ড. এম. আব্দুস সালাম আযাদীঃঃ প্রসঙ্গতঃ আমি বলে নেই, ডঃ ইউসুফ আল-ক্বারাদাওয়ী আমার রক্তের সম্পর্কের কোন আত্মীয় নন, আমার সরাসরি শিক্ষক নন, তার জ্ঞান থেকে উপকৃত হলেও তার সব কথা কখনই চোখ বুঝে মেনে নেয়া মানুষও আমি নই। ফিক্বহী অনেক মাসআলায় আমি তার সাথে কখনই একমত নই, কারণ আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফকীহ ও মুজতাহিদ না হওয়ায় আজ অবধি “উসূল ও ফুরু’”এ আমি দলীল ভিত্তিক হানাফি ফিকহ অনুসরণ করি। আর ইউসুফ ক্বারাদাওয়ী ছিলেন মৌলিক ভাবে শাফেঈ মাযহাবের অনুসারী এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়েছেন হানবালি মাযহাবকে। কাজেই মাযহাবি মতাদর্শে আমি তার অনুসারীও নই। আক্বীদার ক্ষেত্রে আমি আহলুসসুন্নাহের মদীনাহর শুয়ূখদের কথা ভালো মনে করি। কাজেই ডঃ ইউসুফ ক্বারাদাওয়ীর আক্বীদাহ বিষয়ে কোন লেখা আমার বিস্ময়ের কেন্দ্রে ছিলোই না।
আমি তার ১২০টা বই কিনেছি, পড়েছি এর অনেকগুলো। এখনো পড়তে পারিনি আমার লাইব্রেরির পুরো একটা ‘থাক’। সে সব বইগুলো থেকে অনেক নেয়ার আছে আমার। বর্তমান যুগ জিজ্ঞাসায় তার বই থেকে অনেক পাওয়ার আছে। অবশ্য কেও না নিলেও কোন ক্ষতি হবেনা।
তিনি মুসলিম ছিলেন, মুমিন ছিলেন, তার সাথে হোটেল রূমে আমি কাটিয়েছি একটা পুরো দিন। তার সাথে উঠাবসা করেছি ১০/১২ দিন। সমাবেশে তার আলচোনা শুনেছি ২০ এর অধিক। এবং তার পাশে বসে তার আলোচনার বাংলা অনুবাদ করেছি ২টা। এতে তার সম্পর্কে আমি যা জেনেছি তা হলো, তিনি আহলুসসুন্নাহের আক্বীদাহ পন্থী। এবং সালাফগণের (সালাফীগণের নয়) পথের অনুসারী। আমার জীবনে এমন নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও ঈমানি তেজোদ্দীপ্ত আলিম খুব কমই দেখেছি। আমি শায়খ ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন বায, ইমাম ইবন উথায়মীন, শায়খ ইমাম আবুল হাসান নাদাওয়ী, ডঃ যায়দ আবু বকর, শায়খ মুহাম্মাদ মুখতার আশশানকীতি সহ বর্তমান বিশ্বের সেরা আলিমগণের সাথে দেখা করা ও তাদের জ্ঞান ও আমল থেকে উপকার পাওয়া মানুষ। ডঃ ক্বারাদাওয়ীর আচরণ তাদেরই আচরণের পাশে পেয়েছি। যাকে দেখে ভালোবাসা যায়, যার চেহারা দেখলে আল্লাহর কথা মনে ওঠে এমন একজন শায়খ হিসেবে তাকে পেয়েছি।
তার ইন্তেকালের পরে বিশ্বে আলোচনা সমালোচনা অনেক হয়েছে, হচ্ছে আরো হবে। কারণ তিনি ব্যক্তিগত ভাবে যাই হন না কেন, তিনি ছিলেন চিন্তক, দার্শনিক, শরী’আহ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দাতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং পাশ্চাত্যের কাছে অসম্ভব ‘ভয়াবহ’ একজন মুসলিম। আমি তাই মনে করি তার ব্যাপারে আলোচনা আরো হবে এবং হওয়া দরকার হবে। এতে তার কোন ক্ষতি হবে না, ইসলামের ইতিহাসে তাকে কলুষিত ও হতে হবেনা।
