একঃ হযরত
আবু বকর রা. পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী
সাহাবী। সূরা আত-তাওবার ৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হযরত আবু বকর রা. কে "ছানিয়া
ইছনাইন" (দুজনের দ্বিতীয়) বলে রাসূল সা. এবং হযরত আবু বকর রা. কে ইঙ্গিত
করেছেন এবং এ আয়াতেই "লিসাহিবিহি" (তার সাথী) বলে হযরত আবু বকর রা. কে সম্বোধন করেছেন। দুনিয়ার
ইতিহাসে এ মর্যাদা কি অন্য কেহ লাভ করতে পেরেছেন?
দুইঃ হযরত
আবু বকর রা. রাসূলের জবানে মিরাজ সফরের কাহিনী শুনামাত্র বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস
করেছিলেন বলেই রাসূল সা. তাকে "সিদ্দিক" উপাধি দান করেন।
তিনঃ আবু
দাউদ শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে রাসূলের হাদীস বর্ণিত হয়েছে; রাসূল সা.
ইরশাদ করেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে সর্ব
প্রথম যিনি বেহেশতে প্রবেশ করবেন তিনি হলেন হযরত আবু বকর রা. ।
চারঃ তিরমিযি
শরীফে হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ রা. থেকে এবং ইবনে মাজা শরীফে হযরত সাঈদ বিন
যায়েদ রা. থেকে হাদীস বর্ণনা হয়েছে। দশজন বিশিষ্ট সাহাবীকে রাসূল সা. বেহেশতের
সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১নম্বর এ রয়েছেন হযরত আবু বকর রা. ।
পাচঃ ৮ টি বেহেশতের দরজা যার জন্য
উন্মুক্ত করে দেয়া হবে তিনি হলেন হযরত আবু বকর রা. ।
ছয়ঃ
তিরমিজি শরীফে হযরত আয়েশা রা. থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সা. হযরত আবু বকর
রা. কে সম্বোধন করে বলেছেন "আনতা আতীকুল্লাহ মিনান নার” অর্থাৎ তুমি দোযখ
থেকে মুক্ত।
সাতঃ হযরত
আবু বকর রা. ৪০ হাজার দিরহাম দিয়ে হযরত
বিলাল রা., হযরত খাব্বাব রা.,
হযরত আম্মাররা., হযরত সুমাইয়ারা., হযরত
সুহাইব রা. এবং আবু ফুকাইহ প্রমূখ দাস-দাসীকে
দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিয়ে ছিলেন।
আটঃ হযরত
আবু বকর রা. এর দাওয়াত ও তাবলীগে কুরাইশ
বংশের বিশিষ্ট যুবক হযরত উসমান রা., হযরত যুবাইর রা., হযরত
আব্দুর রহমান রা.,
হযরত সাদ রা. এবং হযরত তালহা রা. সহ আরো অনেকে ইসলাম গ্রহণ
করেছিলেন।
নয়ঃ মক্কায়
রাসূল সা. এর অভ্যাস ছিল প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় আবু বকর রা. এর বাড়ি গমন করতেন।
দশঃ রাসুল সা. এর মদিনায় হিজরতের আভাস পেয়ে
হযরত আবু বকর রা. নিজস্ব অর্থে ভালো ২ টি উট কিনে রেখেছিলেন।
এগারোঃ হযরত
আবু বকর রা. এর বাড়ি থেকেই রাসূলের হিজরতের সফর শুরু হয়েছিল।
বারোঃ হযরত
আবু বকর রা. সাওর পর্বতের গুহায় প্রথম প্রবেশ করে সাপ বিচ্চু আছে কিনা তা দেখে
নিলেন। ছিদ্রগুলো কাপড় দিয়ে বন্ধ করেন। তারপর রাসূলকে
প্রবেশ করতে বলেন।
তেরঃ (সাওর
পর্বতের গুহায়) গুহার ১টি ছিদ্র ঢাকা ছিলনা। রাসূল সা. ক্লান্ত হয়ে আবু বকর রা. এর উরুর উপর মাথা মোবারক রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। বিষাক্ত
সাপ আবু বকর রা. এর পায়ে দংশন করল। কিন্তু রাসূলের ঘুম ভেঙে যেতে পারে এ ভয়ে আবু বকর রা. পা নাড়ালেন না।
চৌদ্দঃ হযরত
খাদীজা রা. এর ইন্তেকালে রাসূল সা. কে
বিমর্ষ দেখে হযরত আবু বকর রা. নিজ কন্যা হযরত আয়শা রা. কে তার সাথে বিবাহ দিলেন।
পনেরঃ হযরত
আবু বকর রা. রাসূল সা. এর সাথে বদর, উহুদ, খন্দক, হুনায়ন
ও তাবুক সহ সবক’টি সামরিক অভিযানে অংশ নেন।
ষোলঃ বদর
যুদ্ধে রাসূল সা. এর জন্য যে তাবু নির্মাণ করা হয়েছিল, সে তাবুতেই শুধু আবু বকর রা.
