সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী রচিত অনবদ্য তাফসীর গ্রন্থ “তাফহীমুল কুরআন”। তাফহীমূল কুরআনের সূরা হুদ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে সম্ভাব্য প্রশ্নাবলী। সকলন করেছেনঃ জনাব আব্দুল্লাহিল কাফি।
1. “আমি দেখছি আপনি বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন,
এর কারণ কি?” কে কাকে এই প্রশ্ন করেছিলেন এবং জবাবে তিনি কি বলেছিলেন?
উত্তরঃ আবু
বকর
(রা)
রাসুল (সঃ) কে এই প্রশ্ন করেছিলেন এবং জবাবে তিনি বলেছিলেন “সূরা হূদ ও তারই মতো বিষয়বস্তু
সম্বলিত সূরাগুলো আমাকে বুড়ো করে দিয়েছে।”
2. সূরা হুদ কোন সমসময়ে নাযিল হয়েছিল?
উত্তরঃ এটা সূরা ইউনূসের সমসময়ে
নাযিল হয়েছিল।
3. কোন আশংকা রাসুল (সঃ) কে অস্থির করে তুলছিল?
উত্তরঃ এ আশংকা তাঁকে অস্থির করে
তুলছিল যে, আল্লাহর
দেয়া অবকাশ কখন না জানি খতম হয়ে যায় এবং সেই শেষ সময়টি এসে যায় যখন আল্লাহ
কোন জাতির ওপর আযাব নাযিল করে তাকে পাকড়াও করার সিদ্ধান্ত নেন।
4. হুদ সূরাটি পড়ার সময় কাকে শেষ সাবধান বাণী শুনানো হয়েছে?
উত্তরঃ এ সূরাটি পড়ার সময় মনে হতে
থাকে যেন একটি বন্যার বাঁধ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে এবং যে অসতর্ক জনবসতিটি এ
বন্যার গ্রাস হতে যাচ্ছে তাকে শেষ সাবধান বাণী শুনানো হচ্ছে।
5. হুদ সূরাটির ভাষণের
বিষয়বস্তু কোন সূরার অনুরূপ এবং কি কি?
উত্তরঃ ভাষণের বিষয়বস্তু সূরা
ইউনূসের অনুরূপ।
অর্থাৎ দাওয়াত, উপদেশ ও
সতর্কবাণী।
6. সূরা হুদ ও সূরা ইউনূসের বিষয়বস্তুর মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তরঃ পার্থক্য হচ্ছে, সূরা ইউনূসের
তুলনায় দাওয়াতের অংশ এখানে সংক্ষিপ্ত, উপদেশের মধ্যে যুক্তির পরিমাণ কম ও ওয়াজ-নসীহত
বেশী এবং সতর্কবাণীগুলো বিস্তারিত ও বলিষ্ঠ।
7. সূরা হুদে কি সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে?
উত্তরঃ সতর্কবাণী উচ্চারিত
হয়েছেঃ আযাব আসতে যে দেরী হচ্ছে, তা আসলে একটা অবকাশ মাত্র। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদের এ অবকাশ দান করছেন। এ অবকাশকালে যদি তোমরা সংযত ও সংশোধিত না হও তাহলে এমন আযাব আসবে যাকে
হটিয়ে দেবার সাধ্য কারোর নেই এবং যা ঈমানদারদের ক্ষুদ্রতম দলটি ছাড়া বাকি সমগ্র
জাতিকে দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে।
8. সূরা হুদে সতর্কবাণী উপলব্ধি করাবার জন্য কোন কোন সম্প্রদায়ের ঘটনাবলীর সাহায্য গ্রহণ করা হয়েছে বেশী করে?
উত্তরঃ সতর্কবাণী উপলব্ধি করাবার জন্য সরাসরি
সম্বোধন করার তুলনায় নূহের জাতি, আদ, সামুদ, লূতের জাতি, মাদ্য়ানবাসী ও ফেরাউনের সম্প্রদায়ের ঘটনাবলীর সাহায্য
গ্রহণ করা হয়েছে বেশী করে।
9. ঈমান ও কুফরীর চূড়ান্ত ফায়সালার সময় দ্বীনের প্রকৃতির
দাবী কি?