আমি যখন মদীনাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, হানাফী মাযহাবের অনুসারী হবার কারণে আমাদের অনেক তীর্যক কথা শুনতে হতো। আমরা আমাদের কিছু শিক্ষকগণের মুখে আবু হানিফার নাম যখন ঘৃণার সাথে শুনতাম, কষ্ট পেতাম। তিনি কি আদৌ আহলুসসুন্নাহ ওয়াল জামাআতের কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ প্রশ্ন উঠাতেন আধুনা সালাফী উলামাগণ। আমাদের ক্লাসেই তাকে দেখানো হতো ‘মুরজিয়াতুল ফুক্বাহা’দের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে। আমাদের কষ্ট হলেও “ইলমি মা হাওলে” এইগুলো আনন্দের বিষয় হতো। এতে আমাদের পড়তে হয়েছে অনেক, জানতে উদবুদ্ধ করা হয়েছে অনেক। আমরা দেখেছি আবু হানীফার হাদীস জ্ঞান নিয়ে কেমন ভাবে বড় বড় ইমামও অনেক অপ্রমানিত কথা বলেছেন। তার আক্বীদাহ নিয়ে কিভাবে অনেক ইমামরা জঘন্য ভাষায় কট্টোর কথা শুনায়েছেন। এসব শুনে বুঝে এখনকার ক্বারাদাওয়ী (র)কে নিয়ে মিথ্যার সয়লাব অবিশ্বাস্য হলেও অসম্ভব মনে হয়না।
ডঃ ইউসুফ ক্বারাদাওয়ী ইন্তেকালের পর কিছু লোক মিডীয়াতে এসে “আলহামদুলিল্লাহ” পড়ে এই মৃত আলিমকে কাফির, দাজ্জাল, বেদ্বীন, মুরতাদ, নিকৃষ্ট এবং ইখওয়ানী অভিধায় চিহ্নিত করে চলেছেন। এতে তারা হয়ত আখিরাতে পদ মর্যাদা বাড়াবার বিশ্বাস করছেন। করতে পারেন। কারণ আল্লাহ তো সবার জন্যই। তিনি এই সব বিষয়ে অবশ্য ফায়সালা করবেন। দুয়া করি আল্লাহ তাআলা সবাইকে সেদিন মাফ করে দিন। যারা তার দোষগুলো প্রচার করতে ইমাম ইবন বাযের নির্দেশ মানতেছেন তাদের জন্যও আমার দুয়া। তবে যে বা যারা একটা ভিডীও বানিয়ে দেখাচ্ছেন ইমাম ইবন বায ইউসুফ ক্বারাদাওয়ীর ইন্তেকালের পরে তার দোষ বলে বেড়াতে অনুমতি দিয়েছেন, এটা একটা ধোঁকা পূর্ণ ভিডীও। কারণ ইবন বায (র) ঐটা ইউসুফ ক্বারাদাওয়ীর ক্ষেত্রে বলেননি, ঐটা একটা সাধারণ ফাতওয়া।
আমি যে মিথ্যাচারটা নিয়ে আজ কথা বলতে চাচ্ছি, তা হলো তিনি নাকি ‘রজম’ অর্থাৎ “বিবাহিত ব্যাভিচারি নর নারীকে পাথর মেরে হত্যা করার ব্যপারে ইসলামি আইনকে” অস্বীকার করেছেন। এই মর্মে তার একটা ভিডীও আরব অনারব ক্বারাদাওয়ী বিরোধিরা ভাইরাল করেছে। সেখানে তিনি নাকি বলেছেন তিনি এই আইনটা মানেন না, এটা ইয়াহুদি শারীয়াত, এটা ইসলামে নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারা যে ভিডীওটা এই ব্যাপারে দেখাচ্ছে, তা একটা লম্বা ভিডীওর অংশ। তিনি দুই যায়গায় এই ব্যপারে কথা বলেছেন। একবার আলজাযিরায় তার লাইভ প্রোগ্রামে, আরেক যায়গায় হলো বৃটেইনে তার বন্ধু ডঃ আযযাম তামীমিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে। তিনি এই ভিডীওতে আসলে শায়খ আবু যুহরা (র) এর একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যেটা ১৯৭২ সালে লিবিয়া তে “তাশরী’ ইসলামি” নামে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে ঘটে ছিলো। এই সেমিনারে সারা দুনিয়ার বাছাই করা আলিমগণ উপস্থিত ছিলেন। ডঃ ইউসুফ ক্বারাদাওয়ী সেখানে একজন প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে অংশ নেন এবং شريعة الإسلام صالحة للتطبيق في كل زمان ومكان অর্থাৎ ইসলামের আইন প্রতিটি যুগে ও প্রতিটি স্থানে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নামে সর্বজন প্রশংসিত একটা প্রবন্ধ পেশ করেছেন। এই প্রবন্ধটা বই হিসবে পরে প্রকাশিত হয়, এবং এই বিষয়ের উপর লেখা এই বইটা আজো সেরা বই হিসেবে পরিগণিত।
