেঃ যেমনঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ মানুষ কখনো হয়তো ভেবে
দেখিনি যে মৃত্যুর পরের জীবনের জন্যে কি করেছি, সে জীবনের জন্যে কতটুকু সওয়াব সঞ্চয় করতে
পেরেছি অথচ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সে বিষয়টিই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি বলেছেনঃ
﴿يَا أَيُّهَا
الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ
وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ﴾
“হে
মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিৎ, আগামীকালের জন্যে কি প্রেরণ করেছে তা
ভেবে দেখা। আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা যা করো আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে খবর রাখেন। (সূরা
হাশরঃ ১৮)
(৩) ترك المعصية অপরাধ ছাড়া অর্থেঃ যেমন আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ
﴿وَلَكُمْ فِى
الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِى الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ﴾
“হে
চিন্তাশীলেরা ক্বিসাসের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন,
যেন তোমরা ভয়
করো (অর্থাৎ-
সাবধান হও এবং এ অপরাধ ছেড়ে দাও।” (সূরা বাক্বারাহ্ঃ ১৭৯)
(৪) الإخلاص “ইখলাস” অর্থেঃ আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
﴿ذَلِكَ وَمَنْ
يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ﴾
“এটা
শ্রবণযোগ্য, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করল তা তো তার
হৃদয়ের আল্লাহ ভীতি।” (সূরা হাজ্জঃ ৩২)
অর্থাৎ-
এটাই তার অন্তরের ইখলাস।
(৫) التوحيد “তাওহীদ” অর্থেঃ আল্লাহ তায়ালা
বলেনঃ
﴿إِنَّ
الَّذِيْنَ يَغُضُّوْنَ أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ أُولَئِكَ الَّذِيْنَ
امْتَحَنَ اللهُ قُلُوْبَهُمْ لِلتَّقْوَى﴾
“যারা
আল্লাহর রাসূলের সম্মুখে নিজেদের কণ্ঠস্বরকে নীচু রাখে, তারা তো সেই লোক যাদের
অন্তরকে আল্লাহ তাক্ওয়ার জন্যে পরীক্ষা করেন।” (সূরা হুজুরাতঃ ৩)
تقوى “তাক্ওয়া” শব্দটি
যে অর্থে ব্যবহৃত হোক না কেন তা অবলম্বন করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে
নির্দেশ দিয়েছেন, আর এ নির্দেশ শুধু আমাদের জন্যেই নয় বরং আমাদের পূর্বে
যাদেরকে কিতাব দিয়েছেন তাদেরকেও একই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেনঃ
﴿وَلَقَدْ
وَصَّيْنَا الَّذِيْنَ أُوْتُوْا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ
اتَّقُوْا اللهَ﴾
“নিশ্চয়ই
তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে এবং বিশেষ করে তোমাদেরকে
নির্দেশ দিচ্ছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো।” (সূরা নিসাঃ ১৩)
সুতরাং মৃত্যুর
পরের জীবনের কথা স্মরণ করে আল্লাহ তায়ালাকে সর্বদা ভয় করে চলতে হবে। তার প্রতিটি
নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং প্রতিটি নিষেধ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ইমাম শাফেয়ি রাহি.