উত্তরঃ যখন ঈমান ও কুফরীর চূড়ান্ত ফায়সালার সময় এসে পড়ে তখন
দ্বীনের প্রকৃতির এ দাবীই জানাতে থাকে যে,
মু’মিন নিজেও যেন পিতা-পুত্র ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভুলে যায় এবং আল্লাহর
ইনসাফের তরবারির মতো পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে একমাত্র সত্যের সম্বন্ধ ছাড়া অন্য সব
সম্বন্ধ কেটে ছিঁড়ে দূরে নিক্ষেপ করে। এহেন অবস্থায় বংশ ও রক্ত
সম্বন্ধের প্রতি সামান্যতম পক্ষপাতিত্বও হবে
ইসলামের প্রাণসত্তার সম্পর্ক বিরোধী।
10. কতদিন পর কোণ ময়দানে মক্কার মুসলমানরা ঈমান ও কুফরীর
চূড়ান্ত ফায়সালার প্রদর্শনী করেছিলেন?
উত্তরঃ তিন চার বছর পরে বদরের
ময়দানে মক্কার মুসলমানরা এ শিক্ষারই প্রদর্শনী করেছিলেন।
11. আরবী ভাষায় “ফরমান” শব্দটি কি
অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তরঃ আরবী ভাষায় “ফরমান” শব্দটি কেবলমাত্র
কিতাব ও লিপি অর্থে ব্যবহৃত হয় না বরং হুকুম ও বাদশাহী ফরমান অর্থেও ব্যবহৃত হয়। কুরআনের বিভিন্ন জায়গায়
এ শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
12. এখানে “ফরমান” শব্দটি দিয়ে
কি বুঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ এখানে “ফরমান” শব্দটি দিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো পাকা ও অকাট্য কথা এবং
সেগুলোর কোন নড়চড় নেই। প্রকৃত ও হুবহু সত্য বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যেকটি কথা খুলে খুলে ও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। বক্তব্য জটিল,
বক্র ও অস্পষ্ট নয়। প্রত্যেকটি কথা আলাদা আলাদা করে
পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা হয়েছে।
13. আল্লাহ কাকে পবিত্র জীবন দান করবেন?
উত্তরঃ যে ব্যক্তিই ঈমান সহকারে সৎকাজ করবে,
সে পুরুষ হোক বা নারী,
আল্লাহ তাকে পবিত্র জীবন দান করবেন।
14. “লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে ছড়িয়ে
থাকা একটি বিভ্রান্তি দূর করাই এর উদ্দেশ্য”- বিভ্রান্তিটি কি?
উত্তরঃ বিভ্রান্তিটি হচ্ছে, আল্লাহ ভীতি, সততা,
সাধুতা ও দায়িত্বানুভূতির পথ অবলম্বন
করলে মানুষ আখেরাতে লাভবান হলেও হতে পারে কিন্তু এর ফলে তার দুনিয়া একদম বরবাদ
হয়ে যায়।
15. “এ সঠিক পথ অবলম্বন করলে তোমাদের
শুধুমাত্র আখেরাতই নয়, দুনিয়াও
সমৃদ্ধ হবে”- সঠিক
পথটি কি?
উত্তরঃ আখেরাতের মতো ও এ দুনিয়ায় যথার্থ মর্যাদা ও সাফল্যও এমনসব লোকের জন্য
নির্ধারিত, যারা আল্লাহর প্রতি যথার্থ
আনুগত্য সহকারে সৎ জীবন যাপন করে, যারা পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত চরিত্রের অধিকারী হয়, যাদের ব্যবহারিক জীবনে ও লেনদেনে কোন ক্লেদ ও গ্লানি নেই,
যাদের ওপর প্রত্যেকটি বিষয়ে ভরসা করা
যেতে পারে, যাদের থেকে প্রত্যেক
ব্যক্তি কল্যাণের আশা পোষণ করে এবং কোন ব্যক্তি বা জাতি যাদের থেকে অকল্যাণের
আশঙ্কা করে না।
16. কুরআন মজীদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার জীবন সামগ্রী কয় প্রকারের ও
কি কি?