তিনি ঐ সেমিনারে কি হয়েছিলো তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তার আত্মজীবনী “ইবনুল ক্বারয়াহ ওয়া আল কুত্তাব” এর তৃতীয় খন্ডের ২৪৯-২৫৯ পৃষ্ঠাগুলোতে। এই চ্যাপ্টারে তার শীরোনামগুলো দেখেনঃ
১- লিবিয়ায় ইসলামি আইন সেমিনার
২- শিমের দানার ঝোল
৩- বায়দা’ শহর
৪- আল্লামাহ আবু যুহরা ও আল্লামাহ আল-খাফীফের সাথে সাক্ষাত
৫- আবু যুহরা সেমিনার একটি "ফিক্বহী বোমা" ফাটালেন
৬- গাদ্দাফীর সাথে দেখা
৭- বায়রুত হয়ে ক্বাতারে প্রত্যাবর্তন
এই অধ্যায়ে তিনি ৫ নাম্বার শীরোনামে যে কথাটা বলেছেন, তার আলোচনাটাই ছিলো ঐ ভিডীওর মূল কথা। তিনি গল্পটা বলেছেন এই ভাবেঃ
وقصة ذلك: أن الشيخ رحمه الله وقف في المؤتمر، وقال: إني كتمت رأيًا فقهيًّا في نفسي من عشرين سنة، وكنت قد بحت به للدكتور عبد العزيز عامر، واستشهد به قائلًا: أليس كذلك يا دكتور عبد العزيز؟ قال: بلى. وآن لي أن أبوح بما كتمته، قبل أن ألقى الله تعالى، ويسألني: لماذا كتمت ما لديك من علم، ولم تبينه للناس؟
قال: هذا الرأي يتعلق بقضية «الرجم» للمحصن، في حد الزنا، فرأيي أن الرجم كان شريعة يهودية، أقرها الرسول في أول الأمر، ثم نسخت بحد الجلد في سورة النور.
قال الشيخ: ولي على ذلك أدلة ثلاثة:
الأول: أن الله تعالى قال في سورة النساء: {فَإِذَآ أُحۡصِنَّ فَإِنۡ أَتَيۡنَ بِفَٰحِشَةٖ فَعَلَيۡهِنَّ نِصۡفُ مَا عَلَى ٱلۡمُحۡصَنَٰتِ مِنَ ٱلۡعَذَابِ} [النساء: 25]، والرجم عقوبة لا تتنصف، فثبت أن العذاب في الآية هو المذكور في سورة النور: {وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ} [النور: 2].
والثاني: ما رواه البخاري في «جامعه الصحيح»، عن عبد الله بن أوفى: أنه سئل عن الرجم؟ هل كان بعد سورة النور أو قبلها؟ فقال: لا أدري.
فمن المحتمل جدًّا أن تكون عقوبة الرجم كانت مقررة قبل نزول آية النور التي نسختها.
الثالث: أن الحديث الذي اعتمدوا عليه، وقالوا: إنه كان قرآنًا، ثم نسخت تلاوته وبقي حكمه: أمر لا يقره العقل، لماذا تنسخ التلاوة والحكم باق؟ وما قيل: إنه كان في صحيفة فجاءت الداجن وأكلتها: لا يقبله منطق.
وما أن انتهى الشيخ من كلامه حتى ثار عليه أغلب الحضور، وقام من قام منهم، ورد عليه بما هو مذكور في كتب الفقه حول هذه الأدلة. ولكن الشيخ ثبت على رأيه كالطود الأشم.
” শায়খ আবু যুহরা(র) সম্মেলনে দাঁড়ালেন, এবং বললেন, আমি একটা ফিক্বহি অভিমত বিশ বছর ধরে গোপন করে রেখেছিলাম, এই ব্যপারে আমি ডঃ আব্দুল আযীয আমের কেও বলেছি। আব্দুল আযীয আপনাকে আমি এটা বলিনি? (আব্দুল আযীয) বললেন হ্যাঁ বলেছেন। (এরপর শায়খ বলে গেলেন) এখন গোপন করা বিষয়টি আমি আল্লাহর সাথে দেখা করার আগে আপনাদের বলে যেতে চাই। হয়তঃ আল্লাহ আমাকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমার কাছে যে ইলম ছিলো তা কেন গোপন করলে, মানুষকে কেন বলে আসোনি?