বলেন,
‘আমি
তিনটি বিষয় পছন্দ করি। তা হলো, ১. অভাবের সময় দান করা, ২. নির্জনে আল্লাহকে ভয় করা,
৩. যার কাছে আশা
করা হয় অথবা যাকে ভয় করা হয় তার সামনে উচিত কথা বলা।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকামঃ
১৯/১৮)
আল্লাহর ভয় সৃষ্টির উপায় সমূহঃ
১. আল্লাহ তায়ালার
প্রতাপ, মহত্ব
এবং তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞানার্জন। আল্লাহ বলেনঃ “তারা তাদের উপর
পরাক্রমশালী, তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে।” (সূরা নাহলঃ ৫০)
২. জাহান্নামের
কঠোর শাস্তির ভয়
অন্তরে পোষণ করা।
৩. আল্লাহ ও তাঁর
রাসূলের হাদিসের প্রতি গভীরভাবে চিন্তা করা এবং রাসূল সা. এর সীরাত অধ্যয়ন করা।
৪. আল্লাহর
বড়ত্বের কথা চিন্তা করা। কেননা যে আল্লাহর বড়ত্ব নিয়ে চিন্তা করবে,
তার দৃষ্টিজুড়ে
আল্লাহর গুণাবলী ও মহত্বের বিষয়গুলো বিরাজ করবে। আর যার অন্তর আল্লাহর মর্যাদা ও
আযমত প্রত্যক্ষ করবে, সে আল্লাহকে অবশ্যই ভয় করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আল্লাহ
তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের সাবধান করছেন।” (সূরা আলে ইমরানঃ ২৮)
মহান
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ “তারা আল্লাহকে যথার্থরুপে বোঝেনি। কিয়ামতের দিন গোটা
পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমানসমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান
হাতে।” (সূরা জুমারঃ ৬৭)
৫. মৃত্যু ও তার
ভয়াবহতা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা এবং এ বিষয়েও চিন্তা করা যে মৃত্যু থেকে
পলায়নের কোন পথ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “বলুন, তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর,
সেই মৃত্যু
অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে।” (সূরা জুমুয়াঃ ৮)
৬. মৃত্যু পরবর্তী
জীবন, কবর
এবং কবরের ভয়াবহতা নিয়ে চিন্তা করা। রাসূল সা. ইরশাদ করেনঃ “আমি তোমাদেরকে কবর
জিয়ারত করতে নিষেধ করতাম, কিন্তু এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো,
কারণ এটা
দুনিয়ার মোহ কমিয়ে দেয় এবং আখিরাতকে স্মরণ করিয়ে দেয়।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
৭. ছোট ছোট গুনাহের
ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করা; এসব গুনাহ মানুষকে তুচ্ছ ও লাঞ্চিত করে।
৮. এমন লোকদের
সান্নিধ্যে বসা যাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় বিরাজমান। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ “আপনি
নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর
সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে।” (সূরা কাহাফঃ ২৮)
তাকওয়ার পুরস্কারঃ
১. আল্লাহভীতি জীবনকে সহজ করে দেয়ঃ আল্লাহভীরু মানুষের জন্য আল্লাহ জীবনকে সহজ ও সাবলীল করে
দেন। ফলে জীবন তার কাছে বোঝা মনে হয় না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“এবং যে ব্যক্তি
আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন।” (সূরা তালাকঃ ৪)
২. মর্যাদা বৃদ্ধি করেঃ তাকওয়া পার্থিব ও পরকালীন জীবনে মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করে। তা মানুষকে
আল্লাহর কাছে প্রিয় ও সম্মানিত করে। আর আল্লাহর কাছে যখন কারো সম্মান বৃদ্ধি হয়
তখন মানুষের কাছেও তার সম্মান বেড়ে যায়। আল্লাহ বলেন,
“নিশ্চয়ই তোমাদের
মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানী যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করে।’’ (সূরা হুজুরাতঃ ১৩)
৩. তাকওয়া পাপ মোচন করেঃ আল্লাহভীতি শুধু মানুষকে পাপের হাত থেকেই রক্ষা করে না,
বরং অতীতের পাপও
মোচন করে। আল্লাহ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে তার গুনাহ মুছে ফেলা হবে এবং
তাকে পুরস্কৃত করা হবে।’’ (সূরা তালাকঃ ৫)