উত্তরঃ কুরআন মজীদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার জীবন সামগ্রী দু’প্রকারের। এক
প্রকারের জীবন সামগ্রী আল্লাহ বিমুখ লোকদেরকে ফিত্নার মধ্যে নিক্ষেপ করার জন্য
দেয়া হয়ে থাকে। এর
মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে তারা নিজেদেরকে দুনিয়া পূজা ও আল্লাহ বিস্মৃতির মধ্যে আরো
বেশী করে হারিয়ে যায়। দ্বিতীয় প্রকারের জীবন সামগ্রী মানুষকে আরো বেশী সচ্ছল,
সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে তাকে তার আল্লাহর
আরো বেশী কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত করে।
17. আল্লাহ কাকে বড় মর্যাদা দান করবেন?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি চরিত্রগুণে ও নেক আমলে যত বেশী এগিয়ে যাবে আল্লাহ তাকে ততই বড়
মর্যাদা দান করবেন।
18. আকাশ ও পৃথিবী যদি প্রথমে না থেকে থাকে এবং পরে সৃষ্টি করা
হয়ে থাকে তাহলে প্রথমে কি ছিল?
উত্তরঃ এ প্রশ্নটি এখানে উল্লেখ না করেই এর সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়া হয়েছে এ বলে যে,
প্রথমে পানি ছিল। এ পানি মানে কি তা আমরা বলতে পারি না।
19. মহান আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী কি জন্য সৃষ্টি করেছেন?
উত্তরঃ মহান আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী এজন্য সৃষ্টি করেছেন যে, মূলত তোমাদের (অর্থাৎ মানুষ) সৃষ্টি করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল।
20.কখন মানুষ
অহংকার করে বেড়ায়?
উত্তরঃ যখন সে সচ্ছলতা ও প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে এবং শক্তি-সামর্থ্য লাভ করে তখন অহংকার করে বেড়ায়।
21. কখন মানুষ দম্ভ ও অহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং সুখ-ঐশ্বর্যের নেশায় মত্ত হয়?
উত্তরঃ যখন দুঃসময় পার হয়ে গিয়ে সুসময় এসে যায় তখন আবার সেই আগের মতোই দম্ভ ও
অহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং সুখ-ঐশ্বর্যের নেশায় মত্ত হয়।
22. মানুষের নীচপ্রকৃতির বর্ণনা দেয়া হচ্ছে কেন?
উত্তরঃ এখানে অত্যন্ত সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে লোকদেরকে সতর্ক করাই এর উদ্দেশ্য।
23.কাদের
জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং বিরাট প্রতিদানও?
উত্তরঃ যারা সবর করে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং বিরাট প্রতিদানও।
24. মক্কা কেমন গোত্রের কেন্দ্রভূমি ছিল?
উত্তরঃ মক্কা এমন একটি গোত্রের কেন্দ্রভূমি যার ধর্মীয় কর্তৃত্ব এবং আর্থিক,
বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট সমগ্র
আরবের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
25.কি গ্রহণ
করা ছাড়া মানুষের জন্য বাঁচার আর দ্বিতীয় কোন পথ নেই?
উত্তরঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের সামনে যে সত্য ধর্ম ও কল্যাণময় জীবন বিধান পেশ করা হয়েছে তাকে গ্রহণ করা ছাড়া মানুষের জন্য বাঁচার আর
দ্বিতীয় কোন পথ নেই।
26. নীচ ও হীনমন্য লোকদের কাজ কি?