রাসুলের সাথে ছিলেন।
সতেরোঃ হযরত
আবু বকর রা. সংকটপূর্ণ তাবুক যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর পতাকাবাহী ছিলেন। এ যুদ্ধে তার
সকল মালামাল রাসূলের সামনে পেশ করলেন।
আঠারোঃ নবম
হিজরীতে ইসলামের প্রথম হজ্ব অনুষ্ঠানে রাসূল সা. হযরত আবু বকর রা. কে “আমীরুল
হাজ্জ” নিয়োগ করেন।
উনিশঃ রাসূল সা.
তার অন্তিম রোগশয্যায় হযরত আবু বকর রা. কে মসজিদে নববীর ইমামতির দায়িত্ব দেন। তিনি
রাসূল সা. এর জীবদ্দশায় ১৭ ওয়াক্ত নামাযের ইমামতি করেন।
বিশঃ রাসূল সা.
এর ইন্তেকালে হযরত ওমর রা. সহ অনেক সাহাবী হতভম্ব হয়ে গিয়ে কিছু অবাঞ্ছিত উক্তি
করতে লাগলেন। তখন আবু বকর রা. মিম্বারে দাড়িয়ে সূরা আলে ইমরানের ১৪৪ নম্বর আয়াত
পড়ে বক্তব্য রাখলে সবাই শান্ত হয়ে যান।
একুশঃ
রাসূলের ইন্তিকালের পর “সাকীফা বানী সাইদা” নামক স্থানে পরবর্তী
খলীফা মনোয়ন নিয়ে যখন মুহাজির এবং আনসারদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল, তখন আবু বকর রা.
সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে সারগর্ভ বক্তব্য দেন। মতবিরোধ দূর হয়ে সর্বসম্মতিতে তিনি
খলীফা নির্বাচিত হন।
বাইশঃ ৪
খলীফার মধ্যে শুধুমাত্র আবু বকর রা. কে “খলীফতুল রাসুলিল্লাহ” লকবে ভূষিত করা হয়। অন্যান্যদেরকে
“আমীরুল মুমিনীন” উপাধি দেয়া হয়।
তেইশঃ যাকাত
অস্বীকারকারী “আব্বাস ও জুবইয়ান” গোত্রদ্বয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
চব্বিশঃ চার (মিথ্যা) নবী আসওয়াদ, মুসায়লামা, তুলাইহা এবং সাজার বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর রা. যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
পঁচিশঃ তিনি
মহাগ্রন্থ আল কুরআনকে সর্বপ্রথম গ্রন্থাকারে সংকলন করেন।
ছাব্বিশঃ একটি রেওয়াতে উল্লেখ আছে ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর বিন খাত্তাব রা. বলেছেনঃ আমার সারা জীবনের এবাদত বন্দেগী হযরত
আবু বকর রা. এর একরাত (সাওর পর্বতের
গুহায়) এবং একদিনের (তাবুক অভিযানে তার সকল সম্পদ দান) সমকক্ষ হতে পারবে
না।(রাযীন)
সাতাশঃ আবু
বকর রা. রাসূল সা. এর ডান পাশে মাকবারাতুল
নবীতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
আটাশঃ
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম রাসূল সা. কবর থেকে উঠবেন। তারপরই হযরত
আবু বকর রা. রাসূলের ডান হাত মুবারক ধরে
উঠবেন।
উনত্রিশঃ হাশরের ময়দানে হযরত আবু বুকর রা. হাউজে কাওছারের পাশে রাসুল সা. এর সাথে
থাকবেন।
ত্রিশঃ রাসুল সা.
বলেছেনঃ আমি প্রতিটি মানুষের ইহসান পরিশোধ করেছি। কিন্তু আবু বকরের ইহসান সমূহ এমন
যে, তা পরিশোধ করতে আমি অক্ষম। তার প্রতিদান আল্লাহ দিবেন।
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।