৪. আল্লাহভীরুদের পার্থিব জীবনেও রয়েছে সুসংবাদঃ যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা পৃথিবীতেও নানা পুরস্কারে
পুরস্কৃত হবে। আল্লাহ বলেন, “যারা ঈমান এনেছে এবং মুত্তাকি (আল্লাহভীরু) হয়েছে,
তাদের জন্য
জাগতিক জীবনে রয়েছে সুসংবাদ।” (সূরা ইউনুসঃ ৬৩-৬৪)
৫. আল্লাহভীরুরাই সফলঃ আল্লাহভীরুদের জন্য সাফল্য ও হেদায়েতের ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ
হয়েছে, ‘‘যে
ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর অবাধ্যতা থেকে
সাবধান থাকে তারাই সফলকাম।’’ (সূরা নুরঃ ৫২)
৬. তাকওয়া রিজিকের দুয়ার খুলে দেয়ঃ পৃথিবীতে যারা আল্লাহকে ভয় করে চলবে,
আল্লাহ তাদের
জীবিকার দুয়ার খুলে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে,
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে, তার জন্য আল্লাহ পথ করে দেবেন এবং তাকে
তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিজিক দান করবেন।” (সূরা তালাকঃ ২-৩)
৭. আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেনঃ তাকওয়া বা আল্লাহভীরুদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো
আল্লাহর ভালোবাসা। আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন। ইরশাদ হয়েছে,
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ
খোদাভীরুদের ভালোবাসেন।’ (সূরা হুদঃ ১১৩)
আল্লাহভীতির পরকালীন ফলাফলঃ
১. আল্লাহর ভয়ে ভীত
বান্দা কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাবেন। রাসূল সা: ইরশাদ করেনঃ এবং এমন
ব্যক্তি (আরশের নিচে ছায়া পাবে) যাকে অভিজাত সুন্দরী কোনো রমণী প্রস্তাব দেয়া
সত্ত্বেও সে বলে; আমি আল্লাহকে ভয় করি। (বুখারি)
২. আল্লাহর ভয়
মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়। রাসূল সা. ইরশাদ করেনঃ “যে ভয় পায় সে আত্মরক্ষার্থে
রাতে সফর করে, আর যে রাতে সফর করে সে সচেতনতার কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে
পারে। তোমরা জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর পুরস্কার অত্যন্ত দামি। আর তা হলো জান্নাত।
(সুতরাং আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগরুক রাখো এবং সাবধানে দুনিয়ার জীবন পাড়ি দাও। তবেই
গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে।” (তিরমিজি)
৩. যার মাঝে
আল্লাহর ভয় আছে, সে কিয়ামতের দিন নিরাপদে থাকবে। আল্লাহ তায়ালা হাদিসে
কুদসিতে ইরশাদ করেন, “আমার ইজ্জতের কসম! আমার বান্দার জন্য দু’টি ভয় ও দু’টি
নিরাপত্তাকে একত্র করি না। যদি সে দুনিয়ায় আমাকে ভয় করে তবে কিয়ামতে আমি তাকে
নিরাপত্তা দান করব। আর দুনিয়ায় আমাকে যে নিরাপদ মনে করবে (ভয় না করবে) কিয়ামতের
দিন তাকে আমি সন্ত্রস্ত রাখবো।” (বায়হাকী)
৪. আল্লাহ তায়ালা
তাঁর ঈমানদার বান্দাদের যেসব গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন,
আল্লাহভীতি তার
অন্যতম। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে সাজদা ও দন্ডায়মান
হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে এবং আখিরাতকে ভয় করে ও তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে,
সে কি তার সমান,
যে এরূপ করে না;
বলুন,
যারা জানে এবং
যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে,
যারা বুদ্ধিমান।
(সূরা জুমার : ৯)
তাকওয়ার বাস্তব নমুনা
উমার
রা. নবীর সাহাবী উবাই ইবনু ক্বা‘বকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ভাই! তাক্বওয়া সম্পর্কে আমাকে
বলেন! তিনি (ক্বা‘ব) বললেনঃ হে ‘উমার! আপনি জীবনে এমন রাস্তা দিয়ে হেটেছেন যে
রাস্তার দু’ধারে বিষাক্ত কাঁটা, লতা আর রাস্তাটি অত্যন্ত সরু। উমার রা. বললেনঃ জ্বি। আমার
জীবনে এমন একটি রাস্তা অতিক্রম করেছি।
উবাই ইবনু
ক্বা‘ব রা. বললেনঃ ভাই ‘উমার! তুমি ঐ রাস্তা কিভাবে অতিক্রম করেছিলে?