উত্তরঃ ভালো ও অনুকূল অবস্থায় আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠা এবং খারাপ ও প্রতিকূল
অবস্থায় হতাশ পড়া মূলত নীচ ও হীনমন্য লোকদের কাজ
27.আসল
মর্যাদার অধিকারী কে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি নিজে সৎ হয় এবং সততার পথে
ধৈর্য, দৃঢ়তা ও অবিচলতার সাথে
অগ্রসর হয় সে-ই আসলে মর্যাদার অধিকারী।
28.“আমি এ কিতাবের রচয়িতা নই বরং আল্লাহর জ্ঞান থেকে এটি নাযিল
হয়েছে”- রাসুল (সঃ) কিভাবে এটি
প্রমান করলেন?
উত্তরঃ রাসুল (সঃ) তাদের বলেছিলেন তোমরা কোরআনের মত একটি কিতাব রচনা করে দেখিয়ে দাও। কিন্তু বারবার চ্যালেঞ্জ
দেবার পরও তারা সবাই মিলে এর নজীর পেশ করতে পারল না তাতে এ দাবী সত্য হল যে,
রাসুল (সঃ) এ কিতাবের রচয়িতা নয় বরং আল্লাহর জ্ঞান থেকে এটি নাযিল হয়েছে।
29. আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতায় তাদের কোন অংশ নেই- কাদের অংশ নেই?
উত্তরঃ প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারিদের মাবুদদের।
30.
কারা বেশীর
ভাগই দুনিয়া পূজারী?
উত্তরঃ যে ধরনের লোকেরা কুরআনের দাওয়াত
প্রত্যাখ্যান করছিল এবং আজও প্রত্যাখ্যান করছে তাদের বেশীর ভাগই দুনিয়া পূজারী।
31. প্রাসাদের পরিবর্তে সে আগুন লাভ করবে- এ কথার অর্থ কি?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি আখেরাতকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্য কাজ করে সে অনিবার্য ও
স্বাভাবিকভাবে এমন পদ্ধতিতে কাজ করে যার ফলে আখেরাতে প্রাসাদের পরিবর্তে আগুনের
কুণ্ড তৈরী হয়।
32.“তিনি নবী হবার আগেই বিশ্ব-জগতের নিদর্শনসমূহ প্রত্যক্ষ করে তাওহীদের তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেছিলেন”- তিনি কোন নবী?
উত্তরঃ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।
33.
তার
চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে? –এখানে কার
কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা
করে।
34.কিসের
ব্যাপারে আল্লাহর কোন আগ্রহ নেই?
উত্তরঃ নিজের বান্দাদের হেদায়াত ও গোমরাহীর
ব্যাপারে আল্লাহর কোন আগ্রহ নেই।
35.
কাদের উপর
পরকালে আল্লাহর লানতের কথা ঘোষণা করা হবে?
উত্তরঃ যারা আল্লাহর পথে যেতে মানুষকে বাধা দেয়, সেই পথকে বাঁকা করে দিতে চায় এবং আখেরাত অস্বীকার করে।
36.তাদেরকে
এখন দ্বিগুণ আযাব দেয়া হবে- কি কি কারনে?
উত্তরঃ একটি আযাব হবে নিজের গোমরাহ হবার জন্য এবং আর একটি আযাব হবে অন্যদেরকে
গোমরাহ করার এবং পরবর্তী বংশধরদের জন্য গোমরাহীর উত্তরাধিকার রেখে যাবার জন্য।
37.
কারা
জান্নাতে চিরকাল থাকবে?
উত্তরঃ যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে এবং নিজের রবের একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হয়ে থাকে,
তারা নিশ্চিত জান্নাতের অধিবাসী এবং
জান্নাতে তারা চিরকাল থাকবে।
38.
কে
নিশ্চয়ই নিরাপদে নিজের মনযিলে পৌঁছে যাবে?
উত্তরঃ যে ব্যক্তি নিজে পথ দেখতে পাচ্ছে এবং কোন পথের সন্ধান জানা লোকের পথনির্দেশনারও
সাহায্য গ্রহণ করেছে সে নিশ্চয়ই নিরাপদে নিজের মনযিলে পৌঁছে যাবে।
39.“তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করো না। নয়তো আমার আশঙ্কা হচ্ছে তোমাদের ওপর একদিন যন্ত্রণাদায়ক
আযাব আসবে।”- কে কাকে বলেছিলেন?