এরপর তিনি বললেন, এই অভিমতটা হলো বিবাহিত ব্যভিচারির পাথর মেরে হত্যা করা সম্পর্কে। আমার মত হলো এই পাথর মেরে হত্যা করার আইন টা ছিলো ইয়াহুদিদের শরীয়াতে, যা রাসূল (সা) প্রথম দিকে ঠিক রেখেছিলেন। পরে যখন সূরাহ নূরে দোররাহ মারার হুকুম অবতীর্ণ হয়, তখন হুকুম নসখ হয়ে যায়।
শায়খ আবু যুহরা বলেন, এই ব্যপারে আমার তিনটি দলীল আছেঃ
১- আল্লাহ তাআলা সূরা নিসাতে বলেছেনঃ “অতঃপর যখন তারা বিবাহ বন্ধনে এসে যায়, তখন যদি কোন অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদেরকে স্বাধীন নারীদের “অর্ধেক” শাস্তি ভোগ করতে হবে”। (আয়াতঃ ২৫)। এখন রজম বা পাথর মেরে হত্যা করা এমন এক শাস্তি যার অর্ধেক করা যায় না। এর দ্বারা প্রমান হয় এই আয়াতে বর্ণিত শাস্তি (রজমের অর্ধেক না হয়ে) সূরা নূরের বর্ণিত আয়াতের শাস্তি টাই প্রয়োগ হবে যাতে বলা হয়েছে, “তাদের শাস্তি যেন মু’মিনদের একটা দল প্রত্যক্ষ করে। (সূরা নূরঃ২)
২- ইমাম বুখারী তার “আল জামি’ আসসাহীহ” গ্রন্থে আব্দুল্লাহ ইবন আওফা (রা) থেকে একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন, তাকে রাজম বা পাথর মেরে হত্যা করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, এটা কি সূরা নূরের আগে নাকি পরে? তিনি বলেন আমি জানিনা।
এ থেকে ধরা যায় যে রজমের শাস্তিটা সূরা নূরের আগে সাব্যস্ত শাস্তি ছিলো, পরে এটা মানসূখ হয়ে যায়।
৩- রজমের ব্যাপারে যে হাদীসের উপর তারা নির্ভর করেছেন এবং বলেছেনঃ এটা আগে কুরআনের আয়াত ছিলো, তারপর এটার তিলাওয়াত মানসূখ করা হয়েছে, তবে হুকুম বাকি আছে। এই কথাটা আক্বল মানেনা। তিলাওয়াত মানসূখ হয়ে হুকুম বাকি থাকবে কি জন্য? এই সম্পর্কে যে আরেকটা কথা বলা হয় এই কথাটা কুরআনের কপিতে ছিলো কিন্তু দাজিন (গৃহপালিত পশু পাখি, যেমন ছাগল) তা খেয়ে যায়। কথাটা যুক্তিতে খাটেনা। (এই কথাটা একটি হাদীসে আছে, যেখানে আইশা (রা) বলেনঃ
لقد نزلت آية الرجم ورضاعة الكبير عشرا ولقد كان في صحيفة تحت سريري فلما مات رسول الله صلى الله عليه وسلم وتشاغلنا بموته دخل داجن فأكلها.