‘উমার রা. বললেনঃ
খুব সাবধানে আমার কাপড়গুলো শরীরের সাথে চেপে ধরে জড়সড় হয়ে খুব ধীরে। যাতে করে আমার
কাপড় না ছিঁড়ে যায় আর আমার শরীর যেনো ক্ষত-বিক্ষত না হয়ে যায়। উবাই ইবনু ক্বা‘ব
রা. বলেনঃ ভাই! এটাই হলো তাক্বওয়ার উদাহরণ।
চারদিকে অপরাধ
আর তাগুতি শক্তি আপনার ঈমানকে ছিঁড়ে ফেলছে, ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে। এর থেকে জীবন
বাঁচাতে সাবধানে চলতে হবে। অন্তরে থাকতে হবে আল্লাহর ভয়। আর এই ভয় তৈরি করে দেহের
মধ্যে লুক্কায়িত একটি মাংসপিন্ড। এটা যদি ভাল
থাকে তাহলে ঈমান ভাল হয়ে যায়। আর তাক্বওয়া জীবন্ত হয়।
লুক্বমান
হাকিমকে তার মনিব ডেকে বলেছিলেন, তোমাকে সবাই বলে তুমি নাকি খুব জ্ঞানী,
লুক্বমান বললেনঃ
আমি জ্ঞানী কি-না জানি না। মনিব বললঃ দু’টি বকরী ধরে আনো। বকরীর পালের মধ্য থেকে
দু’টি সুস্থ্য-সবল বকরী আনা হলো। অতঃপর লুক্বমানকে বলা হলো একটি জবাই করে এর মধ্যে
দামী বস্তুটি আমার জন্য আনো। লুক্বমান বকরীর কলিজা নিয়ে মনিবের হাতে তুলে দিলেন।
এবার মনিব বললঃ দ্বিতীয় বকরীটি জবাই করে তার মধ্য থেকে নিকৃষ্ট বস্তুটি আমাকে এনে
দেখাও। এবার লুক্বমান দ্বিতীয় বকরীটিও জবাই করে বকরীর দিল-কলিজা এনে দিলেন।
লুক্বমানের মনিব বললঃ তুমি আবার কেমন জ্ঞানী যে, ভাল বস্তুটি চাইলাম তখনও দিল-কলিজা দিলে
আবার নিকৃষ্ট বস্তু চাইলাম তখনও দিল-কলিজা দিলে। লুক্বমান বললঃ মানব দেহের মধ্যে
এটা এইজন্য দামি যে, এটা যদি ভাল থাকে গোটা শরীরটা ভাল থাকে আর এটা যদি খারাপ
হয়ে যায় গোটা শরীরটা খারাপ হয়ে যায়। এটা যেমন ভাল থাকলে দামি হয় এটা খারাপ হয়ে
গেলে তেমনই নিকৃষ্ট হয়ে যায়।
মহান
আল্লাহর নাবী ইরশাদ করেছেনঃ
إِنَّ فِىْ
الْجَسَدِ مُضْغَةً : إِذَا صَلَحَتْ صَلَحَ الجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ
فَسَدَ الجَسَدُ كُلُّهُ، أَلَا وَهِيَ القَلْبُ".