উত্তরঃ নূহ (আঃ) তার কওমকে বলেছিলেন।
40.“আমরা কেমন করে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী নিযুক্ত হয়ে এসেছেন
বলে মেনে নিতে পারি?”-কি কারনে
তারা মেনে নিতে পারেনি?
উত্তরঃ কারন তারা ভাবত, যে ব্যক্তি
আমাদেরই মতো একজন মামুলি পর্যায়ের লোক, খায় দায়, চলাফেরা করে,
ঘুমায় আবার জেগে থাকে,
ছেলেমেয়ের বাপ হয়, তাকে আমরা কেমন করে আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী নিযুক্ত হয়ে
এসেছেন বলে মেনে নিতে পারি?
41. মক্কার বড় বড় ও উঁচু শ্রেণীর লোকেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথের লোকজন
সম্পর্কে কি কথা বলতো?
উত্তরঃ তারা বলতো, এর সাথে কারা আছে? ক’জন মাথা গরম ছোকরা, যাদের
দুনিয়ার কোন অভিজ্ঞতাই নেই। অথবা কয়েকজন গোলাম এবং নিম্ন শ্রেণীর কিছু সাধারণ মানুষ,
যাদের বুদ্ধিশুদ্ধি নেই এবং বিশ্বাসের দিক
দিয়েও কম জোর।
42. “তোমাদের আল্লাহর প্রিয়পাত্র মনে
করা হবে কেন?”- কি কারনে
তারা এমন কথা বলত?
উত্তরঃ কারণ তারা ভাবত, আমরা ধন-দৌলত ও শান-শওকতের অধিকারী এবং একটি বিরাট জনগোষ্ঠী আমাদের নেতৃত্ব মেনে
নিয়েছে।
অন্যদিকে তোমরা কপর্দক শূন্য দেউলিয়ার দল, কোন্ বিষয়ে তোমরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছো?
43.কিসের মাধ্যমে
আল্লাহ তাঁর রাসুলকে সরাসরি সত্যগুলোর জ্ঞান দান করেছেন?
উত্তরঃ আল্লাহ তাঁর নিজের রহমতের (অর্থাৎ অহী) মাধ্যমে তাঁর রাসুলকে সরাসরি এ সত্যগুলোর জ্ঞান দান করেছেন।
44. নবুওয়াত লাভ করার আগেই সকল নবী কি লাভ করে থাকেন?
উত্তরঃ নবুওয়াত লাভ করার আগেই সকল নবী অনুসন্ধান ও চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে ঈমান বিল গাইব তথা অদৃশ্যে বিশ্বাস
লাভ করে থাকেন।
45.হযরত
নূহ (আ) নিজেকে কি হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন?
উত্তরঃ তিনি বলেছেন আমি একজন নিঃস্বার্থ উপদেশদাতা।
46. তাদের রবই তাদের কি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন?
উত্তরঃ তাদের রবই তাদের মর্যাদা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন।
47.নবী-রাসুলগন কিসের
জ্ঞান রাখেন না এবং কিসের দাবীও করেন না?
উত্তরঃ নবী-রাসুলগন অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন না এবং ফেরেশতা এ দাবীও করেন না।
48.“যথার্থই আমি একজন মানুষ। একজন মানুষ হওয়া ছাড়া নিজের ব্যাপারে তো আমি আর কিছুই দাবী করিনি।”- এই কথা কে বলেছিলেন?
উত্তরঃ হযরত নূহ (আ) ।
49. কিসের সাথে মোষের বাচ্চা প্রসব করার কোন সম্পর্ক আছে নাই?
উত্তরঃ মানুষের জীবনের জন্য সঠিক নৈতিক ও
তামাদ্দুনিক নীতি বর্ণনা করার সাথে মোষের বাচ্চা প্রসব করার কোন সম্পর্ক আছে নাই।
50.
“যদি সত্যবাদী হও তাহলে এখন আমাদের যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছো তা নিয়ে এসো।”- এখানে কে
কাকে এই কথা বলেছেন?