রজম সম্পর্কে এবং বড় হবার পর কেও কারো দুধ দশ চুমুক খেলে রিদাঈ মা প্রমানিত হবে এসম্পর্কে অবশ্যই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এটা আমার খাটের নিচে রাখা সাহিফাতে লেখা ছিলো কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা) ইন্তেকালের পর তার মৃত্যু নিয়ে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি, এবং একটা “দাজিন” ঢুকে পড়ে এবং ঐটা খেয়ে ফেলে। (ইবন মাজাহঃ১/৬২৫, দারাকুতনী ৪/১৭৯, আবু ইয়ালা ৮/৬৪, তাবারানীঃ আওসাত ৮/১২)
(ক্বারাদাওয়ী বলেন) শায়খ আবু যুহরা তার কথা শেষ করার সাথে সাথে অধিকাংশ আলিম সেখানে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। কেও কেও দাঁড়িয়ে গেলেন, কেও কেও ফিক্বহের কিতাবগুলোতে এই দলীলগুলোর ব্যপারে বর্ণিত বক্তব্য দিয়ে খন্ডন করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু শায়খ আবু যুহরা তার মতের উপর উঁচু পাহাড়ের মত শক্ত রইলেন”।
তার ভিডীওতে এই পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। যা সবটাই শায়খ আবু যুহরার বক্তব্য। এটা শায়খ ক্বারাদাওয়ীর বক্তব্য নয়। আর ঐ ভিডীওতে ক্বারাদাওয়ী দাবী করেন নি যে এটা তার বক্তব্য। অথচ যারা বক্তব্যটা ভিডীও তে বাংলা তরজমা করেছে, তারা এমনভাবে দেখায়েছে যে এটা শায়খ ক্বারাদাওয়ীর বক্তব্য যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। যেসব ব্যক্তি এই মিথ্যা ও শঠতার আশ্রয় নিয়েছে, তারা আর যাই হোক সত্যবাদী হতে পারেনা।
হাঁ, শায়খ ক্বারাদাওয়ীর এই ব্যপারে একটা নিজস্ব মত আছে, যার সাথে আমরা যারা হানাফী মাযহাবের উসূল মানি বা যারা চার ইমামের উসূল মেনে চলে কিংবা আহলে হাদীস, তারাও খুব সানন্দে নেবে তা মনে করিনা। তবে এ কথা আমি নিজেই তার কাছে শুনে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত যে তিনি আয়াতুর রজম ও রজম সংক্রান্ত হাদীস অস্বীকার করেন নি। এ সম্পর্কে তিনি কি বলেছেন? সেটাও এই গ্রন্থে এই ঘটনা বর্ণনা করার পরে বলেছেন। তিনি বলেনঃ
“ وقد لقيته بعد انفضاض الجلسة، وقلت له: يا مولانا، عندي رأي قريب من رأيك، ولكنه أدنى إلى القبول منه. قال: وما هو؟
قلت: جاء في الحديث الصحيح: «البكر بالبكر: جلد مائة ونفي سنة، والثيب بالثيب: جلد مائة، ورجم بالحجارة.
قال: وماذا تأخذ من هذا الحديث؟ قلت: تعلم فضيلتك أن الحنفية قالوا في الشطر الأول من الحديث: الحد هو الجلد، أما التغريب أو النفي، فهو سياسة وتعزير، موكول إلى رأي الإمام، ولكنه ليس لازمًا في كل حال.
وعلى هذا نقول في الشق الثاني من الحديث: إن الحد هو الجلد، والرجم سياسة وتعزير، مثل التغريب والنفي، فنثبت ما جاءت به الروايات من الرجم في العهد النبوي، فقد رجم يهوديين، ورجم ماعزًا، ورجم الغامدية، وبعث أحد أصحابه في قضية امرأة العسيف، وقال له: «اغد يا أنيس إلى امرأة هذا، فإن اعترفت فارجمها . وكذلك ما روي أن عمر رجم من بعده، وأن عليًّا رجم كذلك. ولكنا نفسر هذه الوقائع على أنها لون من التعزير والسياسة الشرعية. والأحكام التعزيرية ليست لازمة دائمًا، كما هو معلوم.