“নিশ্চয়ই
দেহের মধ্যে একটি মাংসের টুকরা আছে। এটা যদি ভাল থাকে গোটা দেহ ভাল থাকে,
আর এটা যদি নষ্ট
হয়ে যায় গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায়। সাবধান! আর তা হলো দিল,
কলিজা।”
(বুখারি-৫২, মুসলিম-১০৭/১৫৯৯)
দ্বিতীয় উপদেশঃ
وَأَتْبِعِ
السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا “অন্যায়
কাজ করার পর ভাল কাজের অনুসরণ করো তবেই ভাল কাজটি পাপকে মিটিয়ে দিবে।”
এখানে মানুষের
কৃত পাপের বোঝা কমানোর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। পাপ হয়ে গেলে সে পাপ কিভাবে ক্ষমা
করানো যাবে তার পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। আর তা হলোঃ কোন পাপ করার পর তা উপলব্ধি
করতে পারলে সাথে সাথে কোন ভাল কাজ করে ফেললে এ ভাল কাজের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা
পূর্বের পাপকে মিটিয়ে দেন।
ভাল
কাজ বলতে যে কোনো ধরনের সৎ কাজ বা ‘আমল হতে পারে। সৎ কাজ বা সৎ ‘আমলের মধ্যে
অন্যতম ‘আমল হচ্ছে সালাত। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
﴿وَأَقِمِ
الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ
يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِيْنَ﴾
“তুমি
দিনের দু’ প্রান্তে সালাত আদায় করো এবং রাত্রের প্রান্ত ভাগে। নিশ্চয়ই ভাল কাজ
খারাপ কাজকে দূর করে দেয়।” (সূরা হুদঃ ১১৪)
এমনিভাবে
সৎ ‘আমলের মধ্যে জুমআর সালাত, রামাদানের সিয়াম, বায়তুল্লাহর হাজ্জ আদায়,
‘উমরাহ্,
সাদাক্বাহ্
ইত্যাদি ‘আমলের মাধ্যমে ছোট ছোট পাপ মিটে যায়। আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ ও হামদ-এর
মাধ্যমে পাপ মোচন হয়। যেমন বুখারি ও মুসলিমে এসেছেঃ
عَنْ أَبِى
هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ "مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، فِىْ يَوْمٍ
مِائَةَ مَرَّةٍ، حُطَّتْ خَطَايَاهُ، وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ".
আবূ হুরাইরাহ্
রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ যে ব্যক্তি দিনে এক শত বার
‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি’ বলবে তার সকল পাপ মিটে যায়,
যদিও তা
সমুদ্রের ফেনারাশির সমতুল্য হয়। (বুখারিঃ ৬৪০৫, মুসলিমঃ২৮/২৬৯১)
কেউ কেউ বলেছেনঃ
হাদিসে الحَسَنَةَ ‘হাসানাহ্’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে
‘তাওবাহ্’।
কোনো পাপ করার
পর তাওবা করলে পাপ মোচন হয়। এ ক্ষেত্রে বলা যায় যে, সৎ ‘আমলের মাধ্যমে ছোট ছোট পাপ মোচন হয়
আর তাওবার মাধ্যমে ছোট-বড় সকল পাপ মোচন হয়।
তৃতীয় উপদেশঃ
সৎ চরিত্রঃ وَخَالِقِ
النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ
বা মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার।
মানুষ সমাজবদ্ধ
জীব, এক
মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। আচার-ব্যবহার ও লেনদেনের
ক্ষেত্রে সর্বদা ভালর পরিচয় দিবে।
حَسَنٍ الخَالِقِ বা “সৎ চরিত্র” হচ্ছে- নম্র
স্বভাব, ভদ্র
ব্যবহার, হাস্যোজ্জ্বল মুখ এবং ভাল কথা। এমনিভাবে বলা যায়, কথায় ও
কাজে সৎ থাকা এবং কথা ও কাজের ক্ষেত্রে অন্যকে দুঃখ-কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
হাসান বসরী রাহি.