উত্তরঃ হযরত নূহ (আ) কে তার কওম এই কথা বলেছেন।
51. কি প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো নেই?
উত্তরঃ আল্লাহর আযাব।
52.কাদের দৃষ্টি
সবসময় কোন বিষয়ের খারাপ দিকের প্রতিই পড়ে থাকে?
উত্তরঃ হীনমনা লোকদের দৃষ্টি সবসময় কোন বিষয়ের খারাপ দিকের প্রতিই পড়ে থাকে।
53.
কি অনুযায়ী
আল্লাহ নূহ (আ) কে একটি নৌকা বানাতে বললেন?
উত্তরঃ আল্লাহর তত্ত্বাবধানে আল্লাহর অহী অনুযায়ী একটি নৌকা বানাতে বললেন।
54.আল্লাহ কখন
কোন জাতিকে আর অবকাশ দেন না?
উত্তরঃ যখন কোন জাতির সমস্ত সত্যনিষ্ঠ লোক বের হয়ে যায় এবং সেখানে কেবল অসৎ ও
বিপর্যয় সৃষ্টিকারী লোকেরাই অবশিষ্ট থেকে যায় তখন আল্লাহ সেই জাতিকে আর অবকাশ দেন
না।
55.
নূহ যখন
নৌকা নির্মাণ করছিল তখন কারা তাঁকে উপহাস করতো?
উত্তরঃ নূহ যখন নৌকা নির্মাণ করছিল তখন তার কওমের সরদারদের মধ্য থেকে যারাই তাঁর কাছ
দিয়ে যেতো তারাই তাঁকে উপহাস করতো।
56.প্রকৃত
সত্যদর্শীর চোখে কি হয় চরম নির্বুদ্ধিতা?
উত্তরঃ বাহ্যদৃষ্টিতে যে ব্যক্তি দেখে, সে যে জিনিসটিকে চরম বুদ্ধিমত্তা মনে করে, প্রকৃত সত্যদর্শীর চোখে তা হয় চরম নির্বুদ্ধিতা।
57.
প্লাবনের
সূচনা হয় কোথা থেকে?
উত্তরঃ কুরআনের বক্তব্য থেকে বুঝা যায়,
প্লাবনের সূচনা হয় একটি বিশেষ চুলা থেকে।
58.
কোন চুলাটি প্লাবনের চুলা হিসেবে পরিচিত হয়?
উত্তরঃ “তান্নূর” (চুলা) শব্দটির ওপর আলিফ-লাম বসানোর মাধ্যমে একথা প্রকাশ করা হয় যে,
একটি বিশেষ চুলাকে আল্লাহ এ কাজ শুরু করার
জন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন। ইশারা পাওয়ার সাথে সাথেই চুলাটির তলা ঠিক সময় মতো ফেটে পানি উথলে ওঠে। পরে এ চুলাটিই প্লাবনের
চুলা হিসেবে পরিচিত হয়।
59.কুরআন
পরবর্তী মানব সম্প্রদায়কে কাদের বংশধর
গণ্য করেছে?
উত্তরঃ কুরআন পরবর্তী মানব সম্প্রদায়কে শুধুমাত্র
নূহের বংশধর নয় বরং তাঁর সাথে নৌকায় যেসব লোককে আল্লাহ রক্ষা করেছিলেন তাদের
সবার বংশধর গণ্য করেছে।
60.মু’মিনের সত্যিকার পরিচয় কি?
উত্তরঃ কার্যকারণের এ জগতে সে অন্যান্য দুনিয়াবাসীর ন্যায় প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী
সমস্ত উপায় ও কলা-কৌশল অবলম্বন করে। কিন্তু সে উপায় ও কলা-কৌশলের ওপর
ভরসা করে না।
ভরসা করে একমাত্র আল্লাহর ওপর।
সম্ভাব্য প্রশ্নাবলীর পিডিএফঃ এখানে ক্লিক করুন।
আল্লাহ আমাদের বুঝার ও মানার তাওফিক দিন।
ReplyDelete