শহীদি মিছিলের এক অগ্রসেনানী শহীদ বেলাল, ২০০২ সালের ১২ মে তিনি এই মিছিলে যোগ দেন। সেদিন ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে রক্ত দিয়ে লিখে গেছেন প্রিয় নামটি “শহীদ বেলাল” চলে গেছেন জান্নাতে তাঁর প্রভুর সন্নিকটে। শহীদ বেলাল ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ফকিরবাজার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। কুখ্যাত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী সর্বজনধিকৃত শিপন কসাইয়ের ধারালো ছুরি অকালে ঝরিয়ে দেয় এই সম্ভাবনাময় তরুণটিকে, কুপিয়ে হত্য করা হয় তাকে।
যে অপরাধে বেলালকে হত্যা করা হলোঃ
দশম শ্রেণীর ছাত্র শহীদ বেলাল। এই বয়সে কিইবা অপরাধ করতে পারেন তিনি। নিষ্পাপতা তাঁর চেহারায় প্রজ্বল ছিল। তারপরেও তাকে এই দুনিয়া হতে খুব অল্প বয়সেই বিদায় নিতে হল। এলাকাবাসী সাক্ষী, খুনি শিপন তার ছাত্রলীগ নামধারী বখাটে বাহিনী নিয়ে স্কুলের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করত। মেয়েরা স্কুলে যাওয়া আসার পথে এসব বখাটেদের খারাপ আচরণের শিকার হত। সন্ত্রাসী শিপন এক পর্যায়ে স্কুল ক্যাম্পাসের ভেতর আড্ডা জমানোর ব্যবস্থা করতে লাগল। এমতাবস্থায় বেলাল তাঁর সহপাঠিদের নিয়ে শিক্ষকদের সহযোগিতায় তাদের এহেন কার্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে খুনি শিপন প্রকাশ্য দিবালোকে ফকিরবাজারে বেলালকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে এবং শাহাদাত বরণ করেন প্রিয় মুখ, এলাকার সকলের অত্যন্ত স্নেহের ধন বেলাল হুসাইন।
শহীদ বেলাল ছিলেন সত্যের প্রতীকঃ
শহীদ বেলাল ছিলেন স্কুলের সেরা মেধাবী ছাত্র। শিক্ষকদের আস্থাভাজন, এলাকার মানুষের প্রিয় সন্তান এবং ছাত্র-ছাত্রীদের প্রিয় সহপাঠি। তিনি ছিলেন সত্যের প্রতীক, মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতেন। যখন স্কুলে জোহরের আজান হতো তখন অন্য ছাত্রদের নিয়ে মসজিদে নামাজের জন্য যেতেন। সকলকে কল্যাণমূলক কাজ করতে সব সময় উৎসাহিত করতেন। পবিত্র কুরআনের ঘোষণাঃ “ তার কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে যে মহান আল্লাহর পথে ডাকে, নেক আমল করে আর ঘোষণা করে আমি একজন মুসলমান।” ‘শহীদ বেলাল’ কুরআনের এই বাণীকে যাথার্থই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। আর তাইতো সে আলোকে জীবনকে সাজিয়ে তুলতেও ছিলেন সচেষ্ট। কিন্তু সমাজের জঘন্য কীট বখাটেরা তাঁকে অঙ্কুরেই শেষ করে দিল এবং ফোঁটার আগেই গোলাপ কুড়িটিকে ছিড়ে ফেলল বোটা থেকে।
আজও থামেনি সেই কান্নাঃ
শহীদ বেলালের মায়ের কান্না আজও থামেনি। আমি একদিন একান্তে বসে শহীদের মায়ের কাছ থেকে শহীদ
সম্পর্কে কিছু শুনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু
তিনি বেলালের নাম শোনামাত্রই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। নিজেকে আর থামাতে পারলেন না।
অনেক্ষণ ধরে কাঁদলেন তিনি। আমারও
চোঁখ বেয়ে নেমে এলো বাঁধভাঙ্গ অশ্রু। তিনি
আর কোন কথাই বলতে পারেননি। শহীদের
মায়ের কাছ থেকে শহীদের ব্যাপারে কিছুই জানা হলো না।
শহীদ বেলালের ভাইদের ভাষ্য হল আমাদের আব্বা
বেলালের জন্য মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়তেন। এক
সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আর এ অবস্থাতেই মারা যান তিনি।
মহান আল্লাহ শহীদ বেলালকে চিরস্থায়ী জান্নাতবাসী করুন এবং তাঁর স্বজনদেরও ধৈর্য্য ধরার তাওফিক দান করুন। শহীদ বেলাল সহ একশত একচল্লিশ জন শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলার জমিনে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করুন। আমীন!
লেখকঃ
মুহাম্মদ দেলাওয়ার হুসাইন জয়নুল, তদানিন্তন
সেক্রেটারী, বাংলাদেশ
ইসলামী ছাত্রশিবির, মৌলভীবাজার
জেলা।
(ইসলামী ছাত্রশিবির মৌলভী বাজার জেলা শাখা
কর্তৃক ২০১২ সালে প্রকাশিত “প্রত্যয়ে পথচলা” ম্যাগাজিন থেকে লেখাটি সংগৃহিত)
শহীদ বেলাল সম্পর্কে আরো লেখাঃ
No comments:
Post a Comment
আমার প্রিয় বাংলা বই-এর যে কোন লেখাতে যে কোন ত্রুটি বা অসংগতি পরিলক্ষিত হলে দয়া করে আমাদের লিখুন।