বলেন, ‘সচ্চরিত্র
হল হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, দানশীলতা এবং কাউকে কষ্ট না দেওয়া’ । (আবূ বকর আল জাযাইরী,
মিনহাজুল মুসলিম,
পৃ. ১১৫)
আল্লামা জুরজানী
আখলাকে হাসানার একটি যথার্থ ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তৎপ্রণীত ‘কিতাবুত
তা‘রীফাত’ নামক গ্রন্থে। তিনি বলেন- ‘খুলুক বা চরিত্র হচ্ছে আত্মার বদ্ধমূল এমন
একটি অবস্থা, যা থেকে কোনো চিন্তা-ভাবনা ব্যতীতই অনায়াসে যাবতীয়
কার্যকলাপ প্রকাশ পায়। আত্মার ঐ অবস্থা থেকে যদি বিবেক-বুদ্ধি ও শরীআতের আলোকে
প্রশংসনীয় কার্যকলাপ প্রকাশ হয় তবে তাকে আখলাকে হাসানা নামে অভিহিত করা হয়। (শরীফ
আলী বিন মুহাম্মাদ আল জুরজানী, কিতাবুত তা‘রীফাতঃ পৃ. ১০১)
উত্তম
চরিত্রের ক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র আদর্শ হলেন রাসূলুল্লাহ সা.। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
﴿لَقَدْ كَانَ
لَكُمْ فِىْ رَسُوْلِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ﴾
অবশ্যই তোমাদের
জন্যে রাসূলুল্লাহ সা.-এর জীবনে রয়েছে উত্তম নমুনা। (সূরা আহযাবঃ ২১)
সৎ চরিত্রই
মানুষের মূল সম্পদ। এর মাধ্যমে মানুষের মূল্যায়ন হয়। একজন মানুষ সৎ চরিত্রের মাধ্যমে সম্মানিত হতে পারে আবার অসৎ
চরিত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন ধাপে পৌঁছে যেতে পারে। সুন্দর ব্যবহার ও আচার-আচরণ
বলতে আমরা বুঝি কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা, দেখা হলে সালাম দেওয়া,
কুশলাদি জিজ্ঞেস
করা, কর্কশ
ভাষায় কথা না বলা, ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত না হওয়া, ধমক বা রাগের সুরে কথা না বলা,
পরনিন্দা না করা,
অপমান-অপদস্ত না
করা, উচ্চ
আওয়াজে কথা না বলা, গম্ভীর মুখে কথা না বলা, সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা,
অন্যের সুখে
সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া। এছাড়া কারও বিপদে দেখা করে সহানুভূতি ও
সহমর্মিতা প্রকাশ করাও সুন্দর আচরণের অন্তর্ভুক্ত।
সুন্দর আচরণ
আমরা সবাই প্রত্যাশা করি। কিন্তু আমরা প্রায়ই অন্যের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে
ভুলে যাই। সামান্য একটু অসতর্কতার কারণে আমাদের আচরণে একজন মানুষ অনেক কষ্ট পেতে
পারে। তাই আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিত; যাতে আমাদের আচরণে কেউ বিন্দুমাত্র কষ্ট
না পায়।
যার আচরণ যত
বেশি সুন্দর সবাই তাকে তত বেশি ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। যার আচরণ ভালো নয়
সবাই তাকে ঘৃণা করে ও এড়িয়ে চলে। সুন্দর ব্যবহার সুন্দরভাবে কথা বলা সুন্দর মনের
পরিচয় বহন করে।
মানুষের একটি
ভালো কথা যেমন একজনের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি একটু খারাপ বা অশোভন আচরণ মানুষের
মনে কষ্ট আসে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে আমাদের উচিৎ সর্বদা মানুষের সঙ্গে ভালো ও
সুন্দরভাবে কথা বলা।
আবূ হুরাইরাহ্
রা. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ ঈমানের দিক দিয়ে মু’মিনদের মধ্যে