ولكن الشيخ لم يوافق على رأيي هذا، وقال لي: يا يوسف، هل معقول أن محمد بن عبد الله الرحمة المهداة، يرمي الناس بالحجارة حتى الموت؟ هذه شريعة يهودية، وهي أليق بقساوة اليهود. “
“আমি বৈঠক সরে যাওয়ার পর শায়খ আবু যুহরার সাথে সাক্ষাত করলাম এবং তাকে বললামঃ মাওলানা, আমার একটা অভিমত আছে যা আপনার মতের কাছাকাছি, যা আপনার অভিমতের চেয়ে গ্রহন করার অধিকতর নিকটবর্তি। তিনি বললেন, কি সেটা? আমি বললামঃ সহীহ হাদীসে এসেছে অবিবাহিত ছেলে মেয়ে ব্যভিচার করলে এক শত দোররা এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর করতে হবে। আর বিবাহিত নারী পুরুষ করলে তাদের একশত দোররা এবং পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। (বুখারি ৬৮১৩, মুসলিম ১৭০২)
তিনি বললেন, এই হাদীস থেকে তুমি কি সারমর্ম নিয়েছো? আমি বললামঃ শায়খ জানেন এই হাদীসের প্রথম অংশ সম্পর্কে হানাফি মাযহাব বলে, ব্যাভিচারের আইনগত হাদ্দ বা শাস্তি হল এক শত দোররা আর দেশান্তর হলো সিয়াসাত ও তা’যীর, মানে রাস্ট্রীয় সিদ্ধান্তের শাস্তি, যা পুরোটাই নির্ভর করবে রাস্ট্র প্রধানের উপর। অথচ ঐটাই সব সময় হতে হবে এমনটা নয়।
এই (হানাফী মাযহাবের ফাতওয়ার উপর ভিত্তি করে) আমরা বলতে পারি হাদীসের দ্বিতীয় অংশে বলা এক শত দোররা এটাই প্রতিষ্ঠিত ইসলামি আইনগত শাস্তি (হাদ্দ) এবং রজম হলো দেশান্তর করার মত সিয়াসাত ও তা’যির বা রাস্ট্রীয় সিদ্ধান্তের শাস্তি। এর দ্বারা যে সব হাদীস এসেছে সেগুলোকেও আমরা প্রমানিত সত্য মেনে নিতে পারি। নবীর (সা) যুগে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। তিনি দুইজন ইয়াহুদিকে রজম করেছিলেন, মাইযও গামেদী গোত্রের মহিলাকেও রজম করেছিলেন। তিনি একজন সাহাবিকে পাঠিয়ে “কর্মচারীর স্ত্রী”র ব্যপারে বলেছিলেন, উনায়স, তুমি সকালে ঐ মেয়েটার কাছে যাও, সে যদি তার ব্যভিচারের কথা স্বীকার করে, তাহলে রজম করে মেরে ফেলো। এমনই ভাবে আমাদের নবীর (সা) পরে উমার (রা) ও রজম করেন, আলী (রা) ও রজম করেছিলেন। কিন্তু আমরা এই শাস্তিগুলোকে “তা’যীর” ও “সিয়াসাত শারিইয়্যার” মধ্যে গণ্য করার ব্যাখ্যা করতে পারি। আর এটা জানা যে, তা’যীর সব সময় বাধ্যতা মূলক নয়।
কিন্তু শায়খ আবু যুহরা আমার এই অভিমতের সাথে একমত হলেন না। এবং আমাকে বললেন, ইউসুফ, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ (সা) যিনি ছিলেন রহমতের ভান্ডার, এটাকি যুক্তিতে খাটে তিনি একজন মানুষকে মরণ পর্যন্ত তার দিকে পাথর ছুড়বেন? এটা আসলে ইয়াহুদিদের শাস্তি, যা ওদের কঠোরতার সাথে খাটে”।
এই হলো ইউসুফ ক্বারাদাওয়ীর মত। তিনি রজমকে অস্বীকার করেন নি, বরং যিনি অস্বীকার করেছেন তার সাথে তর্কে গেছেন। আমি নিজেই ডঃ ক্বারাদাওয়ীর কাছে এই ব্যাপারে শুনেছি, এবং সেই ২০ বছর আগেও তিনি এই জবাবই দিয়েছিলেন।
এখন ঐ সব সত্যনিষ্ঠ ও দাবী করা বড় বড় শায়খদের কাছে আমি প্রশ্ন করি, আপনি ক্বারাদাওয়ীকে অপছন্দ করেন বলে তার নামে এমন মিথ্যাচার করবেন? তার ভিডীও রেকর্ডে বলা বক্তব্যকে বিকৃত করে অনুবাদ করে তার বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপাবেন? কোন ধরণের সহীহ পথের আহবানকারী হলেন আপনি। এ কেমন রহমতের অনুসারী হলেন যে, তার মৃত্যুতে তাকে গালাগালি করবেন ও কাফির মুরতাদ জাহান্নামি মরেছে বলে সাঊদী ফাতওয়া নিয়ে এসে তার মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করে আলহামদুলিল্লাহ বলবেন? একজন আলিমে দ্বীনকে অমুসলিম বানাতে মিথ্যাও বলবেন, এই কেমন নিষ্ঠুরতা আপনাদের?!!
📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘📚📖📘
আমার প্রিয় বাংলা বই হোয়াইটসআপ গ্রুপে যুক্ত হতে এখানেক্লিক করুন, টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন এবং ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে এখানে ক্লিক করুন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।