পরিপূর্ণ মু’মিন সেই ব্যক্তি যে চরিত্রের দিক দিয়ে ভাল,
আর তোমাদের
মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর নিকট ভাল।
(তিরমিজি,
হাদিসটি হাসান
সহিহ)
কিয়ামাতের দিন
যখন ‘আমলনামা মাপা হবে যেখানে মিজানে যা দাঁড়িপাল্লায় সবচেয়ে ভারী ‘আমল হবে সৎ
চরিত্র। সৎ চরিত্রের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সলাত আদায়কারী এবং সিয়াম পালনকারীর
সওয়াব হাসিল করতে পারে।
জাবের রা. থেকে
বর্ণিত হাদিসে রাসুল সা. বলেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামতের দিন আমার
সবচেয়ে কাছে থাকবে যে তোমাদের মধ্যে অধিকতর সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। আর আমার কাছে
সবচেয়ে ঘৃণিত ও আমার কাছ থেকে সবচেয়ে দূরে থাকবে বাচাল ও অহংকারী।’ (তিরমিজিঃ ২১০৮)
যার
চরিত্র সুন্দর তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে । হাদিসে এসেছেঃ
عن أمامة الباهلي رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ
اللهِ- صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ أنَا زَعِيْمٌ بِبَيْتٍ فِيْ رَبَضِ
الْجَنَّةِ، لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ، وَ إنْ كَانَ مُحِقًّا، وَ بِبَيْتٍ فِيْ
وَسْطِ الْجَنَّةِ، لِمَنْ تَرَكَ الْكِذْبَ، وَ إنْ كَانَ مَازِحًا، وَ بِبَيْتٍ
فِيْ أعْلَى الْجَنَّةِ، لِمَنْ حَسُنَ خُلُقُهُ.
আবু উমামা
বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সা. বলেছেনঃ
‘আমি সেই
ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দেওয়ার জন্য যামীন,
যে কলহ বিবাদ
পরিত্যাগ করে। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দেওয়ার জন্য যামীন,
যে মিথ্যা
পরিহার করে এমনকি হাঁসি ঠাট্টার ছলেও এবং আরও একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চে নিয়ে
দেয়ার জন্য জিম্মাদার, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করবে’। (আবু দাউদঃ ৪৮০০)
সুন্দর আচরণ চারিত্রিক সৌন্দর্যের মাপকাঠিঃ
সামাজিক পরিমন্ডলে
সবার মাঝে বেড়ে ওঠা মানুষের সহজাত প্রকৃতি। যাদের চরিত্রে উত্তম গুণাবলির সমাবেশ
ঘটে সে হয় স্মরণীয় ও বরণীয়। আর যার চরিত্র মন্দ দোষে দুষ্ট হয় সে হয় ধিকৃত ও
পরিত্যাজ্য। আবদুল্লাহ ইবনু আমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেনঃ তোমাদের
মধ্যে সে ব্যক্তিই আমার কাছে অধিক প্রিয়, যার চরিত্র ভাল।’ (বুখারি,
মিশকাতঃ ৫০৭৪)
মানবতার শ্রেষ্ঠ
আসনে আসীন হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর কথা, কাজ, ইশারা-ইঙ্গিত তথা আচরণের মাধ্যমে এমন
কিছু প্রকাশ করেননি যাতে তাঁর বড়ত্ব প্রকাশ পায়। বরং নম্র,
ভদ্র,
মার্জিত,
কোমল ও মায়াবী
স্বভাবের দ্বারা তিনি সবার অন্তর জয় করে নেন। তাঁর সিরাত পর্যালোচনা করলে অসংখ্য
ঘটনার দ্বারা এ কথার প্রমাণ মেলে। হযরত আনাস রা. দীর্ঘ ১০ বছর পর্যন্ত নবীজীর খাদেম
ছিলেন। তাঁর মুখের ভাষ্য হচ্ছেঃ ‘এই সুদীর্ঘ সময়ে কোনো দিন তিনি আমাকে অনুযোগের স্বরে এ কথা
বলেননি যে, হে আনাস! তুমি এ কাজটি কেন করেছ বা কেন করনি?’
সবচেয়ে কাছে
থেকে দেখা খাদেমের কথা থেকেই তাঁর মহান চরিত্রের কোমলতার পরিধি কিছুটা নির্ণীত হয়।
পরিবার থেকে সমাজ পর্যন্ত সবই তাঁর কোমল আচরণে ছিল সন্তুষ্ট। তাঁর কোমল আচরণের
কারণেই কর্কশ, বর্বর, অসভ্য, মরুবাসী আরব জাতির পাথরের মতো শক্ত হৃদয় মোমের মতো গলে
গিয়েছিল।
উত্তম আচরণ উন্নত ব্যক্তিত্বের পরিচায়কঃ
ভালো কথা,
ভালো ব্যবহার,
সুন্দর আচরণ যাই
বলি না কেন, এগুলো হচ্ছে একটি শিল্প। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই একজন
ব্যক্তির সার্বিক পরিচয় ফুটে ওঠে, তার উন্নত ব্যক্তিত্বেও প্রমাণ মেলে। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই
একজন ব্যক্তি কাক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হন। যারা সবসময় মানুষের সাথে ভালো
কথা বলে, সুন্দর আচরণ করে তাদেরকে সমাজের,
দেশের সবাই
অত্যন্ত পছন্দ করে, ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও তাদেরকে
অত্যন্ত পছন্দ করেন। একটি ভালো কথা, সুন্দর আচরণ একটি ভালো গাছের মতো। সুন্দর
আচরণকারীর সামনে-পেছনে মানুষ তার প্রশংসা করে। তার জন্য মন খুলে দোয়া করে। ফলে
আল্লাহ এবং আসমান-জমিনের ফেরেশতারাও তাকে অত্যন্ত পছন্দ করেন। অপর দিকে খারাপ
ব্যবহারে সম্পর্ক বিনষ্ট হয়। অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। সমাজের মানুষ তাকে
অবহেলা, অবজ্ঞা
ও ঘৃণার চোখে দেখে। আমাদের নবী সা. ছিলেন সদা-সত্যভাষী,
হিতভাষী,
শুদ্ধভাষী,
সুভাষী এবং
মানুষের সাথে সুন্দর আচরণকারী। তাই তিনি ছিলেন সব মানুষের সেরা।
সদাচরণ ও
নৈতিকতা জীবনে সফলতা, কল্যাণ ও সার্থকতা বয়ে আনে। নৈতিকতাহীন ও সদাচরণ বিবর্জিত
ব্যক্তিকে মানুষ ঘৃণ্যভরা চোখে দেখে। পক্ষান্তরে নীতি-নৈতিকতায় ভালো হলে-মানুষ তার
প্রতি আন্তরিক হয়। আচার-ব্যবহারে বিমুগ্ধ হয়ে তার প্রতি নিবেদিত হয়। তাই মানুষের
সঙ্গে কথা বলতে হবে বিনয়ী হয়ে ও নম্রভাবে। এটি রাসুল সা. শ্বাশ্বত ও চিরন্তন
সুন্নত। আর দুর্বোধ্যতা ও অহংকারের সঙ্গে কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি সামাজিক
জীবনেও নিন্দিত ও ঘৃণিত।
হাদিসের শিক্ষাঃ
১. সর্বাবস্থায়
আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা।
২. কোনো কারণে পাপ
হয়ে গেলে সাথে সাথে কোনো ভাল কাজ করা, তাহলে পূর্বের পাপ মোচন হয়ে যায়।
৩. মানুষের সাথে
ভাল ব্যবহার করা কেননা সৎ চরিত্র মানুষকে সম্মানিত করে।
৪. সৎ চরিত্র
কিয়ামাতের দিন মিযানে ভারী আমল হিসেবে গণ্য হবে।
লেখকঃ প্রভাষক, সিটি মডেল কলেজ, ঢাকা
আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।